⊱✿ দোলা দিয়েছেন দোলা ভাই ✿⊰
লিখেছেন লিখেছেন সত্য নির্বাক কেন ২৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:০৩:২০ বিকাল
১। ...... তখন দেশ ছিলো পাকিস্তান, দেশ রক্ষা করাই দেশপ্রেম। পাকিস্তানে তখন ছোট হলেও ১টি মাত্র দল জামায়াত যাদের দুই অংশে প্রায় সমান ভোট ছিলো। আওয়ামীলীগ পূর্বে আর পিপিপি, মুসলিম লীগ পশ্চিমে। আসন ও জনসংখ্যা পূর্বে বেশী ছিলো যাদের প্রায় সকল ভোট আলীগ পায়। নির্বাচন অনুযায়ী দেশের প্রধান হওয়ার কথা মুজিবের, তিনি পুরো পাকিস্তান শাসনের সুযোগ রেখে পূর্ব নিয়ে আলাদা হতে চাইবেন কেনো? ৭ মার্চ তিনি এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার... এ কথা দেশ ভাগ করে স্বাধীনতার কথা বলেন নি, বলেছেন তিনি সরকার প্রধান হয়ে পশ্চিমের শাসন থেকে স্বাধীনতার কথা। এজন্যি ইয়াহিয়া/ভুট্টুর সাথে ২১-২৫ মার্চ পর্যন্ত বৈঠক করেছিলে। আমি সেই কক্ষে গিয়েছি যেখানে এই বৈঠক হয়েছিলো, তেজগাঁও বিমানবন্দরে, মুজিব জানালা দিয়ে দেখছিলেন পশ্চিম থেকে সৈন্যরা আসছে।
২। পশ্চিমের শাসকরা এদেশের নেতাদের ছোটলোক জ্ঞান করতেন, কোন কোন ক্ষেত্রে গোলাম মনে করতেন আর এদেশের নেতারা অবিশ্বাস। সো দেশ এক রাখতে হলে এমন একটি দলের বা একজন নেতার দরকার ছিলো যাদেরকে সবাই বিশ্বাস করতো। মাত্র ২৪ বছর আগে দুই ভুমি এক দেশ হয়েছিলো এজন্য যে আমরা এক কালেমায় বিশ্বাসী। কিন্তু পাকিস্তানের কোন শাসক ইসলামী ছিলেন না যে অন্যদের গোলাম মনে না করে ভাই হিসেবে আচরণ করবে। ৪৭ এ জামায়াত এজন্য প্রতিষ্টা করা হয়েছিলো যে মুসলিম লীগের নেতারা মুখে ইসলামী রাষ্ট্র বললেও সেটা ইসলামী হবে না, কারণ নেতারা ইসলামী না। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের কোন প্রেসিডেন্টের মুখে দাড়ি পর্যন্ত নেই।
৩। মুজিব 47 এ পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী ছিলেন, তিনি হিন্দু-মুসলিম আচরনের কথা জানতেন। কিন্তু ছাত্রলীগের বেশীরভাগ তরুন দেশ ভাগের পক্ষে ছিলেন, দেশের জনগণও। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আলীগ দেশের সকল ভোট পেতো না, এখানে মুজিবের হটকারীতা ছিলো। ৭০ এ ঘূর্ণিঝড় ছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক। সকল দল যখন ত্রাণ তৎপরতার জন্য নির্বাচন পেছানোর দাবি তোলে তখন মুজিব রাজী হননি। তাই মানুষজন ভাসানীর ন্যাপসহ অন্যান্য দলকে না পেয়ে আলীগ কে ভোট দিয়েছিলো। ঘটনাচক্রে মুজিব পূর্বের মুখপাত্র হয়ে যান। আমি যদি প্রশ্ন করি ৭১এর পর মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা ছিলো? উত্তর আসবে বাম্পপন্তিরা, যারা ৭১ এর আগেও ছিলো, ধর্মভিত্তিক দেশ তারা চায়নি। তারা পুরো পাকিস্তানকে ধর্মহীন করার চাইতে ভাগ করে খেয়ে ফেলা সহজ মনে করেছিলো ভারতকে সাইজ করতে সোভিয়েতকে যথেষ্ট মনে করতো। সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলসহ অনেক যোদ্ধা বামপন্থি ছিলেন। আলীগ-ছাত্রলীগ ভারতে পালিয়েছিলো, এসেছিলো যুদ্ধের শেষে গুন্ডামী করতে। ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট ছিলো পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্র ও সবচেয়ে বড় তিনটি শহর এই দেশেই ছিলো, ঢাকা ছিলো প্রথম (এখনো) আর লাহোর-করাচি। এই দেশ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো যা ভারতের ও ইজরাইলের বিপক্ষে যুদ্ধে তাদের দিয়েছিলো চরম ভীতিকর অভিজ্ঞতা। তারা এটাকে ভাঙতে পরস্পরকে সহায়তা করে। উইকিলিক্সের তথ্য অনুযায়ী ৭১ এ ভারতকে সহায়তা করেছিলো ইসরাইল।
৪। শুধু জামায়াত কেনো, কোন ইসলামী দল দেশ ভাঙতে চায়নি। জামায়াতের চেয়ে মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম ও জমিয়ত শক্তিশালী ছিলো, কিন্তু ৭১ এর পর তারা কেউ দাড়াতে পারেনি, সকল দায় পড়ে জামায়াতের ঘাড়ে। কথা ছিলো পাঞ্জাবী হোক, বিহারী হোক আর বাঙ্গালী হোক, দেশ হবে মুসলমানদের শোষণমুক্ত স্বাধীন দেশ। কিন্তু নেতাদের চরিত্র দেখে দেওবন্দিরা ৪৭এই পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিলো যে, এরা মুসলিম দেশ চালাবার যোগ্য নয়। মওদূদী যখন মুসলিমলীগ নেতাদের ইসলামী হওয়ার নসিহত করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেলেন তখন শুধু সৎ নেতা তৈরির জন্য জামায়াত গড়লেন। যারা সাদাকালো রং আর ভাষা দেখে তারতম্য না করে মুসলিম হিসেবে সমতা দেবে।
৫। ভূগোলিক দিক দিয়ে পশ্চিমের সমস্যা ছিলো না, তাই তারা বাঙ্গালীদের ফাঁদে পড়া বক মনে করতো। এটা বাস্তবতাও, বাংলাদেশের চারদিকে ঘেরাও করে আছে ৪৭ এর শত্রু ভারত। আমাদের পড়ানো হত তিন দিকে ভারত, একদিকে সাগর। আসলে এটা ফাকিবাজী, বঙ্গোপসাগরের পরেই ভারত মহাসাগরে আন্দামান-নিকবোর দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে যা ভারতের। ২য় সমস্যা হচ্ছে বাজার, বাংলাদেশে সব কিছু উৎপাদন হয়না, কিনতে হলে ভারতের কাছ থেকে কেনা যাবে কিন্তু কিছুই বিক্রি করা যাবে না। আমরা যা বেচতে চাইবো তা ভারতেই তৈরি বা উৎপাদিত হয়। আরো বড় সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের আশেপাশে কোন মুসলিম রাষ্ট্র নেই যে ভারতীয় সৈন্যরা হঠাত আক্রমণ করলে সাহায্য করবে। ৭১ এর আগে ভারত স্বাধীন সিকিম রাজ্য এরকম দখল করেছিলো। শেষ সমস্যা হচ্ছে দেশ দখল করতে তাদের রক্তক্ষয় করতে হবে না। ইন্দিরা চাইলে ৭২ এ সৈন্য নাও সরিয়ে নিতে পারতো, কিন্তু যখন দেখলো বাঙ্গালীরা ভারতীদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছে আবার পশ্চিম পাকিস্তান ও উত্তপ্ত, তারা রিস্ক না নিয়ে ফিরিয়ে নিলো। এটাও মোসাদ - র এর প্রেসক্রিপশনে। ইন্দিরা মুজিবকে এমনভাবে পোষ মানাতে চাইলো যে বাঙ্গালীরা নিজের ইচ্ছায় একসময় ভারতে বিলীন হতে চাইবে। কিন্তু মুজিব কিছুটা স্বাধীনচেতা হওয়ায় বেশী কিছু তখন সম্ভব হয়নি। মুজিব ওআইসি ও ভুট্টোর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করলে বামপন্থি মুক্তিযোদ্ধাদের খেপিয়ে তোলা হয়। মুজিব ও লীগের অপকর্মও জনগণ থেকে বিমুখ করে ফেলে। ৭৫ পরবর্তী ভারত তাদের অনুগত একজন নেতা/নেত্রির অপেক্ষায় থাকে। আজকে চিন্তা করে দেখেন দেশে একটা জেনারেশন তৈরি হয়েছে যারা হিন্দি সিরিয়েল, মুভি, গান না শুনলে ঘুমুতে পারে না। এদের জন্য ভারতে বিলীন হও্য়া খুশির খবর, তারা বিনা পাসপোর্টে তাজমহল দেখতে পারবে, বাংলাদেশের স্কুলে পড়ানো হয় রাচী ভ্রমণের কথা, সে যায়গা ভ্রমণ করতে পারবে। জামায়াত এমন একটা দল, এদের প্রভাব না থাকলে কি অবস্থা হত? সিকিমে ভারতে যোগ দেয়ার জন্য ভোটাভুটি হয়েছিলো, অর্থলিপ্সু রা টাকার বিনিময়ে দেশ ও জনগণকে বিক্রি করে দেয়। এই অবস্থা গোলাম আযম ও জামায়াতকে বেশী চিন্তায় ফেলেছিলো। আজ জামায়াত যেভাবে একাকী ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিতে সহস পাবে তখন সে অবস্থা ছিলো না, তাই অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো। আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শাসক নির্বাচিত হলে একসময় দেশে যোগ্য মানুষ আসবে, দেশও এক থাকবে, শান্তিও আসবে। মানুষের ভোটে মুজিব ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানের দুই অংশের ভারসাম্য করতেও পারতেন। তাই জামায়াত গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল, মুজিবকে ক্ষমতা দেয়ার পক্ষে ছিলো, দেশের (তখন পাকিস্তান) পক্ষে ছিলো।
৬। দেশ ভাগ হোক তা না চাওয়াই দেশপ্রেম। সকল সমস্যা সমাধান হোক দেশ অখণ্ড থেকে। আজ চট্টগ্রাম আলাদা হোক চাইনা, চাই তাদের সমস্যা দূর হোক। কয়েকদিন আগে স্কটল্যান্ডের জনগণ ইউকে থেকে স্বাধীন না হওয়ার জন্য ভোট দেয়। এতে তারা দেশদ্রোহী হয়নি। আবেগ কে বিবেক দিয়ে যাছাই করুন, দেশ তখন পাকিস্তান ছিলো, তারা পাকিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। দেশ যখন বাংলাদেশ হয়ে গেলো তখন তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। আজ চট্টগ্রামে যারা বাঙ্গালী আছেন, তারা চট্টগ্রামের স্বাধীনতা চাননা। কিন্তু ঘটনাক্রমে যদি চট্টগ্রাম আলাদা হয়ে যায় তাহলে দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীরাই ওখানে রাজাকার হয়ে যাবেন। তাদের চট্টগ্রামের স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে যাবেন, আজ জামায়াতকে যা যা গালি দেয়া হচ্ছে সব তাদেরকেও দেয়া হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন