জিনের হাসি
লিখেছেন লিখেছেন নাবিক ২৯ জুলাই, ২০১৫, ০৮:৩০:৩২ সকাল
আল্লাহ পাকের মহান সত্ত্বা তাঁর সৃষ্টিকে বিনীত অবস্হায় দেখতে পছন্দ করেন। তার নগণ্য মাখলূকও তাই। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা আছে।
এক ধনী মহাজনের মেয়ের উপর জিনের আছর ছিলো। মেয়েকে জিনের আছর থেকে মুক্ত করার জন্য অনেক বড় বড় কবিরাজ এসে চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই জিন হটাতে পারলো না। উল্টো জিন ছাড়াতে এসে কবিরাজরা পরতো মহা বিপদে। এই জিনটি ছিলো খুব শক্তিশালী আর তার অন্তর ছিলো খুব কঠিন। খুব উশৃঙ্খলও ছিলো সে। যে-কবিরাজই তার কাছে যেতো নিরাপদে ফিরতে পারতো না। কারো হাত ভাঙ্গতো, কারো পা ভাঙ্গতো, কাউকে বা পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিতো।
মহাজন নিরূপায় হয়ে পড়লেন।
একদিন কে একজন মজা করার উদ্দেশ্যে বললো, "অমুক মসজিদে এক মুয়াজ্জিন আছে সে খুব ভালো কবিরাজ, জিন ছাড়াতে খুব পারদর্শী।" মহাজন বেচারা ছুটে গেলো মুয়াজ্জিনের কাছে। মুয়াজ্জিন কসম করে বলতে লাগলো সে জিন তাড়াতে জানেনা। জীবনে কখনও সে এই কাজ করেনি। কিন্তু মহাজন তার পায়ে পড়তে লাগলো। হাত জোড় করে নিবেদন করলো। চোখের পানি টস টস করে পড়তে লাগলো, মহাজনের এই অবস্হা দেখে অবশেষে মুয়াজ্জিন বললো, "ঠিক আছে আমি যাবো, কিন্তু বিনিময়ে আমাকে কি দিবেন বলেন।"
মহাজন বললো, "আপনি যা চান তাই দিবো।"
মুয়াজ্জিন বললো, "দশ হাজার টাকা দিতে হবে।" মহাজন তাতেই রাজি।
মুয়াজ্জিন সাহেব খুব গরীব মানুষ ছিলেন। মনে মনে ভাবলেন এই কষ্টের জিন্দেগীর চেয়ে জিনের হাতে মরে যাওয়াই ভালো। আর যদি কোন প্রকারে দশ হাজার টাকা পেয়েই যাই তবেতো কিছুটা সুখের জীবন কাটানো যাবে। বিসমিল্লাহ বলে তিনি বেড়িয়ে পরলেন।
মহাজনের বাড়ীতে পৌঁছাতেই জিন ওকে দেখে এমন অট্টহাসি দিলো'যে সেই হাসির আওয়াজে মুয়াজ্জিনের বুক কেঁপে উঠলো। হাসি থামিয়ে কটমট করে বলতে লাগলো, "আজ তোকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো। এসেছিস ভালোই হয়েছে, এদিকে আয়।"
মুয়াজ্জিন হাত জোর করে ওর পায়ে পড়ে গেলো আর বলতে লাগলো, "হুযূর, আমি আপনার রাজ্যের সামান্য একজন প্রজা। আমি কোনো কবিরাজ নই বা কোনো কবিরাজিও করতে আসিনি। একজন মূর্খ গরীব মানুষ আমি। এই মহাজনটি গিয়ে আমার ঘাড়ে চেপেছে। অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি। বাধ্য হয়ে আপনার কাছে এসেছি। আমার একটা উপকার হয় আপনার কাছে। যদি দশ মিনিটের জন্যেও এই মেয়েটিকে ছেড়ে যান তবে আমি দশ হাজার টাকা পেয়ে যাই। পরে যখন ইচ্ছা আবার আপনি চলে আসবেন। আমার মস্ত উপকার হবে। হুযূরের কোনো ক্ষতি হবেনা। আমি হুযূর, বড় গরীব মানুষ।"
মুয়াজ্জিনের এমন কাকুতি-মিনতি দেখে জিন উচ্চ স্বরে হেসে দিলো। বললো, "দশ মিনিট নয় চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি। তোর ভালো হউক।"
কিছু দিনের মাঝেই মুয়াজ্জিনের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো যে তিনি জিনের একজন বড় কবিরাজ। সারা জীবনের রুটির-রুজির ব্যবস্হা হয়ে গেলো। আর পেলো অফুরন্ত সম্মান।
কিন্তু এগুলো হলো কিসের বদৌলতে? শুধু বিনয় আর শ্রদ্ধা দেখানোর বদৌলতে। বিনয় এক আশ্চর্য জিনিস বটে। আল্লাহর নগণ্য মাখলূকেয় কাছে বিনীত হওয়ার কারণেই যদি এতো কিছু লাভ হয় তবে যিনি খালেক এবং অফুরন্ত দয়ার মালিক তাঁর কাছে বিনীত হওয়ার লাভ কতো হবে?
*আল-ইফাযাতুল আওমিয়্যাহ, ১ম খণ্ড।
বিষয়: বিবিধ
১২২৬ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাবিজের বালক! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-১ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)
মুয়াজ্জিন কি মুসলিম! গল্প তো গল্প আমিও জানি তবে এই গল্পতো ঈমান হারা
যাক মজার ঘটনা। পিলাচ পিলাচ পিলাচ
এই গোলাপটি আপনার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন