আমরা কি খেতে যাচ্ছি? -২ [সয়লেন্ট]
লিখেছেন লিখেছেন মোতাহারুল ইসলাম ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:০৪:১৬ রাত
রবীন্দ্রনাথ তার আমার ছেলেবেলা প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ছেলেবেলায় জ্বর হলে জুটত ক্যাস্টর ওয়েল আর তিন দিন উপবাস আর তিন দিন পর মৌরালা মাছের ঝোল দিয়ে গলা ভাত যেন অমৃতের মত লাগত। বলাবাহুল্য ক্যাস্টর অয়েল তরল ছিল আর গলা ভাতও ছিল অর্ধ তরল। জ্বর কিংবা অন্যান্য অসুস্থতায় তরল খাবারই ছিল এক সময় চিকিৎসকের ব্যাবস্থা পত্রে প্রধান পথ্য। যদিও বা জ্বরের ক্ষেত্রে তরল খাবার এখন আর আগের মত মোক্ষম পথ্য হিসাবে বিবেচিত হয়না, তবুও রোগের প্রকার ভেদে এখনো অনেক রোগে চিকিৎসকেরা তরল খাদ্য খাওার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তবে নিঃসন্দেহে সেটা সাময়িক সমাধান হিসাবে কিংবা রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার ন্যুনতম প্রয়াস হিসাবে। গ্রামাঞ্চলে কিংবা অনেক নিম্ন বিত্তের মধ্যে ভাতের মাড় খাওয়ার প্রচলন আছে, তবে ভাতের মাড়ের পুষ্টি গুণ অনেক। শিশু খাদ্য হিসাবে তরল দুধের কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া তরল সাগু বা বার্লি আমরা অনেকেই খেয়েছি। কিন্তু একজন পুর্ণ বয়স্ক সুস্থ্য মানুষ শুধু তরল খাবার খাবেন এবং তরল খাবার থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি লাভ করবেন এমনটি বোধ হয় কখনো চিন্তা করেননি।
ইংরেজীতে একটা কথা আছে, " necessity is the mother of invention" আর এ কারনেই বোধ হয় ‘রব রাইনহারট’ নতুন এক তরল খাবারের আবিস্কার করেছেন যা স্বাভাবিক খাবারের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে। অর্থাভাবই থাকে এ আবিস্কারে উদবুদ্ধ করেছে।
রব রাইনহারট সয়লেন্ট এর গ্লাস হাতে
স্যান ফ্রান্সিস্কোর ইলেক্ট্রিক্যাল এঞ্জিনিয়ার রব রাইনহারট। জানুয়ারি থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস পর্যন্ত তিনি খেয়ে চলেছেন নিজের রান্নাঘরে তৈরি সয়লেন্ট নামের এই তরল খাদ্য এবং এছাড়া প্রায় কিছুই খাননি তিনি। সয়লেন্ট নামের এই পুষ্টিকর তরলটি খেয়েই বেঁচে আছেন তিনি এবং তার কিছু অতি-উৎসাহী অনুসারী। তারা এটাকে মনে করছেন মানুষের খাদ্যভ্যাস পরিবর্তনের একটি যুগান্তকারী ধাপ।
খাবারের সাথে মানুষের সম্পর্কটা অনেকই গাঢ়। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে তা হয়ে উঠেছে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। খাবারের উপাদান, স্বাদ, চেহারা ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার শেষ নেই। কিন্তু খাবার তো আসলে মানবদেহের জন্যে জ্বালানী বই কিছু নয়! এবং এই জ্বালানী কিনতে বা তৈরি করতে খরচ হয়ে যায় আমাদের আয়ের সিংহভাগ। এই ঝামেলাতেই পড়েন রাইনহারট। স্যান ফ্রান্সিসকোতে আসার পর তার ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন কোম্পানি গড়ে তোলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। তখন বাধ্য হয়েই তাকে সস্তা খাবার খাওয়া শুরু করতে হয়। এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি হবার আশংকা থাকে। ফলে তিনি ও তার বন্ধুরা ভিটামিন খাওয়া শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে তিনি পুরো খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন।এ পর্যন্ত পুষ্টিতে ভরপুর অনেক তরলই বাজারে এসেছে কিন্তু সেগুলো অনেক দামী এবং বেশিদিন খেলে এগুলো বরং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এমনকি মহাকাশচারীদের জন্যে এমন একটি তরল তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু তারা স্বাদ-গন্ধের অভাব থাকার কারনে এটাকে পছন্দ করেননি।
এর পর তিন মাস ধরে রাইনহারট বায়কেমিস্ট্রি এবং পুষ্টি সম্পর্কে শেখা শুরু করেন পাইরেটেড বই কিনে। এরপর
বেঁচে থাকার জন্যে যেসব পুষ্টি উপাদান দরকার হয় সেগুলো তিনি জোগাড় করেন। এর মাঝে বেশিরভাগই ছিল রাসায়নিক। আমিষের উৎস হিসেবে ছানার জল, শর্করার জন্য মল্টডেক্সট্রিন, এমনকি জিঙ্ক এবং ক্রোমিয়াম। জানুয়ারির ১২ তারিখে রাইনহারট সবগুলো উপাদান পরিমাপ করেন, একসাথে মেশান এবং তাতে জল ঢেলে মিশ্রণ তৈরি করেন। এরপর সাহস করে খেয়েই ফেলেন। খাবার পর তিনি বুঝতে পারেন এতে ফাইবার জাতীয় বস্তু মেশানো হয়নি। এবং খুব বেশি পটাসিয়াম মেশানোর ফলে একবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই একটি কার্যকর প্রস্তুতপ্রণালী তৈরি করে ফেলেন তিনি। এরপর তিনি একটানা এক মাস এই তরল খেয়েই থাকেন দিনে তিন থেকে চারবার। ১৯৭০ সালের একটি চলচ্চিত্র “Soylent Green” এর নামানুসারে তিনি এই খাবারটির নাম দেন সয়লেন্ট। এই খাবার থেকে যথেষ্ট পুষ্টি পাচ্ছেন কি না তা নিশ্চিত করতে তিনি নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করেন। এই খাদ্যভ্যাসের ফলে তার জীবনে কি কি পরিবর্তন আসছে এটাও তিনি লক্ষ্য করেন এবং সব কিছুই লিপিবদ্ধ করেন তার ব্লগ “Mostly Harmless” এ। দেখা যায় তিনি খাবারের খরচ অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন এবং তার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি ঘটেছে।
ভেজাল খাবারের যুগে আমরা যখন ব্যাতিব্যাস্ত আর সব সময় মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় ‘আমরা কি খাচ্ছি?’ অনাহার ক্লিষ্ট পৃথিবীতে খাদ্য ঘাটতি পূরনের একটি সম্ভাবনা যখন উঁকি মারছে ঠিক তখনি আর একটি প্রশ্ন মানুষের অন্দর মহলে প্রবেশের অপেক্ষায় “ আমরা কি খেতে যাচ্ছি?”
তথ্য সুত্রঃ priyo.com
এ ব্যাপারে আমার পূর্বের লেখা " আমরা কি খেতে যাচ্ছি ?" পড়তে নীচের লিঙ্ক এ ক্লিক করুন।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন