মতিঝিলে নিহত ৩ হাজার, আহত ১০ হাজার: হেফাজতের বিবৃতি
লিখেছেন লিখেছেন তাজুল ইসলাম ০৬ মে, ২০১৩, ০৮:০৬:২২ রাত
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানে গতরাতে প্রায় তিন হাজার আলেম ও নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শাহ শফীসহ শীর্ষ নেতারা। এর আগে রেডিও তেহরানের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুর রহমান খানকে হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাউয়ুম প্রাথমিক তথ্য হিসেবে জানিয়েছিলেন, র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানে এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষে তৌহিদী জনতা ও আলেম- উলামাগণ উন্মুক্ত আকাশের নিচে যখন গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন তখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ঘুমন্ত জনতার ওপর পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে নির্বিচারে গুলি, বোমা, গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে শুরু করে। রাতের অন্ধকারে এমন বর্বরোচিত ও কাপুরুরোষিত হামলায় তৌহিদী জনতা খালি হাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় ও অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের আঘাতে একের পর এক তারা শাহাদাতবরণ করতে শুরু করেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রায় তিন হাজার শহীদ এবং ১০ হাজারেরও বেশি আহত হন।”
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, “শহীদদের লাশ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ট্রাকে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এখনও অগণিত নেতাকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের পরিবার-পরিজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীরা তাদের কোন খোঁজ না পেয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।”
হেফাজতে ইসলামের নেতারা অভিযোগ করেন, “সরকার দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করতে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মুখোমুখী দাঁড় করিয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে দেশের স্বনামধন্য ও বরেণ্য আলেম-উলামাদের চরিত্র হননের আয়োজন করে যাচ্ছে। সরকার ইসলামের মর্মমূলে আঘাত করার জন্যই আত্মস্বীকৃত নাস্তিক-মুরতাদের শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চে নামিয়ে ইসলাম, নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেছে। এসব শাহবাগীদের অপতৎপরতা রোধে দেশের আলেম-উলামাসহ ইসলাম প্রিয় জনতা ফুঁসে উঠেছে এবং আত্মস্বীকৃত নাস্তিক-মুরতাদ ও নবী-রাসূল অবমাননাকারীদের বিচারের দাবীতে বিভিন্ন শাস্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫ মে ঢাকা অবরোধ ও বিকেলে থেকে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে লাগাতার অবস্থানের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা আলেম-উলামা, ইসলাম প্রিয় জনতা ও হেফাজতের নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বরে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। অবরোধ চলাকালে ১৩ টি পয়েন্টে সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা তোহিদী জনতার উপর হামলা চালিয়ে বহু সংখ্যক মানুষকে হতাহত করেছে। তারা শাপলা চত্তরমূখী তৌহিদী জনতার শ্রোতে পথে পথে বাধা প্রদান, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দোকান-পাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি তারা পবিত্র কুরআন শরীফে অগ্নিসংযোগ করে এর দায়ভার চাপিয়েছে তৌহিদী জনতার ওপর। তাদের জিঘাংসা থেকে রাস্তার দু’পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রক্ষা পাননি। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেফজতের আন্দোলনের অংশ হলেও সরকারের মদদপুষ্ট মহল বিশেষ এসবের দায়ভার জনতার উপর চাপাচ্ছে।”
বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, সরকার ঈমানী আন্দোলনকে দমন করার জন্য যত অপচেষ্টাই করুক না কেন তারা কখনোই সফল হবে না। জুলুম-নির্যাতন, হত্যা-সন্ত্রাস, গুম যত বাড়বে তৌহিদীর জনতার আন্দোলন ততই শানিত হবে। হত্যা-সন্ত্রাস চালিয়ে অতীতে ফেরাউন, নমরুদ ও হামানদের শেষ রক্ষা হয়নি আওয়ামী লীগও শেষ রক্ষা করতে পারবে না।”
হেফাজত নেতারা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন