তন্ময় মল্লিকের ৭ বছর জেল ও বাংলার হিন্দু সমাজ
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৪ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:০১:০৭ রাত
এবার দূর্গা পূজায় হিন্দু সমাজের প্রতি শেখ হাসিনার উপহার হল তন্ময় মল্লিকের ৭ বছর জেল। হিন্দুরা শেখ হাসিনা কে দেবী দূর্গার ন্যায় শ্রদ্ধা করলেও শেখ হাসিনা যে হিন্দুদের কে চাকর বাকর ছাড়া আর কিছুই মনে করে না এটা ক্ষুদ্র মোবাইল ব্যবসায়ী তন্ময় মল্লিকের ৭ বছর জেল দ্বারাই প্রমান হল। খুলনার দাকোপ উপজেলার তন্ময় মল্লিক হলেন বাংলার হিন্দু সমাজের এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোক। তন্ময় মল্লিকের একটি ছোট মোবাইলের দোকান আছে যেখানে উনি গ্রাহকদের মেমোরী কার্ডে গান রিংটোন সিনেমার নায়িকার ছবি ও মাঝে মাঝে পর্নোগ্রাফিও ঢুকান। বিনিময়ে গ্রাহকরা তন্ময় মল্লিক কে ১০০/২০০ টাকা দেয়। তো সেইসব mp3 mp4 এর সাথে তন্ময় মল্লিক আমাদের তথাকথিত জাতির পিতা শেখ মুজিব কে নিয়ে একটা ব্যঙ্গ করা গানও গ্রাহকদের মেমোরী কার্ডে ঢুকিয়েছিল। শেখ মুজিব কে ব্যঙ্গ করা গানের সাথে হয়ত খালেদা জিয়া কে নিয়ে ব্যঙ্গ করা কোন গানও হয়ত তন্ময় মল্লিক গ্রাহকদের মেমোরী কার্ডে দিয়েছিল। তবে সেটা সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্রুনালের বিবেচ্য বিষয় না। আমরা যখন পিসি কিনি তখন কিন্তু পিসির দোকান থেকে আমাদের হার্ড ড্রাইভে একসাথে অনেক গুলি গান মুভি গেইম দেয়া হয়। ঠিক তেমনি মোবাইলের দোকান গুলিতেও ১০০ টাকার প্যাকেজে আপনার মেমোরী কার্ডে অনেক রিংটোন mp3 mp4 দেয়া হয়। তাই শেখ মুজিব কে ব্যঙ্গ করা গানের সাথে যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা গানও তন্ময় মল্লিক তার গ্রাহকদের মেমোরী কার্ডে দিত এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু যেহেতু দেশে এখন মুজিববাদ চলছে তাই এখানে তন্ময় মল্লিকের অপরাধ হল কেন সে তার গ্রাহকের মেমোরী কার্ডে শেখ মুজিব কে ব্যঙ্গ করা সেই গানটি প্রেরন করল। একটা গ্রাম্য মোবাইল ব্যবসায়ী এইসব করেই তার পেট চালায়। আর শেখ মুজিব কোন নবী রাসূল না যে তাকে নিয়ে কোন গান রচনা করা যাবে না। আর তন্ময় মল্লিক শেখ মুজিব কে নিয়ে কোন গান রচনা করেন নি। উনি শুধু গ্রাহকদের মোবাইলে সেই গানটা অর্থের বিনিময়ে প্রেরন করেছিল।
আমি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম তন্ময় মল্লিক খুব দরিদ্র ঘরের সন্তান। ঐ মোবাইলের দোকান টাই ছিল তার একমাত্র সম্বল। দারিদ্রতার কারনে তন্ময় মল্লিক ভাল কোন উকিলও নিয়োগ দিতে পারে নাই। আর তন্ময় মল্লিকের মামলা যেহেতু শেখ মুজিব কেন্দ্রিক তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাহায্যও তন্ময় মল্লিকের কপালে জোটে নাই। বাংলার হিন্দু সমাজ এখন আর স্বজাতি নিয়ে চিন্তা করে না। হিন্দু সমাজের সব চিন্তা ভাবনা এখন শুধু ইরাক সিরিয়া কেন্দ্রিক। বাংলার হিন্দু সমাজ বড্ড ইরাক আফগানিস্তান সিরিয়া নিয়ে ব্যস্ত। স্বজাতীদের নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন উনাদের নাই।
তথ্যপ্রযুক্তি আইন বলতে আমরা এতদিনে বুঝতাম ব্লগ ফেইসবুকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু লেখা কিন্তু এখন থেকে মেমোরী কার্ডও এই তথ্য প্রযুক্তি আইনের মাঝে যুক্ত হল। শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা এখন আর মেমোরী কার্ডও ব্যবহার করতে পারব না। শেখ হাসিনার ৬ বছরের শাসনামলে এক টাকাও নেট খরচ কমে নাই উল্টা ব্লগ ফেইসবুকে কেউ একটু স্যাটোয়ার লিখলেই সাথে সাথে তাকে গোপালী পুলিশ ধরে রিমান্ডে নেয়। তবে আপনি ব্লগ ফেইসবুকে যত খুশী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গালিগালাজ করতে পারবেন। শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তি আইন থাবা বাবা টাইপ লেখালেখির ব্যাপারে আপনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিবে। শুধু মুজিব বংশের কাউকে নিয়ে আপনি কিছু বলতে পারবেন না।
শেখ হাসিনা দেশে মুজিববাদ চালু করতে চায়। মুজিববাদ মানে হল মুজিবই চূড়ান্ত। শেখ মুজিব কে একজন অবিসংবাদী নেতা হিসাবে ধরে নিয়ে সব নাগরিক চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মত আওয়ামী লীগের আনুগত্য করবে। কখনোই আওয়ামী লীগ ও মুজিব বংশের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। উত্তর কোরিয়া যেমন একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও বাংলাদেশ কে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিনত করবে এবং ইতিমধ্যে এর শতকরা ৭০ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। আর আপনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু বললেই সাথে সাথে আপনাকে রাজাকার আল বদর আল শামস উপাধিতে ভূষিত করা হবে। আপনার ১৪ গোষ্ঠীর কেউ জামাত শিবির না করলেও শুধু মুজিববাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই আপনার নাম যুদ্ধপরাধীদের তালিকায় উঠে যাবে। পশ্চিমারা উত্তর কোরিয়া কে যে দৃষ্টিতে দেখে আসতে আসতে তারা বাংলাদেশ কেও সে দৃষ্টিতে দেখবে। উত্তর কোরিয়ায় যেমন কিম জং ইলের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলাই মানে নির্ঘাত জেল ঠিক তেমনি বাংলাদেশেও মুজিব বংশের কারো বিরুদ্ধে বলা মানেই ৭ বছর জেল। আমার নিজের নামেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা আছে। হয়ত আমাকেও সামনের বছরের প্রথম দিকে শেখ হাসিনা একটানা ৭ বছরের জন্য কাশিমপুর কারাগারে প্রেরন করবে।
তন্ময় মল্লিকের এই ৭ বছর কারাদন্ডই সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্রুনালের প্রথম সাজা। আমি খুব আশা করছিলাম তন্ময় মল্লিকের প্রসঙ্গ ধরে এই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা লেখালেখি করবে। কিন্তু আমি হতাশ হলাম সাংবাদিকরা কেউই তুলসী মল্লিকের ছেলে তন্ময় মল্লিকের কারাদন্ড নিয়ে বেশী কিছু লিখল না। এর কারন কি এই তন্ময় মল্লিকের অপরাধ সে একজন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্য। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা আছে শুধু তসলিমা নাসরিনের লেখা ছাপাইতে। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা জাতীয় পত্রিকায় তসলিমা নাসরিনের লেখা ছাপিয়ে যাচ্ছে। তন্ময় মল্লিকের এই ৭ বছর জেল হওয়া নিয়ে আমি ভাবছিলাম হিন্দু পেইজ গুলাতে খুব লেখালেখি হবে। কিন্তু কোন হিন্দু পেইজ বা কোন হিন্দু সেলিব্রেটিকেও দেখলাম না তন্ময় মল্লিকের এই কারাদন্ডের প্রতিবাদ করতে। যেখানে ইরাক আফগানিস্তান সিরিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার খবরও এদের চোখ এড়ায় না সেখানে কিভাবে তন্ময় মল্লিকের জন্য হিন্দুরা একটুও চোখের পানি ফেলল না এটাই আমার জিজ্ঞাসা। যেখানে পান থেকে চুল খসলেই মুসলমানদের কে হিন্দুরা গালিগালাজ করে সেখানে নিরীহ তন্ময় মল্লিকের ৭ বছর জেল হবার পরেও শেখ হাসিনা হিন্দুদের কাছে মা দূর্গার ন্যায় সম্মানিত। প্রভুভক্তির কি অপূর্ব নিদর্শন ! হিন্দুদের মনমানসিকতা হচ্ছে এরকম ছেলে বেয়াদপী করলে বাপ শাস্তি দেয় না ঠিক তেমনি তন্ময় তার বাপ শেখ মুজিবের সাথে বেয়াদপি করছে তাই শেখ হাসিনা তন্ময় কে ৭ বছর জেল দিছে। আজকে তন্ময় মল্লিক যদি আল্লাহর রাসূলকে গালিগালাজ করে জেলে যেত তাইলে দেখতেন পুরা বাংলার হিন্দু সমাজ তুলসী মল্লিকের ছেলে তন্ময় মল্লিকের পাশে দাড়াত। কিন্তু তন্ময় মল্লিকের মামলাটা যেহেতু শেখ মুজিব কেন্দ্রিক তাই বাংলার হিন্দু সমাজ এখানে নিরব। বাংলাদেশে ভবিষ্যতে এরকম একটা অবস্থা দাড়াবে যে আপনি যদি শেখ মুজিবের নামের আগে জাতির জনক শব্দটা না ব্যবহার করেন তাইলেই আপনাকে সরকার ৭ বছর জেল খাটাবে। রাষ্ট্রই যখন নাগরিকদের মত প্রকাশ করতে বাধা দেয় তখন রাষ্ট্রই তো হচ্ছে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
ঈদের শুভেচ্ছা- কুরবানী ও ঈদ মোবারক
ত্যাগের আলোয় ব্যক্তি ও সমাজ জীবন আলোকিত হোক
মন্তব্য করতে লগইন করুন