প্রবন্ধ-২/৬ : সিরাতুল মোস্তাকিম : জান্নাতের রোডম্যাপ (ধারাবাহিক পর্ব-৬)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৫ মে, ২০১৫, ০৮:০৬:০১ রাত
ষষ্ঠ পর্ব :
২৩। তাহলীল পাঠকারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ :
রাসূল (সা) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যখন তাহলীল পড়ে (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ উচ্চারণ করে ইহ্রাম বেঁধে লাব্বাইক পড়ে আল্লাহুম্মা লাব্বাইক পড়ে) অথবা তাকবীর উচ্চারণ করে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়।” (বায়হাকী-হাদীস নং-৪০২৯)
২৪। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান এনে সন্তুষ্ট তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব :
“রাদ্বিতু বিল্লাহি রাব্বা ওয়াবিল ইসলামা দ্বীনান ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলা।” রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে রব, ইসলামকে নিজের দ্বীন এবং রাসূলুল্লাহ (সা)কে রাসূল হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (আবু দাউদ ও মুসলিম)
২৫। জ্ঞানার্জন ও বিতরণকারী জন্য জান্নাতের পথ প্রশস্ত হয়ে যায় :
নবী (সা)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি কেনো প্রেরিত হয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমাকে শিক্ষক হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে। (ইবনে মাযা) তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান (অর্জন ও বিতরণ) করার পন্থা অবলম্বন করেছে, আল্লাহতায়ালা এ কারণে তার জন্যে জান্নাতের পথ সহজ ও প্রশস্ত করে দিবেন। (তিরমিযী)
২৬। কোরআন তেলাওয়াত, হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মনে করলে জান্নাত :
হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করে ও মুখস্থ করে এবং হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মনে করে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর সে আখিরাতে তার পরিবারের এমন দশ জনের জন্য সুপারিশ করতে পারবে যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছিল।” (ইবনে মাযা) তিরমিযী শরীফের হাদীছ বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবন যাপন করবে, সুন্নাত অনুসারে আমল করবে এবং কোন মানুষ তার দ্বারা কষ্ট পাবে না, সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে।”
২৭। আল্লাহর রাসূলের নামে দরূদ পাঠ করলে জান্নাতের সুপারিশ করা হবে :
আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা নিজে ও তাঁর ফেরেশতারা সবাই নবী মোহাম্মদের উপর দরূদ পাঠান, অতএব হে মানুষ, তোমরা যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো-তোমরাও তাঁর উপর একনিষ্ঠভাবে দরূদ ও সালাম পাঠাও।”(আল্ কোরআন) “হে আল্লাহ, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর তুমি শান্তি ও বরকত নাযিল কর। যেমন শান্তি ও বরকত নাযিল করেছিলে হযরত ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী।” (আল্ কোরআন) হযরত আবু দারদা (রা) বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে দশবার এবং সন্ধায় দশবার আমার নামে দরূদ পাঠ করবে, সে কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভ করবে।” (তিবরানী)
২৮। দু’টি ঠান্ডা ওয়াক্তের সালাত আদায় করলে জান্নাতে যাবে (ফজর ও আসরের সালাত) :
হযরত আবু বকর ইবনে আবু মুসা (রা) তার পিতা (আবু মুসা-রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দু’টি ঠান্ডা ওয়াক্তের সালাত (অর্থাৎ ফজর এবং আসর) সঠিক সময়ে আদায় করবে সে জান্নাতে যাবে।” (বুখারী) রাসূল (সা) বলেছেন, “ফজর সালাত সমাপ্ত হবার পর অন্য কোন কথা বলার আগে সাতবার বল, আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার, অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। যদি সেদিন তোমার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।” (আবু দাউদ) ফজরের সালাত সম্পর্কে রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করে বসে বসে আল্লাহর যিকির করবে সূর্যোদয় পর্যন্ত, এরপর দু’রাকাআ’ত দোহা বা চাশতের সালাত আদায় করবে, সে একটি হজ্ব ও একটি ওমরার সওয়াব অর্জন করবে, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ। ” (তিরমিযী)
২৯। ৪০ দিন প্রথম তাকবীরসহ সালাত আদায়কারী জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবেন :
রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরসহ পরিপূর্ণ সালাত জামায়াতে আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ দু’টি মুক্তি লিখে দিবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং দুই. মুনাফিকী থেকে মুক্তি।” (তিরমিযী)
৩০। অপরের ভাইয়ের প্রতি পরিপূর্ণ ভালবাসা ও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত জীবন যাপন :
হিংসা-বিদ্বেষের কারণে সমাজে-পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। মানবতার জঘণ্য দুশমন শয়তান মানুষের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে জাহান্নামের পথে ঠেলে দেয়। শয়তানের অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে ৩টি-শিরক, বিদ’আত এবং হিংসা বিদ্বেষ। রাসূল (সা) বলেছেন, “মানুষের আমল প্রতি সপ্তাহে দু’বার পেশ করা হয়-সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। তখন সকল মু’মিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়, কেবলমাত্র যে বান্দার সাথে তার ভাইয়ের বিদ্বেষ-শত্র“তা আছে সে ব্যক্তি বাদে। বলে দেওয়া হয়, এরা যতক্ষণ না ফিরে আসে ততক্ষণ এদেরকে বাদ দাও।” (মুসলিম) অন্য হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা) আরো বলেছেন, পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলির ব্যাধি তোমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে-হিংসা ও বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ মুণ্ডন করে দেয়। আমি বলি না তা চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দ্বীন মুণ্ডন ও ধ্বংস করে দেয়। আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, মু’মিন না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর একে অন্যকে ভাল না বাসলে তোমরা মু’মিন হতে পারবে না। এ ভালবাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, সর্বত্র ও সর্বদা পরস্পরে সালাম প্রদানের রেওয়াজ প্রচলিত রাখবে।” (তিরমিযী, আহমদ)
৩১। আর্তমানবতার সেবার মাধ্যমে জান্নাত যাওয়া সহজ :
“যে ব্যক্তি আর্তের (বা রোগীর) সেবা করে সে যেন জান্নাতের ফুল তুলতে থাকে।” (মুসলিম, তিরমিযী) “আর্তের সেবাকারী যতক্ষণ পর্যন্ত আপন গৃহে প্রত্যাবর্তন না করে ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতের পথে চলতে থাকে।” (মুসলিম) একটি হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে, রাসূল (সা) বলেছেন, “হাশরের ময়দানে আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করনি।’ সে বলবে, ‘হে প্রভু! কিভাবে আমি আপনার সেবা করব? আপনি তো নিখিল বিশ্বের প্রভু, (আপনি নীরোগ)।’ আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তুমি তাকে দেখনি। তুমি কি জানতে না যে যদি তুমি সেখানে যেতে অবশ্যই আমাকে পেতে।’ আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি ক্ষুর্ধাত ছিলাম, তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি।’ সে বলবে, ‘হে প্রভু! কিভাবে আমি আপনাকে খাদ্য দান করবে? আপনি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক ও পানাহার থেকে মুক্ত?’ আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে দাওনি। তুমি কি জান না, যদি তুমি তাকে খাদ্য দিতে তবে তুমি আমাকে কাছে পেতে।’ হে আদম সন্তান! আমি পিপাসার্ত ছিলাম, তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে তা দাওনি।’ সে বলবে, হে প্রভু! কিভাবে আমি আপনাকে পানি পান করাবো আপনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা?’ আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে দাওনি। যদি তুমি তাকে পানি পান করাতে তবে তুমি আমাকে কাছে দেখতে পেতে।’’ (মুসলিম) তাই আমাদেরকে কোন অভাগ্রস্তকে যাতে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কাল কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোগীর পরিচর্যা গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “যদি কেউ কোন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যায় তবে সে ফিরে না আসা পর্যন্ত অবিরত জান্নাতের বাগানে ফল চয়ন করতে থাকে।” (মুসলিম) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, “যদি কোন মুসলিম সকালে কোন রোগীকে দেখতে যায় তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতারা জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যদি কেউ বিকালে কোন রোগীকে দেখতে যায় তবে পরদিন সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশেতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর সে জান্নাতে একটি বাগান লাভ করে।” (তিরমিযী)
৩২। পরিপূর্ণভাবে হজ্ব ও উমরা আদায় করা :
আল্লাহতায়ালা আল্ কোরআনে এরশাদ করেছেন, “বায়তুল্লাহ হজ্ব করা সেই মানুষের উপর আল্লাহর হক, যার সামর্থ্য রয়েছে সেই পর্যন্ত পৌঁছার, আর যে এটা অস্বীকার করে, তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ সারা বিশ্বের মানুষের কোন পরওয়া করেন না।” (সূরা আলে ইমরান-৯৭) হাদীস শরীফে আছে, হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবীজীকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহপাকের উদ্দেশ্যে হজ্ব করলো এবং হজ্ব সমাপন কালে কোন প্রকার অশ্লীল কথা-বার্তা ও গুনাহর কাজে লিপ্ত হল না, সে সদ্যভুমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করল।” আল্লাহর রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “তোমরা বারবার হজ্ব ও উমরা আদায় কর, কেননা কর্মকারের ও স্বর্ণকারের আগুন যেমন লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা মুছে ফেলে তেমনিভাবে এ দু’ইবাদাত দারিদ্র ও পাপ মুছে ফেলে। আর মকবুল হজ্বের একমাত্র পুরষ্কার হচ্ছে জান্নাত।” (বুখারী)
৩৩। ইয়াতীমের লালন-পালনকারী জান্নাতে যাবে :
রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইয়াতীম-অনাথের রক্ষণাবেক্ষণ বা লালন পালন করবে সে আমার সাথে পাশাপাশি জান্নাতে থাকবে, একথা বলে তিনি মধ্যমা ও তর্জনীকে পাশাপাশি রেখে দেখান।” (বুখারী)
৩৪। বেশী বেশী তওবা ও ইস্তেগফার করা :
আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। অতঃপর তাঁর দিকেই অনুশোচনাসহ ফিরে এসো। তিনি তোমাদের জন্য আকাশের দুয়ার খুলে দেবেন এবং তোমাদের শক্তি ও ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেবেন। (আল্ কোরআন : ১১-৫২) আরো এরশাদ হয়েছে, হে আমার বান্দারা! যারা নিজের নফসের উপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (আল্ কোরআন : ৩৯-৫৩) আল্লাহর রাসূল যিনি সমস্ত গুনাহ থেকে মুক্ত তিনি দিনে ৭০ বার, এমনকি ১০০ বারও তওবা করতেন বলে হাদীসে এসেছে। নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের কেও বেশী বেশী তওবা-ইস্তেগফার করা উচিত।
৩৫। কন্যাসন্তান লালন-পালন এবং সৎপাত্রস্থকারী জান্নাতে দাখিল হবে :
রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান লালন পালন করবে তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য। জিজ্ঞেস করা হলো-দু’টি মেয়ে লালন পালন করলে কি হবে? তিনি উত্তর দিলেন-দু’টি করলেও। বর্ণনাকারী বলেন, এমন কি তারা যদি একটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন তবে তিনি একটি সম্পর্কেও এরূপ মন্তব্যই করতেন।” (মিশকাত শরীফ- শারহুস সুন্নাহ সূত্রে বর্ণিত) দু’টি কন্যা সন্তানকে লালন পালন করার কারণে কিয়ামতের দিন পিতা-মাতা-স্বয়ং মহানবী (সা)এর সাথে থাকার সুযোগ হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
(সহীহ মুসলিম ৮ম খন্ড, সদাচরণ ও শিষ্টাচার অধ্যায়) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূল (সা) বলেছেন, যার তত্ত্বাবধানে কোন শিশু বালিকা থাকে আর সে তাকে জীবিত দাফন না করে, তার প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন না করে এবং বালকদেরকে (ছেলে সন্তান) তার উপর কোনরূপ প্রাধান্য না দেয় আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। (আবু দাউদ)
হেদায়েতের পথে (সরল পথে) টিকে থাকার দোয়া :
“রাব্বানা লা তুজিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদায়তানা ওয়াহাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব। অর্থাৎ হে আমাদের রব! যখন তুমি আমাদের হেদায়েতের দিয়েছ (সরল পথ দেখিয়েছ) তখন আর আমাদের অন্তরকে বক্রতায় আচ্ছন্ন করে দিয়ো না, তোমার দান ভাণ্ডার থেকে আমাদের জন্য রহমত দান করো, কেননা তুমিই প্রকৃৃত দাতা।” (সূরা আলে ইমরান-৮) সরল পথে চলে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আগ্রহ প্রকাশ করে রাসূল (সা) সবসময় এই দোয়া পড়তেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পরকালে শান্তিময় জীবনের জন্য আবেদন করছি। আমি আপনার কাছে আপনার বরকতপূর্ণ মুখপানে তাকাবার সুযোগ লাভের এবং আপনার সাক্ষাত লাভের জন্য আবেদন করছি। যে কোন কষ্ট বা এমন পরীক্ষা যা বিপথে নিয়ে যায় তা থেকে পানাহ চাচ্ছি। হে আল্লাহ! আমাকে ঈমানের বলে বলীয়ান করো, আমাকে সত্যপথ প্রদর্শন করো এবং সত্যপথে পরিচালিত করো।” (নাসায়ী) আমরা যেন সুখে-দুঃখে তাকে স্মরণ করি, শুধু বিপদের দিনে নয় এবং আল্লাহর সাথে যেন কাউকে শরীক না করি। এই বিশ্ব ব্যবস্থাপনা আল্লাহরই। এখানে কারো অংশীদারিত্ব নেই। আল্ কোরআনে এরশাদ হেেছ, “মানুষের ওপর যখন কোন বিপদ আসে তখন সে তার রবের দিকে ফিরে যায় এবং তাঁকে ডাকে। কিন্তু যখন তার রব তাকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ইতিপূর্বে যে বিপদে পড়ে তাঁকে ডেকেছিল তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করতে থাকে, যাতে তারা আল্লাহর পথ থেকে তাকে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট করে।” (সূরা যুমার-৮) সরল পথে চলার আরো কিছু নির্দেশনা আল্ কোরআন থেকে তুলে ধরেছেন বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা খুররম জাহ্ মুরাদ। প্রথমত, দৃঢ়ভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করা। এর মানে হচ্ছে, আপনি আপনার সকল অর্জনের জন্য শুধুমাত্র তাঁরই হামদ শুকর করবেন, শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবেন, পৃথিবীর সবকিছুর চাইতে আল্লাহকে বেশী ভালবাসবেন, শুধুমাত্র তাঁর জন্য সংগ্রাম করবেন এবং ‘হানিফ’ হতে চেষ্টা করবেন। একই সাথে আল্লাহর রজ্জু ধারণের বাধাগুলোর কথা খেয়াল রাখবেন, এগুলো হচ্ছে গর্ব, শঠতা, হতাশা, অনিয়ন্ত্রিত রাগ, জিহ্বার (কথা) অসংযত ব্যবহার এবং অননুমোদিত যৌন লালসা।
আল্লাহর কাছে সবসময় সালাতের শেষে আমরা মোনাজাত করি :
রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা ওয়াফিল আখেরাতে হাসানা ওয়াকেনা আযা বান্নার। অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও, জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।” হে আল্লাহ! যে কাজে আপনার দয়া এবং ক্ষমা অবধারিত, আমি আপনার নিকট তা চাই, আরো চাই আমি সকল পাপ কাজ থেকে মুক্তি ও সকল প্রকার কল্যাণে সমৃদ্ধ হতে। আমি আপনার নিকট চাই জান্নাত লাভে ধন্য হতে এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত পেতে।” (রিয়াদুস সালেহীন, পৃ-৫২০) কাজেই মুসলমানিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসূল (সা) এর দেখানো সরল পথে কায়েম থাকতে হবে।
সূরা আলে ইমরানে এরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর, যেমন ভাবে ভয় করা উচিত। আর তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (আয়াত-১০২)
“ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব ছাব্বিত কুল বানা আলা দ্বীনিকা-হে হৃদয়সমূহের পরিবর্তন কারী! আমার হৃদয়কে তোমার সরল পথের (দ্বীনের) উপর অবিচলভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখো।” আমিন।
মূল আলোচনা এখানে শেষ..
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য..)
====
বিষয়: সাহিত্য
১৬৬০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
জাজাকাল্লাহ খাইর ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন