শরীয়া আইন, ইসলামিক স্টেইট, মাক্বাসিদ আশ শরীয়া এবং আধুনিক বিশ্ব
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাহফুজ ২৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:২৯:১০ রাত
আমার অতীত পড়াশোনার বাইরে, সাম্প্রতিক কালে শরীয়া আইন, ইসলামিক স্টেইট বিষয়গুলোর উপর আরেকটু গভীরভাবে পড়াশোনা করছি। প্রাসঙ্গিকভাবে বলে রাখা যেতে পারে, মালয়েশীয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামকি ইউনির্ভাসিটিতে পড়ার সময় আমার মাস্টার্স থিসিস ছিল শরীয়া আইন বাস্তবায়নে সম্ভাবনা এবং প্রতিকুলতা বিষয় নিয়ে। তাছাড়া, মাদ্রাসায় পড়ার সময় হেদায়া, নুরুল আনওয়ার সহ ফিকহ এবং অসুলে ফিকহের জটিল বিষয়গুলো পড়ার সুযোগ হয়েছিল।
ক্লাসে হেদায়া নুরুল আনওয়ার পড়েছি আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে। অনেক কিছুই ভুলে গেছি, যদি এই সব কিতাবের কোন কোন এবারত বা সম্পুর্ণ টেক্সট একসময় হুবহু মুখস্ত ছিল।
মালয়েশীয়া থিসিস শেষ করার বয়স আজ প্রায় ১৮ বছর। এই এত বছর পর নতুন করে আবার এ বিষয়গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটিতে তবু মজা পাচ্ছি। কেচো খুঁজতে অজগরের সন্ধানের মত, এ বিষয়ে অনেক তত্ব এবং তথ্য আজ সিকি শতাব্দি পরে নতুন করে দেখছি, শিখছি এবং বুঝছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই কিশোর বয়সে যখন হেদায়া নুরুল আনোয়ার পড়েছি অনেক কিছুই সে সময় বুঝিনি। সবচে বড় কথা, যারা অসুলে ফিকহ পড়েছেন তাঁরা জানেন, অসুলে ফিকহ হলো সবচে জটিলতম বিষয়গুলোর অন্যতম।
আমার সাম্প্রতিক অধ্যয়নে অনেকগুলো এত গভীর যে, বিষয়গুলো খুবই ব্যাপক অধ্যয়ন প্রয়োজন। আমার সাম্প্রতি অধ্যয়নে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার আস সিয়াসাহ আশ শরয়িয়্যাহ, ইমাম শাতেবীর মাক্কাসিদ আশ শারীয়া (শরীয়া আইনের মূল লক্ষ্য)। বিষয়গুলো এত গভীর যে, এগুলো এত স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা কঠিন, তবে একটা বিষয় অতি সংক্ষেপে বলা যায় যে, ইসলামী শরীয়তের প্রধানতম লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব কল্যাণ। পবিত্র কোরআনের মুল প্রতিপাদ্য হচ্ছে মানুষ, আমার এই অধ্যয়নের প্রাক্কালেই আজ সকালে ফজর নামাজে যাচ্ছিলাম মসজিদে, আমি সচরাচর ফজরে মসজিদে যাইনা বা যেতে পারি না, আজ সে সুযোগ নিতে গিয়ে গাড়ীর রেডিও তে এন.পি.আর শুনছিলাম। এন.পি.আর এ তখন রেজা আরসালান এর সাক্ষাতকার প্রচারিত হচ্ছিল। আমি গাড়িতে বসে শুনতে থাকলাম, স্বভাবতই এতে ফজরের জামাত মিস হয়ে গেল। কিন্তু রেজা আরসালান এর এই সাক্ষাতকার আমার চিন্তার দুয়ার আরো খুলে দিল।
রেজা আরসালান যদিও আমার কাছে আজ নতুন ছিলনা, রেজা আরসালান এর বইও পড়েছি, একবার সরাসরি দেখার এবং কুশল বিনিময়েরও সুযোগ হয়েছিল। ইরানে জন্মগ্রহন কারী আমেরিকায় বেড়ে উঠা রেজা আরসালাম পাশ্চাত্য জগতে আধুনিক মুসলমান বিশেষ করে তরুন সমাজের কাছে একটি প্রতিক। প্রসঙ্গক্রমে আরেকটা বিষয় এ ব্যপারে উল্লেখ করতে চাই, গত ২-৩ মাস থেকে আমার বাসার কাছে ট্রিপল আই টি অফিসের তত্বাবধানে ফেয়ারফ্যাক্স ইন্সটিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান তুর্কি একজন স্কলারের একটি ক্লাস চালু করেছিল, ক্লাসটির মুল বিষয় ছিল তুর্কিস্তানের পট পরিবর্তন। কামাল আতা তুর্ক থেকে নিয়ে ফতহুল্লাহ গুলেন সহ অনেকগুলো বিষয় উঠে আসে।
সংক্ষিপ্ত পরিসরে আজকের এই ছোট্র লেখাটির মূল বক্তব্য হচ্ছে। আমার সাম্প্রতিক পুনঃ অধ্যয়ন, তুর্কি বিষয়ে নুতন এবং গভীর তথ্য, এবং রেজা আরসালানের সাক্ষাতকার েথকে কিছু পয়েন্ট আমার দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটিয়েছে।
সারা বিশ্বে আজ যে মহা বিপর্যয় চলছে, মনে হতে পারে সবকিছু বুঝি তাল গোল পাকিয়ে গেছে, আজকে প্রেক্ষাপটে মুসলমানরা ইতিহাসকে নতুন করে আবার পড়া দরকার।
সারা বিশ্বে আজ যে মহা বিপর্যয় চলছে, মনে হতে পারে সবকিছু বুঝি তাল গোল পাকিয়ে গেছে, আজকে প্রেক্ষাপটে মুসলমানরা ইতিহাসকে নতুন করে আবার পড়া দরকার।
স্বভাবতই বিষয়টা অনেক গভীর এবং আলোচনার দাবী রাখে
তবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সব আলোচনার সারাংশ হলো, ইসলামী শরীয়ার মুল প্রতিপাদ্য হচ্ছে মানুষ এবং মানব কল্যাণ। ইনসাফ বা আদল প্রতিষ্ঠা করা। অন্ন বস্ত্র বাসস্থানসহ মানুষের মেীলিক অধিকার নিশ্চিত করা, ইমাম শাতেবী যেটাকে বলেছেন জরুরয়িাত, হাজিয়াত এবং তাহসিনিয়াত। তার দৃষ্টিতে মানুষের জীবনে একান্ত জরুরী বিষয়গুলো জরুরীয়াতের মধ্যে পড়ে যেগুলো সমাধান করা ফরজ, ইসলামী আইনের প্রধান কাজ।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিরোনামের সাথে প্রয়োজনীয় সামন্জস্য খুজে পেতে হয়রান হয়ে গেলাম!
ব্লগার শেখের পোলার মত আমিও লাইনচ্যুত হওয়ায় পঠিত এসব কয়েকটা কিতাব একেবারেই ভূলে গেছি বিষয়সহ!
অনুভূতি শেয়ার করায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ!!
এই বিষয় নিয়ে লিখুন।
আপনি তো মনে হয় পাালাবদলে নিয়মিত লিখতেন।
প্রকাশনি টা বলতে পরলে খুজে নিতে পারি।
একই শিরোনামে একটি লেখা তৈরির ইচ্ছা আমার বহু দিনের। বিশেষ করে যখন থেকে 'ফতোয়ার জন্য ফতোয়া' প্রবণতা ও আচরণ চোখে পড়ে। আপনার লেখায় মূল বিষয়টি আরো বিস্তৃত হলে ভাল হত। সে যাকগে, আপনাকে ধন্যবাদ।
মাকাসিদ আল-শারিয়া বিষয়ে বই লেখার ইচ্ছে আছে। অবশ্য জাসের আউদা রচিত এ বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বইটি অনুবাদের কথা তিনি নিজেই একটি মেসেজে বলেছিলেন। আমার মূল আকর্ষণ তার মোটা আকারের বইটার প্রতি। কিন্তু সমাজ-সংসারের চাপে কোনোটাই করা হয়ে উঠে নি। অবশ্য, এর পেছনে আমাদের দেশীয় পরিমণ্ডলের ভাবনাটাও কাজ করছে। এদেশে এ বিষয়টি এখনো অপরিচিত। লিখলে বা অনুবাদ করলে পাঠক তা গ্রহণ করবে তো? সে যা-ই হোক, আপনি এগিয়ে যান। নিরন্তর শুভ কামনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন