এক বাবার দুই কন্যা সন্তান ও রিমান্ড
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২০ আগস্ট, ২০১৫, ০৩:০৯:০১ রাত
গত কয়েক মাস পূর্বে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলা ভার্সনে স্কটল্যান্ডের এক লেখকের গল্পের বই পড়েছি। বইটি পড়ার পেছনে ছিল একজন ভাইয়ের অনুরুধ। উনি আমাকে প্রায় বছর খানে পূর্বে বলেছিলেন বইটি পড়ার জন্য শুধু তাই নয় উনি বইটির বাংলা অর্থ করে মেইল করে পাঠিয়েছিলেন। বইটির মূল গল্প ছিল এক বাবার দুই কন্যা সন্তানের প্রতি মূল্যায়নের পার্থক্য এবং কারণ।
গল্পে মেয়ে দুটির বাবা ছিল হিংসুক। হিংসুক মানুষের চরিত্রে বাবা ছিল একটা বদমেজাজি এবং অহংকারী। কন্যা দুটির নাম যথাক্রমে সেক্লীন এবং কেরিন। কন্যা দুটির মধ্যে সেক্লীন ছিল সৎ এবং সাহসী কেরিন অসৎ এবং ভীতু। বাবার নানান অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রায়ই সেক্লীনকে প্রতিবাদী রূপে দেখা যেত। তাদের বাবার মূল অপকর্ম ছিল হিংসা করা। আর এই হিংসার কারণে প্রায়ই অনেক মানুষকে খুন করে নিজ হাতে। খুন করার জন্য সে লাইসেন্স করা পিস্তল ব্যবহার করত। বাবার লাইসেন্স করা পিস্তলের বিরুদ্ধে ও আইনি লড়াই করার হুমকি দিয়েছিল সেক্লীন। অন্যদিকে কেরিন বাবার অপকর্মে নিরব ভুমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় বাবার অপকর্মের জন্য সহয়তা করে। অনেক সময় ঘরে পুলিশ আসলে কেরিন বাবাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। সেক্লীন ও কেরিন দুই রকম হয়ে তাদের বাবা ভালবাসার ক্ষেত্রে ও পার্থক্য দেখাতেন। একবার সেক্লীন শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে গেলে শুধু মাত্র হিংসার ফলে বাবে হাসপাতালে নিয়ে যায় নি। সেক্লীন শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে শেষপর্যন্ত মারা যায়।
আমাদের দেশে আজ একই হল। প্রায় একই সময়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন দুজন আলোচিত সাংবাদিক। এরা হলেন- সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন জনপ্রিয় সাংবাদিক নেতা জাতীয় প্রেসকাব্লের দুবারের নির্বাচিত সভাপতি শওকত মাহমুদ এবং অন্যজন একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক প্রবীর সিকদার, যিনি মূলত সন্ত্রাসী হামলায় পা হারানোর কারণেই বেশি পরিচিত।রবিবার গ্রেপ্তার করা হয় প্রবীর সিকদারকে। থানায় নিরাপত্তাহীনতার জিডি করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এবং সম্ভবত বাংলাদেশের শীর্ষ ধনী মুসা বিন শমসের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার হন।এরপর চলতি বছরের শুরুর দিকে বিরোধী জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই আন্দোলনের সময় নাশকতার জন্য সরকার ও বিএনপি একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। গ্রেপ্তারের পর প্রবীর সিকদারকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থক এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর থেকে মন্ত্রীসহ শাসকদলের একাংশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। এরপর রিমান্ড মঞ্জুরের ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যেই নজিরবিহীনভাবে তিনি জামিন পান। জামিন আদেশের পরপরই কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।এই মুক্তি মিডিয়া পরিবারের জন্য আনন্দের। কিন্তু আজ একই দিনে শওকত মাহমুদকে ৩ দিনের রিমান্ড দেওয়া হলো কিন্তু কেউ কথা বলেনি ।
এই সেই শওকত মাহমুদ যিনি সাংবাদিক সমাজের ইস্যুতেই বেশি তৎপর। মিডিয়া পরিবারের জন্য প্রেসক্লাবের সামনে রৌদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন, বক্তৃতা দেন। কিন্তু একমাত্র প্রতিহিংসার শিকার হয়ে রিমান্ডে নির্যাতনের শিকার হতে হলো। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সুপ্রিম কোর্ট ২০১০ সালে ব্রিটিশ আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল। একই আদালত সম্প্রতি একই ধরনের মামলায় দৈনিক জনকণ্ণ্ঠের সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদকে প্রতীকী সাজা এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে। আবার গত কয়েকদিন পূর্বে মাহমুদুর রহমানকে জেল দিয়েছে।
উপরের গল্পের সাথে আমাদের দেশের আদালত ও সরকার ও দেশের জনগনের হুবুহু মিল রয়েছে। শুধু মাত্র হিংসাত্মক আচরণের কারণে একের পর এক সৎ , সাহসী , মেধাবী বুদ্ধিজীবিদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে পঙ্গু করা হচ্ছে। সরকার ও আদলতকে অবশ্যই মনোভাব পাল্টাতে হবে । নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের জনগনের সাথে সমান ব্যবহার করতে হবে অন্যতায় দেশের আগামীদিন নিশচয় মেঘাচ্ছন্ন।
বিষয়: বিবিধ
১২৯০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিএনপি যদি কস্মিন কালে ক্ষমতায় আসে তাহলে শওকত সাহেব এই সব গ্রেফতার জুলুম হওয়াটাকে ত্যাগী নেতার পরিচায়ক হিসেবে তুলে ধরবেন এবং মন্ত্রী হবার রেসে এটা তার জন্য আলাদা প্রেফারেন্স এনে দেবে।
মাহমুদ প্রবির সাংবাদিক
বাট তাদের দুই দিক
কেউ ঘরের কেউ পরের...তাই যা হবার হইছে...তা কি হইছে...এমনই হবে...তা কি করবে...? অনেক ধন্যবাদ পিলাচ পিলাচ পিলাচ
মন্তব্য করতে লগইন করুন