চাঁদ দেখা নিয়ে আর কত লুকোচুরি খেলা? (রিপোস্ট)
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৩০:০৪ দুপুর
দীর্ঘদিনের অভিযোগ সৌদি সরকার যে বাড়াবাড়ি করছে তা হল, যদি শুক্রবারে হজ্জের তারিখ পরে যায় তখন তারা কৌশলে বৃহস্পতি বা শনিবারে নিয়ে যায়। ফলে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই।
আরবী হিসাবে সূর্য ডুবার সাথে সাথে নতুন দিন গণনা করা হয় এবং আরবী মাস সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে চাঁদের উপর। যেহেতু "চাঁদ ২৯ তারিখে উঠবে,নাকি ৩০ তারিখে?" বিষয়টি নিশ্চিত না, তাই ইংরেজির মত আরবি মাসের কোন ক্যালেন্ডার বানানো সম্ভব না। কিন্তু অভিযোগ করা হচ্ছে সৌদি সরকার গোপনে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী আরবী মাসের ক্যালেন্ডার তৈরী করেছে। তারা চাঁদ দেখার পরিবর্তে এই ক্যালেন্ডারকে মানদন্ড হিসেবে স্হাপন করে তা অনুসরণ করার জন্য সৌদি আরবের আলেমদের নির্দেশ দিয়েছে। তাই সৌদি দরবারী আলেম ও কর্মকর্তারা চাঁদ দেখার বিপরীতে সরকারী ইচ্ছানুযায়ী সাওম,ঈদ,হজ্জ্বের তারিখ নির্ধারণ করছেন ফলে প্রকৃত তারিখে মুসলিমরা সাওম, ঈদ ও হজ্জ্ব আদায় করতে পারছেননা।
মুসলিম দেশগুলোর বড় একটা অংশ এবং আমাদের দেশের ঢাকা, ফরিদপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা সহ কিছু এলাকার লোক এসব পালনের ব্যাপারে সৌদি আরবকে অনুসরণ করে থাকে এর ফলে এসব অঞ্চলের মুসলিমরা অনেকদিন ধরেই প্রতারিত হচ্ছেন।
#প্রথমেই বলে রাখি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে বলা হচ্ছে, সমগ্র পৃথবীর মুসলিমদের উচিত একই দিনে সাওম শুরু করা ও ঈদ পালন করা এর ফলে ভ্রাতৃত্ব বাড়বে। সীমিত ভাবে এটি কেউ কেউ অনুসরণও করছেন। কিন্তু সমগ্র পৃথিবীতে একসাথে-একদিনে ঈদ বা সাওম পালনের ব্যাপারে আলেমরা কোন ইজতিহাদ করেননি। কাজেই যারা এটি বলছেন তারা ইজতিহাদের ভুল অনুসরণ করছেন।
#আর চাঁদ দেখার ব্যপারে আলেমদের মধ্যে দুটি মত আছে। তা হল:
প্রথম অভিমত: চাঁদ দেখে তারিখ ঠিক রেখে ঈদ করা:
আলেমরা যে বিষয়ে ইজতিহাদ করেছেন সেটি হল: চাঁদ দেখে একই তারিখে সাওম-ঈদ পালন করতে হবে। অর্থাৎ দিন নয় বরং, তারিখ ঠিক রাখার কথা তারা বলেছেন। তারিখ ঠিক রেখে এক দিনে ঈদ হতেও পারে অথবা নাও হতে পারে কিন্তু তারিখ এলোমেলো হবেনা। ২৯ দিন অবশ্যই অতিবাহিত করতে হবে।
#যেমন উদাহরণ দেয়া যায়: দক্ষিন আমেরিকার কোন দেশ চিলিতে ২৯ টি রোজা পূর্ণ করার পর সেখানে চাঁদ দেখা গেল এবং সে সংবাদ বাংলাদেশে দ্রুত পৌছালো এবং সেটি সঠিক বলে নিশ্চিতও হওয়া গেল। বাংলাদেশে তখন সকাল বেলা কাজেই সেই চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ঈদ উদযাপন সম্ভব কিন্তু বাংলাদেশে তখনও ২৯ টি রমজান পূর্ণ করা হয়নি হয়েছে ২৮ টি, কাজেই ঈদ পালন করা যাবেনা বরং ২৯ টি সাওম পূর্ণ করতে হবে। তবে চিলিতে যেহেতু চাঁদ দেখা গেছে ও সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে সেহেতু বাংলাদেশে সূর্য ডুবার সাথে সাথেই সে দিনকে শাওয়ালের ১ তারিখ ধরে নিয়ে পরেরদিন সকালে ঈদ উদযাপন করা হবে অর্থাৎ চিলির একদিন পর বাংলাদেশে ঈদ উদযাপিত হবে। এক্ষেত্রে "বাংলাদেশে চাঁদ দেখা গেল কি গেলনা" তা বিবেচ্য হবেনা কারণ চাঁদ চিলিতে দেখা গেছে।
সমগ্র পৃথিবীতে চাঁদ দেখতে হবে এ কথাটি সঠিক না বরং পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে চাঁদ দেখা গেল এবং সেই সংবাদ যদি সবজায়গায় পৌছায় এবং যাচাই বাছাই করে যদি তার সত্যতা পাওয়া যায়, তবে তার ভিত্তিতেই তারিখ ঠিক রেখে অর্থাৎ শাওয়ালের ১ তারিখে সর্বত্র ঈদ পালন করতে হবে। এখানে তারিখ ঠিক রাখা প্রধান শর্ত, একসাথে বা একইদিনে না। অর্থাৎ সারা পৃথিবীর সবজায়গাতেই আগে ২৯ টি রোজা সম্পূর্ণ করতে হবে এরপর চাঁদ দেখার খবর সংগ্রহের প্রশ্ন আসবে। পৃথিবীর যেকোন জায়গায় চাঁদ আগে দেখা গেলে, তা যদি সত্যি হয় তবে তার ভিত্তিতে তারিখ ঠিক রেখে সমগ্র পৃথিবীতে সময়ের ব্যাবধান অনুযায়ী আগে বা পরে বা একসাথে সাওম-ঈদ পালন করতে হবে। আমরা আগে ২৯টি সাওম পূর্ণ করব এরপর খবর নিব পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গিয়েছে কিনা? যদি দেখা যায় তবে সূর্য ডুবলে আমরা সেদিনটিকে পরবর্তী মাসের ১ তারিখ ধরে নিয়ে ঈদ পালন করব আর যদি কোথাও চাঁদ দেখা না যায় তখন ৩০ টি সাওম পূর্ণ করব।
দ্বিতীয় অভিমত : চাঁদ স্হানীয়ভাবে দেখে ঈদ করা
এই ইজতিহাদকে প্রমান হিসেবে উপস্হাপন করে আমাদের দেশের সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাঁদ দেখে সাওম,ঈদুল ফিতর,ঈদুল আযহা ইত্যাদি পালনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করে। রাষ্ঠ্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই দায়িত্বগুলো পালন করে থাকে সারা দেশে চাঁদ দেখা কমিটি গঠন করে। ঢাকায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি থাকে যেখানে উপস্হিত থাকেন ধর্মমন্ত্রী,বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব,সরকারী আনূকুল্যে থাকা আলেম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্হ কর্মকর্তারা। এছাড়া সারা দেশের জেলা শহর গুলোতেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্হানীয় চাঁদ দেখা কমিটি গঠন করে থাকে। সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত জানায়। এই সিন্ধান্তের ভিত্তিতেই রোজা-ঈদ ইত্যাদি পালিত হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হল, স্হানীয় বলতে কি এমন কোন ভৌগলিক অবস্হানকে বোঝানো হয়েছে, যার রয়েছে আলাদা ভূখন্ড, বর্ডার, পতাকা বা সহজ ভাষায় পৃথক কোন স্বাধীনদেশের ভূখন্ড?
নাহ! মোটেও ব্যাপারটি তেমন ছিলনা। স্হানীয় বলতে বৃহৎ এলাকা বোঝায় যার সাথে সময়ের ব্যাবধান, ভৌগলিক অবস্হান ও আবহাওয়া কাছাকাছি। যেমন: উপমহাদেশ একটি স্হানীয় এলাকা, মধ্যপ্রাচ্য একটি স্হানীয় অঞ্চল। এটাকেই মূলত আলেমরা স্হানীয় এলাকা বুঝিয়েছেন। কাজেই যদি ভারতে চাঁদ দেখা যায় এবং সেই সংবাদ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে পৌছায় ও সত্য বলে প্রমাণিত হয় তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সেটাকে "স্হানীয়ভাবে চাঁদ দেখা গেছে" বলে ধরে নিবে ও সেই মোতাবেক সাওম-ঈদ পালন করবে। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে কি ভারত বা পাকিস্তানের কোন সংবাদের মূল্যায়ন আছে? আবার বাংলাদেশের চাঁদ দেখা কমিটিও বেশ কয়েকবার বিতর্কিত হয়েছে তাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মানুষকে সাওম ও ঈদ পালনের অনুমতি দিয়ে। এর ফলে মানুষ ভুলের মধ্যে থেকেই সঠিক/বেঠিক দিনে সাওম-ঈদের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলো পালন করছে। আমরা জানি, ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। কিন্তু চাঁদ দেখা নিয়ে এমন ধুম্রজাল সৃষ্টির জন্য মানুষ যদি হারাম কাজে লিপ্ত হয় তার জন্য কে দায়ী হবে?
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব সুন্দর একটি বিষয়ের অবতারনা করাতে আপনাকে অভিনন্দন!
লেখাটি অনেক ভালো লাগল। কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
শুভেচ্ছা রইলো।
আমি তো ভাবছি, সরকার দূর্গাপূজার জন্য ঈদ পিছাইছে !!!
অধিকাংশ মাশাইখ-ই এমত পোষণ করেছেন । এমনকি এক দেশের মানুষ ৩০টি রোযা রাখল, অন্য দেশের মানুষ রোযা রাখল ২৯টি, তাহলে অন্যদেরকে একটি রোযা কাযা করতে হবে (তাবয়ীনুল হাকায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-১৬৪/১৬৫)
অনুরুপ ভাবে বলা যায় কোন দেশে ২৯ রোজার পর চাঁদ দেখা গেলে অন্য দেশে ২৮ রোজা হলেও একই দিনে ঈদ করে পরে ১টি রোজা কাজা করবে.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,' রমযানের আগেই রোযা রেখো না। চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ছাড়। যদি তোমাদের ও চাঁদের মাঝখানে মেঘের আড়াল হয়ে যায়, তবে (শা’বান মাস) ৩০ দিন পূর্ণ কর।'(তিরমিযী) কাজেই এখানে ভিত্তি মানুষ না, বরং ভিত্তি হল, চাঁদ দেখা ও তার সত্যতা যাচাই করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফিলিস্তিনে যুদ্ধ শুরু হল এমন সময়ে তাদের পক্ষে চাঁদের খবর নিরুপণ করা সম্ভব না তাই তারা ৩০ টি রোজা পূর্ণ করল। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে যুদ্ধ শেষ হলে তারা খবর নিবে কোথাও আগে চাঁদ উঠেছিল কিনা? বা তারা ৩০ টি পূর্ণ করে সেটি ঠিক আছে কিনা? যদি দেখা যায় কোথাও আগে চাঁদ দেখা গিয়েছে অর্থাৎ রোজা ২৯_শে শেষ হয়েছে তখন তারা এ হিসাবে আরবী মাসের তারিখ ঠিক করে নিবে।
আপনার ২য় মতটি আপনার নিজস্ব মতামত তাই সম্পূর্ণই অগ্রহণযোগ্য এবং তার উত্তর আমার লেখাতেই দেয়া আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন