প্রবাসের স্মৃতিচারণ- এগারো
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ১৩ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:৪৫:৩৭ রাত
১৫
আজিমভের কাছে পরেরদিন দেখার করার আশ্বাস দিয়ে বিদায় নিয়ে গেস্ট হাউসের দিকে গেলাম। আনুষঙ্গিক কাজ সেরে কম্বলের ভিতরে আশ্রয় নিলাম। বাইরের আবহাওয়া মোটামুটি ঠাণ্ডা। রুমের হিটারটা নিরবে-নিঃশব্দে রুমটা গরম করে দিতে লাগল। প্রতি রুমে দুয়ের অধিক হিটার আছে। হিটারগুলো লোহার তৈরি। ভিতরে গরম পানি প্রবেশের নল আছে যা দিয়ে গরম পানি এসে প্রথমে হিটারটাকে পরে রুমকে উষ্ণ করে দেয়। একপাশের ছোট্ট একটা যন্ত্র এদিক সেদিক ঘুরিয়ে বাড়ানো কমানো যায় ইচ্ছেমত। রুমের এদিককার হিটারটা আমার মাথার ঠিক বা পাশে। উপরে হাত দিয়ে রাখলাম। বেশীক্ষণ হাত রাখার জু নেই। দুই তিন মিনিটের মধ্যে একজন মানুষের স্বাভাবিক সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে তাপমাত্রা। কম্বলের তেমন প্রয়োজন নেই। তাই কম্বলের কভারটা খোলে শুধু ওঠা গায়ে জড়িয়ে রাখলাম। কারণ, ছোটবেলা থেকে গায়ের উপর কোন কিছুর একটা আবরণ না থাকলে ঘুমাতে অস্বস্তি লাগে।
রাত প্রায় দশটা। তেমন রাত না হলেও শীতের দিন হওয়াতে গভীর রাতের মতই মনে হচ্ছে। বাইরে মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে গাছের পাতার ফাঁক গলে। করিমভ এখনো রুমে ফেরেনি। তার লাগেজ দেখে বুঝতে পারলাম সে আসবে। হয়ত বাইরে কোথাও আড্ডা দিচ্ছে। লাস্ট একবার দেখাছিলাম টেলিফোন বুথের পাশে কার সাথে যেন আলাপ করছে। এরপর থেকে সারাদিন আর দেখা হয়নি। সে আসার আগে ঘুমিয়ে পড়া দরকার। এমন কিছু সময় থাকে প্রত্যেকের যখন কারো সংস্পর্শ বা সংসর্গ কোনটাই ভাল লাগেনা। একা থাকতেই বেশী ইচ্ছে করে তখন। একান্ত প্রিয়জনের সংস্পর্শ তখন মনে হয় উত্তপ্ত মরুর বুকে এক ফোঁটা জলের মত। কিন্তু ঐ মুহুর্তে যখন প্রিয় মানুষটি পাশে থাকেনা তখন নিজের ভিতরেই দুঃখটা চাপিয়ে রাখা ছাড়া কোন উপায় থাকেনা।
বিকেল বেলা আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখেছিলাম। ভর শীতের দিনেও নাকি এখানে ভারি বৃষ্টি হয়। কিন্তু কই বৃষ্টিতো নামছেনা। মেঘে মেঘে সারা আকাশ ঢেকে আছে। মাঝে মাঝে মেঘের ফাঁক গলে চাঁদ উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি। আস্তে আস্তে মেঘের ঘনঘটা আরও বেড়ে যাচ্ছে। ঠিক ঐ সময় তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। তোমার একটা চিঠির জন্য সমস্ত দেহ-মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। সমস্ত ইজমির শহর বর্ষণের প্রত্যাশায় আকাশের দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে। আমিও, আমিও। তোমার হাতের একটা চিঠি পেলে হয়ত বৃষ্টিস্নানের মতই সরস হয়ে উঠত দেহ, স্নিগ্ধ হয়ে উঠত মন। এখনতো চিঠি আদান-প্রদানের সে দিন আর নেই, তাইলে তোমার মনের মাধুরি মেশানো অন্তত একটা এসএমএস!!
বাইরে চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। চাঁদ হারিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। এ হল কি আমার! তোমার একটা এসএমএসের জন্য এত ব্যকুল লাগছে কেন? হে আমার মনোরমা, হে আমার প্রিয়তমা, তবু কি একটা চিঠি, একটা এসএমএস দিবেনা? কোনদিন কি দেখা দিবেনা? আমার জীবনের একটি মুহূর্তও কি তোমার ঐ চোখের স্নিগ্ধ আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে না?
আমার চোখের কোনা জলে টইটম্বুর, তোমার একটু ছোঁয়া পেলেই হয়ত আর কোন বাঁধা মানবেনা। আর মোবাইলে বিখ্যাত শিল্পী গোলাম আলী অনবরত গেয়ে যাচ্ছেন বিংশ শতাব্দীর সংগ্রামী নেতা হাসরত মোহানি’র অমর সৃষ্টি এ গানটি,
‘
চুপকে চুপকে রাতদিন আছু বাহানা ইয়্যাদ হ্যায়,।’
হাম কো আব্তক ইয়া আশকিকা জামানা ইয়্যাদ হ্যায়...।
--চলবে
বিষয়: বিবিধ
১২০৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
লেখাগুলি অনেক ভালো হচ্ছে চলতে থাকুক ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন