চর্চাবিহীন মুসলিম (Non- practising Muslim)
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:৫৯:৪৭ রাত
চর্চাবিহীন মুসলিম
অধূনা চারপাশে চর্চাবিহীন মুসলিম এর মিছিল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এরা একটু কাব্য করে – ইংরেজীতে নিজেদের পরিচয় দেন -‘নন – প্র্যাকটিসিং মুসলিম ( Non- practising Muslim) – বাংলায় যাকে বলা যায় চর্চা- বিহীন মুসলিম। অথবা অনভ্যস্ত মুসলিম- বা অননুশীলিত মুসলিম যিনি ইসলামের অনুশীলন করেন না! আমরাও কাঁধ ঝাকিয়ে তা মেনে নেই- যেন এ পন্থাও অনেক ‘গ্রহণ যোগ্য পন্থার একটি ! যিনি বলছেন তার বক্তব্যে ‘নিজের ব্যর্থতার দায়ভার নেই, অনুশোচনার আভাস ও নেই! এ এক ভয়াবহ ট্রেন্ড!
যেন বীজগণিতের বা ত্রিকোণমিতির অংক বুঝিয়ে চাইল ক্লাস নাইনে পড়া ভাতিজা। চাচা বলছেন, অনেকদিন প্র্যাকটিস নেইরে বেটা, তোমার টিউটরের কাছ থেকে বুঝিয়ে নিও। হতে পারে সত্যই, আবার এও হতে পারে - লজ্জায় বলতে পারছেন না যে ভুলে গেছেন বা কোন মতে ঐ বিষয়ে পাশ মার্ক পেয়েছিলেন, ঐ বিষয়ে কাউকে শেখানোর মত দক্ষতা তার নেই । - প্রেস্টিজ ‘ফুটো হয়ে যাবে এই ভয়ে সত্য বলতে পারছেন না। এমনি ভাবে ইসলামেরও চর্চা নেই অনেকদিন - যেন গ্রাজুয়েশন নেয়া হয়ে গেছে ইসলামের উপর , কাজেই আর চর্চা করেন না এই বিষয়ের ! এব্যাপারে যেন অঢেল স্বাধীনতা রয়েছে এক এক জনের । ইচ্ছে হল প্র্যাকটিস করলাম- ইচ্ছে হল – ছেড়ে দিলাম।
ধরা যাক একজন ডাক্তার । প্রচুর পড়া শুনা করে – শ্রম আর মেধা খাটিয়ে মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হয়েছে, তারপর সে অধ্যবসায়- নিজের পড়াশুনা – অন্য ডাক্তারদের প্র্যাকটিস সচক্ষে দেখা, কত নির্ঘুম রাত পার করে দিয়ে একদিন চুড়ান্ত ভাবে ডাক্তারি পরীক্ষা পাশ করে ডাক্তার হল। ইন্টার্নশিপে তার জ্ঞান, হাতে কলমে দক্ষতা আবারও ঝালাই হল। এবার সে জেনারেল প্র্যাক্টিসনার বা স্পেশালিষ্ট হিসেবে কোন হাসপাতালে চাকুরি নিল। ধরা যাক ১০ বছর ঐ পদে সে চাকুরী করল।
এরপর সে সিদ্ধান্ত নিল - ডাক্তারি আর করবে না, একটা মুদি বা মিঠাইয়ের দোকান বা রেস্টুরেন্ট ‘শেফ এর কাজ করবে । এই ডাক্তারকে আমরা বলব – চর্চা- বিহীন ডাক্তার ( Non practising physician!)। তাই নয় কি? এই ব্যক্তির শিক্ষা- জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তিনি আর ডাক্তার বলে বিবেচিত হবেন কি? তিনি ঐ পেশা ছেড়ে এখন অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন!
-‘নন – প্র্যাকটিসিং মুসলিম বলতেও তেমন এক শ্রেণীর মুসলিম বুঝায় যারা আর সে কাজ গুলো করেন না বা না সেভাবে জীবন যাপন করেন না, যা একজন মুসলিম সাধারণত করে থাকে। তারা নামাজ পড়েন না, তারা রোজা রাখেন না – যাকাত দেননা বা অন্যান্য আদেশ নিষেধ, হালাল হারাম যা মুসলিম মাত্র মেনে চলার কথা তা আর তার জন্য এ মুহূর্তে প্রযোজ্য হচ্ছে না- । কারন যাই হোক, তার নিজে ভাষাতেই- তিনি মুসলিম জীবন বিধানের বাইরে আছেন! অনেক আধাআধি- মানে মদ খান, শুকর খান না!
এর ফল কি? বিজ্ঞান বলে প্রতিটি কাজের বা ক্রিয়ার পেছনে একটা কারণ থাকে। আর আমরা জানি প্রতিটি ক্রিয়ার একটা ফলাফলও থাকে। -‘নন – প্র্যাকটিসিং মুসলিম এর প্র্যাকটিস না করার ফল কি? আসুন দেখা যাকঃ
ক) নন – প্র্যাকটিসিং – অর্থ আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বিদ্রোহঃ
খ) নন – প্র্যাকটিসিং- অর্থ আল্লাহ্র অবাধ্যতা
গ) নন – প্র্যাকটিসিং-অর্থ শয়তানের অনুসরণ
ঐ ধরণের কাজ করা বা কথা বলার স্বাধীনতা কি আমার আছে?
আল্লাহ্ পাক মানুষকে ‘ স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি ( ) দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর অর্থ এই নয় সে যা ইচ্ছে তা করে যাবে। এর অর্থ – এই যে, তাকে বিবেক দেয়া হয়েছে- চিন্তা শক্তি দেয়া হয়েছে- সে বিবেক খাটিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবে – যেটা সঠিক সে তাই করবে! সে নিজের কাছে নিজেই জবাবদিহী করবে। যদি তা না করে মানুষকে আল্লাহ্ পাক ধরবেন – সে দিন যেদিন মা তার বাচ্চাকে ভুলে যাবে, সন্তান তার পিতা মাতাকে ভুলে যাবে! নিজের অজান্তেই প্রতিদিন এক পা একপা করে আমরা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ‘নন – প্র্যাকটিসিং’ এর কর্মফল আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে- আমার নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে! এই চরম ব্যস্ত দুনিয়ায় কার সে কথা ভাবার সময় আছে? আফালা তাক্কীলুন?
বিষয়: বিবিধ
১১২৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসলিম মানে ঐ ব্যক্তি, যিনি নিজেকে /নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর নিকট সাবমট করেছেন। এখন নামাজ না পড়া মানে সাবমিট না করা। মানে বিদ্রোহ করা, ঠিক যেমন ইবলিশ করেছিল সেজদা না দিয়ে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন