"বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বনাম বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ"
লিখেছেন লিখেছেন রঙ্গিন স্বপ্ন ০৪ মার্চ, ২০১৫, ০২:৪১:১৪ রাত
এই বিতর্ক বহুদিনের। দুই রাজনৈতিক শিবিরে দীর্ঘ দিনের চলে আসা দ্বন্দ্ব। অনেকেই ৭২'র সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ চালাতে বলেন, যেখানে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কথা উল্লেখ আছে এবং যারা এর মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রগতিবাদের পক্ষের মানুষ বলে বিশ্বাস করেন। অপরদিকে আরেকটি পক্ষ যারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত এবং সেই ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত।
বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে- যাদের ভাষা বাংলা এবং সেই চেতনা ও সংস্কৃতি ধারন করেন তারা সবাই এর মধ্যে গণ্য হবেন। এই হিসেবে ভারতের কোলকাতার সকল বাঙ্গালী এই জাতীয়তাবাদের অংশ। যদিও আমরা বাস্তবে ভারতের বাঙ্গালীদের বাংলাদেশী হবার কোন সুযোগ দেখিনা। তাহলে প্রশ্ন হলো যারা শত-শত বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করে আসছেন অথচ তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলা নয়, যেমন উপজাতি- তাদেরকে কীভাবে এই "বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের" মধ্যে গণ্য করা হবে? এই মতাদর্শে দেশের অভ্যন্তরের কাছের মানুষদের সম্পৃক্ত করে না অথচ দুরের এবং নিজ ভৌগলিক সীমানার বাইরের জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করছে অতি সহজেই।
অপরদিকে "বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ" এর মধ্যে সকল "বাংলাদেশী বাঙ্গালী" এবং সকল "বাংলাদেশী উপজাতি" অন্তর্ভুক্ত।মানে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার অভ্যন্তরে যারা বসবাস করেন তারা সবাই বাংলাদেশী। আর সাধারণ জনগণ এটাই মানেন, বিশ্বাস করেন এবং সেই আদর্শে উজ্জীবিত।
বাঙ্গালী জতীয়তাবাদ মূলত racism । মানে হল বাংলাদেশে বাঙ্গালী ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না। তাদের কথা সত্য হলে মানে দাঁড়ালো- বাংলাদেশ হল একটি racist রাষ্ট্র। যা স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।
তাহলে মানে দাঁড়ালো- "সকল বাঙ্গালী বাংলাদেশী নয়, কিন্তু সকল বাংলাদেশীর অনেকেই বাঙ্গালী।" অর্থাৎ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ-ই মূলত বাস্তবে গ্রহণযোগ্য।
বিষয়: বিবিধ
২৪৩৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিংবা ধুতিচাটা রোগ আছে বিধায় স্বীকার করতে চায়না।
- পশ্চিম বঙ্গের অন্যতম সাহিত্যিক বঙ্কিম চন্দ্র বলেছেন, বাংলাদেশে দুটো জাতির বাস একটি বাঙ্গালী অন্যটি মুসলমান। তার মানে হিন্দুরাই বাঙ্গালী।
দুটি উদাহরণ দিলাম, ব্রিটিশ শাসনআমল থেকেই কলিকাতার হিন্দুর মুসলমানদের কে বাঙ্গালী বলে স্বীকারই করত না। মুসলমান তো বাঙ্গালী নয়ই, বরং যবন, ম্লেচ্ছ বলে গালাগালি করত। ছোট খাট চাকুরী করত এমন কিছু মুসলমান নিজেদের এই চাতুর্য কৌশল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে, নিজেদের বাঙ্গালী বলে জাহির করত এবং ধুতি পড়ে অফিসে যেত।
পাকিস্তান স্বাধীন হবার পরে, মুসলমানদের সেই দিন আর থাকেনি। মুসলমানদের দৃশ্যত কিছু উন্নতি হলেও ইসলামের কোন উন্নতি হয়নি। যারা আগে থেকেই হিন্দুদের সাথে ভিরে নিজেদের বাঙ্গালী হিসেবে জাহির করত, তাদের নাম মুসলমানের মত হলেও, তারা ছিল সুবিধা লাভের জন্য সব জায়গার 'এডজাষ্টটেবল'। তাদের মাধ্যমেই আজকেই এই অবস্থা।
- আওয়ামীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সহরোয়ার্দী কত সুন্দর অর্থবোধক নাম পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকেরা ওনার নাম লিখত সুরাবর্দী হিসেবে। হিংসা করেই লিখত।
- আওয়ামীলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম একজন, পাকিস্তানের প্রথম বাণিজ্য মন্ত্রী, সাংবাদিক মাহফুজ আনামের বাবা 'আবুল মনুসুর আহমেদ' আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইতে তাহার ছোটকালের বাঙ্গালী নিয়ে বহু দুর্ভোগের কথা লিখেছেন।
- জিয়াউর রহমান এটা জানতেন ও বুঝতেন বলে তিনি ব্যাপারটাকে জাতীর সামনে তুলে এনেছেন। এটা যদি সাধারণ বিষয় হবে তাহলে এটা নিয়ে এত ঝগড়া চলত না। মূলত এ্টা একটা আদর্শিক সমস্যা যা আরে কিছু কাল থাকবে।
আমেরিকা , ইংল্যান্ড , অস্ট্রেলিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রধান ভাষা কিন্তু ইংলিশ । তাই বলে কি এদের ইংলিশ জাতীয়তাবাদ বলে ? নাকি আলাদা আলাদা দেশ হিসেবেই পরিচিত একই ভাষাতে কথা বলা সত্ত্বেও ?
বাংলা ভাষা পৃথিবীতে অনন্য এই কারণে যে এ ভাষার জন্য প্রান ও রক্ত দেবার ঘটনা ঘটেছে এবং এটা করেছে বাংলাদেশী বাংলা ভাষীরা ।
তাই বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বলে কলিকাতানদের আমাদের একই কাতারে আনার প্রক্রিয়া খুব একটা পাত্তা পাবে না অন্তত বাংলাদেশীদের কাছে ।
বাংলাদেশী বাংলা ভাষীরা ভাষাকেও যেমন স্বাধীন করেছে তেমনি দেশকেও স্বাধীন করেছে ।
অন্য বাংলা ভাষীরা নিজেদের অস্তিত্বের জন্য কিছুই না করে আমাদের সাথে লিংকড্ আপ হয়ে জাতে ওঠার চেষ্টায় রত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন