দীনি মাদরাসাগুলো আদর্শ মানুষ গড়ার কারখানা
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪৪:৫৯ রাত
আজকের বিশ্বে মানবজাতি কত অশান্তিতে ভুগছে তা আন্দাজ করার জন্য যে কোনো এক দিনের খবরের কাগজে চোখ বুলানোই যথেষ্ট। যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ত্রাস, নির্যাতন, হত্যা-গুম ইত্যাদি খবরে ভরা খবরের কাগজগুলো। এক সময় যেসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানুষ গড়ার কারখানা ছিল আজকাল সেইসব প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানায়। যেখানে লেখাপড়া করে একজন মানুষ সত্যিকারের মানুষ হওয়ার কথা ছিল সেখানে লেখাপড়া করে সন্ত্রাসের গডফাদার হচ্ছে বা তাদের দেহরক্ষী হচ্ছে।[ কিছু সম্মানজনক ব্যতিক্রম ছাড়া] দলাদলি আর মারামারির কারণে সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা রাখতে হচ্ছে। তারপরেও পরিস্থিতির উন্নতির কোনোও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মানুষ আগে বাইরে গেলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতো এখন ঘরের ভিতরেও নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। কে কখন গুম-খুন হয়ে যায় এই ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত।
এত সব অপরাধ চোখের সামনে হচ্ছে কিন্তু তা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে কেউ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং যারা এই সব সন্ত্রাস বন্ধের কথা বলছেন উল্টো তাদেরকেই সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। শুধু আখ্যা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানিও করা হচ্ছে। সাধারণত মাদরাসাগুলোতে কখনও মারামারি, রক্তপাত, গোলাগুলি হয় না, সন্ত্রাস বা ন্ত্রাসীর সঙ্গে যাদের দূরতম সম্পর্কও নেই, মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানানোই এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ। এবং তারা সফলভাবে করেও যাচ্ছে যুগযুগ ধরে। যারা অন্যায় অত্যাচার থেকে দূরে থাকার কথা শিক্ষা দেয়-যারা ভ্রাতৃত্ব, পরোপকার, আর মানবতার শিক্ষা দেয়- যারা আদর্শ সমাজ গঠনের তাগিদ দেয় সেইসব মাদরাসাকেই সন্ত্রাসের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
যে মানুষ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করবে, মানুষে মানুষে হিংসা, বিদ্বেষ,হানাহানি পরিহার করে ভ্রাতৃত্ব, মায়া, মমতা, ভালবাসার বন্ধন দৃঢ় করার পক্ষে কাজ করবে; জুলুম, নির্যাতন পরিহার করে মানুষকে উন্নত চরিত্র গঠনের প্রতি উৎসাহিত করবে। যে মানুষ দুর্বলের প্রতি দয়াবান হবে, ন্যায় আর সত্যের পক্ষে যাদের অবস্থান মজবুত হবে, শত্র“র সাথেও বন্ধুর মত হবে যাদের আচরণ, যাদের চরিত্র হবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বাণী সাথে সংগতিপূর্ণ-‘আল্লাহ্ ততক্ষণ তার বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ সেই বান্দাহ্ তার ভাইয়ের সাহায্যে লিপ্ত থাকে’ {মুসলিম, তিরমিজি}। এবং আল্লাহ তা’লার ভয় আর আখেরাতে জবাবদিহিতার কথা সদা জাগ্রত থাকবে যাদের অন্তরে এরকম মানুষ তৈরি করাই হচ্ছে মাদরাসাগুলোর শিক্ষার উদ্দেশ্য।
পরকালীন ধ্যান-ধারণাসম্পন্ন শিক্ষা মাদরাসার বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানসমূহে না থাকার কারণেই আজ সমাজে অপরাধ দিনদিন বেড়ে চলেছে। মানুষের জীবনের মূল্য পোকামাকড়ের চেয়ে অনেক কমে গেছে। নির্লজ্জতা আর অশ্লীলতা পশুত্বকেও হার মানিয়েছে। জোর-জুলুম অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। শান্তি নামের সোনার হরিণ চলে গেছে মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এইসব অপরাধ বন্ধের কথা যেসব প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়, যেখানে জোর-জুলুম-অত্যাচার বন্ধের সবক শেখানো হয়, যেখানে মানবতার শিক্ষা দেওয়া হয় এবং যেখানে আল্লাহকে ভয় করে মানুষকে সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেওয়া হয় সেই সব মাদরাসার বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসের অপবাদ।
সারা বিশ্বের অপরাধচিত্রের দিকে যদি আমরা দেখি তাহলে বুঝা যাবে যারা মাদরাসার বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে তারা কত বড় মিথ্যুক। বছরের পর বছর শ্রীলঙ্কাতে যে অত্যাচার হয়েছে তা সবার জানা। সেখানে কি অত্যাচারীরা মাদরাসার পড়ুয়া ছিল? বার্মাতে মুসলমানদের উপর যে অত্যাচার করা হয়েছে সেটা কি মাদরাসা পড়ুয়ারা করেছিল? আমেরিকা এবং আফ্রিকাতে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর যারা অত্যাচার করে তারা কি মাদরাসা পড়ুয়া? ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর যারা নির্যাতন চালায় তারা কি মাদরাসায় পড়েছে? রাশিয়ান মুসলমানদের উপর যারা সত্তর বছর ধরে অত্যাচার করেছে তারা কি মাদরাসাশিক্ষিত ছিল? দুটি বিশ্ব যুদ্ধে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ মারা গিয়েছে, সেখানে কি যারা যুদ্ধ করেছে তারা মাদরাসায় পড়েছিল? হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে যারা নিরপরাধ মানুষ মেরেছে তারা কি মাদরাসার ছাত্র ছিল? বসনিয়া আর চেচনিয়াতে যে মুসলমানদের রক্তের বন্যা বয়ে গেল সেখানে কি অপরাধীরা মাদরাসায় পড়েছিল? আমাদের দেশের পত্রিকায় রামদা হাতে যে সব সন্ত্রাসীর ছবি প্রকাশ হচ্ছে তারা কি মাদরাসার ছাত্র ? চোখে ধুলো দেওয়ারও তো একটা সীমা থাকা উচিত।
মাদরাসাগুলোর পরিবেশ কেমন সেটা কম-বেশি সবাই জানে। যেখানে সাপ দেখা গেলেও মারার জন্য একটা লাঠি পাওয়া যায় না, যেখানে আল্লাহর কোরআন আর রাসুলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস পড়ানো হয়-যেখানে মারামারি হয় না-যেখানে পুলিশ আর প্রশাসনের লোকেরা পর্যন্ত এসে বলে যে এই পরিবেশে আসলে আত্মায় শান্তি পাওয়া যায়; সেই সব মাদরাসার বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে সন্ত্রাসের অপবাদ। আর যেখানে মারামারি লেগেই থাকে, এক পক্ষ এক পক্ষকে খুন করে, অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়, প্রতিনিয়ত বোমা আর ককটেল ফাটে, ২৪ ঘণ্টা পুলিশ প্রহরা রাখতে হয় যেখানে, সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয় যেখানে সেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ শোনা যায় না। এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে চুপ করে বসে থাকে মাদরাসার বিপক্ষে কথা-বলা সেসব কানা বুদ্ধিজীবী।
বর্তমানে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার করার জন্য। অথচ সারা দুনিয়ায় যত সন্ত্রাস হচ্ছে তার বেশির ভাগ করছে তারাই। কিন্তু একবারও তারা নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখতে নারাজ। সারা পৃথিবীর প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো এখন বর্ণবাদী ইহুদিদের কব্জায়। তারা এই মিডিয়াকে ব্যবহার করছে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার করার কাজে। এটা বিশ্ব ইহুদি পরিকল্পনার একটা অংশ যে তারা সারা বিশ্বের মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এবং এইসব মিডিয়া সময়-সুযোগ বুঝে কখনো এই দলকে আবার কখনো ঐ দলকে সমর্থন করবে। এমন কি ইহুদিদের প্রয়োজনে তারা বড় বড় সন্ত্রাসী গ্রুপের পক্ষেও সমর্থন দেবে। কখনো কোথাও গণতন্ত্র সমর্থন করবে আবার কোথাও গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নেবে। আবার কোথাও কোথাও এমন সব মিডিয়ার প্রতিনিধিত্ব তারা করবে যে মিডিয়াগুলো সরাসরি মানবতা বিরোধী অপরাধ আর অরাজকতা উস্কে দিতে সাহায্য করে। ইহুদিরা তাদের প্রয়োজনে কোনো সরকারের পক্ষাবলম্বনে প্রচারণা চালাবে আবার তাদের প্রয়োজনে সেই একই সরকারের বিপক্ষে প্রচারণা চালাতেও দেরি হবে না। সেই সরকার অত্যাচারী হোক বা ন্যায়পরায়ণ হোক তাতে তাদের কিছুই আসে যায় না। ঠিক একইভাবে মুসলমানদের বিপক্ষে তারা যেসব প্রচারণা চালাচ্ছে তা সত্য কিনা সেটা বড় নয়, তাদের কাছে বড় হচ্ছে তাদের স্বার্থ। তাদের স্বার্থ হচ্ছে নারী-ব্যবসা আর সুদ। এই সুদ আর নারী-ব্যবসার প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে মুসলমানগণ। তাই তারা নুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মিডিয়াতে মুসলমানদের বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে।
মানবতার সাথে শত্র“তা ইহুদিদের আদি স্বভাব। তারা মনে করে ইহুদিরা ছাড়া অন্য সব জাতি অপবিত্র। ইহুদি ছাড়া অন্য কোনো জাতির শান্তিতে বসবাস করার অধিকার আছে বলে তারা মনে করে না। তারা মনে করে সারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার শুধু তারাই রাখে। এই উদ্দেশ্যে তারা গোটা দুনিয়াতে যে কোনো ভাবেই হানাহানি মারামারি লাগিয়ে রাখতে চায়। এর জন্য তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র আর প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে। ষড়যন্ত্র করা ইহুদিদের মজ্জাগত স্বভাব। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি থেকে শুরু করে সবখানেই ইহুদিরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবেই। এই ফ্যাসাদ আর ষড়যন্ত্রই হচ্ছে ইহুদিদের টিকে থাকার একমাত্র পন্থা। তারা আবার এত নির্লজ্জ যে ষড়যন্ত্র করে তাতে গর্বও করে। এক ইহুদি ড. লিখেছেন, আমরাই সারা দুনিয়ার বাদশাহ এবং আমরাই সন্ত্রাসী আমরাই অরাজকতা উস্কে দেই এবং আমরাই জল্লাদ।
যারা এরকম ঘৃণ্য অপকর্ম করে তার জন্য আবার গর্বও করে সেই স্বঘোষিত সন্ত্রাসীরা কোন মুখে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী বলে? ইহুদিদের ধর্মে আছে যে ব্যক্তি কোনো খ্রিস্টানকে হত্যা করবে সে আল্লাহর নিকট এর জন্য পুরস্কার পাবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য সেই দুই চির শত্রু ইহুদি আর খ্রিস্টান একে অন্যের বন্ধু হয়ে যায়। তার চেয়েও বড় আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ইহুদি আর খৃষ্টানদের সাথে তাল মিলিয়ে এদেশীয় তাদের উচ্ছিষ্টভুগী কিছু নামধারী মুসলমান সত্যমিথ্যা যাচাই না করে মাদরাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়। তারা চিন্তা করে না যে মানবতার শত্র“ ইহুদিদের সাথে তাল মেলানো উচিত কিনা। তারা দেখেও না দেখার ভান করে যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে মারামারি লেগেই থাকে, অস্ত্র উঁচিয়ে একদল আরেক দলকে ধাওয়া করে এবং ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে সেই সবের কিছুই মাদরাসায় কল্পনাও করা যায় না। বরং মাদরাসা পড়ুয়াদেরকে সমাজে শান্ত, শিষ্ট, মার্জিত ও পরিশীলিত চরিত্রেই দেখা যায়।
নিরপেক্ষ দৃষ্টি মেলে তাকালে প্রত্যেকের কাছে পরিস্কার হয়ে উঠবে যে, মানবতার কল্যাণের কথা, পরোপকার আর দুর্বলদের সাহায্য করার কথা, ভ্রাতৃত্ব আর সহমর্মিতার কথা, আল্লাহকে ভয় করে অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার কথা শিক্ষা দেওয়া হয় মাদরাসাগুলোতে। আল্লাহর কালাম কোরআন আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস পড়াশোনা এবং বাস্তব জীবনে সেই মতে আমল করে দেখানোর মত কোনো প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মাদরাসা ছাড়া আর কোথাও নাই। কওমী মাদরাসাগুলো সরকারের এক পয়সাও না নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করে দেশ ও জাতির পক্ষে বিরাট অবদান রাখছে। আর এটা সহ্য করতে পারছে না মানবতার শত্রু ইহুদি-খ্রিস্টান আর তাদের এদেশীয় এজেন্টরা। তাই তারা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে মিডিয়াতে প্রচার করছে। এর জন্য তারা খরচ করছে কোটি কোটি ডলার।
এদেশেরও অনেকে বুঝে না বুঝে ইহুদি ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে মাদরাসা এবং মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগেও ইহুদি ষড়যন্ত্র বুঝতে না পারা এবং তাদের সুরে সুর মিলানো হয়তো বোকামি নয়তো আত্মঘাতী হঠকারিতা। আমাদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত। পৃথিবীতে কেউ চিরদিন থাকবে না। আল্লাহর কাছে আখেরাতে সব কিছুর হিসাব দিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৯৮৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
(ধন্যবাদ আপনাকে)
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন