আওয়ামী সরকারের পতন দেখতে চান ? কিভাবে ?
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২০ আগস্ট, ২০১৪, ১১:০৬:৫৮ সকাল
বাংলাদেশে সম্ভবত অধিকাংশ মানুষ এখন আওয়ামী সরকারের পতন দেখতে আগ্রহী । কিন্তু কিভাবে এই পতন ত্বরান্বিত হতে পারে তা এখনো রহস্য । আসুন আওয়ামী সরকারকে টপল্ড করার মতো কিছু সম্ভাব্য অভিযোগ আলোচনা করি ।
একটা সরকার পতনের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অভিযোগ কোনটি ? দুর্নীতি ?
দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইউরোপে হয়তো প্রেসিডেন্ট/প্রাইম মিনিস্টারকে সহজেই অপসারণ করা যায়, কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে সরকার পতন করা সম্ভব নয় । এখানে দীর্ঘ নিষ্পেষনে সবাই কমবেশি দুর্নীতিকে মেনে নিতে অভ্যস্ত । সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা আদায় করতে গেলে মানুষ এখন ঘুষের টাকা নিজেরাই হিসাব করে রাখে । প্রশাসনকে পক্ষে রাখার কাজটি এক ধরণের যোগ্যতা বলেই মনে করা হয় । দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থার কল্পনাই যেনো মানুষকে আতংকিত করে বেশি । এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সাবেক সরকারি দলের কিছু ভোট কমিয়ে দেয়া যায় । যেমন এক এগারোতে বনের রাজা ওসমান গণি টাইপ কিছু রিপোর্ট বিএনপির ভোটে ধ্বস নামিয়েছে । ভারতের নির্বাচনে কংগ্রেসের দুর্নীতিকে পরাজয়ের কারণ হিসেবে অনেকে চিণ্হিত করেছেন । স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির এটা অন্যতম কারণ ছিলো । তবে দুর্নীতির অভিযোগ এনে কখনোই রেজিম পরিবর্তনের বিপ্লব সফল করা সম্ভব হয়নি ।
তাহলে সরকার পতনের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অভিযোগ কি ? ধর্মবিদ্বেষ ?
এটাও যদি কার্যকরী হতো তবে এতোদিনে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতো । সত্য কথা হলো- পৃথিবীতে এখন আর ধর্মকে খুব বেশি গুরুত্ব কেউ দেয়না । দেশকেন্দ্রিক জাতিয়তাবাদের চাপেই মানুষ বিব্রত । নিজেকে দেশপ্রেমিক প্রমাণের চেষ্টায় তাকে সর্বদা নিয়োজিত থাকতে হয় । ব্যক্তিগত ইমেজ রক্ষার কৌশল করতে হয় প্রতিনিয়ত । এজন্যই ধর্মের অবমাননা হলে মানুষ আজকাল অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে যে ওরা কিভাবে রিঅ্যাক্ট করে । তারপর নিজের কিছু বক্তব্য দিতে পারলেই নাটক শেষ । আওয়ামী লীগের ধর্মবিদ্বেষ তাদেরকে মানুষের মন থেকে অনেকটা সরিয়ে দিয়েছে এটা সত্য । কিন্তু এখনো দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী তাদের পেছনে রয়েছে । সরকার পতনের আন্দোলন তৈরির জন্য সরকারি দলের ধর্মবিদ্বেষ খুব একটা ফলপ্রসু হয়না ।
কী অভিযোগে সরকার পতনের আন্দোলন তীব্রতর হতে পারে ? মুক্তচিন্তায় হস্তক্ষেপ ?
যতো কথাই লোকে বলুক, গণমাধ্যমে সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ বা বাকস্বাধীনতা হরণের প্রতিবাদ টকশো-কলামেই সীমাবদ্ধ থাকে । এটা কখনোই সরকার পতনের আন্দোলন তৈরিতে যথেষ্ট নয় । এছাড়া মিডিয়ার উপর ব্যাক্তিগতভাবে মানুষ বিরক্ত । নাগরিকেরা নিজেরাও আজকাল মাপা মাপা কথা বলা শিখে ফেলেছে । কে কোন দলের/মতের/পথের লোক তা সহজে বুঝতে পারবেন না । অতএব এমন স্যাচুরেটেড সিচুয়েশন থেকে অর্কেস্ট্রেইটেড রেভ্যুলিউশন আশা করা ঠিক হবেনা । কেবল লোকদেখানো কিছু বিদেশী বিবৃতি লাভ করা যেতে পারে ।
তাহলে কি অভিযোগ আনা যায় সরকারের বিরুদ্ধে ? বেকারত্ব ?
এটি যদিও বেশ কিছু দেশে বিপ্লবের সূচনা করেছে, কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে কখনো বেকার থাকেনা । এখানে টাকার প্রয়োজনে মানুষ যে কোন কাজে যোগদান করে ফেলতে জানে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিকশা চালানোর উদাহরণ পর্যন্ত আছে এই সমাজে । কোন চাকরি না পেলে শ্রমিক হিসেবে দেশের বাইরে চলে যাবার একটা ঐতিহ্য আমাদের সভ্যতার অংশ । এখানে মধ্যপ্রাচ্যের মতো কোন বেকার যুবক নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে বসন্ত নিয়ে আসবে ভাবাই বাতুলতা । আর কিছু না হলেও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি নিয়ে যে ক্রাইম নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, বেকারদের জন্য ওটা অন্যতম অপশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছে । তারপরেও আওয়ামী উপদেষ্টারা এই ইস্যুটিকে বোধহয় সবচেয়ে বেশি ভয় পান । গত ৫ বছরে যে হারে অযোগ্য-অদক্ষ মানুষকে শুধু এলাকার ভিত্তি ধরে বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাতে বিরোধী মতাবলম্বীরাও বেকারত্বের অভিযোগ আনতে লজ্জা পাবে । এছাড়া মানুষের জন্য অবৈধ শিল্প-ব্যাবসা/অশ্লীল সংস্কৃতিচর্চা/হলুদ সাংবাদিকতা করে বেঁচে থাকার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাকে অস্বীকার করা যাবেনা । অতএব বেকারত্বের উদাহরণ দেখিয়ে এই উপমহাদেশে সরকার পতন করা সম্ভব নয় ।
তবে সরকার পতনের জন্য কোনটি যথার্থ অভিযোগ ? দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ? অস্থিতিশীল অর্থনীতি ? শেয়ারবাজার ধ্বস ?
মানুষের আয় বেড়েছে । না বাড়লেও মানুষ কোন একটা উপায় করে বাড়িয়ে নিচ্ছে । এখন আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি দেখিয়ে জনগণের সহানুভূতি পাওয়া যাবেনা । অর্থনীতির স্থিতিশীলতা চিন্তা করার মতো অবসর সময় এ জাতির হয়না । শেয়ারবাজারকে এখানে কেউ আয়ের একমাত্র উৎস বানায় না । অতএব যতোই বন্যা-খরা-দুর্ভিক্ষ শুরু হোক, আমাদের দেশের অর্থনীতি অচল করে দেয়া খুব সহজ নয় । আর এটাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক আন্দোলন তৈরি করাও সম্ভব নয় ।
তবে কি সবগুলো অভিযোগ একসাথে দেখিয়ে সরকার পতন সম্ভব ?
উপরোক্ত অভিযোগ গুলো জ্বালানীর মতো কাজ করতে পারে । তবে পাথরে পাথর ঠুকে আগে আগুন ধরাতে হবে । সেটা কিভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ গণ রয়েছেন । আমার অতো চিন্তায় কাজ কি !
বিষয়: রাজনীতি
১২৮৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দ্বিতীয়ত খালেদা জিয়া নিজেও....। তারেককে এত তাড়াতাড়ি দুনীতিতে আনা ঠিক হয়নি। ভেতরগত যে অবস্থা অযোগ্য অর্থর্ব পয়সাওয়ালাদের দাপটে শিক্ষিতরা একেবারে পেছনের কাতারে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন