বেনারশী শাড়ীর ইতিকথা।
লিখেছেন লিখেছেন জারা ২৮ মার্চ, ২০১৩, ০৪:২৭:২১ বিকাল
বেনারশীর শাড়ীর কথা শুনলেই মনে হয় বিয়ের শাড়ীর কথা তাই না। আর সেই সাথে আমরা বেনারশী পল্লী বলতে বুঝি ঢাকা মিরপুর বেনারশী পল্লীর কথা(১১ বা ১০)। মিরপুর বেনারশী পল্লীতে আমি অসংখ্যবার গিয়েছি । বড় ভাইদের বিয়ের সময় শাড়ী কিনতে হবে চলে গেছি বেনারশী পল্লীতে । এছাড়াও এমনি যে কোন উপলখ্খ্যে হয়তো বা বোনের বিয়ে, মামাতো, খালাতো ভাই বোনদের বিয়ের সময়ও আমাকে শাড়ী পরতে হবে ।ছুটে চলো মিরপুর বেনারশী পল্লী। এমনি আরও বিবিধ কারনে ।
এবার মিরপুর বেনারশী পল্লীর কথা বাদ দিয়ে চলুন আপনাদের নিয়ে যাই রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বেনারশী পল্লীতে। ২০০৪ এর এক বিকেলে আমি ,আমার বর ও আমিন ভাই এবং সুজন ভাই পীরগাছা বেনারশী পল্লীর উদ্দেশ্য রওয়ানা হলাম। সুজন ভাই তখন সদ্য বিয়ে করেছেন ,নতুন ভাবীর জন্য সুন্দর একখানা শাড়ী বানানোর অর্ডার দেবেন। আমি এবং আমার বর একটা মটর বাইকে আর ওনারা দুজন অন্য বাইকে চেপে বেনারশী পল্লীতে চলে এলাম। গ্রামীন মেঠো পথ কিছুটা আকাবাকা ও উচুনীচু,হাটতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ছোট বাচ্চার মতো হোছট খেয়েছি। যেদিকে তাকাই দুচোখ জুরিয়ে যায়, আবহমান গ্রাম্য পল্লী দেখে। পথের দুপাশে তামাক খেত , তামাক চাষীরা তামাক গাছের পরিচর্যা করছে।
মাঝে মাঝে কেউবা আমাদের প্রশ্ন করছে, বাহে কই যাইবান। তখন আমরা বেনারশী পল্লীর কথা বলতেই ওরা দেখিয়ে দিলো।
একটা সময় আমরা বেনারশী পল্লীর কারখানায় ঢুকে গেলাম।
আমরা সচরাচর শাড়ী তৈরীর যেসব কারখানা দেখে থাকি, এখানের কারখানা সেরকম নয়, অনেকটা বইয়ে পাঠ্য প্রাচীন সময়ে যেভাবে শাড়ী বানানো হতো লেখা রয়েছে সেরকম, আজও এখানে সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। প্রাচীন যুগের কারিগররা
আজ আর বেচে নেই কিন্তু বংশানুত্রুমে শত বছরের শিল্পকে তারা বাচিয়ে রেখেছেন। মাটির গর্তের মধ্যে পা রেখে মাটির সিংহাসনে বসে তারা বছরের পর বছর তাত চালিয়ে যান।
ওদের কাছ থেকে জানলাম এক একটা বেনারশী শাড়ী বুনতে ওদের মাসের অর্ধেকটা সময় লেগে যায়। কত বাহারি ডিজাইনের বেনারশী শাড়ী দেখলাম ওদের ওখানে। এবং দেখলাম শাড়ীর ফরিয়ারা ওদের কাছ থেকে শাড়ি কিনে গাড়িতে তুলছেন। জানলাম এই শাড়ী ড্রাই ফিনিশিং এর জন্য ঢাকা নারায়নগঞ্জ চলে যাবে। ফিনিশিং হলে সেখান থেকে মিরপুর বেনারশী পল্লীর মতো আরও দেশের বিভিন্ন দোকানে সেল হবে।
সর্বশেষ ওদের কাছ থেকে জানলাম বন্যার সময় ওদের পরিস্হিতি ভয়াবহ হয়ে থাকে, সরঞ্জামাদি সহ অন্যান্য জিনিস পএ নষ্ট হয়ে যায়। পেটের খুদায় দু একদিন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। তারপরেও তারা তাদের এই শিল্পকে বাচিয়ে রেখেছেন। শুধু জীবন চলার তাগিদে। মনটা খারাপ হয়ে গেল ওদের জীবন যুদ্ধের কাহিনী শুনে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন