তুরস্কের মাটি ও মানুষের গল্.
লিখেছেন লিখেছেন মীম রহমান ২৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:৫০:৫৪ রাত
১. ইস্তাম্বুলে এক ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়. রাত তখন প্রায় ১২ টা. সবদোকান-পাট বন্ধ. কিন্তু কয়েকটা ফলের দোকান তখনও খোলা ছিল তবে মালিক খুজে পাওয়া গেলনা. শুনলাম এভাবে খোলা রেখেই তারা প্রতিদিনই বাড়ী ফিরে কেননা চুরির ভয় নেই. আমরা অনেকটা আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম যে, এ যুগেও এটা সম্বব...! হুম আমাদের ডরমেটরীতেও রুমগুলোতে তালা নেই. খোলা রেখেই ক্লাশে যাই. কিন্তু কারো লেপটপ-টাকা-পয়সা কখনো চুরি হয়েছে এমন ঘটনা নেই.
২. সার্টিফিকেট সত্যায়িত করানোর জন্য তুরস্কের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে যেতে হয়েছিল. সাধারণত এটা করতে ১৫ দিন সময় লাগে কিন্তু আমাদের হাতে সময় ছিলনা. ২/১ দিনের মধ্যেই জমা দিতে হবে. কী আর করা....! সরাসরি চলে গেলাম যুগ্মসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তার কাছে. আমাদের সাথে থাকা বাংলাদেশী ২ জন ভাই তুর্কী ভাষায় আমাদের প্রয়োজনের কথা উনাকে বললেন. আমাদের দিকে উনি কতক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন. সম্ববত উনার খুব মায়া হল. কিছু প্রসেসিং কমপ্লিট করার পর উনি নিজেই টাইপ করে সচিবের স্বাক্ষর নিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে কাজটি করে দিলেন.
৩. রেসিডেন্ট পারমিট নেওয়ার জন্য ডরমেটরীর প্রধানের (হলের প্রভোস্ট) কাছ থেকে একটা প্রত্যয়ন পত্র নিতে হয়. আমি এবং পারভেজ ভাই উনার রুমে কাগজটি নিয়ে ঢুকলাম. উনি নিজের চেয়ার থেকে এগিয়ে এসে এতে স্বাক্ষর করে দিলেন এবং অনেকক্ষণ ধরে অনেকটা বন্ধুর মতই খোশগল্প (দুষ্টামী) করতেছিলেন.
তুরস্কের মানুষগুলো এমনই সহজ-সরল, বন্ধুপরায়ন, পরোপকারী, সদালাপী, সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ. আপনি যদি কোথাও গিয়ে আপনার গন্তব্য না চিনেন এবং কোন তার্কী লোককে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে উনি শুধু আপনাকে রাস্তাই দেখাবে না বরং ভাড়াও দিয়ে দিবে অথবা যদি উনার নিজের গাড়ী থাকে তাহলে আপনাকে ড্রাইব করে গন্তব্যে রেখে আসবে. আপনি যদি কোন অপরিচিত তার্কিশ লোকের সাথে পরিচিত হোন তাহলে সে আপনাকে অপ্যায়ন করানোর চেষ্টা করবে. কাউকে ঠকানোর কোন মানসিকতা তাদের নেই. নেই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাস কিংবা মারামারি. তাদের আছে নিয়ম মানার মানসিকতা, উদার হৃদয়. তবে ব্যতিক্রম ২/১ জন তো আছেই.....!
আমি বারবারই চিন্তা করি তারা এ সুন্দর স্বভাবগুলো কোথা থেকে পেল...? অনেক খুজে একটাই উত্তর পেলাম, তুরস্কে অধিকাংশ সময়ই ইসলামিস্টরা ক্ষমতায় ছিল. উসমানী খলিফারা প্রায় সাড়ে সাতশত বছর একটানা দেশ চালিয়েছে. তাইতো লোকগুলো এত সুন্দর কেননা তারা তাদের পূর্বপুরুষ থেকেই ইসলামের সুমহান আদর্শ শিখে আসছে.
বিষয়: বিবিধ
১১৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন