মতিঝিলে সত্যনিষ্ঠ সাম্বাদিকঃ পর্ব - ১

লিখেছেন লিখেছেন মানিক ১০ মে, ২০১৩, ০৩:৫৩:৫১ দুপুর

“মনের কোঠা” নিকধারী শাহাবাগী এক ব্লগার

সাংবাদিক- টোকাই কড়চা

লিংকের এই গল্পটা ফাইন্দা বা কপি কইরা পোস্ট দেয় এবং আমারে পেয়ার কইরা পড়ার আমন্ত্রণ জানায়। লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। সাধারণত হুরপরী, এলিজাবেথ, মনের কোঠা ইত্যাদী টাইপের উষ্কানীমুলক পোস্টে মন্তব্য করে আমি তাদেরকে উৎসাহিত করা থেকে বিরত থাকি। কিন্তু এই পোস্টটা পড়ে আমি ১৯৭১ এ ফিরে গেলাম। “মনের কোঠা”দের পূর্বসূরীরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনুরূপ কল্পকাহিনী (Fricktions) লিখে বিখ্যাত হয়েছেন, অনেক নামযশ, খ্যতি, বড় চাকরী আর অঢেল পয়সা কামিয়েছেন। তাদের উর্বর মস্তিস্কপ্রসুত ওই সকল কল্পকাহিনী এখন মহামান্য আদালতেও স্বাক্ষ্য হিসাবে আমলে নেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব না দেয়া এই সকল অবাস্তব কল্প কাহিনীকেই রাজনৈতিক মতলববাজ শক্তি তাদের পক্ষে জনমত তৈরীর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসাবে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করেছে এবং প্রতিপক্ষে কোন প্রতিরোধ না থাকায় একতরফাভাবে সফল হয়েছে। আমাদের মতো আমাদের পূর্বসূরীরাও বিশ্বাস করেছেন সত্যে। পাত্তা দিতে চান নাই অসত্য কল্পকাহিনীকে। এটা তাদের বিরাট রাজনৈতিক ভূল ছিল। সেই ভুলের মাসুল হিসাবে একের পর এক শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় বের হচ্ছে আদালত থেকে। তাই ভাবলাম যে পথে ওরা আগাবে সেই পথেই আমার সামর্থ অনু্যায়ী জবাব দিব। এই ভাবনা থেকেই লেখাটার শুরু। লেখাটা একটু বড় হয়ে গেল। তাই ব্লগে আপনাদের পড়ার ধৈর্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি পর্বে লেখাটা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলাম।

মতিঝিলে সত্যনিষ্ঠ সাম্বাদিকঃ পর্ব - ১

হয়। ঠিহই কইছেন ভাইজান। আমগো কতা হুননের কেউ নাই। আপনের মতন ন্যয় পরায়ন সাম্বাদিক পাইয়া ভালাই আইল বাই। আমার কতাডা একটু লেইখ্যা দেন না ভাই। আপনেগো কতা মানুষে অহনো বিশ্বেশ পায়। আপনের লেহায় কেউ যদি আমার পোলাপানডিরে আমার কাছে ফিরায়া দেয়। জেতা পামুনা জানি, লাশটা পাইলেও নিজে নিয়া গিয়া কয়বর দিবার পারতাম। হেগো মা বাপেরে এট্টা বুজ দিবার পারতাম।

আমিও ওইদিন আছিলাম মতিঝিলে। মাদ্রাসার গোটা কয়েক পুলাপাইন লইয়া আইছিলাম। আমরা তো আর এসি ফ্যান দেহি নাই। আল্লার আসমানের নিচে পিচঢালা রাস্তায় বইসা সারাদিন রোজা থাকা পোলাপাইন গুলানরে হুকনা মুড়ি চিবাইতে দিলাম। বহুত কষ্টে এক বোতল পানি যোগাড় করতে পারছিলাম। বেশীর ভাগটাই খাওয়াইলাম বদ পোলাডারে। সাহস দেহাইতে গিয়া পুলিশের গুলিতে হেয় ঠ্যাংটা পুরাই লুলা বানাইয়া ফালাইছে। কয়ডা ইটা যোগাড় কইরা বালিশ বানাইয়া পোলাপানডিরে ঘুম পাড়াইয়া দিলাম। আমিও রোজা আছিলাম সারা দিন। আমার কপালে আল্লায় মুড়ি-পানি কিচ্ছুই রাহে নাই। পরের পুলাপান, মা-বাপেরে না কইয়া মিটিঙ্গে আনছি। হেগরেই পেট ভইরা খাওয়াইতে পারলাম না। কোন পরানে নিজে খাই! পেটে পাত্তর বাইন্দা জিকির করতাছিলাম। পাশ থাইকা একজনে কইলঃ খবর পাইলাম চার দিকে পুলিশ-বিডিয়ার আর RAB এ পুরা এলাকা গিররা ফালাইছে। আমি কইলাম, বালা তো। দেহেন নাই শাহাবাগে কী সুন্দর কন্ট্রল রুম বানাইয়া রাত দিন রোদে পূইডা বৃষ্টিতে ভিজ্জা পুলিশ ভাইয়েরা পাহারা দেওনের কাম করছে। আমগো গেরামের আদু মুন্সির পোলা রহমানেও ডিউটি দিছে অইহানে। ছুটিতে বাড়িত গিয়া হেয় আমগো কইছে। দিনে রাইতে কত নাজায়েজ, বেশরীয়তী কাম অইছে চক্ষের সামনে। উনারা কিচ্ছু দেইক্ষাও দেহেনাই, পাহারা দিছে। বিরানী, পুলাও তো মামুলী ব্যপার, টেকার বস্তা আইছে । হেইডার বাগাবাগী লইয়া কুত্তা কামড়া কামড়ী লাগছে । বাংলা সাহেবেরা পেইল মারছে, হিন্দি সাহেবেরা মিটায়া দিছে। ডাঙ্গর মাইয়া গুতা খাইয়া রাইতে হাসপাতালে গেছে। পুলিশ RAB ভাইয়েরা কিছুই দ্যেকতে যায় নাই, পাহারা দিয়া আগলায়া রাকছে। উনাগো চাকরীডাই এমন। আল্লায় বিশ্বস করুক আর না করুক হগগল জনগনরে পাহারা দেওয়া উনাগো ডিউটি। আমরা কতো দূর দূরান্ত থাইকা আইছি। ঢাকা শহররে নামই তো হুনছি, চোক্ষে তো দেহি নাই। উনাগো মেহেমান হইয়া আইছি বইলাই মনে হয় আমগো লাইগা একটু বাড়তি আয়োজন। তার পর আমগো একটা ইজ্জত আছে না। পরধান মন্ত্রীও আমগো আনেক পেয়ার আর ইজ্জত করেন। হুনছি উনি পঞ্চেগানা নামাজ পড়েন । নামাজ পইড়া আল্লা আর আল্লার রসুলের কাছে দুয়াও করেন। টেলিবিশনে মুনাজাতের মদ্দ্যে উনারে কন্দাকাটিও করতে দেকছি। আবার আল্লা আর আল্লার রসুলের সানে মারত্বক বেয়াদবী করা নাস্তিক গুলানের লগেও হুনছি উনার বেজায় খায় খাতির। দুনিয়ার লিলা খেলা বুজা দায়।

ভাই একটা বিষয় মাতায় আইতাছে না। ডাহা শুনছিলাম অলোয় ঝলমল্যা শহর। এতো দেহি কয়ব্বরের আন্দার। শেখ হাসিনায় নাকি আইসা কত কারেন বানাইছে! মন্তিরির ভাইয়ের কাছ থাইকা ১ টেকার কারেন ১০ টেকায় কিনছে! এতো কারেন গেল কই? চাইরো দিকে এতো আন্দার কেন বাই! একে পেটে খিদা, গুলি খাইয়া পোলাপানগুলান কাতরাইতাছে তার মধ্যে বাত্তি নাই! যাক আল্লাহ ভরসা! আমি যেইখানে বইসা আছিলাম, সেইখান থাইকা মাইকের আওয়াজ ঠিক মতো সুনা যায় না। পাশের আরেক ভাই কইলঃ ঐ দিকে রাস্তার পাশে হেফাজতের ছাত্র ভাইয়েরা মেডিকেল ক্যাম্প বসাইছে। যান অইখান থাইকা ঔষধ নিয়া আসেন। আন্দারের মদ্দ্যে হাতরাইতে হাতরাইতে মেডিকেল ক্যাম্পে গিয়া পৌছাইলাম। সব কতা বাত্তারা শুইনা হেরা ওষুদ-পত্তর সহ দুইজনারে পাঠাইল আমার লগে। হেগোও নাওয়া খাওয়া নাই। হেরা আইসা ডাইকা তুললো গুলি খাওয়া পোলাডারেঃ

ডাক্তারঃ ভাই একটু ওঠেনতো দেখি।

কী সমস্যা অপনার?

গুলি খাইলেন কেমনে?

দেখি দেখি পা টা ?

আগেই রক্ত মানাইতে লুঙ্গী ছিড়া শক্ত কইরা বাইন্দা রাখছিল পাওডা। আমি টরচ আর মোবাইলের বাতি জ্বলাইয়া রাখলাম। হেরা কেচি দিয় কাইটা ফালাইল বান্ধন। ওষুধ দিয়া পরিষ্কার করতে করতে ডাক্তার সবে কইলঃ

সুবাহান আল্লাহ!

এতো দেখি খুবই খারাপ অবস্থা !

গুলিতে ঝাজরা হয়ে গেছে পা টা!

অনেক স্প্রিন্টার রয়েছে ভেতরে।

তার উপর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।

ইমিডিয়েট হাস্পিটালাইজড করা দরকার।

চার দিকের যে অবস্থা?

ঢাকায় আপনাদের কেউ অছে? আমারে জিগাইল ডাক্তার সাবে।

ঢাকায় আমার কে থাকবো, কন। আমি নিজেইতো ডাকায় কোন দিন আহি নাই। রাস্তাগাট, হাসপাতাল কিছুইতো চিনিনা। আমার কইলজা শুকায়া যায়। দরদরাইয়া চোক্ষের পানিতে আমার বুকটা ভিজ্জা যায়।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File