ভালবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-২)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:১৬:৩১ সকাল
২.
কিছু মানুষ রয়েছে, যারা মনে হয় জন্ম থেকেই ধুরন্ধর অর্থাৎ শিয়ালের মত একধরণের ধুর্তামি তাদের ডি এন এ'তে বহন করে পৃথিবীতে আসে। প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের এই পণ্ডিতম্মন্য গুণ চমকাতে থাকে। এ রকম কয়েকজন মানুষের দেখা পেলো রায়হান, শমশেরনগর আবাসিক এলাকায় যখন ওদের তিনজনের পরিবার শিফট হয়ে এলো। এদেরই একজন জসীম নেতা। নিজেই চালাকি করে নামের শেষে নেতা টাইটেল লাগিয়ে নিয়েছে। এখন নেতা হোক বা না হোক, নেতার গুণ থাকুক বা না থাকুক- মানুষ তো নেতাই ডেকে চলছে।
'এই, কই যাও?'
- জসীম নেতার বাড়ি।
কিংবা
' ভীষণ সমস্যায় পড়লাম, কি করি ভাই বলতো?'
- এ্যাতো টেনশন করস ক্যারে? জসীম নেতার কাছে যাস না।
এভাবে মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই নিজের অজান্তেই জসীম নামের একজনকে 'নেতা' নামে ডাকতে ডাকতে তাকে মনের অগোচরেই নেতার আসনে বসিয়ে দেয়। যেভাবে এই আবাসিক এলাকার এই কূটিল মানুষটিকে সবাই বানিয়ে দিয়েছে।
সে অনেক কাহিনী।
আপনারা ধীরে ধীরে সবই জানবেন। আজই তো রায়হান এসেছে এই এলাকায়।
নিজের এক চরম দুরাবস্থায় চাকরিহীন রায়হান কে ঢাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে উপজেলার এই নির্জন গ্রাম্য পরিবেশে চলে আসতে হয়েছে।
একজনের ফেলে রাখা প্রায় পরিত্যক্ত যায়গায় অনেকটা 'কেয়ারটেকার' হিসেবেই থাকবে সে।
অন্তত বাসা ভাড়া দেয়া লাগবে না।আর কয়েকটি রুম করে দিবেন বলেছেন ঐ যায়গার মালিক। সেগুলো থেকে ভাড়া যা আসবে তা দিয়ে এই যায়গাটির রক্ষণাবেক্ষণ করায় ব্যয় করতে পারবে সে। ভিতরে অনেক যায়গা রয়েছে। চাইলে শাক-সব্জির আবাদও করতে পারবে।
বাহ!
মাস্টার্স কমপ্লীট করে শেষে একজন চাষী হতে যাচ্ছে শিহাব।
একজন সাধক। শুধুই কি সাধক। অনেক বড় সাধক। ঐ যে, একটা কবিতা আছে না-
'সব সাধকের বড় সাধক
আমার দেশের চাষা'
দেশ মাতারই মুক্তিকামী
দেশের সে যে আশা'...
তবে সে হতে যাচ্ছে একজন আধুনিক চাষী। এই শব্দটি থেকে ঈ-কারের যায়গায় আ-কার দিলেই কেমন অর্থটা বদলে যায়। রুমাকে একথা বলতেই কেমন যেন চোখ পাকিয়ে তাকিয়েছিল রায়হানের দিকে।
আর তাকাবেই বা না কেন?
রুমার বিদেশে অবস্থানরত মামার বদৌলতেই তো বিনে-পয়সায় এই থাকার যায়গাটুকু পেয়েছে ওরা। নাহলে কে আজকাল একেবারে মুফতে থাকার যায়গা দেয়? তাও আবার কয়েকটি এক্সট্রা রুম করে দিবেন ভাড়া দেবার জন্য। সেই টাকাগুলোও ওদের কাজে লাগাতে পারবে।
ট্রাক থেকে সব মালামাল বুঝে নামিয়ে ট্রাক বিদেয় করে দিতে দিতে সেই দুপুর পার হয়ে গেলো। মালামাল নামাতে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের অনেক পুরনো বেলজিয়াম কাঁচের আয়নাটা চুরমার হয়ে গেলো। আর রায়হানের একটি ব্লেজার নাই হয়ে গেলো। কিভাবে হল, তা নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় নেই এখন আর। ক্ষিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। আর এখানে গ্যাসের লাইন এখনো আসেনি। আপাতত স্টোভে রান্না করতে হবে কয়েক বেলা। গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে তারপর পার্মানেন্ট বন্দোবস্ত।
মিতু পুরো যায়গার ভিতর একা একা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। সবে চার বছরে পড়েছে। রায়হান আর রুমার এই একটিই মেয়ে। ওদের দুজনের অস্তিত্ব। সকল কিছুর কেন্দ্র। মিতুকে ঘিরেই দুজনের সকল পথচলা। তাইতো সময়ের ফেরে রাজধানীর ফাস্ট লাইফে অভ্যস্ত একটি পরিবার আপাতদৃষ্টিতে নিরিবিলি এক গ্রাম্য পরিবেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। চার বছরের মিতু খুব এক্সাইটেড। ওর কাছে নতুন এই যায়গাটি তার নবরুপের প্রথম দর্শণধারী গুণের মায়ার চমক দেখিয়ে ওকে ওর কচি মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা শুরু করেছে ইতোমধ্যে।
নতুন যায়গায় কেউ এলে নানান রঙের মানুষ দেখতে আসে- কারা এলো।
একটু বাজিয়ে দেখে কেউ। কেউবা মাপতে আসে। উদ্দেশ্য নিয়ে আসে অনেকে। কেউবা হুদা কামে আসে।
এরকম একজনকে রায়হান দেখতে পেল মিতুর সাথে কথা বলছে। রায়হানের থেকে কয়েক বছরের ছোট হবে এমন একজন এবং মিতুর কিছু কথাবার্তা-
' কি নাম তোমার বাবু?'
-মিতু।
'বাহ! সুন্দর নাম।'
-থ্যাংক ইউ আংকেল।
'তোমরা আগে কোথায় থাকতে?'
- রামপুরায়।
' এখানে চলে আসলে কেন?'
- পাপার চাকরি নাই। টাকাও নাই।
আলোচনার এমন ক্লাইমেক্স অবস্থায় রুমার ডাকে মিতুকে চলে যেতে হয়। স্বল্প পরিচিত আংকেলকে বাই বলে মিতু মায়ের কাছে চলে যায়। মিতুর এই আংকেলটি এলাকায় নতুন আসা এই ছোট পরিবারটির ভিতরের আসল খবরটি জেনে ফিরে যায়। অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে তার। পেটটাও কিছুটা ফুলে গেছে। নতুন পরিবারটির সম্পর্কে পাওয়া খবরগুলো 'যায়গামত' পৌঁছে দিতে না পারলে শান্তি হচ্ছে না।
এই ধরণের লোক হল 'রয়টার' টাইপ। এরা খবরাখবর দ্রুত পৌঁছাতে বেশ উস্তাদ।
ঘন্টাখানেকের ভিতরেই শমশেরনগর আবাসিক এলাকার অধিকাংশ বাড়ির মালিকদের জানা হয়ে গেল যে, ঢাকার রামপুরায় থাকত এমন একটি পরিবার এই এলাকায় থাকতে এসেছে- যার কর্তা ব্যক্তিটি বেকার। সুন্দর একটি বউ রয়েছে। আর পুতুলের মত একটি মেয়ে। কিন্তু এরা সহায়-সম্বলহীন।
বিকেলের দিকেই সবাই রায়হানদের থেকে সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেলল।
সমাজে অর্থ-বিত্ত এমনই একটি ফ্যাক্টর।
মানুষের আগ্রহকে ধরে রাখে এই জিনিসটি।
যেটি রায়হানের ঠিক এই মুহুর্তে নাই।
তাই সকলের চিন্তা-ভাবনায়ও রায়হান নামে কেউ 'কিছুই' দাগ কাটার মত রেখে যেতে পারল না।
সে প্রথম দর্শনে স্রেফ নাই হয়ে রয়ে গেল এই আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের কাছে।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
৮৯০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলো কর্ণেল, ছাত্রদের মারামারির কোন কেইস তার কাছে গেলে, মার যে খেয়েছে তাকেই আগে ইচ্ছামতো পিটিয়ে নিতো কতোক্ষণ, তারপর ডায়লগ দিতোঃ মেদী কোথাকার, তোকে মারলো তুই কেন ওকে মারলি না?
এরকম শিক্ষক দরকার সমাজের সর্বস্তরে, মারামারির প্রবণতা একটা পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত, সাধারণ মানুষের অবস্থা ও অবস্থান কখোনোই বদালাবে না বলেই আমার মনে হয়!
সুন্দর বলেছেন। আপনার প্রিন্সিপ্যালের মত কিছুটা অনুভব করেছি আমার আব্বার থেকে।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধুরন্ধর ও নেতা এখন প্রতি শব্দ হয়ে গেছে যেন! এদের কারণেই সমাজের আজ বারটা বেজে যাচ্ছে। অর্থ বিত্ব সামাজিক মর্যাদার মাপ-কাঠি হয়ে যাওয়ায় এ সব ব্যক্তিদের দাপটও অনেক।
নান্দিকতায় সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে বর্তমানের কুৎসিত কিছু দিক.....।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।
আপনার কাছে লাইটহাউসের লিঙ্কটি চেয়েছিলাম।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমার কাজ সফল হয়েছে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ঠিক বলেছেন, এই মজা লাভের জন্য অনেকেই অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। তবে সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারে না।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমি অপেক্ষায় রইলাম।
জাজাকাল্লাহ
আমি অপেক্ষায় রইলাম।
জাজাকাল্লাহ
সাথে রয়েছেন এবং অনুভূতি প্রকাশ করছেন, সেজন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
পড়লাম, জাযাকাল্লাহ.. দোয়া করি
চলুক....
মন্তব্য করতে লগইন করুন