দ্বীন বিজয়ের প্রাক্কালে আল্লাহর পরীক্ষা যখন শুরু - মুহাম্মদ আবদুল জব্বার
লিখেছেন লিখেছেন কিং মেকার ২৯ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৪৬:৫৫ রাত
দিন যায়, দিন আসে। পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল কোন একদিন। আবার বিশ্বজীবের অজান্তেই বাজবে মৃত্যু ঘন্টা। কিন্তু রাত-দিন, আলো-অন্ধকার, জন্ম-মৃত্যু এসবই কি সব ? “বিশ্ব জাহানে মানবতার আগমনের সমস্যা” মানব জন্মের পূর্বে ফেরেশ্তাদের এমনই প্রশ্নের উত্তর বিশ্ব চরাচরে নিয়ন্ত্রক বলেছিলেন “আমি যা জানি তোমরা তা জাননা”। তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন “আমি তোমাদের প্রতিনিধি হিসাবে প্রেরন করেছি”।
পৃথিবীর জন্ম থেকেই হক ও বাতিলের মাঝে শুরু হয়েছে চিরন্তন দ্বন্ধ। হাবিলের উপর কাবিলের নিষ্ঠুর আঘাত। আসহাবুল উখদুদের ন্যায় সত্য পথাশ্রয়ীদের ধৈয্যের ঢাল দিয়ে রবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ। যুগে যুগে যারা নফসের কুপ্রবৃত্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারঙ্গম তাদের জন্যইতো এই ঘোষনা,“ সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত, সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী”। নিভু নিভু প্রায় ঈমানের জজবা। চারদিকে বেদীনের জয়জয়াকার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। প্রতিটি কালেই ছিল এ নমুনার ভাস্কর।
আল্লাহর গোলামরা সময়ের পরিক্রমায় শত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপণিত করবেন এটাই আল্লাহর ওয়াদা।
অল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর ঘোষনা “ তিনি সেই সত্ত্বা যিনি তার রাসুল ( সঃ) কে দ্বীনে হক সহকারে প্রেরন করেছেন, তিনি এ দ্বীনে হককে সকল বাতিলের উপর বিজয়ী করবেন। ( সুরা ফাতাহ -২৮)
রাসুল (সঃ) আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দ্বীনে হককে কায়েম করলেন। অল্লাহ রাব্বুল আলামিন বল্লেন “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূনাঙ্গ করে দিলাম। আর তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ন করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকেই দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। ( মায়িদা-৩)
রাসুল ( সঃ ) এর সময় অসংখ্য পরীক্ষা আর মোকাবেলা করেই দ্বীনকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন। পরীক্ষা পাশ করার জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হয় তাই রাসুল ( সঃ ) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে জিহাদের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলেন।
সাহাবীদের একাংশ ভয়ে আতঙ্কে ধৈয্য হারা হয়ে রাসুল ( সঃ ) কে বলেছিলেন “ আল্লাহর সাহায্য কি আসবে”? আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে”। রাসুল ( সঃ ) সে কারনেই বদর, উহুদ, খন্দক, ইয়ারমুক সহ অসংখ্য জীবন-মরন পরীক্ষা মোকাবেলা করে দ্বীনে হককে কায়েম করেছিলেন। আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে হতচকিত হয়েছিলেন; তার দরবারে মস্তক অবনত করেছিলেন।
খোলাফায়ে রাশেদীনদের আমলেও আল্লাহ কঠিন কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে চুড়ান্ত বিজয় দান করেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) রোমানদের সাথে লড়াই করে অর্ধ জাহানের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আবার অনেকেই অধিক পরিমানে তাড়াহুড়া করার কারনে দ্বীনকে বিজয় প্রান্তে উন্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
যেমন খোলাফায়ে রাশেদার পরবর্তী খলীফারা খুব বেশী দিন দ্বীনের সঠিক মেজাজে খেলাফত পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় পরীক্ষায় উত্তির্ণ হতে পারেননি। জাহেলিয়াত যেখানে বিজয় লাভ করেছে। মুয়াবিয়া (রাঃ) এর সময় থেকে শুরু করে আব্বাসীয়দের উপর নির্যাতনের মাধ্যমে দ্বীনকে দুর্বলতার দিকে ঠেলে দিয়ে জাহেলিয়াতকে বিজয়ী হতে সাহায্য করেছিল।
হজ্জাজ বিন ইউসুফের সময় মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ সংঘাত লেগেই থাকে। আব্বাসীদের উপর উমাইয়াদের অমানুষিক নির্যাতন চলতে থাকে প্রতিনিয়ত। এতে দ্বীনের সাথে জাতি পরিচিত না হয়ে জাহেলিয়াতের সাথে পরিচিত হয়েছিল।
সৈয়দ আহমদ বেরলভী সিক সেনাদের উপর বিজয় লাভ করতে পারেননি ধৈর্য্যচ্যুত হওয়ার কারনে। তালেবানরা ক্ষমতার অপব্যবহারের কারনে দ্বীন বিজয় হওয়ার পরিবর্তে বিজয় হয়েছিল জাহেলিয়্যাত। আবার ইরানে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর ধৈর্য্য- প্রজ্ঞার কারনে হাজার হাজার মানুষের জীবন উৎসর্গ করে চরম পরীক্ষার মাধ্যমে দ্বীনকে বিজয়ী করেছিলেন।
পরীক্ষা যত বড় হয় বিজয় তত বড় হয়। মক্কা বিজয় ছিল ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিজয়। মুসলমানরা নবী ( সঃ) এর নেতৃত্বে যখন হুদায়বিয়ার সন্ধি করেছিলেন অনেকেই মনে করেছিলেন এটা চরম পরাজয়। কিন্তু ধৈর্য্য ও প্রজ্ঞার কারনেই সাময়িক ক্ষতি মনে হলেও ধৈর্য্যরে তরবারী দিয়ে মুসলমানরা মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে রক্তপাতহীন এক বিপ্লব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমরাও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট পর্যাালোচনা করলে দেখতে পাব- আল্লাহর পক্ষ থেকে বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য শুরু হয়েছে চুড়ান্ত পরীক্ষা । স্বাধীনতা পরবর্তী থেকে শত শত পরীক্ষায় এ কাফেলাকে খন্ড-বিখন্ড করার চক্রান্ত হয়েছিল। তার চক্রান্ত স্বরুপ ভয়-ভীতি ও খুন খারাবী দিয়ে এর অগ্রযাত্রাকে স্তব্দ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ এ সব পরীক্ষা থেকে সম্মানের সাথে এ আন্দোলনকে রক্ষা করেছেন। এ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দদেরকে জেল-জুলুম আর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এ আন্দোলনকে যুলুম নির্যাতন চালিয়ে বাতিলরা ফায়দা লুট করতে চায়। তারা ইসলামকে বিশ্বের দরবারে জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু আন্দোলন
সন্তর্পনে এগিয়ে চলছে।
রাজাকার থেকে যুদ্ধাপরাধী , যুদ্ধাপরাধী থেকে মানবতা বিরোধী হিসাবে বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ,অধ্যাপক গোলাম আজম, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী , সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ,মাওলানা আবদুস সোবাহান,মাওলানা একে, এম ইউসুফ, নায়েবে আমীর এসিস্টেন্ট সেক্রেটারী জেনারেল কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা সহ অপবাদ দিয়ে জেলে পুড়ে রাখা হয়েছে । ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। বিনা অপরাধে মাসের পর মাস কারা বরণ করছেন| আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে , হযরত ইউসুফ (আঃ) কে যেভাবে অপবাদ দিয়ে জেলে পুরা হয়েছিল, আল্লাহ সময়ের ব্যবধানে তাঁকে মিশরের শাসক বানিয়ে সম্মানীত করেছিলেন। ঠিক তেমনি করে আমাদের প্রিয় নেতাদেরকে অপবাদ দিয়ে জেলে নিক্ষেপ করলে ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদেরকে অতীতের চেয়ে অনেক বেশী সম্মানীত করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেবেন। ইনশা আল্লাহ।
আজ সময় এসেছে চুড়ান্ত বিজয়ের । বাতিলের মোকাবেলায় দ্বীন বিজয়ের । এর জন্য প্রয়োজন চরম ধৈয্যের পরাকাষ্ঠা উপস্থাপন , নেতার আনুগত্য ও ত্যাগের সর্বোচ্চ মানসিকতা। সময়ের পরিক্রমায় চুড়ান্ত পরীক্ষায় উন্নিত হওয়ার মাধ্যমে দ্বীনকে চুড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনিত দেখতে সক্ষম হব।ইনশাআল্লাহ ।
Secretary General,
Bangladesh Islami Chhatrashibir
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন