"শহিদ জননী আসমা কারজাই! ভূলোক-দ্যুলোকে আজ তোমারই জয়গান"
লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ গনি ২০ জুলাই, ২০১৪, ০৭:৩৮:২৯ সন্ধ্যা
একবার চিন্তা করুন আমার-আপনার মায়ের কথা, তিনটি তিনটি সন্তান হারালে কি অবস্থা হওয়ার কথা। মাত্র একটি সন্তান হারিয়েও অনেক মাকে পাগল হয়ে যেতে দেখেছি। আর অনেক মাকে ছেলে হারানোর শোকে মৃত্যুশয্যায় যেতেও দেখেছি। আর এই মহিয়সি কিনা ছেলে হারিয়ে পাড়া-পড়সিকে মিষ্টি বিতরণ করছেন।
বলছিলাম আসমা কারজাইর কথা। ক্ষণজন্মা এই মহিয়সী 'মৃত্যপূর' ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দা। ইজরাইলী বর্বরোচিত হামলায় স্বামী আর দুই দুইটি সন্তানের শাহাদতবরণ তার অন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারেনি, আল্লাহর রাস্তাই দেওয়া এই ত্যাগকেও নিজের কাছে কেমন জানি অপূর্ণ মনে হলো।
"আমার কাছে আল্লাহ আরো কুরবানি চাইছেন, আমার এখনি সন্তুষ্টু হওয়া অপরাধ। দুটি সন্তান শহিদ হয়েছে, তাতে দুঃখের কিইবা আছে? যার কাছ থেকে এসেছিল, তার কাছেই তো ফিরে গেছে। আল্লাহ নিজেই তো বলেছেন, এরা মৃত নয়, এরা জীবতই আছে। তবে আমার চক্ষুর আড়ালে। তারা আমার কাছে থেকে আল্লাহপ্রীতির মাঝে আবরণ ফেলবে, এর চেয়ে চক্ষুর আড়ালে থাকাটাই শ্রেয় নয়কি?" এই ভাবনাগুলো তার অন্তরকে নাড়া দেয়। চলার পথের শেষ খুটি ও কলিজার টুকরা 9 বছরের ছোট শিশু উসামাকেও জিহাদের ময়দানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। জিহাদে প্রেরণের পূর্ব মুহূর্তে শেষবারের মতো বক্ষে আগলে-মাথায় হাত রেখে এই কথাগুলোই হয়তো বলেছিলেন- যাও, এখনি সময়, বেরিয়ে পড়ো। তোমার বাবা-ভাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করো। পবিত্র ফিলিস্তিন ভূমিকে আল্লাহ-রাসূলের দূষমনের কতৃত্বমুক্ত করো। তোমার পূর্বসূরী সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী, যার হাত ধরেই মসজিদ আকসা ক্রুসেডদের দখলমুক্ত হয়েছিল। আজ মসজিদে আকসা পুণরায় আমাদের হাতছাড়া। তাই আজ তোমাকেই সালাহ উদ্দিন আইয়ূবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। মনে রেখ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী দুইটি পুরস্কারের যে কোনো একটি পাবেই। হয়তো শহীদ নয়তো গাজী। জান্নাত পাবার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। এগিয়ে যাও! ঝাপিয়ে পড়ো! তোমার বাবা-ভাই তোমাকে জান্নাতের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে তোমার আগমনক্ষণের অপেক্ষায় আছে।"
আল্লাহ শাহাদাতের অমীয় সুদা সকলের ভাগ্যে লিখেননি। আর সব মায়েদেরকে শহিদ-জননী হওয়ার মর্যাদাও দেননি। ব্যতিক্রম আসমা কারজাই। চওড়া কপাল নিয়েই তিনি জন্মেছেন। দুই শহিদের জননীর খেতাব পেয়েছেন আগেই। এবার সেই সংখ্যার নতুন সংযোজন শিশু উসামা।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন কিছুক্ষণ হলো। ওমনি শিশু উসামার শহিদ হওয়ার সুসংবাদ পেলেন। প্রথমে স্বামী তারপর তিন তিনটি সন্তান হারিয়ে এই নিঃস্ব অবস্থায় পৃথিবী তার জন্য সঙ্কির্ণতর হওয়ার কথা। দুঃখে আর বেদনায় হৃদয়াঙ্গন চৌচির হওয়ার কথা। কিন্ত আসমা কারজাই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাতুতে গড়া এক মহামানবী। শত কষ্টের মাঝেও ভেঙে পড়ার পাত্রী তিনি নন। তার অভিধানে আনুকূল্য ও প্রতিকুলতা সমার্থক। তাইতো সর্বহারা হয়ে যখন তার অশ্রু বিতরণের কথা, তখন তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন মিষ্টি বিতরণে। পরিস্থিতি বলে একটা কথা আছে, তার এহেন কর্ম দেখে স্বাভাবিকভাবে সবাই অবাক হলেন। কিন্তু পরিস্থিতিকে যিনি দাসে পরিণত করেছেন, তার কাছে এর জবাব স্পষ্ট-"আজ আমার তৃতীয় সন্তানটি শহীদ হয়েছে, তিন শহীদের জননী হয়ে আমি গর্বিত ও আনন্দে উল্লসিত, তাই এই মিষ্টি বিতরণ।"
যে জাতিতে আসমা কারজাই এর মতো মহিয়সী বিদ্যমান সে জাতি সাময়িকভাবে হয়তো নির্যাতিত-নিপীড়িত হতে পারে, কিন্তু বিলুপ হতে পারে না। মজ্জাগত শাহাদত ইস্পৃহার নিয়ে যাদের জন্ম তাদের হাতেই একদিন মালাউন ইজরাইলীদের পরাজয় ঘটবে ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে আল্লাহ! পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের মজলুম-নির্যাতিত-নিপীড়িত-নিঃস্ব মা-বোনদের আর্তনাদ কবুল করো। তাদের নয়নাশ্রুর উত্তাল ঢেউয়ে ইজরাইলী মালাউনদের ভাসিয়ে দাও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন