গ্রাম থেকে ছুটে আসা এবং শহরে বেড়ে ওঠা মানুষদের কথা

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:২১:৩৭ সকাল

তো এর আগে এক পোষ্টে বলছিলাম ছোট পরিবার গড়ার, তথাকথিত-শিক্ষিত হওয়ার এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে এবং সাধারণ মানুষগুলো কিভাবে দিগ্বিদিক-জ্ঞানহারা হয়ে জমি-জমা বিক্রি করে শহর এবং প্রবাসমূখী ছুটে চলছে সামান্য কয়েকদিনের নগন্য-ভোগের মোহে ... এবার বলবো আমার দৃষ্টিতে শহরে এরা কি করছে?

গ্রামে-গঞ্জের সর্বহারারা এখানে এসে কুলি-মজুর-লেবার এবং এ ধরনের নিকৃষ্টতম কাজে নিযুক্ত হচ্ছে, খুব সামান্য আয় করছে এবং সঞ্চয়ের কোন স্কোপ-তো তাদের নেই-ই উপরন্তু দোকানে দোকানে বাকীর বোঝা নিয়ে তারা দিনাতিপাত করছে, স্রষ্টা-প্রদত্ত দৈহিক চাহিদা ফেলে দিতে না পেরে বংশবৃদ্ধি করছে এবং তাদের সন্তানেরাও একইভাবে জীবনধারনে বাধ্য হয়েই অভ্যস্ত হচ্ছে। এদের একটা অংশকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ব্যবসায়ীরা প্রমানিত ইকোনোমিক-থিওরীর আলোকে চরম-লাভ অর্জনের জন্য নিষিদ্ধ-নেশাজাতীয় পণ্য চালাচালি এবং বিক্রয়ে নিযুক্ত করছে এবং নানা সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সেসব পণ্য বিপননও করছে, সাথে অবশ্যই রয়েছে কিনে নেয়া নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো। ঘরবাড়ী এদের নেই – কেউ থাকে রাস্তায়-রাস্তায় আর কেউ কেউ অবৈধ বস্তিতে! এখানেও ছোট পরিবার বানানোর জন্য বিভিন্ন এন.জি.ও-গুলো জন্ম নিরোধক পণ্য ফ্রী-তে বিলাচ্ছে।

এর চাইতে আরেকটু ভালো লোকগুলো এসে ছোটখাট দোকানদারী করছে অথবা নিম্নমানের চাকরী করছে, নিজেরা থাকা-খাওয়ায় কষ্ট করে হলেও মাস শেষে ২/৪ হাজার টাকা সঞ্চয়ের লক্ষ্যে মর্মান্তিক এক জীবন-যাপনের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে এবং স্বপ্ন দেখে চলছে – ছেলে আমার বড় হবে .... গাড়ী-বাড়ি-নারী সব নিয়ে এক অস্থির অবস্থা হয়ে যাবে – এমনই সেসব স্বপ্ন! এরা নিজে থেকেই যৌথ পরিবার ভেঙ্গে ছোট পরিবার রাখতে উদ্যত, কেননা তার জান-মাল সব দিয়ে তো সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতেই হবে আর সব ভোগ নিজেরাই করতে হবে।

এদের চাইতে আরেকটু ভালো গুলো, দেশে-গ্রামের জমি-জমার বড় একটা অংশ বিক্রি করে হয় ফ্ল্যাট কিনছে নয়তো মোটামুটি মানের একটা বাসা-ভাড়া করে থাকছে, একই লক্ষ্যে। আরেকদল গ্রামে-গঞ্জে পলিটিক্স করার সুবাদে শহরে এসে সাপ্লাই ব্যবসা অথবা দালালী ব্যবসায় নেমে মোটামুটি মানের জীবন-যাপন করছে! এ শ্রেণীদেরকে নীচে পরিচালক হিসেবে বর্ণিত শ্রেণীরা নিযুক্ত করে ম্যানেজমেন্টে একটু বেশি সুবিধা দিয়ে এবং এদের দিয়ে কন্ট্রোল করে উপরের দুই শ্রেণীকে।

উপরোল্লিখিত শ্রেণীগুলো ছাড়াও আগের থেকেই শহরগুলোয় অভ্যস্ত হয়ে গেছে অনেকেই তারাও নিজ-নিজ কর্ম-সম্পাদনে বাধ্য হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ছুটছে।

আগে থেকেই যারা এ সিষ্টেম এবং এর চরম ফলাফল সম্বন্ধে অবগত এবং এর পরিচালনা করে যাচ্ছে – তারা নিজেদের পরিবার ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, মলয়েশিয়ায়, ইত্যাদী এলাকায় পাঠিয়ে দিয়ে সেখানে মোটামুটিভাবে চলছে, সেখানেই সম্পদ গড়ছে আরও ভালো চলার আশায় এবং এ দেশে তাদের থেকে যাওয়া সামান্য কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ মহা ধুমধাম এর সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আয় করে সেসব দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে, তাদের এ আয়োজন এমনই – যেন ঘরের মাটি কেটে, পরের বাড়ীতে পাহাড় বানানোর প্রকল্প! মাঝে মাঝে তারা সপরিবারে বিনোদনের জন্য এ-দেশে বেড়াতে আসে। এরা সংখ্যায় খুব বেশী না, তবে উচ্চাভিলাষী মধ্য ও নিম্ন বিত্তের মানুষগুলো এবং আইন-প্রয়োগগকারী ও প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর নিম্ন ও মধ্যবিত্তদেরকেও সামান্য অর্থের বিনিময়ে কিনে এ অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে; হিসেব কষলে চোখ বন্ধ করে বলা যায় – পরের ধনেই এসব পোদ্দারী করে চলছে তারা এবং নিজেদের ধন সব বিদেশে! এরাই হয়ে বসেছে এ দেশের পরিচালক-মন্ডলী আর উচ্চাভিলাষী নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাও তাদের হুকুম তামিল করছে নিজস্ব-অভিলাষ বাস্তবায়নে!

এ পরিচালক-মন্ডলী এবং তাদের দোসরদের হাতেই দেশের সমস্ত ব্যাংকিং অর্গানাইজেশান এবং অন্যান্য বড় ও মাঝারী ব্যবসা, সবাইকে ব্যাংকিং এর আওতায় নিয়ে আসার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মূলতঃ কোন ভালো উদ্দেশ্যে নয়, তাদের হীন প্রকল্প বাস্তবায়নের এবং সাধারণ মানুষদের পার্মানেন্ট গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার জন্য। এদের আওতা থেকে অনেকটাই মুক্ত রয়েছে দেশের হিন্দু সমাজের বড় একটা অংশ, তারাও দেশের কোন কোন স্থানে নিজেরাই বেআইনীভাবে ব্যাংকিং অপারেশন চালিয়ে উচ্চাভিলাষী সাধারণ-মুসলিমদের অর্থ হস্তগত করছে, এ দেশ থেকে উপার্জন করে ইন্ডিয়ায় গিয়ে বাড়ী-গাড়ী ও জমিজমা কিনছে! এ ধরনের একটা অভিজ্ঞতার কথা না বললে ব্যাপারটা হয়তো অনেকের কাছে পরিস্কার হবে না, তাই বলছি –

আমার অনেক হিন্দু ফ্রেন্ড ছিলো বিভিন্ন জেলায় এবং এখনও রয়েছে ঢাকায়, ঢাকারগুলোর অনেকেই পুরোনো ঢাকার! তো একবার পুরোনো ঢাকার এক বন্ধু এসে আমাকে একটা প্রোপোজাল দিলো যা অনেকটা এরকম – বন্ধু তুমি একটা ইনিশিয়েটিভ নাও, আমাদের-তো অনেক বন্ধু আছে এবং সবাই মাসে ৫/১০ হাজার টাকা সেভিংস করে একটা কো-অপারেটিভ সোসাইটি গড়া ব্যাপার না এবং আমাদের বন্ধুর সংখ্যাও কম না, যাতে করে প্রত্যেক মাসে আমাদের ৫/১০ লাখ টাকার একটা ফান্ড হয় এবং তুমি সেটার ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্ব নাও! আমি জিজ্ঞেস করলাম ফান্ড দিয়ে কি করবো? সে জানালো ব্যাংকে রাখলে তো সুদ কম দেয় অন্যান্য জায়গায়ও হাই-রিস্ক, তাই সে টাকা আমরা ইনভেষ্ট করবো রিস্ক-ফ্রী পুরান ঢাকার হিন্দু গোল্ড ব্যবসায়ীদের কাছে, তারা কখনও টাকা মারে না – তারা প্রতিমাসে প্রতিলাখে ৩/৪ হাজার করে সুদ দেয়, সেখান থেকে আমাদের একটা ভালো কামাই হবে। আবারও জিজ্ঞেস করলাম তাকে – তারা ব্যাংকে টাকা রাখে না? সে বললো – না, বিরূপ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের টাকা কখনও আমরা পাবো না তা আমরা বুঝি তাই সেখানে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাখি না, প্রত্যেক গোল্ড-ব্যবসায়ীদেরই সিন্ধুক আছে সেখানে কোটি-কোটি টাকা পড়ে থাকে তাদের। আমার সে বন্ধুরও এবং তার মতো অনেক বন্ধুরও ইন্ডিয়া অনেক বড় এষ্টেট রয়েছে এবং প্রতিবছর ৫/৬ বার করে সেখানে যায়!

এখানে দেখা যাচ্ছে পরিচালকমন্ডলী এবং হিন্দু দু’দলেরই উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন; বসে-বসে কামাই করার লোভে পড়া মুসলিমদেরকে তারা উদ্বুদ্ধ করে - তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে অথবা তাদের কাছে দিতে, আর সেগুলো দিয়ে ব্যবসা করে তাদের দুই-শ্রেণীই! যেকোন বিরূপ পরিস্থিতিতে এদের দুই শ্রেণী-ই নিশ্চিতভাবে লোভে পড়া মুসলিমদের পুরো সঞ্চয় মেরে দেবে এবং মারার ইচ্ছা না থাকলেও তারা সেটা ফেরত দিতে পারবে না কখনই।

এ ব্যাপারে আশা রাখি পরের পোষ্টে আমার আরও কিছু ধারণা ও অভিজ্ঞতার কথা জানাবো।

বিষয়: বিবিধ

১২৭২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

258636
২৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:৪৩
কাহাফ লিখেছেন : অধুনিকতার ধ্বজাধারীদের মোহের ছলনায় পড়ে ধ্বংশের চোরবালীতে নিমজ্জ্বিত আজকের সমাজ,সহজে পরিত্রাণ মিলবে না মনে হয়........।
২৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:০৪
202343
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এসব নিয়ে আমার যা মনে আসছে ইদানীং, চিন্তা করছি সব শেয়ার করবো আপনাদের সাথে, বেকার সময় কাটানো অনেক কঠিন, এসবে কিছুটা হলেও সে সময় আনন্দে কেটে যায়!
258660
২৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:২২
কাহাফ লিখেছেন : সুন্দর সিদ্ধান্ত আপনার,সাথে আছি আমরা....... Give Up Give Up Give Up
২৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৪১
202347
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে
258684
২৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৫৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩
202380
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আমিও অনেক আনন্দিত, লেখাটা বউ-মার ভালো লাগায়।
258694
২৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:১৮
আহমদ মুসা লিখেছেন : গ্রামে-গঞ্জের সর্বহারারা এখানে এসে কুলি-মজুর-লেবার এবং এ ধরনের নিকৃষ্টতম কাজে নিযুক্ত হচ্ছে, কথাটা একটু বেশী কড়া হয়ে মনে হচ্ছে।
যাইহোক আসল কথায় আসি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশটা স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মূলত ধীরে ধীরে এই অব্যবস্থপনা, শোষণ ও লুন্টনের নতুন নুতন ফ্রান্ড তৈরী করেছে এদেশ ও জাতির প্রকৃত শত্রুরা। ৭৫-এ সমস্ত ষড়যন্ত্র চিন্ন করে জাতিকে সাময়িকভাবে মুক্ত করা গেলেও বাংলাদেশপন্থী চিন্তাবিদ ও কর্ণধারদের অদূরদর্শিতা এবং কিছু খামখেয়ালীপনার কারণে, কোন কোন ক্ষেত্রে উচ্চ বিলাসীতার কারণে, কোন কোন ক্ষেত্রে মীর জাফরদের উত্তরসূরীদের উপর অতিরিক্ত আস্থাশীল হওয়ার কারণে, যেসব টাউট-টন্নী, চোর, ডাকাত রাজনৈতিক মুখোশ পড়ে রাষ্ট্র ও সমাজের কর্তৃত্ব অধি গ্রহণকারীদের চিহ্নিত করে এদের উপযুক্ত সংস্থাপন না করার ফলে, শিক্ষা নীতিতে আমূল পরিবর্তন না করে গোলাম-দাসী বানানোর পূূর্ব থেকে চালু থাকা সিস্টেমকে আত্মবিকৃতির আধুনিক ভার্ষণে রুপান্তর ঘটানোর কারনে আজ আমাদের দেশে এমন একটি শ্রেণী তৈরী হয়েছে যারা এদেশকে শুধুমাত্র শোষণের একটি মহা নেয়ামত ভাবছে। এদের সংখ্যা অতি নগন্য হলেও তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এদেশের জনগণকে তারা মানুষ ভাবতে আগ্রহী নয়। নিজেরাই গোলামী মানসিকতার উর্ধে উঠতে পারেনি। দেশের সাধারণ মানুষকেও গোলাম-দাসী বানানোর ফন্দিতে ব্যস্ত। ইউরোপ আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ায় যারা দেশের সম্পদ নিয়ে পাহাড় বানাচ্ছে তাদের সংখ্যা বেশী নয়। আফসোস হচ্ছে এসব লুটেরাদের লাগাম টেনে ধরার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি এদেশের সাদারণ মানুষ।
আপনি সংখ্যালগু হিন্দু সম্প্রদায়ের যে অভিজ্ঞতার কথা বলনেন তাতে ভিতরের ভয়াবহ অবস্থা খুব সামান্যই অনুমান করা যায়। প্রকৃত অবস্থা খুবই করুণ। আপনি একবার চট্ট্রগ্রামের চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলের কাছে একটু খোজ খবর নিয়ে দেখুন। হিন্দু মাড়োয়াড়ীরা কত নিষ্ঠুর কায়দায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়ে হাজার হাজার কোটি নয় বরং লক্ষ লক্ষ কোটি মেরে ইন্ডিয়াতে সেটেল হয়েছে। বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত বেশীর ভাগ হিন্দুই টাকা পয়সা ব্যাংকে রাখে না। তারা নগদ অর্থ নিজের হেফাজতে রাখে। যাতে যে কোন মুহুর্তে চম্মট দেয়া যায়। লিখতে গেলে অনেক কিছুই মনে আসে। কিন্তু আমাদের নীতি নির্ধারকদের হুশ নেই দেশটাকে কিভাবে তলাকানা করে দিয়ে ডুবানোর আয়োজন চলছে তলে তলে।
আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর একটি ব্লগ উপহার দেয়ার জন্য।
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:১১
202691
বুড়া মিয়া লিখেছেন : মুসা ভাইয়ের কাছ থেকে চাক্তাই এর ইতিহাস জানতে পারায় অনেক ধন্যবাদ।

এসব ব্যাপারে আপনিও কিছু লেখা দিন আমাদেরকে, অফুরন্ত সময় এখন আমার; জিনিসগুলো জানতে পারলে আশা করি আমার বা অনেকের ভালোই হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File