বিসওয়াল-ইউনূস বৈঠকের বিষয়বস্তু কি ছিল?
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১৮ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৯:৫১ দুপুর
সিকদার মোহাম্মদঃ গতকাল সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে বৈঠক হয় নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের, বৈঠকের বিষয়বস্তুনিয়ে গণমাধ্যমে পরস্পর বিরোধী খবর পরিবেশন লক্ষ্য করা গিয়েছে ।কোন সংবাদে বলা হয়েছে বৈঠকে সংলাপ কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নয়, বরং গুরুত্ব পেয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক, আবার কেউ কেউ খবর ছাপিয়েছে এই বলে যে, বিসওয়াল-ইউনূস বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে ।মূলত যার যার অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংবাদ পরিবেশন করার কারণে পাঠক মহলে এক রকম বিভ্রান্তির বা ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে । বস্তুত, গ্রামীণ ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসা, এ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা, সার্বিক অর্জন, সম্ভাবনা ও ঝুঁকির বিষয়গুলো সহ সার্বিক বিষয়ই গুরুত্ব পেয়েছে।যেখানে বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক অবস্থার বিষয় আলোচনা হয়েছে, সেখানে সংলাপ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা না হবার যৌক্তিক কোন কারণ থাকতে পারেনা ।কারণ বৈঠকে বিসওয়াল গ্রামীণ ব্যাংক ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উভয় বিষয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেন ।
গতকাল রবিবার সকালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাবি্লউ মজিনার বাসায় প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈঠক শেষে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিয়ষ অবগত করান।
আলোচিত ইস্যুগুলোতে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে তিনি কী বলেছেন তা জানতে চাইলে ড. ইউনূস জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্রে তাঁর যেসব বক্তব্য এসেছে সেগুলোর সারসংক্ষেপ তিনি (নিশা) তুলেছেন।আর আমাদের সচেতন দেশবাসী নিশ্চই অবগত আছেন বরাবরই ড. ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পক্ষে তার অবস্থান। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা আরো জানতে চাইলে তিনি বলেন,'সেটা কাগজপত্রে আছে। আমি দ্বিতীয় বার বলতে চাই না। বলতে গিয়ে আবার কোন বিপদে পড়ি!'
এছাড়াও ড. ইউনূস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণে আগামী ২০ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে যোগ দিতে তিনি আজ সোমবার ঢাকা ছাড়ছেন। ওবামার পক্ষে নিশা গতকাল তাঁকে আবারও আমন্ত্রণ জানান।
নিশার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস আরো জানান, 'নিশা তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু। তিনি সোশ্যাল বিজনেসের (সামাজিক ব্যবসা) সমর্থক বহুদিন থেকে। তিনি আগে ইউএসএআইডিতে ছিলেন। ইউএসএআইডি সোশ্যাল বিজনেসকে বড়ভাবে সমর্থন করছে। সেটার পেছনে তিনি ছিলেন। এখন জানতে চাচ্ছেন- কী অবস্থা, কী হলো? কালকে (শনিবার) এখানকার কিছু এন্টারপ্রেনারের (উদ্যোক্তার) সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে, এটা শুনে তিনি উৎসাহিত বোধ করছেন, এটা তিনি আমাকে বললেন।' ড. ইউনূস আরো জানান, 'আমি, আমাদের সোশ্যাল বিজনেস ল্যাব হলো গতকাল, সেটার ব্যাখ্যা দিলাম। কিভাবে কী হলো সেসব বললাম।'
নিশা বিসওয়ালের সঙ্গে রাজনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস জানান, 'পলিটিক্যাল ইস্যু এলো স্বাভাবিকভাবে। আলাপ হলো। তার আগে গ্রামীণ ব্যাংক সম্বন্ধে আলাপ হলো। তিনি এটা নিয়েও কনসার্ন (উদ্বিগ্ন)। তিনিও গ্রামীণ ব্যাংকের একজন পুরনো ভক্ত। কাজেই জানতে চাচ্ছেন যে এখন কী দাঁড়াবে, কী হবে। আমি পত্রপত্রিকায় যা বলেছি সেগুলো বললাম, যা আমার পজিশন (অবস্থান) ছিল তাঁকে ব্যাখ্যা করলাম।'
নিশার উদ্বেগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জানান, 'তিনি জানতে চাইলেন পরিস্থিতি কী। তিনি নিজে বুঝতে চাইলেন, কোন পরিস্থিতিতে আমরা আছি। আমি ব্যাখ্যা করলাম। আমি আগে যা যা বলেছি সেগুলোই ব্যাখ্যা করলাম। আরেকটা বিষয় হলো রাজনৈতিক অবস্থা। সে বিষয়ে আমি এ পর্যন্ত পত্রপত্রিকায় যা বলেছি সেগুলো তাঁকে ব্যাখ্যা করলাম।' এ ছাড়া আগামী বছর এপ্রিলে তাঁর মিয়ানমার সফর নিয়ে নিশার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান ড. ইউনূস।
সংলাপ নিয়ে নিশা বিসওয়াল কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস জানান, 'সংলাপ নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি।' নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওটা নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি।' নিশা বিসওয়াল তাহলে কী বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, 'যেসব অর্জন হয়েছে সেগুলো যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়। আমরা বলেছি, সেটা তো আমাদেরও আকাঙ্ক্ষা। বাধাপ্রাপ্ত যাতে না হয়, সে জন্য আমরা সবাই চেষ্টা করছি।' তবে খুবই স্বাভাবিক ভাবে ড. ইউনুস সংলাপ ও নির্বাচন পদ্ধতি প্রসঙ্গে কৌশলী উত্তর প্রদান করেছেন বলে প্রতিয়মান হয় ।
রয়টার্সের ব্লগের নিবন্ধে বিসওয়াল বাংলাদেশের যে অপার সম্ভাবনার কথা বলেছেন সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, 'সে কথা তিনি আবার বললেন।'
'সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারলে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো যাবে না'- নিবন্ধে নিশার এমন মত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, 'সেটা তিনি আবারও বললেন। এটা তো আমরা সবাই বলি যে আমাদের যে সম্ভাবনাগুলো আছে সেগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হবে। এটা যাতে নষ্ট হয়ে না যায়। যে অর্জন সেটাকে শুধু ধরে রাখা নয়, অর্জনটাকে আরো বাড়িয়ে দেওয়া, সম্প্রসারিত করা।'
আইন পরিবর্তনের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত কী হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, 'আমাকে জিজ্ঞেস করলেন এবং এটার প্রভাব কী হবে সে বিষয়ে আমার মতামতগুলো জানতে চেয়েছেন। আমি এ পর্যন্ত যা যা বিবৃতি দিয়েছি সেগুলোর সারসংক্ষেপ তাঁকে জানিয়ে দিলাম।'
ড. ইউনূস বলেন, বিসওয়ালের সঙ্গে তাঁর আলোচনা শুরু হয়েছিল প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়া নিয়ে। ২০ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে তিনি যোগ দেবেন। 'প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম' পুরস্কারের ৫০ বছর উপলক্ষে এ পর্যন্ত যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন এবং জীবিত আছেন তাঁদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ওবামা। আজ ঢাকা থেকে রওনা হয়ে নিউ ইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ইউনূস। এরপর তিনি যোগ দেবেন ওবামার নৈশভোজ অনুষ্ঠানে।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন