^^ কিছু উল্টো ভাবনা, বিকৃতি এবং বোধোদয়
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৫২:২৩ দুপুর
অফিসে বসে বসে কী-বোর্ডের ওপর অলস আঙুলগুলো দ্রুত হয়ে উঠবার জন্য কিলবিল করছিল। কিন্তু ব্রেইন সেভাবে সাড়া দিচ্ছিল না। অবশেষে সাড়া পেলাম এবং লেখাগুলো উগড়ে দিতে শুরু করলাম...
উল্টো ভাবনাঃ
সুনীল গঙ্গোপাধ্যয় মারা গেছেন। একজন ভাল লেখক, কবি, সাহিত্যিক- মোটকথা লেখার জগতে যা কিছু ভাললাগা আছে, তার সবটাই আমি পেয়েছি তার লেখার ভিতর।
কিন্তু আজ তাকে এখানে নিয়ে আসা অন্য এক কারণে।
‘’... তেত্রিশ বছর কেটে গেলো
কেউ কথা রাখেনি...’
এই কবিতাটি শুনে নাই এমন মানুষ মনে হয় খুব কমই আছে। আমার কাছে আজ এই কবিতার জন্য সুনীলকে অভিযোগকারী হিসেবে মনে হল। কে কি করে নাই সেটা ফলাও করে সবাইকে জানানো হয়েছে এই কবিতায়। আর সেটা পড়ে সকলের ভিতরেও একই না পাওয়ার ভাব জন্মে যায়। আমার ক্ষেত্রে এমন হয়েছে বিধায় বললাম। সকলের না ও হতে পারে। তবে মানব প্রকৃতিই এমন। অন্যের চোখে নিজেকে দেখার প্রবনতা। আর সে জন্যই কেউ যে কথা রাখে নি, সেটা এবং 'আমার' ক্ষেত্রে কে কি করেনি – এসব বিষয়গুলো কবিতাটি পড়ার বা আবৃত্তি শোনার সময় চোখ খোলা থাকা অবস্থায় চোখের সামনে ভেসে উঠে। এ যেন ‘চোখ খুলে বন্ধ অবস্থায় দেখা’।
আমি আজ এই ৪৩ বছরে এসে একটু অন্য ভাবে ভাবতে চাই। কে কি কথা রাখে নি সেটা দেখার বা ভাবার আগে আমি কাকে কি কথা দিয়েছিলাম বা দিয়ে রাখি নাই- ওটা ভাবার প্রয়োজন। আমি নিজেই একটা কবিতা লিখব কিনা ভাবছি। যার কয়েকটা লাইন এমন হতে পারে-
... ৪৩ বছর পেরিয়ে এসেও আমি
কথা রাখতে পারি নি।
শুনেছি, কথা নাকি দেওয়াই হয়
না রাখার জন্য! ...’
এভাবে আগালে কেমন হয়?
বন্ধুরা, সুনীলের কবিতার নিরিখে যদিও অনেকের কাছে আমার লেখা কবিতার অংশটুকুন উল্টা লাগতে পারে। কিন্তু ভাবনার জগতে এটাই আসলে সোজা পথ। আসুন সবাই একটু এভাবেই ভাবি। এর দ্বারা ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সকল না পাওয়ার বেদনা মুছে যাবে...
বিকৃতিঃ
বেশ কিছুদিন আগে অভিযোগ উঠেছিল একজন শিশু সাহিত্যিক শিশু পর্ণোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত!!?
যেহেতু বিষয়টি এখনো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অধীনে তদন্তনাধীন এবং আদালতের দ্বারা নিষ্পত্তি হয়নি, তাই আমি নাম উল্লেখ করছি না। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির অনেক লেখাই আমি পড়েছি... ভালো লাগত... কন্যাদেরকে শুনিয়েছি... অনেকটা শকড আমি। এই সাহিত্যিক ছেলেশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরী করে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিক্রি করেছেন। পুলিশ তাঁর নিজস্ব ষ্টুডিও থেকে কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক, সিপিইউ, ল্যাপটপ, ক্যামেরা ও শতাধিক পর্ণো সিডি উদ্ধার করেছে।
একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা হোমওয়ার্ক করে না আনাতে কোমলমতি ৪৮ শিশুদের হাতে ব্লেড ধরিয়ে দেন এবং নির্দেশ দেন হাত-পা কেটে রক্তাক্ত করতে। শিশুরা বাধ্য হয়ে নিজেদের হাত-পা কেটে রক্তাক্ত করেছিল!! ঘটনাটি ঘটেছিল সুনামগঞ্জ শহরতলির ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
উপরের দুটি ঘটনা আমাদেরকে কি হতবাক করে দিচ্ছে না? একজন স্বনামধন্য শিশু সাহিত্যক যে নিজের ক্ষেত্রে সব দিক দিয়ে অনেক অগ্রগামী ছিলেন... একজন সফিস্টিকেটেড মানুষ যে কোমলমতি ব্রেইনের চাহিদানুযায়ী লেখার যোগ্যতা রাখেন। তাঁর মত মানুষ শিশু পর্ণোগ্রাফিতে জড়িয়ে যাবেন?
অপরদিকে, মানুষ গড়ার কারিগর একজন আলোকিত মানুষ শিশুদেরকে নিজ হাতে ব্লেড দিয়ে রক্তাক্ত করাবেন?
এরা কি ম্যানিয়াক?
সমাজ ব্যবস্থার ভিত কি দিনে দিনে টলে যাচ্ছে?
মানুষের ভিতরের কালো হৃদয়টা দিন দিন আরো কালো হচ্ছে?
কেন এই জঘন্য মনোবৃত্তির দিনে দিনে বহির্প্রকাশ হচ্ছে?
গত ১৩ জুন প্রথম আলোয় সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক তাঁর 'অরন্যে রোদন' লেখায় লিখেছিলেন, ...'মানুষ একটা আশ্চর্য প্রাণী। সে কেবল খেয়ে-পরে বাঁচতে চায় না, বিচিত্রভাবে, দারুনভাবে বাঁচে, বর্নীলভাবে জীবন যাপন করে।' এই বিকৃত মনোভাবই কি আনিসুল হকের কথার সেই বিচিত্র কিংবা দারুনভাবে অথবা জীবন যাপনের সেই বর্ণীলতা?
বোধোদয়ঃ
'এতোদিনে বুঝিলেন মহাশয়
মাসে মাসে বেতন কেন হয়,
চাকুরির মধ্য আছেন বলে
এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।'- কোনো একটা নাটকের শেষে এই গানটি ছিল। নাটকটির নামটা আজ মনে নেই।
একজন অফিসের বসের একদিন মনে হল, 'তিনি বেতন কেন পান?' কি এমন কাজ করেন যে তাকে বেতন দিতে হবে- এই চিন্তায় এই বস ভদ্রলোক অস্থির হয়ে গেলেন। সাব-অর্ডিনেটদের কে জিজ্ঞেস করেন,
: আমি বেতন কেন পাই?
: স্যার, আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন বিভিন্ন কাজের, তাই পান।
: তোমাদের আমি কি নির্দেশ দেই?
: নির্দেশ তো আগেই দেয়া আছে। আমরা সেটাই পালন করি।- এই উত্তরটা ও বসের মনঃপুত হল না। নির্দেশ যদি আগেই দেয়া হয়ে থাকে তবে তার আর প্রয়োজন কিসের।
বাসায় এসে বউ-ছেলেমেয়েকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। তাঁরা বলেন যে, তার সংসারে বউ-ছেলেমেয়েরা আছে , তাদেরকে পালতে হবে বিধায় তিনি বেতন পান। এটাও তার পছন্দ হয় না।
পরবর্তীতে তিনি ধরে ধরে সবাইকে এই একই প্রশ্ন করেন। এক পর্যায়ে তার বউ তাকে একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে নিয়ে যান। সেখানে সাইক্রিয়াটিস্ট তাকে জিজ্ঞেস করেন,
:আপনাকে চাকুরী দেবার সময় কি এপয়েন্টমেন্ট লেটার দেয়া হয়েছিল?
: হ্যা, হয়েছিল।
:আপনি কি রিটায়ারমেন্টের কোনো নির্দেশ সম্বলিত কাগজপত্র পেয়েছেন?
: জী না, পাই নাই।
: তাহলে তো আপনাকে বেতন নিতেই হবে। ওটা না পাওয়ার জন্য ই আপনাকে বেতন দেয়া হয়।
এবার বস ভদ্রলোক খুব সহজেই বুঝতে পারলেন।
আমাদের দেশেও উচ্চপদস্থ সরকারী আমলা- মন্ত্রী এমপি এদের ভিতরও ঠিক এই বোধ কাজ করছে। কিন্তু তাদের ভিতর ঐ বস ভদ্র লোকের মতো অস্থিরতা নেই বিধায় কোনো লজ্জাও নেই।এইজন্য ই তাঁরা নির্লজ্জ ভাবে জনগনের টাকায় প্রতিপালিত হয়। আর এ্কতরফা শুধু নেবারই প্র্যাকটিস করে থাকে।
এই জন্যই বোধহয় নির্বাচন এলে, মন্ত্রী এমপি'রা আমাদের দুয়ারে জোড় হাত করে ভিক্ষুকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
একদল বেহায়া- নির্লজ্জ ও অকৃতজ্ঞ ভিক্ষুক!
বিষয়: বিবিধ
১০৯৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অন্য কে নিজের চোখে না দেখে, নিজেকে অন্যের চোখে দেখার পরিণতিই মানুষের কালো হ্রদয়।ধর্মীয় নৈতিকতায় শক্তিশালী ব্যক্তিদের হ্রদয় সাদা হয়।
আপনাকেও আল্লাহ পাক হায়াত দারাজ করে দিক-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি সময় দিয়েছেন এবং অনুভূতি রেখে গেছেন- খুব ভালো লাগছে।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
মূলত এই ব্যক্তির কাছে কৃতজ্ঞতা বোধ ছিলনা।
সুনীলের কাছে দেওয়া কথা কেউ রাখেনি কারণ সুনীল ব্যক্তি জীবনে একজনেওর বিশ্বস্থ হতে পারেনি। সবাই তাকে অবিশ্বাস করেছে, তাই একজন কথা রাখেনি..........
হ্যা, এটাই হয়ে থাকে- আমি নিজেকে অন্যের কাছে যেভাবে উপস্থাপন করবো, আমার প্রাপ্তিটাও সেরকম হবে।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
সহমত আপনার সাথে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমার খুব মন চায় এসিড মারার জন্য এই শাস্তি প্রয়োগ করা যে "হাত পা বেঁধে মুখ খোলা রেখে ইঞ্চি ইঞ্চি করে এসিডের ড্রামে চুবিয়ে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া। আর এটা সরাসরি সম্প্রচার করা।" জানি মানবাধিকার সংস্থা গুলা চিল্লা চিল্লি করবে।
অনেক আগে প্রথম আলো তে পড়েছিলাম সম্ভবত দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বা পরে ভ্লাদিমির পুতিন কে দুর্নীতির শাস্তি তার মতে কি করা উচিৎ বলে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আশ্চর্য হবে উনি কি উত্তর দিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন সবচেয়ে ভালো হবে হাত কেটে দিলে।
সমাজ নিরাপদ হতো এভাবে চিন্তা করলে।
তবে যারা এই আইন তৈরী করবে, তারাই তো সবচেয়ে বেশী বিপথগামী। তাই এটা কখনোই কার্যকরী হবে না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন