মানবতার মুক্তির পথ প্রদর্শক হিসেবে মোহাম্মদ (সঃ) এর উপর ওহীর সুচনা যেভাবে

লিখেছেন লিখেছেন খান জুলহাস ২০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:১৯:১৯ রাত

মানবতার মহান শিক্ষক হিসেবে, গোটা পৃথিবীর মানুষের উপর রহমত হিসেবে এই দুনিয়াতে এসেছিলেন আমাদের প্রিয় নবী , নবীকুল শিরোমনি হযরত মোহাম্মদ (সঃ) নবুয়াতের আগে তিনি মানুষের শান্তি কিভাবে আসবে ? কিভাবে সবাই তার অধিকার ফিরে পায় সে জন্যে অনেক চেস্টা সাধনা করেছিলেন।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে বচ্ছিতদের অভিকার রক্ষার জন্যে হিলফুল ফুযুল নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্টা করেছিলেন। এটার মুল উদ্দেশ্য ছিল সবার অধিকার নিশ্চিত করা । শুধুমাত্র মানব মস্তিস্কের জ্ঞানের মাধ্যমে যে মানুষের পুরোপুরি শান্তি আসেনা।

মহান রব্বুল আলামিন তিনি মানব জাতির মুক্তির দিশা দিতে পবিত্র কোরআন এই ওহী নাযিল করেন। ৪০ বছর বয়সে প্রথম সুরা আলাকের প্রথম পাচ আয়াত নিয়ে নাযিল হয় মোহাম্মদ (সঃ) এর উপর। সেই সময়ের সকল অবস্থার বর্ননা রয়েছে পবিত্র হাদিস শরিফে। আসুন জেনে নিই সে ওহী নাযিলের বর্ননা সমুহ,

ইয়াহ্ইয়া ইব্‌ন বুকায়র (র) ......... আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি ‘হেরা’ গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া---- এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারপর খাদীজা (রা)-র কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, ‘পড়ুন’। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেনঃ “আমি বললাম, ‘আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললামঃ আমিতো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হলো। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ ‘পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, ‘আমিতো পড়িন’। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত।” (৯৬: ১-৩) তারপর এ আয়াত নিয়ে ররাসূলুল্লাহ্ (সা) ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিন্‌ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও।’ তাঁরা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হলো।

তখন তিনি খাদীজা (রা) এর কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা (রা) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, কখনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।

এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা (রা) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইব্‌ন নাওফিল ইব্‌ন ‘আবদুল আসাদ ইব্‌ন ‘আবদুল ‘উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ‘ঈসায় ’ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহ্‌র তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইনজীল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রা) তাঁকে বললেন, ‘হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।’ ওয়ারাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ রাসূলুল্লাহ্ (সা) যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন। তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ‘ইনি সে দূত যাঁকে আল্লাহ্ মূসা (আ) এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে।’ রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব।’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা (রা) ইন্তিকাল করেন। আর ওহী স্থগিত থাকে।

ইব্‌ন শিহাব (রা) .......... জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ আনসারী (রা) ওহী স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেনঃ একদা আমি হেঁটে চলেছি, হঠাৎ আকাশ থেকে একটি আওয়ায শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম, সেই ফিরিশতা, যিনি হেরায় আমার কাছে এসেছিলেন, আসমান ও যমীনের মাঝখানে একটি কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তৎক্ষণাৎ আমি ফিরে এসে বললাম, ‘আমাকে বস্ত্রাবৃত কর।’ তারপর আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন, “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন।

অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।” (৭৪: ১-৪) এরপর ব্যাপকভাবে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল।

আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ইউসুফ (র) ও আবূ সালেহ্ (র) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হেলাল ইব্‌ন রাদ্দাদ (র) যুহরী (র) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইউনুস ও মা’মার ..... স্থলে ...... শব্দ উল্লেখ করেছেন।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ১ :: হাদিস ৩)

মূসা ইব্‌ন ইসমাঈল (র) ............ ইব্‌ন ‘আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনার জিহ্বা তার সাথে নাড়বেন না’ (৭৫:১৬) এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ওহী নাযিলের সময় তা আয়ত্ত করতে বেশ কষ্ট স্বীকার করতেন এবং প্রায়ই তিনি তাঁর উভয় ঠোঁট নাড়তেন। ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, ‘আমি তোমাকে দেখানোর জন্য ঠোঁট দুটি নাড়ছি যেভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সা) নাড়তেন।’ সা’ঈদ (র) (তাঁর শাগরিদদের) বললেন, ‘আমি ইব্‌ন ’আব্বাস (রা)-কে যেভাবে তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়তে দেখেছি, সেভাবেই আমার ঠোঁট দুটি নড়াচ্ছি।’ এই বলে তিনি তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়ালেন।

এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেনঃ “তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহবা তার সাথে নাড়বেন না। এর সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই।” (৭৫:১৬-১৮) ইব্‌ন ‘আব্বাস (রা) বলেন অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং চুপ থাকুন। এরপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই (৭৫:১৯)।’ অর্থাৎ আপনি তা পাঠ করবেন এটাও আমার দায়িত্ব। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে জিবরাঈল (আ) আসতেন, তখন তিনি মনোযোগ সহকারে কেবল শুনতেন। জিবরাঈল (আ) চলে গেলে তিনি যেমন পড়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও ঠিক তেমনি পড়তেন।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ১ :: হাদিস ৪)

আবদান (র) ......... ও বিশর ইব্‌ন মুহাম্মদ (র) ........ ইব্‌ন ‘আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমযানে তিনি আরো বেশী দানশীল হতেন, যখন জিবরাঈল (আ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমযানের প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন তেলওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ্ (সা) রহমতের বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন।(সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ১ :: হাদিস ৫)

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটিঃ মৌখিক স্বীকৃতি (ইয়াকীনসহ) এবং কর্মই ঈমান এবং তা বাড়ে ও কমে। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ “যাতে তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান দৃঢ় করে নেয় (৪৮:৪) আমরা তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম (১৮:১৩)। এবং যারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাদের অধিক হিদায়ত দান করেন (১৯:৭৬)।

এবং যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ্ তাদের হিদায়ত বাড়িয়ে দেন এবং তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দেন (৪৭:১৭), যাতে মু’মিনদের ঈমান বেড়ে যায় (৭৪:৩১)।

আল্লাহ্ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বাড়িয়ে দিল? যারা মু’মিন এ তো তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয় (৯:১২৪)। এবং তাঁর বাণী, ..............“সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর; আর এটা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল” (৩:২৭৩)।

........... “আর এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বাড়লো।” (৩৩:৩৩)। আর আল্লাহ্র জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহ্র জন্য ঘৃণা করা ঈমানের অংশ।

উমর ইব্ন ‘আবদুল ‘আযীয (র) ‘আদী ইব্ন ‘আদী (র)-র কাছে এক পত্রে লিখেছিলেন, ‘ঈমানের কতগুলো ফরয, কতগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না। আমি যদি বেঁচে থাকি তবে অচিরেই এগুলো তোমাদের কাছে বর্ণনা করব, যাতে তোমরা তার ওপর ‘আমল করতে পার। আর যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের সাহচর্যে থাকার জন্য আমি লালায়িত নই।’

ইবরাহীম (আ) বলেন, ....... ‘তবে এ তো কেবল চিত্ত প্রশান্তির জন্যে’ (২:২৬০)। মু’আয (রা) বলেন, “এসো আমাদের জঙ্গে বস, কিছুক্ষনঈমানের আলোচনা করি।” ইব্ন মাসউদ (রা) বলেন, ‘ইয়াকীন হল পূর্ণ ঈমান।’ ইব্ন উমর (রা) বলেন, ‘বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে যে বিষয় খটকা জাগে তা ত্যাগ না করে।’ মুজাহিদ (রা) এ আয়াতের ব্যখ্যায় বলেন, .......... অর্থাৎ হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাকে এবং নূহকে একই দীনের নির্দেশ দিয়েছি। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ............ অর্থাৎ পথ ও পন্থা—এবং তোমাদের দু’আ অর্থাৎ পথ ও পন্থা এবং তোমাদের দু’আ অর্থাৎ তোমাদের ঈমান।

আল্লাহ আমাদের কে দ্বীনের উপর অবিচল থাকার শক্তি দিন । আমীন

বিঃদ্র যদি আমার জানা শুনায় ভূল থাকে তাহলে আপনারা যদি জানেন সঠিকটি জানাবে।

বিষয়: বিবিধ

১০৩৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286300
২০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File