গল্প : যুবক পুরুষ (পর্ব চার)
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৯:১৯ রাত
আমার মনে একটা কু-বাসনা জেগে উঠলো। দেখতে চাইলাম, মানুষের বিপদের সময় সে কি করে। সে কি মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে নাকি তার ধর্ম শুধু মহিলা হওয়ার কারনে সেখানে বাঁধার সৃষ্টি করে।
সে যেদিকে হাটছে আমিও সেদিকে তার পিছু পিছু হাটতে লাগলাম। এক সময় তার থেকে একটু দুরে যতটুকু গলার আওয়াজ শুনা যায় ততটুকু দুরত্বের ভেতরে আমি পানিতে নেমে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে হাত পা ঝাপড়াতে লাগলাম। ভেবেছিলাম, সে সিনেমার নায়কের মত উড়ে এসে আমাকে পানি থেকে উদ্ধার করবে। কিন্তু না, সে আমাকে পানি থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। সে তার মত দাড়িয়ে থেকে আমার এই সিনেমা যেন উপভোগ করছে। দেখলাম, দু'জন সাদা চামড়ার লোক আমাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসছে।
ফিরতি পথে বাসে বসে বসে ভাবছি, মানুষটা কেমন ? এ কেমন তার ধর্ম ? একজন মানুষ পানিতে ডুবে মরে যাচ্ছে অথচ মহিলা হওয়ার কারনে সে এগিয়ে আসেনি। এখানেও তার ধর্ম তাকে বাঁধার সৃষ্টি করেছে । তাহলে ইসলাম কি মানুষের প্রয়োজনে কাছে আসে না ? মহিলাদের কি কোন মুল্য নেই ইসলাম ধর্মে ? নাকি সে একটা সেকেলে মানুষ ? তা ও হবে কেন ? তাকে তো অনেক স্মার্টই দেখি। এগুলো চিন্তা ভাবনার মধ্যে আমি বাস চড়ছি, আর বাস তার গন্তব্যে একশত চল্লিশ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলছে। কিছুদুর আসার পর হঠাৎ করে আমাদের বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। বাসটি রাস্তার বাইরে ছিটকে পড়ে। আমরা সকলেই আহত হই। অপেক্ষাকৃত কম আহতরা অন্য বেশি আহতদের সাহায্য করছে। কম আহতদের মধ্যে আমি আর ঐ যুবকটিও আছি। আমার মাথা ঝিম ঝিম করছে। আমি মাথায় হাত দিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছি। দেখি, যুবকটি বাসের ভেতরে আটকে পড়াদের সাহায্য করছে। অনেকের হাত ধরে টেনে টেনে বের করছে,যার বেশির ভাগই যুবতি নারী। অবস্তা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। এম্বুল্যান্স এসে আমাদের সবাইকে হাসপাতাল নিয়ে গেলো।
বাসায় ফিরে ভাবতে লাগলাম, সে আমাকে সাগরের পানি থেকে উদ্ধার করতে কেন এগিয়ে আসলোনা। অথচ বাসের এক্সিডেন্টে সে ঠিকই মেয়েদের হাত ধরে সাহায্য করেছে। তাহলে সে কি আমার সিনেমা আগেই বুঝতে পেরেছে। নাকি আমাকে তার পছন্দ না। আমি কি দেখতে আসলেই সুন্দরী নয়, যা আমি এতদিন থেকে মনে করে আসছি। তা কেন হবে ? সে যাদেরকে বাস থেকে উদ্ধার করলো তারা কেওতো আমার চেয়ে সুন্দরী নয়। তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
তিনদিন পর আমাদের প্রতিষ্ঠান খুলে। অনেকেই কাজে আসতে পারেনি। আমরা কম আহতরা ইতিমধ্যে সুস্হ্য হয়ে গিয়েছি বিধায় কাজে যোগ দেই। প্রথম সাক্ষাতেই সে হ্যালো বলে জানতে চায় আমি সুস্হ্য হয়েছি কি না । তার জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে তাকে সময় চাইলাম । সে কাজের শেষে কথা বলবে বলে জানালো।
কাজ শেষে তার কাছে জানতে চাই......।(চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১২৯৫ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা বেশী আহত ছিল তাদেরকে শুধু হাত ধরেই টেনে বের করে আনা সম্ভব ?
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ আগামী পর্বের অপেক্ষা........।
খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব।ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন