শিক্ষকদের দাবির ন্যায্যতা ও ক্লাসের পেছনের বেঞ্চের আমলাদের বাকবাকুম
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৩:১৮:৫০ দুপুর
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড একথা কেউ অস্বীকার করে না। কিন্তু শিক্ষাকরা যে জ্ঞানের মেরুদণ্ড এই ব্যাপারে দেশের সবাই একমত হলেও আমলারা, কতিপয় রাজনীতিবিদ ও প্রধানমন্ত্রী সন্দিহান। বোগাস আর রাবিস খ্যাত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিদ শিক্ষকদের এতটাই উপহাস করেছেন যে, শিক্ষকদের মধ্যে কেউ যেন অর্থনীতি বুঝেন না! অর্থমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না!, তার মতে শিক্ষকদের জ্ঞানের বড়ই অভাব আছে! কতিপয় রাজনীতিবিদ নিজেদের এতটাই বুদ্ধিমান ভাবছেন যে, শিক্ষকদের মধ্যে বুদ্ধি-শুদ্ধি কিছু নেই, যা দিছি তা নিয়ে সন্তোষ থাক’। প্রধানমন্ত্রীর মতে, শিক্ষকদের তিনি বেশী দিয়ে ফেলেছেন। যেন রাষ্ট্রের টাকা দিয়ে তিনি শিক্ষকদের বেশ অনুগ্রহ করেছেন! বেতন কেবল শিক্ষকদের বাড়িয়েছেন নিজেরটা বাড়ান নাই! প্রধানমন্ত্রীর হাবভাব এমন যে, তিনি রাষ্ট্রের মালিক!
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরীর মেয়াদকাল কমিয়ে সচিবদের সমান করার হুমকি দিয়েছেন, শিক্ষকতা ছেড়ে সচিব হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর দ্বারা শিক্ষক সমাজ অপমানিত হয়েছেন। শিক্ষকদের জন্যে আমলার দায়িত্ব পালন খুব কঠিন হবে কি? প্রশাসনিক কিছু জ্ঞান তাদেরও আছে, অল্প সময়ে মানিয়ে নিতে পারবেন, কিন্তু সচিবরা কি শিক্ষকতা করতে পারবেন? প্রাইমারি লেবেলে হলে ভিন্ন কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রেজাল্ট সিট তৈরি করতে না হয় পারবেন, কিন্তু খাতা মূল্যায়ন করতে পারবেন তো? ডক্টরেট পাস করা শিক্ষকদের বান্দর ছাত্রদের শিক্ষা দিতে হিমশিম খেতে হয়। আমলারা পারবেন তো? তবে পথ আছে! বন্দুক নিয়ে গেলে হয়তো পারবেন, সাথে মামলার ভয় দেখাতে হবে, গুম ও ক্রসফ্যায়ার ভয় দেখানোর প্রয়োজনও হতে পারে।
আমলারা যদি শিক্ষকতার দায়িত্ব যেন, তাহলে প্রতি বছর এক এক ব্যাচ মাস্তান বের হবে, কারণ আমলারা শেখাবেন কীভাবে গুম করতে হয়, ক্রসফ্যায়ার দিতে হয়, প্রমাণ না রেখে দূর্নীতি করতে হয়। যদিও কিছু দলবাজ শিক্ষকের ছত্রছায়ায় কিছু মাস্তান এখনো বের হয়। কিন্তু এই সব মাস্তানারা যথা সময়ে বের হতে পারে না, প্রশিক্ষণ শেষ হতে আরো কয়েক বছর লেগে যায়। দলীয় কোটায় প্রসাশনে চাকরী নিয়ে মাস্তানির প্রাক্টিস করে। খুন করে, গুম করে, চাঁদাবাজি করে, আর প্রমোশন পায়! যেন তেলে মাতায় তেল!
শিক্ষকদের মর্যাদা অবনমনের কারণ মূলত দুইটি। প্রথমত শিক্ষকদের আত্বসম্মানবোধের বিসর্জন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় দলবাজ শিক্ষক রাজনৈতিক বাহবাহ ও মিডিয়া কভারেজ পাওয়ার জন্যে দলীয় লেজুড়বৃত্তির আশ্রয় নেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ-পদবী পাওয়ার জন্যে যে কোন নিচু স্তরে নামতে তাঁদের দ্বিধা হয় না, তা শিক্ষকতা নামক মহান পেশার সাথে বড়ই বেমানান। এর জন্যে দলবাজ শিক্ষকরা রাজনীতিজীবীদের সাথে আতাঁত করেন। নোংরা রাজনীতিজীবীদের সাথে নিজেদের গুলিয়ে পেলেন। ছাত্ররাজনীতির দল- উপদলের সাথে পক্ষপাত করে সকল ছাত্রদের সাথে সমান ও ন্যায্য অচরণ করেন না। যার ফলে ছাত্রদের হাতে মার খেতে হচ্ছে বিভিন্ন ক্যাস্পাসে শিক্ষকদের! শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা এখন ছাত্রদের কাছেই দুর্লভ হয়ে গেছে। আজ বৃষ্টিতে ভিজে ছাত্রের হাতে মার খাওয়ার প্রতিবাদ করতে হয়! যে শিক্ষকরা ছাত্রদের কাছে অসম্মানের স্বীকার হয়, উনারা কি করে আমলা ও রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে সম্মান আশা করেন!
দ্বিতীয় কারণ রাজনৈতিক। প্রকৃত অর্থে সরকার এখন পুরোপুরি প্রসাশন নির্ভর। প্রসাশন আওয়ামী সরকারকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে। সরকারের জনগণের উপর কোন আস্থা নেই। কারচুপির প্রতিটি নির্বাচনই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।তাই সরকার যে কোন মূল্যে প্রসাশনকে খুশি রাখতে হবে। কিছু কিছু শিক্ষক টকশোতে গিয়ে সরকারের অপকর্মের সমালোচনা করায়, সরকার বরাবরই বেকায়দায় আছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষকদের উপর ক্ষোভ একটু বেশী। শিক্ষকদের শায়েস্তা করার একটি পথ ছিল, সরকার পে- স্কেলে তাঁরই প্রতিফলণ ঘটিয়েছেন। নন-ক্যাডারদের ক্যাডারদের এক ধাপ নিচে নামিয়ে দিয়েছেন। নন-ক্যাডার কারা? তাঁরা আর কেউ নয় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর কৃষিবিদরা! যাঁদের মেধা দেশের স্বার্থে লাগলেও সরকার টিকিয়ে রাখতে তাদের কোন ভূমিকা নেই, তাদের হাতে অস্ত্র নেই বা অস্ত্রধারীদের উপর তাঁদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার এদেরকে কামলাই মনে করে। সরকারের এদের সুনজরের দরকার নেই!
একজন শিক্ষক শুধু ক্লাসেই পড়ান না, তিনি যখনই কথা বলেন তার কথা সবাই শিক্ষক এর কথার মত গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেন নেন, তাদেরকে কেবল ছাত্ররা স্যার বলে সম্মোধন করেন না, সমাজের সবাই তাকে স্যার হিসাবে জানেন। কোন ছাত্র যদি শিক্ষক হয়ে বাসায় টিউশনিও করতে যায়, তাকেও সম্মান করে স্যার বলে ডাকা হয়। একজন শিক্ষক দ্বারা ছাত্ররা সব সময় প্রভাবিত হন। অনুপ্রাণিত হন। ছাত্রের কোন কর্ম যদি শিক্ষককে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাহলে ছাত্রের অবস্থা বাকবাকুম।
বিষয়: বিবিধ
৯৪০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন