বাম, ডান ও মধ্যপন্থিদের প্রতিনিধিত্ব
লিখেছেন লিখেছেন সাইফুল ঈদগাহ কক্স ৩০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:২৫:৩২ সকাল
যেসব চেয়ারে অনেকেই বসতে চায় সেসব চেয়ার ভিত্তিক আগ্রহী সবাইকে নিয়ে একটি করে পরামর্শ কমিটি গঠন করে দিলে কেমন হয়? যেমন একটি আসনের জন্য ধরেন দশ জন প্রতিদন্দিতা করতে ইচ্ছুক। সবাই মিলে সে এলাকার জন্য একটি উন্নয়ন কমিটি এবং নিজ নিজ নির্বাচনী বাজেট জমা দিয়ে একটি উন্নয়ন ফান্ড গঠন করবে। সবাই পরামর্শ করে একজনকে নিজেদের প্রধান নির্ধারণ করবে। যাবতীয় কাজ নিয়মিত পরামর্শ ভিত্তিক চালাবে। কোন সমস্যা হলে পরামর্শ ভিত্তিক সমাধান করবে বা পরিবর্তন করবে। ফলে ঐক্যবদ্ধ, উন্নত ও স্বনির্ভর হবে গোটা এলাকা। এ পদ্ধতিতে কাজ করলে কেউ বঞ্চিতও হবেনা, আবার কেউ নিয়ন্ত্রণহীনও হবে না। অপচয়, হিংসা, পরনিন্দা, মনোমালিন্য ইত্যাদি বহু ক্ষতি হতে বাঁচা যাবে। বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে ধরেন ভোট পেল একজন ১০টি, একজন ১১টি, একজন ১২টি, একজন ১৩টি। তবে কে নির্বাচিত হবে? নিশ্চয়ই যে ১৩টি পেল সেই। অন্যরা সর্বমোট পেল ৩৩টি। তা হলে তা কি সংখ্যালগিষ্টের বিজয় হল না? এমতাবস্থায় সে পদ্ধতিগত বিজয়ী হলেও বাস্তবে সংখ্যাগরিষ্ট বিরোধীদের সামনে কিভাবে টিকে থাকবে? তাই আমাদের নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করা আবশ্যক। যেমন প্রত্যেক ভোটার পাঁচ বছরের মধ্যে মাত্র একটি ভোট দেবে। তবে কোন ব্যক্তিকে না দিয়ে ভোট দেবে সরাসরি দলকে। যে দল যত ভোট পাবে সে দল আনুপাতিক হারে তত শতাংশ প্রতিনিধিত্ব পাবে মন্ত্রী পরিষদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সবখানে। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, সংসদ, প্রেসিডেন্ট ইত্যাদি পৃথক পৃথক নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। ১ম দল থেকে প্রেসিডেন্ট, ২য় দল থেকে প্রধানমন্ত্রী, ৩য় দল থেকে স্পিকার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে হবে। তা হলে কাউকে শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে হবে না। সবাই সন্তুষ্ট মনে দেশের জন্য, দশের জন্য, ধর্মের জন্য নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবে। প্রত্যেক দল নির্বাচনের পূর্বেই এলাকা ভিত্তিক তালিকা জমা দেবে। যে এলাকায় যে দল ভোট বেশি পাবে সে এলাকায় সে দলের প্রতিনিধিকে অগ্রাধিকার দেবে। মানুষ ব্যক্তিকে ভোট দেবে দলীয় নির্বাচনে, দলকে ভোট দেবে জাতিয় নির্বাচনে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সর্বত্র বাম, ডান, মধ্য সবপন্থির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কেউ বঞ্চিত হবে না। তা হলে কেমন হয় ?
বাংলাদেশে ধর্মীয় বিরোধ বেশি নেই। সে তুলনায় রাজনৈতিক বিরোধ অনেক বেশি প্রবল। সকল বামপন্থি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষতা চায়। সকল ডানপন্থি বিএনপির নেতৃত্বে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চায়। কিন্তু তাদের কেউ ইসলামী আইন পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে রাজি নয়। যারা রাজি তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। অনৈক্যের বড় কারন পদ্ধতিগত সমস্যা। কেউ বাহুতন্ত্রী, কেউ গণতন্ত্রী, কেউ অর্থতন্ত্রী, কেউ তাবলীগী, কেউ জিহাদী। সমাধান কী ?
যে কোন সময় যে কোন স্থানে যে কোন বিষয়ে পরিবর্তন বা বিপ্লব করতে হলে আগাতে হবে বিপ্লবের রাস্তা দিয়েই। সে রাস্তা হল যথাক্রমে ১. চিন্তা বিপ্লব, ২. চরিত্র বিপ্লব, ৩. শিক্ষা বিপ্লব, ৪. অর্থ বিপ্লব, ৫. গণ বিপ্লব, ৬. ব্যালট বিপ্লব, ৭. বুলেট বিপ্লব, ৮. মিডিয়া বিপ্লব। বর্তমানে উক্ত সর্বক্ষেত্রে অমুসলিমরাই এগিয়ে, মুসলিমরা পিছিয়ে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত পারস্পরিক কাদা ছুড়াছুড়ি বাদ দিয়ে বিপ্লবের প্রতিটি ধাপে নিজেকে যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য রূপে গড়ে তোলা। প্রত্যেকেরই কিছু যোগ্যতা আছে এবং কিছু অযোগ্যতাও আছে। যোগ্যতাকে শানিত করি এবং অযোগ্যতাকে ঝেড়ে ফেলি। অপরের যোগ্যতাকে স্বিকৃতি দিই এবং অপরের কাছ থেকে জেনে নিয়ে নিজের অযোগ্যতাগুলো চিহ্নিত করি। একগুয়েমি বাদ দিই। আমরা কেন বলতে পারি না যে, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইমাম ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুয়াজ্জিন ছিলেন জিয়াউর রহমান। পিতার ভূমিকায় যুদ্ধের বাইরে ছিলেন মুজিব এবং মাতার ভূমিকায় যুদ্ধের ভিতরে ছিলেন জিয়া। মুজিব-জিয়া দু’জনই শহীদ। মুজিবের লাশ হিজরত করেছে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ এবং জিয়ার লাশ হিজরত করেছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা। দু’জনকেই হারিয়ে এতিম হয় এ জাতি। তাদের দু’জনের নামে আর কাউকে যেন এতীম করা না হয়। যারা এতিম হয় তাদের জন্য তারা দু’জনের নামেই গড়ে তোলা হোক সর্বত্র “শেখ-জিয়া এতিমখানা-অনাথাশ্রম”।
১৯৪৭ সালের আগে যারা অখন্ড ভারতের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিল, পাকিস্তান সৃষ্টির পর কি তাদের বিচার করা হয়েছিল? না করা হলে কেন করা হয়নি? ১৯৭১ সালে যারা অখন্ড পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর তাদের সবার বিচার করা হয়েছে বা হচ্ছে কি? না কর হলে কেন করা হয়নি বা হচ্ছে না? বর্তমান বা ভবিষ্যতে যারা অখন্ড বাংলাদেশের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে স্বাধীন চট্টগ্রাম বা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরোধিতা করছে বা করবে, স্বাধীন চট্টলা বা জুমল্যান্ড সৃষ্টির পর তাদের বিচার করা হবে কি? না করা হলে কেন করা হবে না? আঞ্চলিকতা বা ভাষা ভিত্তিক জাতিয়তা হলে চট্টভাষীরা ভিন্ন জাতি নয় কি? একমাত্র ইসলাম ছাড়া অন্যকোন বন্ধন চট্টগ্রামকে পৃথক হওয়া থেকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে কি? পার্বত্য চট্রগ্রামের ভাষা ও ধর্ম দু’টুই যেখানে ভিন্ন, সেখানে তাদেরকে কিসের ভিত্তিতে ধরে রাখা যাবে, যদি না সেখানে রাজনৈতিক দন্দ ভুলে সকল মুসলিম মিলে অমুসলিমদেরকে ইসলামের বা ঐক্যের দাওয়াত না দেন? তাই সেখানে জোট-মহাজোটের রাজনীতি বন্ধ করে “হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান মুসলিম এক্য পরিষদ”-কে শক্তিশালী করা হোক সর্বত্র।
বাংলাদেশে কোন ইসলামী দলের কোন ভবিষ্যৎ আছে কি? বর্তমান পদ্ধতিতে নেই। কারন এখন সংখ্যাগরিষ্টের নামে সংখ্যালগিষ্টরাই ক্ষমতায় যেতে পারে। এ দেশের অধিকাংশ জনগণ মুসলিম ও ইসলামপন্থি হওয়া সত্তেও কোন ইসলামী দল ক্ষমতায় যেতে পারিনি এবং পারবেও না। কারন তারা একতাবদ্ধ নয় এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদের প্রকাশ্য সমর্থন ছিল না। এ দেশে ইসলামী বিপ্লব সফল করতে হলে বিপ্লবের রোডম্যাপে উঠার বিকল্প নেই। বর্তমানে কারা কোন ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে? চিন্তা বিপ্লবে জামায়াতে ইসলামী। চরিত্র বিপ্লবে তাবলীগ জামায়াত। শিক্ষা বিপ্লবে নূরানী-বেসরকারী শিক্ষালয়। অর্থ বিপ্লবে ইসলামী ব্যাংক। গণবিপ্লবে হেফাজতে ইসলাম। ব্যালট বিপ্লবে বিএনপি। বুলেট বিপ্লবে আওয়ামী লীগ। মিডিয়া বিপ্লবে সাহবাগী। তবে পারস্পরিক সমন্বয়, সহযোগিতা ও ঐক্য না থাকায় তাদের কেউ দেশের বা দশের বা ধর্মের যথাযত উপকার করতে পারছে না।
বামপন্থিদের সুত্র হল “লা ইলাহা” বা কোন প্রভু নেই। ডানপন্থিদের সুত্র হল “ইল্লাল্লাহু” বা অবশ্যয়ই প্রভু আছে। মধ্যপন্থিদের সুত্র হল “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” বা বিরোধ মিমাংশায় ৩য় পক্ষ-সালিসকার হলেন প্রভুর শেষ বার্তাবাহক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাই আসুন, তিন পক্ষের তিনটি সুত্রকে একত্র করে আমরা তিনপক্ষই এক হয়ে যাই। লা ইলাহা + ইল্লাল্লাহু + মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। কোন প্রভু নেই, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বার্তাবহক। যে যতটুকুতে একমত হবে তার সাথে অন্যরা ততটুকুতেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ এবং বাকিটাও একমত করার চেষ্টা করব। তা হলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান মুসলিম বা আস্তিক-নাস্তিক কারো মধ্যে পারস্পরিক কোন দন্দ-সংঘাত হরয়ার কথা নয়।
বিষয়: বিবিধ
১০৮২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনার লেখাতে বরকত দিন।
জাযাকাল্লাহ খায়ের।
"যে যতটুকুতে একমত হবে তার সাথে অন্যরা ততটুকুতেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ এবং বাকিটাও একমত করার চেষ্টা করব। "
মন্তব্য করতে লগইন করুন