জীবন সংগ্রাম-২
লিখেছেন লিখেছেন আবু জান্নাত ০৭ মে, ২০১৫, ০৭:৪৮:২৩ সন্ধ্যা
প্রথম পর্ব এখানে
আব্দুর রশীদ এখনো ভাবনার জগৎ থেকে ফেরেনি, ইতি মধ্য সায়েম ও সাজিদ চা বিস্কুট নিয়ে হাজির। সালাম দিয়ে দু'ভাই আব্দুর রশীদের পাশেই বসলেন। রশীদ ভাইয়া দুজনকে দুটি চকলেট দিয়ে বললেনঃ আজ থেকে আমি তোমাদের দেখতে প্রতিদিন আসবো, আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে। চা পর্ব শেষ করে উনি বিদায় নেন।
পরদিন অফিসে মুমতাহিনাকে ডেকে বললেন বললেনঃ দেখ মুমতাহিনা ছোট বেলায় আমার মা মারা যান, বাবা বিয়ে করে দ্বিতীয় সংসার নিয়ে সুখেই আছেন, আমি এনেক কষ্ট করে লিখা পড়া করে আজ এখানে ম্যানেজার পদে নিয়োগ পেয়েছি। আমি বুঝি দুঃখিদের মনের ব্যথা। আমি চাই তোমাদের মত দুঃখিদের পাশে দাড়াতে। ঠিক আছে আমি তোমাকে আমাদের বাড়িয়ে নিবো না, তোমাদের এখানেই থাকবো, তোমার ভাইদের মানুষ করতে সাহায্য করবো।
অশ্রুসজল নয়নে মুমতাহিনা সাড়া দেয়। একদিন কাজি অফিসে গিয়ে তাদের বিয়ে হয়, অতঃপর মুমতাহিনাকে ডিউটি থেকে অবসরে রাখা হয়। সে এখন ছোট ভাইদের নিয়ে ঘরসংসারেই ব্যস্ত। আব্দুর রশীদ মাস শেষে বেতনের টাকা পুরোটাই মুমতাহিনার হাতে তুলে দেয়, মুমতাহিনাও স্বামীর মন জয় করে জীবনাতিপাত করতে থাকে।
দু'মাস পর মুমতাহিনাকে আব্দর রশীদ বলতে লাগলো। আমরা একটি সন্তান নিতে চাই। মুমতাহিনা প্রত্যাখ্যান করে বললঃ আমার দুই ভাইকি আমাদের সন্তানের জন্য যথেষ্ট নয়? না আমরা কখনো সন্তান নিবো না, দু'ভাই আমাদের সন্তান। অনেক তর্কের পর মুমতাহিনার নয়নাস্রুর কাছে আব্দুর রশীদ হার মানলেন। জীবনের জন্য সন্তানের আশা ছেড়ে দিলেন।
বছরখানিক পর দম্পত্তি জোড়া ভাবতে লাগলো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আজ উপকার কে অস্বীকার করে, আপনজনকে পর ভাবে। সায়েম সাজিদ ও বড় হয়ে যদি কারো প্ররোজনায় পড়ে আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তখন আমরা দাড়াবো কোথায়? আচ্ছা এক কাজ করা যাক, আমরা প্রতিমাসে ঘর ভাড়া বাবৎ কিছু টাকা ওদের নামে একাউন্ট করে রেখে দিবো। তাই করা হল।
এভাবে দশটি বছর কেটে গেল। সায়েম ও সাজিদ আজ বড় হয়েছে, এস,এস,সি পাশ করলো। এইচ,এস,সি তে ভর্তি হল। কলেজ জীবনের শুরুতই সায়েম এক মেয়ের প্রেমে পড়লো। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া নেই, ঘুম নেই, কলেজে যাওয়া নেই। সারাক্ষণ ঐ মেয়েকে নিয়েই ভাবে। একদিন মুমতাহিনাকে বলেই ফেললঃ রশীদ ভাইকে একটু বুঝাও, আমি বিয়ে করতে চাই।
তুই এখনো অনেক ছোট, এই বয়সে কে তোর কাছে বিয়ে দিবে? তাছাড়া তুই বৌয়ের খরচ চালাতে পারবি? দুইটা বছর পরে এইচ,এস,সি শেষ করে একটি চাকুরী জোগাড় করে তখন বিয়ে করা যাবে, এখন এসব ভাবনা ছেড়ে পড়া লিখায় মন দে ভাই আমার।
সায়েম কিছুতেই সায় দিচ্ছে না, নাছোড় বান্দর মতই জেদ ধরে বসে আছে, কয়েক দিন পর কোন উপায় না দেখে সায়েমের সাথে একই ক্লাসের ছাত্রী নূরীকে বিয়ে দেয়, রশীদ ভাই অনেক টাকা খরচ করে নূরীকে ঘরে তোলে। নূরীও স্বামীহারা মায়ের একমাত্র মেয়ে, গার্মেন্টস এ কাজ করে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষার আশায় কলেজে ভর্তি করিয়েছে, কিন্তু নূরী সায়েমের সুন্দর ও মিষ্টি অবয়ব দেখে দিন দিন ওর প্রতি দূর্বল হতে লাগলো, সায়েম ও সুন্দরী মেয়ে নূরীর অফার হতাছাড়া করলো না।
সায়েম আর নূরীর দাম্পত্যজীবন বছর পার না হতেই সায়েমের একটি চাকুরি মেলে। কিন্তু যৎসামান্য সেলারী তাতে ওদের সেরে উঠে না, এদিকে নূরীও নিজের মাকে কাছে রাখতে চায়, একদিন সায়েম এসব বিষয় মুমতাহিনা ও রশীদ ভাইকে জানায়, তারা সবকিছু শুনে অনুমতি দেয়, অতঃপর সায়েমের শাশুরী মেয়ের বাড়িতে উঠে। রশীদ ভাই যথাসম্ভব আর্থিকভাবে হেল্প করে যাচ্ছে।
এদিকে সাজিদ ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে বেকার ঘুরছে, মুমতাহিনা ও রশীদ আলোচনা করতে লাগলো, ভাইদের নামে ভাড়া বাবৎ জমানো টাকাগুলো দিয়ে সাজিদকে একটি ছোটখাটাে ব্যবসা ধরিয়ে দিতে পারলে তাদের ভবিস্যৎ উজ্জল হবে। একদিন মুমতাহিনা দুই ভাইকে ডেকে ব্যাংক চেকে সই নিলেন। ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর আগেই নূরী ও তার মা মিলে সায়েমের কান ভারী করতে লাগলো।
দেখ তোমার বাবার সম্পত্তি একাই সাজিদকে দিতে যাচ্ছে, তাছাড়া এই বাড়ীতে যে তোমার বোন ও দুলাভাই থাকে, ঐ দুটি রুম ভাড়া দিলে তুমি অন্তত ৫হাজার টাকা ভাটা দিতে পারবে। তাতে তোমার অভাব দূর হয়ে যাবে। তোমরাতো এখন বড় হয়ে গেছ, বোন ও দুলাভাইকে বলো, তারা যেন তাদের বাড়ীতে চলে যায়।
চলবে...........
বিষয়: বিবিধ
১২০৫ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
পরবর্তীর ঘটনা প্রবাহের সাথে সায়েম ও নুরীর দৃষ্টিভঙ্গীর বেড়াজালে আটকে থাকলাম আগামী পর্বগুলোর অপেক্ষায়।
দাম্পত্য জীবনের জটিল কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর লেখার জন্যে জাযাকাল্লাহ খাইরান!
সমাজের কঠিন বাস্তবতার করুন দৃশ্যটি ফুটে উঠেছে লিখনীতে! বাস্তবতা যে আরো কঠোর........।
পরের পর্বের অপেক্ষায়!শুকরিয়া আপনাকে
যাই হোক প্রেম প্রিরিতি শিখাতে চাইলে ওর আর কি হবে?
যা পাখি যা...... বলিস........!
আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ) কে বানালেন, কিন্তু বেহেস্তেরমত নিয়ামত পেয়েও উনার কাছে কেমন যেন একা একা লাগছে, তাই আল্লাহ তায়ালা বিবি হাওয়াকে বানালেন, আদম (আঃ) ঘুম থেকে উঠে হাওয়া কে পেয়ে হাত বাড়াতে লাগলেন, আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ থামুন, আগে বিয়েটা হোক, তারপর..........
ভালোবাসা হবে বিয়ের পর, বুঝলেন মসাই!
মন্তব্য করতে লগইন করুন