ইতেকাফ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা- ৬ (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২৯ জুলাই, ২০১৫, ১০:৪৫:৩৩ সকাল
আজকাল বিভিন্ন মসজিদে বেশ ইয়ং ছেলেদেরও ইতেকাফ করতে দেখা যায়। দুর্ভাগ্য বশতঃ আমাদের এ মহল্লাটা সে দিক থেকে খুবই পিছিয়ে। এখানে ইয়ং দূরে থাক, বৃদ্ধকেও টাকার লোভ দেখিয়ে ইতেকাফে বসানো হয়, যা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। সে কারণে আমার ইতেকাফে অংশ নেয়া মহল্লাবাসীর নিকট একধরণের আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হয়েছিল। মহল্লার মুরুব্বীদের অনেকেই প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর আমার সাথে সাক্ষাত করে মাথায় পিটে হাত বুলিয়ে দিয়ে তাদের ভালোবাসা এবং শুভকামনা প্রকাশ করতেন। আমার অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে, ফয়সাল বিন লোকমান তার স্কুল বন্ধ হওয়ার পর শেষ পাঁচ দিনের জন্য আমার সাথে ইতেকাফে যোগ দিয়েছিল। এটি ছিল মহল্লাবাসীদের জন্য আরো একটি বিষ্ময়।
দু’তিন জন ইয়ং প্রতিবেশী আমার সাথে মসজিদে সাক্ষাত করে জানিয়েছেন, যদি তারা আগে জানতেন আমি ইতেকাফ করবো, তাহলে তারাও আমার সাথে ইতেকাফে অংশ নিতেন। আমার মনে হচ্ছে, হয়ত কিছু সামর্থবান মানুষ আগামীতে এখানে ইতেকাফে অংশ নেবেন- ইনশাআল্লাহ্। এই মসজিদে বিভিন্ন বিদআতী কর্মকান্ড হয়, এ অযুহাতে আমি অন্য মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলম। এখন চিন্তা করে দেখলাম, এ সিন্ধন্তটি ঠিক হতো না। তাদেরকে ছেড়ে না গিয়ে সাথে থেকে সম্পর্কন্নোয়নের মাধ্যমে সঠিক বিষয়টি তুলে ধরা উচিৎ, গ্রহণ করা না করা তাদের ব্যাপার। আমি অন্তত আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি থেকে রক্ষা পেয়ে যাবো। সম্পর্কন্নোয়নের অংশ হিসেবে মসজিদের খতিব এবং ইমাম মোয়ায্যিনকে ঈদের দিন দুপুরে খাবার দাওয়াত দিয়েছিলাম, তারা তা সাদরে গ্রহণ করেছেন। আমি যে বিদয়াত বিরোধী তারা অবশ্য আগে থেকেই জানতেন।
বাচ্চারা মসজিদে একটু দুষ্টুমি-শোরগোল করে থাকে। একদিন ইফতারের আগে বাচ্চারা একটু শোরগোল করার কারণে আমার সাথী আব্দুর রহমান খতিবের লাঠি নিয়ে তাদেরকে দাবরানি দিয়েছিলেন। সেদিন বাচ্চারা তাকে ইফতারী সরবরাহ করেনি। উল্লেখ্য, মসজিদের দোতলায় ইফতারির ব্যবস্থা করা হতো এবং আব্দুর রহমানের ইফতারী বাচ্চারা ওখান থেকে দিয়ে যেতো। আমার জন্য বাসা থেকে পাঠানো ইফতারী দিয়ে আব্দুর রহমানকে সেদিনে ইফিতার করিয়েছিলাম এবং বাচ্চাদের সাথে ভালো ব্যবহারের নসিহত ও করেছি। পরে বাচ্চাদের বেশ কয়েকজনকে ডেকে তাদের সাথে একটু পরিচিত হয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছি যেন মসজিদে দুষ্টুমি না করে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করে দিয়েছি। সেথেকে বাচ্চারা মসজিদে এসে আমার সাথে দেখা করে সালাম দোয়া বিনিময় করতো, কেমন আছি জিজ্ঞেস করতো এবং তাদের দুষ্টুমিও বেশ কমে গিয়েছিল।
প্রিয়/সম্মানীত বন্ধুগণ, আমি ইতেকাফে অংশ নিয়ে ‘একটা কিছু করে ফেলেছি’ বুঝানোর জন্য এ লিখা নয়। শুধুমাত্র নজরে আসা কিছু অসংগতি তুলে ধরে সংশোধন এবং সংস্কারের নিয়্যাতেই এ লিখাটি উপস্থাপন করেছি।
পরিশেষে বলবো, রমজানের শেষ ১০ দিন মহল্লার জামে মসজিদে ইতেকাফ করা অত্র এলাকাবাসীর জন্য সুন্নতে মুআক্বাদা আলাল কিফায়া, সমাজ তথা মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যে কোন একজন তা আদায় করলে মহল্লাবাসী দায়মুক্তি পাবেন ঠিকই, কিন্তু স্বয়ং ইতেকাফকারী যে সওয়াব পাবেন তাতো আর তারা পাবেন না।
ইতেকাফ আল্লাহ প্রেমিকের জন্য একটি উম্মুক্ত জেলখানা, যার সদর দরজা খোলা থাকার পরও মসজিদের সীমা অতিক্রম করে এক কদম বাহিরে যাওয়ার খায়েস জাগেনা, একটি বারের জন্যও। দুনিয়ার সমস্ত লেনদেনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার এ সময়টুকু আপনার দেহ মনে কি মধুর প্রশান্তি এনে দেয় তা লিখে বুঝানো সম্ভব নয়। আর যদি লাইলাতুল কদর পেয়ে যান, আপনার সাথে লাগে কে? একটা মজার বিষয় হচ্ছে- যারা একবার এই স্বেচ্ছা-জেলের বাসিন্দা হয়েছেন, তাদেরকে এটি বার বার আকর্ষণ করবেই। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটা নেক কাজের চমতকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ।
নিয়ত আছে ইন শা আল্লাহ ইতেকাফে বসার - আগামীবার ।
সুন্দর উপলদ্ধি এবং শিক্ষণীয় পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ..
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
জাযাকাল্লাহ খাইর
জাযাকাল্লাহ।
ইতেকাফ এর ক্ষেত্রে আমাদের দেশের প্রধান অসুবিধা হলো মসজিদের পরিচ্ছন্নতার অভাব ও টয়লেটগুলির নোংরা পরিবেশ। অল্প কিছু মসজিদেই এই বিষয়ে নজর দেওয়া হয়। অন্যদিকে মসজিদগুলিতে ইতেকাফ এর গুরুত্ব এবং এই বিষয়ে মহল্রাবাসিদের দায়িত্ব বিষয়েও কমই বলা হয়। অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্বেয় ব্যবসায়িক বা চাকুরির জন্য ইতেকাফ করতে পারেন না। ইতেকাফ এ কি করা যায় এই বিষয়ে ও অনেকের ভুল ধারনা আছে। কুরআন-হাদিস স্টাডি করাও যে ইতেকাফ এর অন্তর্ভূক্ত হতে পারে সেটা অনেকে মানতে চাননা। তারা মনে করেন নফল নামাজ আর কুরআন মতন পড়াই ইতেকাফ এর উদ্দেশ্য। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় কড়া সুন্নি(!) মানসিকতার মানুষগুলির মধ্যে সংশোধন হওয়ার মত উদারতা কমই থাকে।
মসজিদে শিশুদের সাখে আচরন সম্পর্কে অনেক বার আমি লিখেছি ও প্রতিবাদ ও করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের মুরুব্বিরা অতি সন্মান করাকেই মনে করেন ইসলাম সম্মত। ইফতারি সরবরাহ না করার ঘটনাটি শুনে একটি আব্বার কাছে শুনা মজার ঘটনা মনে পড়ল। একবার রোজার সময় মসজিদ এর সংশ্লিষ্ট দের সেহরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল আমাদের বাসায়। ইফতারের পর একজন এসে খবর দিয়ে যায় যে এক হুজুর এর অন্য জায়গায় সেহরির দাওয়াত আছে। সেহরির শেষ সময়ে তিনি হঠাত এসে উপস্থিত হন। অবাক হয়ে তার সাথি এবং আমার অাব্বা তার আসার কারন জানতে চাইলে তিনিও বেশ বোকা বনে যান। ঘটনা হচ্ছে মসজিদে মারধোর করায় কয়েকজন মিলে আমাদের বাসায় ও তার সহকর্মিেদের এই মিথ্যা সংবাদ দেয় যার ফলে বাসা থেকে কেও এবং তার সহকর্মিরা কেউ তাকে আর ডাকতেই যায়নি। বেচারা সেইিদিন শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখতে বাধ্য হন।
আমাদের দেশে মসজিদগুলোর টয়লেটের বেহাল দশা দেখে সত্যিই করুনা হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয় মসজিদের জন্য কিন্তু ঐ স্থানটা রাখা হয় নোংরা এবং সেকেলে ধরণের করে। আমার বুঝে আসে না বিষয়টি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন