গণ-মানুষের মহাজাগরণ দেখে এলাম.........
লিখেছেন লিখেছেন আল মাসুদ ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৫৪:৩৬ রাত
ক্যান্সার আক্রান্ত আব্বাকে নিয়ে বাড়ি গেলাম গত মাসের ১৩ তারিখ। ঢাকায় আসলাম ৩১ তারিখ। বাড়িতে থাকার ফলে দেশের খবর রাখতাম না। সম্ভবও ছিল না। এসে দেখি এক হেফাজতকে নিয়ে সরকারের মধ্যে ত্রাহি অবস্থা। হেফাজতে ইসলাম সরকারের ভয়ের কারণ। যার প্রমাণ ঠিক আগ মূহুর্তে কিছু দালাল কর্তৃক হরতাল ও অবরোধ ঘোষণা। বারেবারে পরিবর্তিত ঘটনা প্রবাহ হেফাজতের লংমার্চ সম্পর্কে গণ-মানুষের কৌতুহল বৃদ্ধি করে। আমারও তর সইছে না লংমার্চ দেখার।
সকাল ৭ টায় বের হওয়ার কথা থাকলেও বের হলাম সকাল ৯ টায় বাসা থেকে। রাস্তায় বের হবার পরে যা দেখলাম, তা অবিশ্বাস্য। মনে করেছিলাম শুধু দাড়ি-টুপিওয়ালা সফেদ কিছু মানুষ হতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। সার্ট-প্যান্ট পরা, মাথায় টুপি হাজারো মানুষ হাঁটছে তো হাঁটছে। লক্ষ্য মতিঝিল। ঢাকার বাইরে থেকে আপত মানুষকে অনেক পুলিশ সহযোগিতাও করছে। অনেক দিন পর গলা ছেড়ে স্লোগান দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। নাঈটিংগেল মোড়ে যাওয়ার পর লক্ষ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আগমন দেখলাম। মিছিল কালেমা পাঠ করতে করতে এগিয়ে চলছে।
১০টার দিকে ভিড় ঠেলে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকবোর্ডের কাছে অবস্থান নিলাম। একটু পর থেকে শুরু হলো স্বপ্রণোদিত পানি ও খাবার বিতরণ। একজনেরটা নিলে অন্যজন বলছে, ভাই আমারটাও নিতে হবে। সিলেট থেকে আগত একটি কাফেলাকে ৩০ বছরের এক যুবক একটি জারে পানি ও প্যাকেট করে রুটি ও কলা দিয়ে বলছে, অনেক কষ্ট করে এসেছেন। খান! আমি নিজেই আপনাদের জন্য এগুলো কিনে এনেছি। এরকম শত শত ব্যক্তি, কোম্পানী, রাজণেতিক ও সাংস্কুতিক ব্যক্তিরা পানি, বিস্কুট,কলা, রুটি, সরবত, শশা, গাজর, তরমুজ, স্যালাইন,খেজুর,আইসক্রিম, বোয়ামের বিস্কুটসহ হরেক রকম ফল-ফলাদী। নিজ চোখে না দেখলা বোঝা মুসকিল কত আবেগী ছিল এই মানুষগুলো। একজন বলল সে বি-বাড়িয়া থেকে নসিমনের মাধ্যমে এসেছে। কেউ কেউ হরতালের আশংকায় দুই দিন আগে ঢাকাতে আসে।
আরামবাগ, যাত্রাবাড়ী, নয়া পল্টন ওদিকে প্রেসক্লাব থেকে সব স্রোত মিশেছে মতিঝিলে। প্রচন্ড রোদে লক্ষ লক্ষ মানুষ অধির আগ্রহে রাসুল (সঃ) প্রেমে কষ্ট স্বীকার করে রাস্তায় অবস্থান করে। তবে মাঝে মাঝে হিমেল হাওয়া সবার মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
টিভিতে প্রোগ্রাম দেখার জন্য বাসায় আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। হাঁটা শুরু করলাম মতিঝিল থেকে। পথে দেখলাম ভ্যানের পর ভ্যানে করে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। মানুষের অকৃত্রিম এই ভালবাসা দেখে চোখের পানি ধরে রাখা কষ্টের। এর কারণ হলো আল্লাহ, রাসুল এবং কুরআন প্রেমের কারণে। এক ভাই দোকান থেকে এক বোয়াম বিস্কুট কিনে দিচ্ছে। নিজেও নিলাম। তার চোথে-মুখে যে তৃপ্তি দেখলাম তার প্রকাশ করা অসাধ্য। ফিরে আসার পথেও অনেকে বাধ্য করল খাবার নিতে। সবার কথা যে কয়দিন থাকে আমরা সবাইকে খেদমত করে যাব।
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষের সাথে কথা বলে জানলাম তাদের ইচ্ছা ঢাকায় থেকে যাওয়া, রাস্তা অবরোধ করা। তবে নেতৃবৃন্দের ধন্যবাদ যে তারা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ায়। কেননা এখন এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষা চলছে। তাছাড়া সরকারেরও সময় দেওয়া দরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তবে সরকার যদি ধানাই-পানাইয়ের আশ্রয় নেয় তবে তার ফল হয়তোবা ভাল হবে না। যার প্রমাণ শত বাঁধা উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ মানষের জনসমুদ্র। চার হালি লোক (পীর হাবিবুর রহমানের ভাষায়)নিয়ে আন্দোলন করে যদি শাহবাগীরা সরকারকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করে, তবে বাংলার এই মাটিতে কোটি কোটি ইসলাম প্রিয় মানুষের দাবি অবশ্যই মানতে হবে।
আর একটি কথা না বললেই নয়। শাহবাগিদের নিয়ে অতি উৎসাহী কিছু গণমাধ্যম গুটি কয়েক লোকদের সমাগমকে যেভাবে দেখিয়াছে তার ছিটে ফোঁটাও দেখায়নি আজকের লংমার্চ প্রেগ্রাম (তবে দিগন্ত, বাংলা ভিশন ও এনটিভিকে ধন্যবাদ সরাসরি প্রচার করার জন্য)। সারা দেশে যেভাবে গণবিস্ফোরণ হলো তাতে তাদের লজ্জা করা উচিত। যে সমস্ত দলের বাটি চালান দিলে হেফাজতের একটি থানার লোকের সমান হবে না, তাদের নিয়ে এত মাতামাতি করে লাভ নেই। ইনু-মেননরা এত লম্প-ঝম্প করে অথচ একাকি ভোট করলে ১০০০ ভোটও পায়না। এজন্য তাদের সাবধানে কথা বলা উচিত। অনেকে সেলুনে আশ্রয় নিচ্ছে। অতএব সাধু সাবধান! বাংলার মানুষ ধর্মপ্রাণ। বাম-রাম, পরগাছা কিছু সংগঠনের প্রতি ভর নয়, আসুন নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করি। কেননা সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।
বিষয়: রাজনীতি
১১৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন