বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে

লিখেছেন লিখেছেন এ বি এম মুহিউদ্দীন ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৫৪:১৪ রাত

বাংলাদেশের রাজনীতির সমস্ত কালো দিকগুলো চূড়ান্তভাবে জনগণের সামনে দিনের আলোর মতন স্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। কোন দলগুলো, কোন শক্তিগুলো, কোন মুখগুলো দেশের মানুষের অধিকার নিয়ে এতকাল ছিনিমিনি খেলেছে, জনগণ তা জানবার, দেখবার ও বুঝবার সুযোগ পাচ্ছে। এর আগে রাজনীতিকে এমন পরিস্কারভাবে জানবার ও দেখবার সুযোগ এদেশের তৃণমূল পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভবপর হয় নি। নির্বাচনের আগে কেবল ভোট দিতে হতো অনেকটা অন্ধ হয়ে, না জেনে, না বুঝে। সে দৃশ্যপটটা এবার হয়তো কিছুটা পাল্টাবে।

রাজনীতি নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনমানুষের বিচার-বিবেচনা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার ধরণ পরিণতভাবে বদলেছে। জনগণের জন্য এ উত্তম খেদমতটির আঞ্জাম দিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী জোট সরকার। সরকারের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সুবিধা জনগণকে প্রচলিত রাজনীতির চাল-চিত্র এবং সরকারের শক্তি চর্চার দিক-বিদিক সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পেতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। বহুসংখ্যক বেসরকারী টিভি চ্যানেল এবং ইন্টারনেট সুবিধা আপামর জনগণকে রাজনীতির একেবারে আগা-গোড়া বিচার-বিশ্লেষণ করবার একটা সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। যদিও বেসরকারী প্রায় সবগুলো টিভি চ্যানেল সংবাদ প্রচারে কালোত্তীর্ণ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু জনগণের তীক্ষ্ণ নজর মিডিয়ার সে অপচেষ্টা এড়াতে পারে নি। বর্তমান সরকার হয়ত একসময় তার ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের জন্য আফসোস করে বসতে পারে।

প্রধান প্রধান শহরগুলোর উপর চোখ রেখে এমুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ বিচার-বিশ্লেষণ করা মোটেও শুভবুদ্ধির কাজ নয়। কেননা ইতিমধ্যে রাজনীতির নাটাই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের হাতে গিয়ে পড়েছে। তাই এমুহূর্তে বাধ্য হয়ে গ্রাম-বাংলার আপামর জনগণের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তবেই বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারনা পেতে হয় ।

সরকার ইতিমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়েছে। বিশেষকরে ধর্মীয় ইস্যুতে প্রচন্ড বিদ্বেষী এবং ভন্ডামির আশ্রয় গ্রহণ করার ফলে খোদ সরকার সমর্থকরাই এখন সরকারের সামনে বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে সরকার সম্পর্কে বাস্তব একটি পর্যবেক্ষণ হল, সরকার ততদিনই টিকে থাকছে যতদিন প্রধান প্রধান শহরগুলোকে সরকার তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে।

বামপন্থীদের পরামর্শক্রমে সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ইসলামপন্থী দল জামায়াতকে নির্মুল করার যে প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, পথিমধ্যে ঘটনাক্রমে জামায়াতকে ডিঙ্গিয়ে এ মুহূর্তে সরকারের ও বামপন্থীদের জন্য সবচেয়ে বিরাট হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি অরাজনৈতিক ইসলামপন্থী দল হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামকে সরকার বিতর্কিত করতে পারছে না এ জন্য যে, সরকার আশংকা করছে যে, তাতে হয়ত দলটি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এবং জামায়াতসহ অন্যান্য ইসলামী দলের সাথে যে কোন প্রকার আঁতাতে লিপ্ত হতে পারে। আর যদি এমনটি ঘটে তাহলে নিশ্চিতভাবে পরিস্থিতি চলে যাবে সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এমন আশংকায় সরকার ইতিমধ্যে হেফাজতে ইমসলামকে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ করা থেকে বিরত রাখার সবোর্চ্চ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। তাই খোদ প্রধানমন্ত্রী তাদের সামলাতে এবার সরাসরি রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবনে কওমী আলেমদের ডেকে এনে অনেকটা সমঝোতার পরিচয় দেবার চেষ্টা করেছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে মিলিত হওয়া নেতৃবৃন্দের সাথে হেফাজতে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই বলে অনেকে দাবী করেছেন।



হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ থামানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর সাথে আলাপরত।

সরকার এবং বামরা এর আগে এমন বড় সংকট ও হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে হয় না। ইসলামপন্থীদের এমন ব্যতিক্রমী উত্থানে বর্তমান সরকার এবং বামদের কপালে তাই বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। অন্যদিকে একটি ইসলামপন্থী দলকে দমন করতে গিয়ে কি আরেকটি কট্টর ইসলামপন্থী দলের উদ্ভব হলো না? যদি তা-ই হয়, তবে এর পুরো কৃতিত্বের দাবীদার সরকার এবং তার শরীক বামপন্থীরা। জয় বাংলা।

বিষয়: বিবিধ

১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File