পথে পথে ( ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব-৪)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ অয়েজুল হক ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:০৬:৪৩ দুপুর

রাত এগারটা পনের মিনিটে হোটেলে ফেরে মোকলেস। জামা কাপড় সম্পূর্ন ভেজা। মাঝখানে একটা বৃষ্টি মাথার উপর দিয়ে গেছে। হোটেলের ম্যানেজার মোকলেসকে দেখে ভ্রুকোচকায়। ‘ কে আপনি?’

‘ আমি মোকলেস।’

‘ মোকলেস! তা হোটেলে কি?’

‘ আমার রুমের……’

মোকলেসের কথা শেষ করতে দেয়না ভদ্রলোক। আবার কথা বলেন তিনি,‘ রাত এগারটার পর কোন রুম ভাড়া দেওয়া হয়না।’

‘ রুমের দরকার নেই চাবিটা দিলেই হচ্ছে।’

‘ চাবি দেব মানে?’ খেকিয়ে ওঠেন ম্যানেজার।

‘ আপনি চিৎকার করছেন কেন?’

‘ চিৎকার করছি কেন!’ আরও জোরে চিৎকার করেন হোটেল ম্যানেজার। ‘ বের হন, এক্ষুনি হোটেল থেকে বেরিয়ে যান।’

মহাবিপদ। আজকাল ছোট বিপদ গুলোর সামনে বেশি দাড়াতে হচ্ছে না। দাড়াতে হচ্ছে সব মহাবিপদের সামনে।

মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ‘ আমি ভাই এই হোটেলের একজন গেস্ট, পুরাতন গেস্ট।’ নরম কন্ঠে কথা বলে মোকলেস।

‘ বললাম না রাত এগারটার পর আমরা কোন গেস্টকে বরন করিনা।’ ভেংচি কাটে লোকটা।

বাংলা ভাষায় কথা বলছে অথচ লোকটা বুঝতে পারছে না। এসব লোকের হোটেল ম্যানেজার হওয়া উচিত নয়। হোটেল ম্যানেজার হবে এক কথায় বুঝে ফেলা মানুষ। কথা শেষ হবার আগেই তিনি বুঝে ফেলবেন ব্যক্তি কি বলতে চায়। এ ম্যানেজারও বুঝেছে তবে উল্টোটা। দু’একজন হোটেল ম্যানেজার আবার বেশি বোঝে। বেশি বুঝলেও সমস্যা। কিছুদিন আগে সিলেটে একটা হোটেলে উঠেছিল মোকলেস। রাত এগরটা। সুরমা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে দূরের অন্ধকার, আরও দূরে জ্বলা নৌকার বাতি দেখছিল। ব্রিজটা নোংরা হলেও ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত নদীর মৃদূ শব্দ, অনেক দূরে দাড়িয়ে থাকা গাছপালা, মাথার উপরের চাঁদ, চাঁদকে ঘিরে থাকা একফালি সাদা স্বচ্ছ মেঘ এসব বড় সুন্দর। এক সুন্দর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত ১২ টা বাজে। খিদায় পেট চো চো করে। ইন্টরকমে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে, ‘ হ্যালো ম্যানেজার খুব খিদে পেয়েছে খাবারের ব্যাবস্থা করা যায়।’

ম্যানেজার সাহেব হেঃ হেঃ শব্দ করে হাসেন। ‘ কেন যাবেনা, খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। খুব সুন্দর খাবার।’

বিশ মিনিট পর দরজায় টুক টাক শব্দ হয়। ম্যাসিয়ার সম্ভাবত খাবার নিয়ে এসেছে। মোকলেস উঠে গিয়ে দরজা খোলে। দরজা খুলেই অবাক হয়। একটা আঠার উনিশ বছরের মেয়ে। ফর্সা শরীর। মুখে মিষ্টি একটা আভা। ঠোট আর মুখের গড়ন অসম্ভব ধরনের সুন্দর।

‘ কি চাই?’

‘ ম্যানেজার সাহেব বললেন…….’

মেয়েটার কন্ঠে জড়তা।

‘ কি বললেন?’

‘ বললেন আপনার এখানে আসতে।’

‘ আমি তো ম্যানেজারকে খাবার পাঠাতে বলেছি, খাবার কই?’

‘ আমিই তো খাবার, রাতের খাবার। আমাকে কুড়ে কুড়ে খান।’

মোকলেস অবাক হয়। আজকাল মানুষ এসব খাবার খাচ্ছে! ইউরোপ- আমেরিকার হোটের ম্যানেজারদের মতো এদেশের হোটেল ম্যানেজাররাও রাতের বেলা পুরুষদের কে নারী খাওয়াচ্ছে। একটা মুসলিম দেশ, জাতি হিসাবে আমাদের ঐতিহ্য, মুসলমান হিসাবে আমাদের কর্তব্য, চরিত্র সবকিছু আজ অন্ধ সভ্যতায় প্রভাবিত, ভুলুন্ঠিত। এসবের পর আল্লাহ প্রদত্ত গজব যখন আমাদের সামনে হাজির হয় তখন আমরা সমবেত কন্ঠে চিৎকার করি- হায় মালিক আমরা না তোমার মুসলমান। আমাদের মার কেন? মার খাওয়ায় কেন! আমাদের চিৎকার মাবুদের যমিন থেকে আসমান পর্যন্ত পৌছায় না।

বিষয়: সাহিত্য

১০৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File