শবে বারাআতে যা পালনীয় এবং যা বর্জনীয় (সংক্ষেপিত)
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ২২ মে, ২০১৬, ০৯:১২:৪৯ রাত

শবে বরাতে কোন হালুয়া-রুটির নিয়ম নেই।
তা নিয়ম হিসেবে পালন করা বিদ‘আত।
এ উপলক্ষে অযথা মোমবাতি বা আগরবাতি
জ্বালানো গর্হিত প্রথা।
শবে বারাআতে কোনরূপ পটকা ফুটানো বা তারাবাতি-বিজলিবাতি জ্বালানো ইত্যাদি মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহর কাজ।
এ উপলক্ষে মসজিদ বা কবরস্তান কিংবা অন্যকোন স্থাপনায়
রিমঝিম আলোকসজ্জা করা নাজায়িয ও অনর্থ ইসরাফ।
শবে বারাআতকে দলে দলে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা অমূলক। কারণ, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আমলের বিষয়--যা নিজ নিজ ঘরে সংগোপনে করাই বাঞ্ছনীয়।
শবে বারাআতে ফজীলত মনে করে সন্ধ্যার সময় গোসল করা,
নির্দিষ্ট নিয়মে বা নির্ধারিত সূরাহ দিয়ে নামায পড়ার বাধ্যবাধকতা করা অজ্ঞতাসূচক অবিধেয় কাজ--শরীয়তে যার কোন ভিত্তি নেই।
সুতরাং সেসব গর্হিত বিষয় থেকে দূরে খেকে এ রাতে যার যার ব্যক্তিগতভাবে নামায, তিলাওয়াত, জিকির, দু‘আ ইত্যাদি আমলে ব্যাপৃত থাকা উচিত।
আর ইচ্ছা করলে এ রাতে ব্যক্তিগতভাবে কবরস্তান যিয়ারত করতে পারেন।
তা ছাড়াও সামগ্রিক ইবাদতের একটি অংশ হিসেবে শেষ রাতে সাহরী খেয়ে পরদিন রোযা রাখতে পারেন। কারণ, নফল নামাযের মতো নফল রোযাও একটি উত্তম ইবাদত। তদুপরি একটি জয়ীফ হাদীসে এ রাতের আমলের বিষয়ে নামায ইত্যাদি ইবাদতের সাথে পরদিন রোযা রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই সাথে যেহেতু হাদীস শরীফে এ রাতে শিরককারী ও বিদ্বেষ পোষণকারীকে ক্ষমা করা হয় না বলা হয়েছে, তাই সর্বদা সকল প্রকার শিরক থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখতে হবে এবং ব্যক্তিগত কারণে কারো প্রতি মনে বিদ্বেষ রাখা যাবে না। তবে দ্বীনের নির্দেশ মতো ইসলামবিরোধীদের প্রতি মনে ক্ষোভ ও ঘৃণা রাখা ঈমানেরই অংশ।
আর অবশ্যই পাঁচওয়াক্ত নামাযসহ ফরজ ইবাদতসমূহ যথারীতি পালন করা অপরিহার্য। তাই শবে বারাআতে জেগে ইবাদত করার পাশাপাশি যেন প্রতিদিন ফজর, জোহর, আসর, মাগবির ও ইশার নামায আদায় করা হয় এবং শবে বারাআতে যেন রাত জেগে ফজরের নামায নষ্ট না হয়। এমনি করে পরবর্তী কোন নামায ও ফরজ হুকুম যেন না ছুটে। তাহলেই শবে বারাআতের নফল ইবাদত সার্থক হবে।
মনে রাখতে হবে--ফরজ ইবাদতসমূহকে যথাযথভাবে পালনের পরই নফল ইবাদতসমূহের কাঙ্ক্ষিত ফজীলত লাভ করা যায়।
বিস্তারীত দলীল সহ জানতে এখানে দেখতে পারেন। শবে বরাত সম্পর্কে দালিলিক পর্যালোচনা।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
০ একমত ।
আপনার সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রতি চন্দ্র মাসের বিভিন্ন তারিখে নফল ইবাদত করার কথা হাদীস শরীফে রয়েছে। শা’বান মাসের মধ্য রাজনী এবং পুরা শা’বান মাসেই রমজানের প্রস্তুতির সময় বলা হয়েছে। সে হিসেবে নফল ইবাদাত করাতে কোন দোষ নেই, বরং সওয়াবের কাজ।
তবে আমার জানার বিষয় হলো : ‘শবে বরাত’ বা লাইলাতুল বরায়াত বলে কোন রজনীর উল্লেখ পবিত্র কুরআন আর সহিহ হাদীসের কোথাও আছে কি না? আমার জানা মতে আপনি একজন আলেমে দ্বীন সেজন্যই প্রশ্নটা করলাম। আমি উত্তটা আশা করবো সম্পূর্ণ আল্লাহর ওয়াস্তে। কোন পীর, বুজুর্গ বা কুরআন সুন্নাহ বাদ দিয়ে অন্যকোন কিতাবের রেফারেন্স ছাড়াই। আশা করি আল্লাহর জন্য আমাকে বিষয়টি জানানোর ব্যবস্থা করবেন।
শবে কদর, শবে বারাআত, নামায, রোজা, এগুলো সবই আমাদের ব্যবহৃত আঞ্চলিক ভাষা, কুরআন সুন্নাহর ভাষা হল লাইলাতুল ক্বদর, নিসফে শাবান, সালাত ও সিয়াম ইত্যাদি।
নিসফে শাবানের ব্যপারে কুরআনে নেই, কিন্তু সহীহ হাদিসে আছে। হাদিসের তাহকীকসহ উপরের লিংকে পাবেন।
কিন্তু আলোচনার বিষয় হল: আমাদের দেশের বেদআতি ও মাজারীরা নিসফে শাবান নিয়ে অতিরঞ্জিত করে, অনেক বিদআদ পালন করে, ক্বদরের বেলায়ও তারা এমনই বিদআদ করে। যা কাম্য নয়।
আবার বর্তমান আহলে হাদিসরাও কিন্তু নিসফে শাবান নিয়ে একেবারে ছাড়াছাড়ি করে, এটিকে বিদআদ আখ্যা দেয়, বরাতের ব্যখ্যা করে এ রাতকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন করে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে এ রাতের ব্যপারে বেদাআতিদের মত বাড়াবাড়িতেও নেই, আবার আহলে হাদিসদের মত ছাড়াছাড়িতেও নেই। কেননা সহীহ হাদিস আমার সামনে আছে, তাই।
আমি এ রাতে ইবাদাত করতে না পারলেও বিরোধীতা করবো না। কারন সহীহ হাদিসগুলোর বিরোধীতা হবে। আর নফল ইবাদাতের নামে কোন অতিরঞ্জিত করবো না। এমনটিই আমার ব্যক্তিগত খেয়াল আপনাকে বললাম।
আর এ রাতের করনীয় ও বর্জনীয় ব্যপারগুলো তো আমার পোষ্টে দেওয়া আছে।
প্রথম যখন আমিরাতে আসলাম, নিসফে শাবানে আরবদের তেমন উৎসাহ না দেখে আমি অনেক ধন্ধে ছিলাম, কিন্তু পরবর্তীতে তাহকীক করে ক্লিয়ার হলাম যে এটি কোন উৎসব আমেজের রাত নয় বরং একাকী নফল ইবাদাতের রাত, যা ঘরেও করা যায়, মসজিদেও করা যায়।
গত জুমআর খুৎবাহকে কিছু হাদিস শুনে আমার আরো ক্লিয়ার হলো যে, আরবরাও এ রাতকে গুরুত্ব দেয়। খুৎবায় বলা হয়েছে: বান্দার সাপ্তাহিক আমলনামা প্রতি বৃহঃবার ও সোমবার আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। আর বাৎসরিক আমল নামা শা'বান মাসে পেশ করা হয়। আর শাবান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো নিসফে শাবান, অর্থাৎ চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত, এ রাতে রাসূল স. লম্বা লম্বা কিরাত দিয়ে নফল নামায পড়তেন।
খুৎবার সামান্য অংশ এখানে দিলাম।
অতএব আমি বুঝে নিলাম যে, নিসফে শাবান আরব দেশেও আছে, তবে আনুষ্ঠানিকতা নেই, যা বাংলাদেশে হয়ে থাকে।
আর আমি কোন বড় আলেমে দ্বীন নই, আর মুরুব্বীদের কথাকে ওহীর থেকেও প্রধান্য দেওয়ার মানসিকতা আমার নেই। শুধু সত্যিটা খোজার চেষ্টা করি।
{আল্লাহই ভালো জানেন।}
লাইলাতুল কদর বা সবে কদরের সাথে কথিত ’সবে বরাত’কে একই সমান্তরালে দেখার কোন সুযোগ নেই এবং ঈমানদারের জন্য এটা উচিৎ বলেও আমি মনে করি না। কারণ সবে বা লাইলাতুল কদর আল্লাহ ঘোষিত আর সবে বা লাইলাতুল বরাত মানুষের তৈরী। আমার প্রশ্নটা ছিল শুধুমাত্র এটুকুই যে,’শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত’ বলে কোন শব্দ পবিত্র কুরআন এবং সহিহ হাদীসে আছে কি না? আমি ইবাদাতের প্রশ্ন তুলিনি, ইবাদাততো সকল সময়েই করা যাবে এবং মু’মীনেরে প্রতিটি কাজই ইবাদাত, এমনকি কালভেদে ইবাদাত না করাও আইবাদাত। যেমন; নিষিদ্ধ দিনে রোজা না রাখা এবং নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ না পড়ার বিষয়টি জানা, বুঝা এবং আমলের মধ্যেও সওয়াব রয়েছে।
এখানে আরো মাজার ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে, মহান আল্লাহ ঘোষিত সবে কদর বা লাইলাতুল কদরকে যেখানে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন ঐ কদর রাত্রি মুসলমানদের নিকট যেন কোন গুরুত্বই নেই, নিজেদের বানানো শবে বরাতকে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়- তার তুলনায়।
এখানে প্রশ্ন করার সুযোগ তৈরী হয় যে, আল্লাহ এবং আল্লারহ রাসূল (সঃ) কি ’শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত’ বলতে ভুলে গিয়েছিলেন?(নাউযুবিল্লাহ)
আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের (সঃ)আগে না বাড়ার জন্য পবিত্র কুরআনের সূরা হুজরাতের মধ্যেই রয়েছে, অথচ আমরা আগে বেড়ে যাওয়াকে ইবাদাত মনে করছি। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
নিসফে শাবানের মূল কথায় হাদিসে এ রাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে, মুক্তির আরবী হল: বারাআত, আমাদের আঞ্চলিকতায় এই নামটি শবে বারাআতে রূপান্তরিত হয়েছে, হাদিসের মূল শব্দ নিসফে শাবান, শুধু নামের আঞ্চলিকতার কারনে কি এ কাজটি আল্লাহ ও রাসূলের আগে বাড়া হলো?
তাহলেতো "নামায ও রোজা" বললেও আল্লাহ ও রাসূল স. এর আগে বাড়া হল।
যারা বিদআতি, তারা নিসফে শাবান কে নিয়ে যেমন বিদআত করে, তেমনি লাইলাতুল ক্বদরের সময়ও বিদআত করে, সারা রাত মাইক বাজিয়ে ইবাদাত রত মুসল্লিদের কষ্ট দেয়। হালুয়া রুটি মসজিদে মাজারে বিলি করে, তাই বিদআত চিহ্নিত করে তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
নিসফে শা'বান কে কেউ কোন দিন লাইলাতুল ক্বদরের সাথে তুলনা করেনি, আর কেউ করে থাকলে সে হয়তো জাহেল, অথবা শয়তানের পক্ষের লোক। মানে অতিরঞ্জিত কারী।
জানি না, কতটুকু বুঝাতে পেরেছি, দোয়া চাই ভাই।
আলোচনার মাধ্যমে দ্বীনের পালনীয় বিষয়গুলো আরো ভালো করে জানার জন্যই আপনার সাথে এই কথোপকথন। আমরা আমাদের ব্যাক্তিগত মতামত কারো উপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য অবশ্যই নয়। হ্যাঁ পারস্পরিক বুঝাবুঝির কিছুটা হেরফের হতেই পারে মানুষ হিসেবে। আশা করি এই সওয়াল জওয়াব আমাদের মধ্যে কোন রকমের তিক্ততা আনয়ন করবেনা- ইনশাআল্লাহ।
আপনি যা বুঝাতে চেয়েছেন, আমি বুঝেছি। আমি যা বুঝাতে চেয়েছি তাহলো সরাসরি কুরআনে ‘লাইলাতুল বরায়াত’ বলে কিছু নেই। এসম্পর্কীয় হাদীসের ব্যাপারেও যে কথা আছে তাও আপনার জানা।
তারপরও কিছু মতপার্থক্য সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যেও ছিল, এখনও আছে এবং থাকবে। এর মধ্যে যাদের আমল কুরআন সুন্নাহর বেশী কাছাকাছি হবে তারা বেশী নেকী পাবেন। কুরআনে ‘সালাত’শব্দটি আছে, এটিকে অনুবাদ করে অন্য নাম রাখলে সমস্যা নেই। কুরআনে ‘লাইলাকুল কদর’ আছে, এটাকে অনুবাদ করে ‘শবে কদর’ বললে সমস্যা নেই। কিন্তু যা নাই তার অনুবাদই বা করলাম কোত্থেকে! এটাই আসলে আমার কথা ছিল।
আপনার সাথে আলোচনা করে বেশ ভালো লাগলো। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর দেয়া হেদায়াতের উপর অটল রাখুন। মায়াসসালামা।
যাক, প্রশ্নোত্তর তো শেষ হবার হয়, এটি কথার মত, কথার নাম লতা। শুধু লম্বা হতেই থাকে।
আপনার প্রশ্নে উত্তর দিয়ে গিয়ে আমাকে অনেক ভাবতে হয়েছে, অনেক গবেষনাও করতে হয়েছে, এতে আলহামদু লিল্লাহ আমারই উপকার হয়েছে।
এখানে দূরত্ব বাড়ার কিছু নেই, বরং আন্তরীকতা বাড়বে, এটা সুনিশ্চিত। অনেক অনেক শুকরিয়া শ্রদ্ধেয় বড় ভাই। জাযাকাল্লাহ খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন