@@ এ ভাবেই আমি তাকে জ্ঞান দিলাম মন্দ কর্ম ও অশ্লিলতা থেকে দূরে রাখার জন্য৷ নিশ্চয় সে ছিল আমার বিশুদ্ধ বান্দাদের একজন @@
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:২৫:৩৮ সকাল
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা ইউসুফ রুকু;-৩ আয়াত;-২১-২৯
কিশোর ইউসুফ বানিজ্য কাফেলার সাথে মিশর শহরে আনিত হলেন ও মিশরের তৎকালীন বাদশার এক উচ্চপদস্থ কর্মচারীর কাছে বিক্রীত হলেন৷
২১/وَقَالَ الَّذِي اشْتَرَاهُ مِن مِّصْرَ لاِمْرَأَتِهِ أَكْرِمِي مَثْوَاهُ عَسَى أَن يَنفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَدًا وَكَذَلِكَ مَكَّنِّا لِيُوسُفَ فِي الأَرْضِ وَلِنُعَلِّمَهُ مِن تَأْوِيلِ الأَحَادِيثِ وَاللّهُ غَالِبٌ عَلَى أَمْرِهِ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-আর মিশরের যে ব্যাক্তি তাকে খরিদ করে ছিল, সে তার স্ত্রীকে বলল; একে ভালভাবে রেখো, হয়তো সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্র রূপে গ্রহন করে নেব৷ এ ভাবে আমি ইউসুফকে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম৷ এবং এ জন্য যে তাকে বিষয়গুলির মর্ম অনুধাবনের পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষা দেই৷ আল্লাহ স্বীয় অভিপ্রেত কার্যে প্রবল৷ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা৷
# ইউসুফকে যিনি কিনলেন, তিনি সাধারণ কেউ নন৷ বাদশার উচ্চ পদস্থ এক জন কর্ম কর্তা৷ রাজ্যের নীতি নির্ধারণী বিষয়ে যেখানে জ্ঞানীগুনীদের আনাগোনা ও আলাপ আলোচনা হত৷ আল্লাহ সেখানে হজরত ইউসুফ আঃ কে সেসব বিষয়ে শিক্ষা দেবার অভিপ্রায়ে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করলেন৷
যিনি তাকে কিনলেন, তিনি বাড়ি নিয়ে তার স্ত্রীকে বললেন, কিশোরটিকে ভালভাবে রাখতে৷ সে ভবিষ্যতে তাদের ভাল দাম ফেরত দেবে অথবা তাকে নিজেদের সন্তান হিসেবেও রেখে দেওয়া যেতে পারে৷ হয়তোবা তারা নিঃসন্তান ছিলেন৷
২২/وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
অর্থ;-আর যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌঁছে গেল তখন আমি তাকে প্রজ্ঞা ও বুৎপত্তি দান করলাম৷ এ ভাবে আমি নেককারদের পুরষ্কৃত করে থাকি৷
# যখন ইউসুফ আঃ প্রাপ্ত বয়ষ্ক হলেন তখন আল্লাহ তাঁকে নবুওত দান করলেন৷
২৩/وَرَاوَدَتْهُ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتِهَا عَن نَّفْسِهِ وَغَلَّقَتِ الأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ قَالَ مَعَاذَ اللّهِ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ إِنَّهُ لاَ يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
অর্থ;-যে মহীলার ঘরে ইউসুফ ছিলেন সে তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজা গুলীবন্ধ করে দিল৷ সে বলল; তোমাকে বলছি, এদিকে এস৷ তিনি বললেন; আল্লাহ আমাকে রক্ষা করুন৷ নিশ্চয় তিনি আমার মালিক (মনিব), আমার থাকার সু বন্দবস্ত করেছেন৷ নিশ্চয় সীমা লঙ্ঘনকারীগন সফল হয়না৷
# উচ্চ ঘরের ঘরণী, দুশ্চরিত্রা রমণী, ইউসুফ আঃ কে কূ কর্মে ফুলানী দিতে লাগল ও কাছে যেতে হুকুম দিল৷ তখন তিনি আল্লাহ কাছে তাথেকে রেহাই চাইলেন ও যা বললেন তা দুভাবে নেওয়া যায়, (এক) তার মনিব তাকে সন্মান দিয়ে ভাল ভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছেন৷ (দুই) আল্লাহ তায়ালা তাকে এখানে সু প্রতিষ্ঠিত করেছেন, এমতাবস্থায় তার সাথে বেইমানী কেমন করে কেমন করে তিনি এমন গর্হিত কাজ করবেন!
২৪/وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ وَهَمَّ بِهَا لَوْلا أَن رَّأَى بُرْهَانَ رَبِّهِ كَذَلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاء إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ
অর্থ;-নিশ্চয় মহীলা তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল আর সেও তার প্রতি আসক্ত হত যদি না স্বীয় পালন কর্তার মহিমা অবলোকন করতো৷ এ ভাবেই আমি তাকে জ্ঞান দিলাম মন্দ কর্ম ও অশ্লিলতা থেকে দূরে রাখার জন্য৷ নিশ্চয় সে ছিল আমার বিশুদ্ধ বান্দাদের একজন৷
# মহীলা তার প্রতি আসক্ত হয়েই তাকে কূকর্মে ফুসলাচ্ছিল৷ এদিকে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত ইউসুফের জন্যও নিজেকে সংযত করা কঠিনও ছিল৷ তওরাতের বর্ণনায় পাওয়া যায়, ঐ সময় ইউসুফ আঃ আপন পিতা ইয়াকুব আঃ কে আঙ্গুল ইশারায় কূকর্ম হতে নিষেধ করার দৃশ্য দেওয়ালে দেখেছিলেন৷ যেহেতু কোরআনে কোথাও একে নাকচ করা হয়নি তাই বিশ্বাস করতে অসুবিধা নেই৷ এ ঘটনাকেই আল্লাহ তার মহিমা প্রদর্শন বলেছেন৷ আর এমন কৌশলেই আল্লাহ তার খাঁটি বান্দাদের গোনাহ থেকে রক্ষা করেন৷
২৫/وَاسُتَبَقَا الْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيصَهُ مِن دُبُرٍ وَأَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَى الْبَابِ قَالَتْ مَا جَزَاء مَنْ أَرَادَ بِأَهْلِكَ سُوَءًا إِلاَّ أَن يُسْجَنَ أَوْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থ;-তারা উভয়ে দৌড়িয়ে দরজার দিকে গেল এবং সে ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল৷ তারা উভয়ে মহীলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল৷ মহীলা বলল; যে ব্যাক্তি তোমার স্ত্রীর সাথে কূ কর্মের ইচ্ছে করে তাকে কারাগারে পাঠানো বা কোন যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি ছাড়া আর কি শাস্তি দেওয়া যেতে পারে?
# বাইরে বার হয়েই তারা গৃহ স্বামী বা মহীলার স্বামীকে দরজার বাইরে দেখেই মহীলা তার রূপ বদল করে ফেলল৷ নিজে অপরাধের শাস্তি হতে বাঁচার উপায় হিসেবে ইউসুফ আঃ এর উপর দোষ চাপিয়ে তাকে জেল বা কঠিন শাস্তির আবেদন জানালো৷
২৬/قَالَ هِيَ رَاوَدَتْنِي عَن نَّفْسِي وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ أَهْلِهَا إِن كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِن قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ الكَاذِبِين
অর্থ;-ইউসুফ বললেন; সেই আমাকে অসৎ কর্মে ফুসলিয়েছে৷ আর মহীলাটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া থাকে তবে মহীলাটি সত্য কথা বলছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী৷
২৭/وَإِنْ كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِن دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوَ مِن الصَّادِقِينَ
অর্থ;-আর যদি তার জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে মহীলা মিথ্যাবাদিনী এবং সে সত্যবাদী৷
২৮/فَلَمَّا رَأَى قَمِيصَهُ قُدَّ مِن دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُ مِن كَيْدِكُنَّ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ
অর্থ;-তারপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিকে ছেঁড়া, তিনি বললেন, নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনা৷ নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা অতি ভীষণ৷
# প্রত্যেক সমাজে সব সময়ই যেমন ভাল মন্দ মানুষ থাকে তেমনই থাকে ন্যায় নীতি বান মানুষও৷ মহীলা নিজেকে নিরপরাধ প্রমান করতে ইউসুফ আঃ এর উপর দোষ চাপালো, আবার ইউসুফ আঃ ও সত্য বলে নিজেকে প্রমান করতে চাইলেন৷ তখন শালিশ বৈঠক হল৷ মহীলারই কোন আপন লোক ন্যায়ত সাক্ষী দিলে মহীলাই দোষী সাব্যস্ত হল৷ পরের আয়াতে ফায়সালা আসছে৷
২৯/يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَـذَا وَاسْتَغْفِرِي لِذَنبِكِ إِنَّكِ كُنتِ مِنَ الْخَاطِئِينَ
অর্থ;-হে ইউসুফ, তুমি এ প্রসঙ্গ ছেড়ে দাও! আর হে নারী তুমি তোমার এ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর৷ অবশ্যই তুমি অপরাধী৷
# ন্যায় বিচার হল৷ ইউসুফ আঃ কে ব্যাপারটা চেপে যেতে বলা হল আর মহীলার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হল৷
বিষয়: বিবিধ
১১৭১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পীর সাহেব মুরীদবাড়ি গেছেন৷পরে আসবেন৷
শুকরিয়া হুজুর৷
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
নফসের প্রতারণা থেকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন।
জাযাকাল্লাহু খাইর ভাইজান। আপনার প্রোপিকের পিক টি দেখে খুব ভালো লাগলো, টেকনোলজিতে আপনার উত্তোরত্তর সাফল্য ও অগ্রগতির দোআ ও শুভকামনা রইলো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন