অফগান ট্রাফিক বিভাগে সীমাহীন দুর্নীতি
লিখেছেন লিখেছেন অরুণোদয় ০৯ জুন, ২০১৪, ০৪:০৬:২২ বিকাল

আফগানিস্তানের ট্রাফিক বিভাগে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। টাকার বিনিময়ে অদক্ষদের হাতে সহজেই চলে যাচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা, মারা যাচ্ছে নিরীহ মানুষ।
আল-জাজিরা'র খবরে বলা হয়, বৈধভাবে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ব্যয় হয় ৭২০ আফগান (১২ ডলার)। কিন্তু বেশি অর্থ খরচ করে দালালদের মাধ্যমে লাইসেন্স জোগাড় করা যায়।
রাজধানী কাবুল থেকে একটি অবৈধ লাইসেন্স সংগ্রহ করতে খরচ হয় প্রায় ৮,০০০ আফগান বা ১৪০ ডলার। তবে অন্যান্য প্রদেশে এর চেয়ে অর্ধেক অর্থ খরচ করে লাইসেন্স জোগাড় করা সম্ভব।
অবৈধ লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য যে অর্থ খরচ করা হয়, সে অর্থের একটি ছোট অংশ পেয়ে থাকেন দালালরা। মোটা অংশটি চলে যায় ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের পকেটে।
কয়েকজন ড্রাইভারের সাক্ষাৎকার
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরীর জন্য আল-জাজিরা'র সাংবাদিক ১০০ ড্রাইভারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৩ জন বলেছেন, লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য তাদেরকে ঘুষ দিতে হয়েছে।
রাজধানী কাবুলের বাসিন্দা মোহাম্মদ হালেম। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য তিনি একজন দালালকে ৭,০০০ আফগান বা ১২২ ডলার দিয়েছেন। লাইসেন্স পাওয়ার আগেই গাড়ি চালাতে পারেন এই ব্যক্তি।
মোহাম্মদ হালেম বলেন, ড্রাইভিং কোর্স করার মতো সময় তার হাতে নেই। লাইসেন্সের জন্য তিনি ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টের অধীনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন। বাকি প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র পূরণ করেছে দালাল।
একইভাবে গত নভেম্বর মাসে পানজেহের প্রদেশের দারিউস নামের একজন ড্রাইভার ৭,০০০ অফগান বা ১২২ ডলার খরচ করে লাইসেন্স সংগ্রহ করেন। লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য তাকে ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টের অধীনে কোনো ক্লাস করতে হয়নি। কোনো পরীক্ষাও দিতে হয়নি। শুধু তাই না, এই ব্যক্তি রাস্তায় গাড়ি চালানো আইন-কানুন ঠিক মতো জাননে না। আলা-জাজিরা'র প্রতিবেদকের কাছে তিনি স্বীকার করেছেন, নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে তাকে বেশ কয়েকবার জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া নিজের লাইসেন্সটি বৈধ নাকি অবৈধ সেটা জানেন না দারিউস। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "একদিন আমি অপর দুই ব্যক্তির লাইসেন্স দেখেছিলাম। তাদের লাইসেন্সগুলো আমারটা থেকে ভিন্ন ছিল।"
তাকহার প্রদেশের ড্রাইভার হামিদুল্লাহ ৩,০০০ আফগান খরচ করে লাইসেন্স নিয়েছেন। তিনি বলেন, "কাবুল অথবা অন্য যে কোনো জায়গা থেকে লাইসেন্স ইস্যু করানোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কাবুল থেকে লাইসেন্স ইস্যু করালে বেশি সময় ও অর্থের প্রয়োজন।"
দালালদের লাভ কী?
হাফিজুল্লাহ একজন দালাল। তার মতো আরো অনেক দালাল আছে সারা আফগানিস্তানে। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি লাইসেন্সের কাজ করে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ আফগান আয় হয়ে থাকে। বাকি টাকা ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন সেকশনের অফিসারদের পকেটে ঘুষ হিসেবে চলে যায়।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
কাবুল ট্রাফিক পুলিশের প্রধান জেনারেল আব্দুল্লাহ দুর্নীতির কিছু অভিযোগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের প্রধানের একজন মুখপাত্র হাসমতুল্লাহ স্টেনেকজাই বলেন, লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া থেকে দালালদেরকে দূরে রাখার জন্য ট্রাফিক বিভাগকে সহায়তা করছে পুলিশ। জাল লাইসেন্স পাওয়া গেলেই মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আর দুর্নীতি রোধ করার জন্য গোয়েন্দার কাজ করছেন।
দুর্ঘটনা
সরকারি হিসেবে গত ৩ বছরে সারা দেশে ১০,৫২০ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪,৪৭১ জন এবং আহত হয়েছে ১২,৯১৭ জন।
আফগান ইনডিপেনডেন্ট হিউমেন রাইটস কমিশনের একজন কমিশনার হাওয়া আলম নুরিসতানি। সড়কে নিরাপত্তহীনতা নিয়ে তার প্রতিষ্ঠান একটি গবেষণা করেছে। তিনি বলেন, "দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে দুর্নীতি বদ্ধমূল রয়েছে।" সূত্র: আল-জাজিরা।
ঢাকা, ০৯ জুন (টাইমনিউজবিডি.কম) // টিআই
- See more at: http://www.timenewsbd.com/news/detail/14968.html#sthash.vMYsoet3.dpuf
বিষয়: বিবিধ
১২৫৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন