প্রবন্ধ-২/৫ : সিরাতুল মোস্তাকিম : জান্নাতের রোডম্যাপ (ধারাবাহিক পর্ব-৫)
লিখেছেন লিখেছেন মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম ২৩ মে, ২০১৫, ০২:৪৪:৫৫ দুপুর

পঞ্চম পর্ব :
সরল পথ বা জান্নাতের পথের কতিপয় আমল :
আখেরাতে নাজাত পেতে বা জান্নাতে যাওয়ার জন্য ঈমান থাকা মৌলিক শর্ত। ঈমান বিহীন আমল গ্রহণযোগ্য হবে না। একজন মানুষের জন্য ঈমান বড় সম্পদ। ঈমান আনার পর আমলে সালেহ না করলে ঈমানের দূর্বলতা প্রকাশ পাবে। এরশাদ হয়েছে, “যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা এবং বড় প্রতিদানের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।” (সূরা মায়েদা-৯)
সূরা আল্ আসরে এরশাদ হয়েছে, “সময়ের কসম, মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। একমাত্র তারা ব্যতীত যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে, নেকআমল করেছে, একে অপরকে সত্যের দাওয়াত দিয়েছে এবং ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়েছে।”
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, “যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল করে অতি শীঘ্রই আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে পাবে তারা পবিত্র সঙ্গিনী এবং তাদেরকে আমি ঘন ছায়ায় প্রবেশ করাব।” (সূরা নিসা-৫৭)
কতিপয় নেক আমলের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে, যাতে আমরা প্রাত্যহিক জীবনে চলার পথে এর ব্যবহার করে দ্বীন-দুনিয়ার অশেষ কল্যাণ হাসিল করতে পারি।
১। অযুর পর এই দোয়াটি পাঠ করলে জান্নাতে যাবে :
“আশহাদু আল্ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু” অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মোহাম্মদ (সা) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” যে ব্যক্তি অযুর পরে এ দোয়া পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা থাকবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব থেকে বর্ণিত)
২। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর উপর মৃত্যুবরণ করলে জান্নাতে যাবে :
হযরত আবু যর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি এ কথার ঘোষণা দেয়, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং এ অনুযায়ী আমল করে) এবং এরই উপর মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। (মুসলিম)
৩। যে রাসূল (সা)এর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে, সে শত শহীদের সওয়াব পাবে :
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, আমার উম্মতের অধ:পতন ও বিপর্যয়ের সময় যে আমার সুন্নাত দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকবে, তার জন্য শত শহীদের সওয়াব রয়েছে।” (বায়হাকী থেকে মিশকাত)
তিরমিযী শরীফের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে, “যে আমার সুন্নাতকে (পালন ও প্রচারের মাধ্যমে) জীবিত করবে, সে আমাকেই ভালবাসবে। আর যে আমাকে ভালবাসবে, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।”
৪। মসজিদ তৈরী, পবিত্র রাখা ও খেদমত করা বেহেশতে প্রবেশকারীর আলামত :
রাসূল (সা) বলেছেন, মসজিদ ঝাড়– দেয়া, মসজিদ পবিত্র ও পরিষ্কার রাখা, মসজিদের আর্বজনা বাইরে ফেলা, মসজিদ সুগন্ধি দ্বারা সুরভিত করা (বিশেষ করে জুমাবার) বেহেশতে প্রবেশের আমল। অর্থাৎ উপরোক্ত আলামত সমূহ বেহেশতে প্রবেশকারীর কাজ। (ইবনে মাযা) তিনি আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরী করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে তার জন্য একটি বাড়ি তৈরী করবেন।” (বুখারী) তিবরানী শরীফের হাদীসে আছে, “মসজিদের আর্বজনা পরিষ্কার করা সুন্দর হুরদের মোহর।”
৫। হালাল উপার্জনকারীর স্থান জান্নাত :
রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল উপার্জনের ওপর জীবন নির্বাহ করেছে, আমার সুন্নতের ওপর আমল করেছে, আমার নির্দেশিত পথে চলেছে, আর লোকদেরকে নিজের দুষ্টামী থেকে নিরাপদ রেখেছে তা হলে এ ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! এ যুগে এমন লোক তো অনেক আছে। আমার পরেও এরূপ লোক থাকবে। (তিরমিযী)
৬। অভাবী ও নিপীড়িত ব্যক্তির সাহায্যকারী জান্নাতে যাবে (অর্থাৎ সমাজসেবক) :
রাসূল (সা) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি কাউকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে তার কোন অভাব পূরণ করে দেয়, সে আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যে আমাকে সন্তুষ্ট করে, সে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে আর যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (শুআবুল ঈমান) রাসূল (সা) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন নিপীড়িত ব্যক্তির আবেদন শুনে তার সাহায্য করে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য ৭৩টি ক্ষমা নির্ধারণ করেন। তার মধ্য হতে একটির দ্বারাই তার সমস্ত পাপ মুছে যায়। অবশিষ্ট ৭২টি ক্ষমা দ্বারা কিয়ামতের দিন তার পদ মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। (শুআইবুল ঈমান)
৭। আল্লাহর যিকরকারী আনন্দিত অবস্থায় বেহেশতে যাবে :
আল্ কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে আল্লাহর যিকরেই তাদের অন্তর প্রশস্ত হয়, আর জেনে রাখো কেবলমাত্র আল্লাহর যিকরই অন্তর সমূহ প্রশস্ত রাখে।” (সূরা আ’রাফ-২৮) রাসূল (সা) বলেছেন, “যাদের জবান সর্বদা আল্লাহর যিকর দ্বারা সিক্ত থাকে (সব সময় যিকররত থাকবে) তাদেরকে খুশী ও আনন্দিত অবস্থায় বেহেশতে প্রবেশ করবে।”
৮। আল্লাহর গুণবাচক ৯৯টি নাম স্মরণ রাখলে বেহেশতে যাবে :
হযরত আবু হোরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “আল্লাহর এক কম নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মনে রাখবে সে জান্নাতে যাবে।” (বুখারী)
৯। যার চরিত্র নিষ্কলুষ, ব্যভিচার মুক্ত সে জান্নাতের হকদার হবে :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা ব্যভিচার করো না। যারা নিষ্কলুষতা ও পবিত্রতার সাথে যৌবন অতিবাহিত করে তারা জান্নাতের হকদার হবে।” (বায়হাকী)
১০। উত্তম ব্যবহার যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে জান্নাতে দাখিল হবে :
হযরত জাবির (রা) থেকে রাসূল (সা) বলেছেন, তিনটি জিনিস যে ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যাবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে নিজ হেফাজতে গ্রহণ করবেন এবং জান্নাতে দাখিল করবেন। ১. দুর্বলদের প্রতি কোমল ব্যবহারকারী ২. মাতা-পিতার সাথে সহৃদয় কোমলতা ও ভালবাসা পোষণকারী ৩.কর্মচারী ও খাদেমদের সাথে উত্তম ব্যবহার কারী। আর এমন তিনটি গুণ আছে যা কোনো ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া গেলে আল্লাহতায়ালা আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। ১. সেই অবস্থায় অযু করা যখন অযু করতে মন চায় না ২. অন্ধকার রাতে মসজিদে যাওয়া (জামায়াতে সালাত আদায় করার জন্য) ৩. ক্ষুর্ধাত ব্যক্তিকে আহার করানো। (তারগীব ও তারহীব) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির কথা বলে দিচ্ছি, যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম এবং সেও জাহান্নামের উপর হারাম। এ লোকটি নম্্র মেজাজ, নম্্র প্রকৃতির ও নম্রভাষী।” (আহমদ)
১১। এ ছয়টি কাজ জান্নাতের জামানত :
হযরত আবু হোরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা)বলেছেন, তিনি একদিন তাঁর কাছে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে এরশাদ করলেনঃ তোমরা আমাকে ছয়টি জিনিসের কথা দাও আমি তোমাদের জান্নাতের জিম্মাদার হবো। তারা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! সে ছয়টি কাজ কি কি? তিনি বললেন, সালাত, যাকাত, আমানত, যৌনাঙ্গ, পেট ও যবান। (তিবরানী)
১২। আল্লাহর ভয়, জবান ও লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী জান্নাতে যাবে :
উপরের হাদীসেও তা বলা আছে। আরো উল্লেখ আছে, হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, কোন্ কারণে সবচাইতে বেশি মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে তা কি তোমরা জান? তাহলো, আল্লাহর ভয় এবং সুন্দর চরিত্র। কোন্ কারণে মানুষ সবচাইতে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তা কি তোমরা জান? তাহলো, মুখ এবং লজ্জাস্থানের (অন্যায়) ব্যবহার। (তিরমিযী)
অন্য হাদীসে রাসূল (সা) বলেন, যে ব্যক্তি দুই চোয়ালে মাঝখানের বস্তু এবং দুই উরুর মাঝখানের বস্তুর জামিন হতে পারবে, আমি তার জান্নাতের জামিন হবো। (বুখারী)
১৩। পিতা মাতার সেবা-যতœ করা ও তাদের কথা শোনা :
হযরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহমিয়া (রা) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল (সা) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জিহাদে যাওয়ার নিয়ত করেছি। এ ব্যাপারে আপনার সাথে পরামর্শ করার জন্য এসেছি। এ কথা শোনার পর রাসূল (সা) বললেন, তোমার কি মা আছে? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তখন নবী (সা) বললেন, তার সেবা করা তোমার উপর কর্তব্য। কেননা জান্নাত তার পায়ের নিচে। (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাইসামী) রাসূল (সা) বলেছেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ নেককর্ম হল, সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা এবং পিতামাতার খেদমত করা।” (বুখারী) অন্য হাদীসে আরো বলা হয়েছে, “পিতামাতার অসন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং পিতামার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি।” (তিরমিযী) শিরকের পর কঠিনতম গুনাহ হচ্ছে পিতামাতার অবাধ্য হওয়া। রাসূল (সা) বলেছেন, “কঠিনতম গুণাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা, এরপর পিতামাতার অবাধ্য হওয়া।” (বুখারী)
১৪। তাহাজ্জুদের সালাত আদায়কারী জান্নাতে যাবে :
হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) আমাদের উদ্দেশ্যে বলেনÑহে লোকেরা, তোমরা পরস্পরকে সালাম দাও, খানা খাওয়াও, আতœীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ আর রাতে এমন অবস্থায় সালাত আদায় করো, যখন অন্য লোকেরা ঘুমিয়ে যায়। তাহলে নিরাপত্তা সহকারে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে। (ইবনে মাযা, তিরমিযী)
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা) বলেছেন, “মহান আল্লাহপাক প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন কে আছ আমার কাছে দু’আ করবে। আমি দু’আ কবুল করব। কে আছ আমার আছে চাইবে? আমি দান করব? কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।” (বুখারী ও মুসলিম) নবীজীর কাছে জানতে চাওয়া হলো, কোন্ সময়ের দোয়া সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? উত্তরে তিনি বলেন, রাতের শেষ অংশে এবং ফরয নামাজের পরের দোয়া। (তিরমিযী) হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন, “কখনো রাতের কিয়াম (তাহাজ্জুদ) ত্যাগ করবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) কখনো তা ত্যাগ করতেন না। যদি অসুস্থ বা ক্লান্তি বোধ করতেন তবে তিনি বসে বসে তা আদায় করতেন।” (আবু দাউদ)
১৫। ইসলামী আন্দোলন বা ইসলামী সংগঠনে যুক্ত হয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামকারী :
আল্ কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল অবশ্যই থাকতে হবে, যারা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। এরাই হবে সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান-১০৪) হযরত হারিছিল আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে যে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন আমিও তোমাদেরকে তারই হুকুম দিচ্ছি। তা হলো-জামায়াতবদ্ধ হবে, নেতৃত্বের আদেশ শ্রবণ করবে, আনুগত্য করবে, হিজরত এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।” যে ব্যক্তি ইসলামী সংগঠন ছেড়ে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল। সে যেন নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলল। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের দিকে আহ্বান জানাবে সে হবে জাহান্নামী। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত, সাওম আদায় করলেও কি সে জাহান্নামী হবে? রাসূল (সা) বললেন-হ্যাঁ। সালাত-সাওম পালন করে এবং মুসলমান বলে দাবী করে, তাহলেও সে জাহান্নামী হবে। (আহমদ ও হাকেম)
১৬। ঋণ, চৌর্যবৃত্তি ও অহংকার মুক্ত জীবন জান্নাতের নিশ্চয়তা :
হযরত সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তিনটি জিনিস থেকে মুক্ত অবস্থায় থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জিনিস তিনটি হলো- ১.অহংকার ২. চুরি ও ৩. ঋণ। (নাসায়ী-ইবনে হাব্বান, হাকেম)
১৭। প্রত্যেক ফরয নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করলে জান্নাতে যাবে :
রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়বে সে জান্নাতে যাবে। (নাসায়ী)
১৮। জুমাবারের সালাত এবং এর যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে :
হুজুর আকরাম (সা) এরশাদ করেছেন, পাঁচটি নেক আমল এমন যে ব্যক্তি একদিনে সেসব পালন করবে আল্লাহ্পাক তাকে জান্নাত বাসী করবেন। এক. রোগীর সেবা-শুশ্রƒষা করা, দুই. জানাযায় শরীক হওয়া, তিন. সাওম পালন করা, চার. জুমুআ’র সালাত আদায় করা এবং পাঁচ. গোলাম আযাদ করা । (ইবনে হিব্বান)
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান রাখে, তার জন্যে জুমুআ’র সালাত ফরজ। যে ব্যক্তি নিজের জন্যে বা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যে সেটি তরক করে, তার প্রতি আল্লাহ্ বিমুখ হন। (মিশকাত) হযরত আবু হোরায়রা ও ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে একথা বলতে শুনেছেন; মানুষ যেন জুমুআ’ বর্জন থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ্তায়ালা তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন। অতঃপর তারা গাফিলদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম, ইবনে মাযা)
১৯। তাকওয়াবান ব্যক্তি তাঁর রবের জান্নাতে প্রবেশ করার রাজপথ :
“তাকওয়াবানদের জন্য যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে তার পরিচয় এই যে, তার নিম্ন দেশে ঝর্ণা প্রবাহিত হচ্ছে। তার ফল-ফলাদি চিরন্তন এবং ছায়া অবিনশ্বর। এটা হচ্ছে মুত্তাকী লোকদের পরিণাম।” (আল্ কোরআন ১৩ঃ১৫) হযরত আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমি রাসূল (সা)কে বিদায় হজ্বের ভাষণে বলতে শুনেছি, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করো, রমজানের সাওম পালন করো, নিজেদের মালের যাকাত দাও এবং আমীর অর্থাৎ তোমাদের ওপর নিয়োজিত শাসকবর্গের আনুগত্য করো, তাহলে তোমরা রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। ( তিরমিযী)
২০। যে স্ত্রীর ওপর স্বামী সন্তুষ্ট সে জান্নাতী :
রাসূল (সা) বলেছেন, যে স্ত্রীলোক স্বামীকে খুশী রেখে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে।( ইবনে মাযা, তিরমিযী) তিনি আরো বলেন, “কোন মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ঠিকমতো আদায় করবে, রমজানের সাওম সঠিকভাবে পালন করবে এবং স্বামীর একান্ত বাধ্যগত থাকবে , তখন সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (মুসনাদে আহমদ, তাবরানী)
২১। দান-সদকা জান্নাতের পথ দেখায়, জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে :
আল্ কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “যেসব নারী ও পুরুষ অকাতরে আল্লাহর পথে দান করে এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়, তাদের সে ঋণ আল্লাহর পক্ষ থেকে বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে, উপরন্তু তাদের জন্য থাকবে আরো সম্মানজনক পুরষ্কার।” (সূরা হাদীদ-১৮) রাসূল (সা) বলেছেন, সাদকা গুনাহকে এমনভাবে শীতল করে দেয়, যেমন পানি আগুনকে ঠাণ্ডা করে দেয়। (তিরমিযী)
২২। আযানের জবাবদানকারী জান্নাতে যাবে :
রাসূল (সা) বলেছেন, “যখন তোমরা মুয়ায্যিনকে আযান দেতে শুনবে, তখন মুয়্ািযন যেরূপ বলবে তদ্রুপ বলবে।” (বুখারী) রাসূল (সা) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে আযানের জবাব দিয়েছে, সে জান্নাতে যাবে।”
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১ম খন্ড, পৃ-৩৩৩)
(চলবে..)
![]()
=====
বিষয়: সাহিত্য
১৫৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন