শবে বরাতের ফযীলত ও নামায কি ভাবে পড়বেন
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া পারভীন হাবিবা ২২ জুন, ২০১৩, ০৯:৩৬:৫৯ রাত
“শব” অর্থ রাত্রি এবং “বরাত” অর্থ ভাগ্য। তাই শবে বরাতের পূর্নাঙ্গ অর্থ “ভাগ্যের রজনী”। শা‘বান মাসের ১৫ তারিখের রাতকে শবে বরাতের রাত বলা হয়। এটি খুবই মর্তবার্পূন একটি রাত।
শবেবরাতের ফজিলত নিয়ে প্রায় ১০ জন সাহাবি নবীজির (সাঃ) হাদিস বর্ণনা করেন। পরবর্তী সময়ে সাহাবি, তাবেঈ ও বড় বড় ইমামের যুগেও শবেবরাতের মূল্যায়ন করতে দেখা যায়। অতএব শবেবরাতকে অস্বীকার করার কোনো পথ নেই।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যখন শাবানের পঞ্চদশ রজনী (শবেবরাত) তোমাদের সম্মুখে আগমন করবে,তখন তোমরা ওই রজনীতে নামাজ পড় এবং পরবর্তী দিন রোজা রেখ। কেননা সেদিনের সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং (বান্দাদের ডেকে) বলতে থাকেন, 'আছ কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী, যাকে আমি ক্ষমা করে দেব? আছ কি কেউ রিজিক অন্বেষণকারী,যাকে আমি রিজিকের ব্যবস্থা করে দেব? আছ কি কোনো রোগক্লিষ্ট ব্যক্তি,যাকে আমি সুস্থতা দান করব? এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতেই থাকেন। আছ কি কেউ কোনো বস্তুর প্রার্থী? আমি যার সব মনস্কামনা পূর্ণ করে দেব?' –[ইবনে মাজাহ : ১৩৮৪]
এছাড়া হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,আয়েশা! তুমি কি জান যে এ রাতে (শবেবরাতে) কী কী ঘটে? তিনি বললেন, 'হে আল্লাহর রাসূল! তাতে কী কী ঘটে? এরপর রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,এতে এ বছর মানুষের মধ্যে কারা জন্মগ্রহণ করবে এবং কারা মৃত্যুবরণ করবে তা নির্ধারিত হয়। এতে মানুষের কার্যগুলো গ্রহণ করা হয় এবং তাদের রিজিকগুলো অবতীর্ণ হয়। এরপর আয়েশা (রা.) রাসূলকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন,হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি কি আল্লাহর রহমত ছাড়া (কেবল নিজ আমল দ্বারা) বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না?
রাসূল (সাঃ) তিনবার বললেন, না। কোনো ব্যক্তিই আল্লাহতায়ালার রহমত ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। আয়েশা (রাঃ) বলেন,আমি তখন রাসূলকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনিও না? তিনি স্বীয় মাথার ওপর হাত রেখে বললেন, আমিও না। তবে যদি আল্লাহ আমার ওপর রহম করেন। তাহলে ভিন্ন কথা। একথাও তিনি তিনবার বললেন। [মিশকাত : ১১৫]
এ রকম আরও একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, এ রাতে আল্লাহতায়ালা অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করেন। মানুষের রিজিকের ও জীবন-মৃত্যুর ফয়সালা করেন। কাজেই একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রার্থনা করে এ রাতে খুব কান্নাকাটি করা উচিত।হাদিসে কয়েক ধরনের লোকের কথা এসেছে। যারা এ রাতেও আল্লাহর করুণা ও দয়া থেকে বঞ্চিত। তাদের মধ্যে হিংসুক, মুশরিক, অন্যায়ভাবে হত্যাকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী, জাদুকর, চাঁদাবাজ, ব্যভিচারী-ব্যভিচারিণী, সুদখোর ও অত্যাচারী সৈনিক অন্তর্ভুক্ত। অতএব, তাদের বেশি করে এ রাতে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে এসব পাপ আবার না করার দৃঢ়সংকল্প করা উচিত।
শবে বরাতের দিনে সূর্যাস্তের সময় নিম্নোক্ত দূয়া'টি “লা হাওলা ওলা কুওয়্যাতা”৪০বার পাঠ করেলে ৪০ বছরের সগীরা (ছোট গুনাহ) মাফ হয়ে যাই।
শবে বরাতের নামাযঃ-
শবে বরাতের রাতে এশার নামাযের পর থেকে সুবেহ্ সাদিক অর্থাৎ ফজর পর্যন্ত নফল নামায ও বিভিন্ন এবাদত পবিত্র কুরআন পাঠ, যিকির-আযকার, তসবিহ-তাহলীল করা যায়। এই রাতে কমপক্ষে ২ রাকায়াত করে ১২ রাকায়াত নফল নামায ও ৪ রাকায়াত ছালাতুত্ তাছবীহ্ নামায পড়া অতি উত্তম।
নামাযের নিয়ত আরবীতে:-
“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আ-লা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার”।
বাংলায় নিয়ত:- “ আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দু‘রাক‘আত নফল নামায আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।
শবে বরাতের নামায দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশী ছওয়াব। নামাযের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ ১০ বার করে প্রথম চার রাকায়াত, ২৫ বার করে ২য় চার রাকায়াত এবং ৫০ বার করে ৩য় চার রাকায়াত । তবে অসুবিধা হলে ১বার সূরা কদর এবং ৩বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করে বেশী বেশী করে নামাজ আদায় করা যাবে।
(কপি)
বিষয়: বিবিধ
৩০৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন