শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লা আমাদের প্রেরনাঃ-
লিখেছেন লিখেছেন বাংলায় কথা বলি ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৬:০০ রাত
আব্দুল কাদের মোল্লা বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের একজন নির্বিক সিপাহসালার। তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, এবং বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধের কারনে ১৯৭১ সালে তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে পারেনাই। ১৯৭৫ সালে তিনি সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষা প্রশাসনের ডিপ্লোমায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে ১৯৭৭ সালে তিনি শিক্ষা প্রশাসন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এখানে তিনি প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন। ছাত্র জীবন শেষে ১৯৭৭ সালের মে মাসে তিনি জামায়াতে ইসলামিতে যোগদান করেন। তারপরেই শুরু হয় তার জিবনের ভিন্য অধ্যায়। জামায়াতে ইসলামিতে যোগ দেওয়ার পর ধিরে ধিরে তিনি জামাআতের সহকারি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একজন বর্ষিয়ান রাজনিতিবিদ এবং ইসলামি আন্দোলনের সিপাহসালার। বাতিলের বিরুদ্ধে সব সময় ছিলেন সোচ্চার। অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। ২০০৮সালে ১/১১ এর একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা দখল করে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদি, নাস্তিক মুরতাদ্দের পা চাটা গোলাম এবং ইসলাম বিদ্ধেষি স্বৈরাচারী শাসক হাসিন। ক্ষমতায় এসে তারা বিভিন্ন ইসলাম বিরোধি আইন প্রনয়ন করা শুরু করে। তারা দেখলো তাদের ইসলাম বিদ্বেষী কাজের একমাত্র প্রতিবন্ধক হল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। তাই তারা বাংলার যমিন থেকে ইসলাম নির্মুল করার উদ্যেশ্যে কথিত যুদ্ধপরাধি, মানবতাবিরোধি অপরাধের ভূয়া অভিযোগ এনে বাংলার যমিন থেকে ইসলামকে নির্মুল করার উদ্যেশ্যে আল্লামা দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামি, আলি আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, অধ্যাপক গোলাম আজম সহ ইসলামি আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। আন্তর্যাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নাম দিয়ে দেশীয় আইনে তাদের প্রহসনের বিচার শুরু করে। একে একে রায় ও আসতে থাকে। প্রথমে আল্লামা দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী সাহেবের মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা করে। রায়ের খবর শুনা মাত্র সারা বাংলাদেশের তৌহিদি জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এবং সেই দিনই ২০০এর ও অধিক মানুষ শাহাদাত বরন করেন। তারপর শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জিবন কারাদন্ড দেওয়ার পর আইন সংশোধন করে রাষ্ট্র পক্ষ ও আসামি পক্ষ আপিল করে। (যদি ও এই বিধান বিশ্বের কোথাও নেয়)। অতঃপর আপিল শেষে হঠাত করেই তার রায় কার্যকরের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল। অবশেষে অনেক নাটকের পর শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু কি অদ্ভুত!!! আব্দুল কাদের মোল্লা যখন শুনল তার মৃত্যু কার্যকর করা হবে সাথে সাথে তিনি বলে ঊঠলে উঠলেন আলহামদুলিল্লাহ!!!!! অনেক দিন শহিদ হওয়ার আশা করেছি, হয়ত আল্লাহ জিবনের শেষ সময়ে এসে আমার দোয়া কবুল করেছেন।
জিবনের শেষ দেখা করার জন্য পরিবারের সদস্যরা যখন তার সাথে দেখা করতে গেলেন, তখন ঘটল আরেকটি বিরল ঘটনা!!
তিনি তার পরিবারের সদস্যদেরকে সর্ব প্রথম ধৈর্য ধারন করার জন্য বললেন! অতঃপর বললেন এতদিন আমি তোমাদের অবিভাবক ছিলাম আজ থেকে আল্লাহ তোমাদের অবিভাবক। তোমরা আমার জন্য চিন্তা করনা কারন আমি শাহাদাতের অমিয় শুধা পান করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আল্লাহর কসম এই যালিম সরকার আমার ব্যাপারে যেই অভিযোগ এনেছে তার সাথে আমার দূরতম সম্পর্কও নেই!! আমি একমাত্র ইসলামি আন্দোলন করার কারনে আজ মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রতি ফোঁটা রক্ত ইসলামি আন্দোলন করবে। আর আমার শাহাদাত ইসলামি আন্দোলনের সকল কর্মিদের জন্য প্রেরনা হয়ে থাকবে। তিনি আরো বললেন জিবন-মরনের ফয়সালা করেন আল্লাহ। সুতারাং যদি আমার হায়াত থাকে তবে পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই আমাকে মৃত্যুদন্ড দিবে, আর যদি আমার হায়াত না থাকে তবে পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবেনা। আমি কখনো বাতিলের কাছে মাথা নত করবোনা। আমি কখনো প্রান ভিক্ষা চাইবোনা। আমার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর আমার জন্য কোনো প্রতিশোধ যেন না নেওয়া হয়। দেশ বাসির কাছে সর্ব শেষ সালাম ও দোয়া কামনা করার মাধ্যমেই শেষ বিদায় নেন তিনি।
এই দিন রক্ত পিপাসু হায়েনা হাসিনা সরকারের নির্দেশেই ফাঁসি দেওয়া হয় ইসলামি আন্দোলনের নির্বিক সিপাহসালার শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে। আর এর মাধ্যমেয় সূচনা হয় বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের সর্বোচ্চ ত্যাগ!!!!
কিন্তু এই ত্যাগ, তিতিক্ষা, কুরবানি দেখে কি ইসলামি আন্দোলনের কর্মিদের মনে ভয় এসেছে?? নাকি তারা আরো বেশি শহিদি জযবা নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে??
আমরা জানি ইসলামের ইতিহাস হল অতি কষ্টের ইতিহাস, নির্যাতনের ইতিহাস, শহিদের ইতিহাস। তাই আজ আমরা দিপ্ত শপথ নিয়ে বলতে চায় এই দুনিয়ার আদালতে নাস্তিক-মুরতাদরা আমাদেরকে জেল, জুলুম, নির্যাতন, রিমান্ড, ও ফাঁসি দিয়ে আমাদেরকে কষ্ট দিতে পারবে, কিন্তু কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদালতে তারা রেহায় পাবেনা।
“যে পথে রয়েছে শহিদের রক্ত যে পথে রয়েছে কাঁটা বিছানো
করবোনা মাথা নত বাতিলের সামনে ছাড়বোনা সেই পথ কখনো”
তাই শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যু থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহন করার মধ্য দিয়ে আগামি দিনের ইসলামি আন্দোলনের কাজকে আরো বেশি বেগবান করার এবং শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের দিপ্ত শপথ নিয়ে আমাদের সবাইকে ময়দানে নামার উদাত্ত আহ্বান রেখে আজকের মত এই পর্যন্ত। আল্লাহ আমাদের সকল কাজকে তার দিনের জন্য কবুল করুন। (আমিন)
বিষয়: বিবিধ
১২৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন