বিয়ের করণীয় বিষয়সমূহ
লিখেছেন লিখেছেন হাসান মাহমুদ জামালপুর ১১ মে, ২০১৪, ০৭:১৯:২১ সকাল
বিয়ের করণীয় বিষয়সমূহ :
১- বাসর ঘরে স্ত্রীর মাথার
অগ্রভাগে ডান হাত
রাখা এবং দু’আ পড়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‘তোমাদের কেউ যখন কোনো নারী,
ভৃত্য
বা বাহন থেকে উপকৃত হয়
(বিয়ে বা খরিদ করে)
তবে সে যেন তার মাথার অগ্রভাগ ধরে,
বিসমিল্লাহ পড়ে এবং বলে :
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻰ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﺟُﺒِﻠَﺖْ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺟُﺒِﻠَﺖْ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ.
(‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর ও
এর
স্বভাবের কল্যাণ
প্রার্থনা করছি এবং এর ও এর
স্বভাবের অকল্যাণ থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা করছি।)’[3]
২- স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একসঙ্গে দুই
রাকা‘ত
সালাত আদায় করা :
আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ
করেন, স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে,
স্বামী তখন দাঁড়িয়ে যাবে। আর স্ত্রীও
দাঁড়িয়ে যাবে তার পেছনে। অতপর
তারা একসঙ্গে দুই রাকা‘ত সালাত
আদায়
করবে এবং বলবে :
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟِﻲ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻲ ، ﻭَﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟَﻬُﻢْ
ﻓِﻲَّ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺭْﺯُﻗْﻨِﻲ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻬُﻢْ ﻣِﻨِّﻲ،
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻤَﻊَ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻣَﺎ ﺟَﻤَﻌْﺖَ ﺇِﻟَﻰ ﺧَﻴْﺮٍ،
ﻭَﻓَﺮِّﻕْ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﺮَّﻗْﺖَ ﺇِﻟَﻰ ﺧَﻴْﺮٍ .
‘হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আমার
পরিবারে বরকত দিন আর আমার
ভেতরেও বরকত
দিন পরিবারের জন্য। আয় আল্লাহ,
আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযক
দিন আর
আমার থেকে তাদেরও রিযক দিন।
হে আল্লাহ,
আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন
কল্যাণেই একত্র রাখুন আর আমাদের
মাঝে যখন
বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবেন তখন কল্যাণের
পথেই
বিচ্ছেদ ঘটাবেন।’[4]
৩- স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের দু‘আ পড়া।
স্ত্রী সহবাসকালে নিচের দু’আ
পড়া সুন্নত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‘তোমাদের কেউ
যদি স্ত্রী সঙ্গমকালে বলে :
ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻭَﺟَﻨِّﺐِ
ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ
(আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ,
আমাদেরকে শয়তানের কাছ
থেকে দূরে রাখুন আর
আমাদের যা দান করেন
তা থেকে দূরে রাখুন
শয়তানকে।)
তবে সে মিলনে কোনো সন্তান
দান করা হলে শয়তান কখনো তার
ক্ষতি করতে পারবে না।’[5]
৪- নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত
থাকা :
আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন
‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতী মহিলার
সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পেছনপথে সঙ্গম
করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার
কথায়
বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার
করলো।’[6]
৫- ঘুমানোর আগে অযূ বা গোসল করা :
স্ত্রী সহবাসের পর সুন্নত হলো অযূ
বা গোসল করে তবেই ঘুমানো। অবশ্য
গোসল
করাই উত্তম। আম্মার বিন ইয়াসার
রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‘তিন ব্যক্তির
কাছে ফেরেশতা আসে না : কাফের
ব্যক্তির লাশ, জাফরান
ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র
শরীরবিশিষ্ট ব্যক্তি,
যতক্ষণ না সে অযূ করে।’[7]
৬- ঋতুবতীর স্ত্রীর সঙ্গে যা কিছুর
অনুমতি রয়েছে :
হ্যা, স্বামীর জন্য ঋতুবতী স্ত্রীর
সঙ্গে যোনি ব্যবহার ছাড়া অন্য সব
আচরণের
অনুমতি রয়েছে। স্ত্রী পবিত্র হবার পর
গোসল
করলে তার সঙ্গে সবকিছুই বৈধ। কারণ,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
ﺍﺻْﻨَﻌُﻮﺍ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻨِّﻜَﺎﺡَ .
‘… সবই করতে পারবে কেবল সঙ্গম
ছাড়া।’[8]
৭- বিয়ের নিয়ত শুদ্ধ করা :
নারী-পুরুষের উভয়ের উচিত বিয়ের
মাধ্যমে নিজকে হারামে লিপ্ত
হওয়া থেকে বাঁচানোর নিয়ত করা।
তাহলে উভয়ে এর দ্বারা ছাদাকার
ছাওয়াব লাভ
করবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘তোমাদের সবার স্ত্রীর যোনিতেও
রয়েছে ছাদাকা।
সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন
ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের কেউ কি তার
জৈবিক
চাহিদা মেটাবে আর তার জন্য
সে কি নেকী লাভ
করবে? তিনি বললেন,
‘তোমরা কি মনে করো যদি সে ওই
চাহিদা হারাম
উপায়ে মেটাতো তাহলে তার
জন্য কোনো গুনাহ হত না? (অবশ্যই হতো)
অতএব তেমনি সে যখন তা হালাল
উপায়ে মেটায়, তার জন্য
নেকী লেখা হয়।’[9]
৮- স্ত্রী সান্বিধ্যের গোপন তথ্য প্রকাশ
না করা :
বিবাহিত ব্যক্তির আরেকটি কর্তব্য
হলো স্ত্রী সংসর্গের গোপন তথ্য
কারো কাছে প্রকাশ না করা।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,ْ
‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ওই
ব্যক্তি সবচে নিকৃষ্ট বলে গণ্য
হবে যে তার
স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয় এবং স্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ
হয়
অতপর সে এর গোপন বিষয় প্রচার করে।’[10]
৯- অলীমা করা :
বিয়ের আরেকটি সুন্নত
হলো অলীমা করা তথা মানুষকে দা‘ওয়াত
করে খাওয়ানো। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজে উদ্বুদ্ধ
করেছেন।
এমনকি তিনি আবদুর রহমান বিন আউফ
রাদিআল্লাহু আনহু -এর উদ্দেশে বলেন,
ﺃَﻭْﻟِﻢْ ﻭَﻟَﻮْ ﺑِﺸَﺎﺓٍ .
‘অলীমা কর, হোক না তা একটি ছাগল
দিয়ে হয়।’[11]
১০- বিয়ের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা :
কেউ যদি বিয়ের দা‘ওয়াত দেয়
তাহলে সে দা‘ওয়াত কবুল করা সুন্নত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
‘তোমাদের কাউকে যখন বৌভাতের
দাওয়াত
দেয়া হয়, সে যেন তাতে অংশ নেয়।’[12]
অপর এক হাদীসে তিনি বলেন,
‘আর যে দাওয়াত কবুল করল না সে যেন
আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যাচরণ করল।’[13]
১১- নব দম্পতির জন্য দু‘আ করা :
নব দম্পতির জন্য নিচের দু’আ করা সুন্নত। আবূ
হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, যখন
কোনো ব্যক্তি বিবাহ করত রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলতেন,
‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার
ওপর বরকত দিন এবং তোমাদের উভয়েক
কল্যাণে মিলিত করুন।’[14]
১২- নির্দোষ সঙ্গীত ও দফ বাজানো :
বিয়ের ঘোষণার স্বার্থে শুধু দফ
বাজানো এবং নির্দোষ সঙ্গীত
গাওয়ার
অনুমতি রয়েছে।
তবে সে সঙ্গীতে রূপের
বর্ণনা কিংবা অবৈধ কিছুর আহ্বান
না থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘হালাল ও হারাম বিয়ের মধ্যে পার্থক্য
কেবল
ঘোষণা ও দফ বাজানো।’[15]
রেফারেন্স:[3]. বাইহাকী, সুনান কুবরা :
১৪২১১; ইবন
মাজা : ১৯১৮।
[4]. তাবরানী, মু’জামুল কাবীর : ৮৯০০।
[5]. বুখারী : ৭৩৯৬।
[6]. মুসনাদ আহমদ : ১০১৭০; ইবন মাজা :
৬৩৯।
[7]. সুনান আবূ দাউদ : ৪১৮২।
[8]. মুসলিম : ৭২০।
[9]. মুসলিম : ১৬৭৪; মুসনাদ আহমদ : ২১৫১১।
[10]. মুসলিম : ৩৬১৫।
[11]. বুখারী : ২০৪৯; মুসলিম : ৩৫৫৬।
[12]. বুখারী : ৫১৭৩; মুসলিম : ৩৫৮২।
[13]. মুসলিম : ৩৫৯৮।
[14]. আবূ দাউদ, সুনান : ২১৩০।
[15]. তিরমিযী : ১১১১; মুসনাদ আহমদ :
১৮৩০৫।
বিষয়: বিবিধ
৭৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন