কে শুধিবে মৃত্যুর ঋণ?
লিখেছেন লিখেছেন ই জিনিয়াস ২৭ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:৩৮:২৩ রাত
						 
						 সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালে সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ, ককটেল, বিস্ফোরণ, গাড়ি-দলীয় অফিসে অগ্নি সংযোগ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ৬ জেলায় ৬ জন মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ আহতের সঠিক সংখ্যা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নি। মূল কথা হচ্ছে রাজনৈতিক রশি টানাটানি এবং ক্ষমতার সিঁড়িতে আরোহণের উন্মত্ত খেলায় একের পর এক বাড়ছে লাশের সংখ্যা। স্বাধীনতার আগে মারত বিদেশী শাসকেরা আর এখন মারামারি করি নিজেরা নিজেরা। রাজনীতির ময়দানে দু’টি দলের পক্ষ থেকে একবার তিনি মারছেন ইনি ফেরাচ্ছেন, আবার ইনি মারছেন তিনিজবাব দিচ্ছেন। মাঝখানে ক্রিকেট বল জনগণ। তাদের চামড়া ফেটে রক্ত ঝরছে, প্রাণ যাচ্ছে। এই মৃত্যুর দায় কার তা নিয়েও চলছে রাজনীতি। এই সর্বনাশা খেলার যুক্তিও দিয়ে যাচ্ছেন উভয়েই। সেটা কী? জনগণের জন্য, জনগণের স্বার্থে। কথা মিথ্যে নয়, কারণ জনগণের স্বার্থে না হলে দলের পেছনে মানুষের এত সমর্থন থাকতো না, দলের মিছিলে কিংবা নেতা-নেত্রীদের সভা-সমাবেশে এত মানুষের সমাগম হতো না। নেতা-নেত্রীরা যখন যাই বলুন না কেন- তাতে হাত তালি দেওয়ার লোকের কোন অভাব হয় না। তাদের মুখের কথাকে কেন্দ্র করে সমর্থকগণ চায়ের দোকানে, টকশোতে, আর সাইবার যোদ্ধারা ফেসবুক আর ব্লগে তুমুল লড়াই করছেন। সুতরাং এই খেলা বন্ধ করার কোন কারণ নেই। প্রত্যেকেই দাবী করেন ১৬ কোটি মানুষ তাদের সাথে আছেন। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে দুটি দলের কাছে ১৬ কোটি মানুষ জিম্মি হয়ে আছে।
যাই হোক, জিম্মি হওয়া এই মানুষগুলো রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে সৈনিকের ভূমিকা নিয়ে নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছেন। টেলিভিশনের পর্দায় রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা নিরাশ মুখে বলে, ‘আমরা আশাবাদী’। তাদের কথা শুনে আমরা আশায় ভাসি। স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য বিরোধী পক্ষের পক্ষ থেকে ৫ জনের নাম আহ্বান করা হয়। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দল পাল্টা প্রস্তাবনা দেন। ঐ প্রস্তাবনাটি যখন চিঠি আকারে দলের মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফের কাছে পৌঁছানো হয় তখন তিনি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে চিঠি প্রাপ্তির কথা ফোন করে জানান। টিভিতে ফোনালাপের দৃশ্য দেখে জাতি আশান্বিত হয়েছিল- এবার মনে হয় বরফ গলল। কিন্তু বরফ গলল না। গত শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ব্যাপক নাটকিয়তার পর ১৮দলীয় জোট সমাবেশ করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছার জন্য সরকারকে দুইদিনের আল্টিমেটাম দেয়। অন্যথায় টানা তিন দিনের হরতাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার খালেদা জিয়াকে ফোন করে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন করতে গণভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান, পাশাপাশি অনুরোধ জানান হরতাল প্রত্যাহারের জন্যও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেরিতে ফোন করেছেন এই অজুহাতে বিএনপি হরতাল প্রত্যাখ্যান করে নি। তারা জানায় আগে হরতাল, পরে আলোচনা। মির্জা ফখরুল বলেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে দল এবং জোটের নেতা-নেত্রীদের সাথে আলোচনা করে হরতাল প্রত্যাহারের সময় ছিল না। তবে সংলাপের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় নি। হরতালের পরেও সংলাপ করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর একটু দেরির জন্য হরতাল ফেরানো গেল না, ফলে আরও ৬টি লাশ পড়ল। আহতের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বহুগুণ।
ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও অসামান্য। আর সারা দেশ অতিবাহিত করলো আতঙ্কময় একটি দিন। বাকী আছে আরো দুই দিন। এই দুই দিনও এমনি করেই যাবে, নেতাদের খেলায় প্রাণ দেবে হয়ত আরও কিছু মানুষ। কিন্তু রাজনীতিবিদদের কী হবে? তারা ঠিকই বহাল তবিয়তে থাকবেন। সবকটি মৃত্যুর দায়ভার একে অপরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করবেন। এভাবেই তারা পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু যে প্রাণগুলো আজ ঝড়ে গেল- এদের কি কোনই দাম নেই? এই রক্তের বিনিময়ে তারা ক্ষমতার মালিক হনে, পাজেরো হাঁকাবেন। এমনি করে আবার ফিরে আসবে অতীত, এভাবেই ঝরতে থাকবে প্রাণ। এর দায় সবটুকুই কি রাজনীতিবিদদের? নাকি আমরাই তাদেরকে এই মরণখেলায় মেতে ওঠার সুযোগ করে দিচ্ছি? 						 
						 
						 
						 
						 
						 
						 
						 
বিষয়: বিবিধ
৯৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন