হিন্দুদের সাথে আমাদের আচরণ
লিখেছেন লিখেছেন আবু মাঈশা ০৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৮:০৮ সকাল
যে ভাইয়েরা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের পর জামাত শিবিরের ভাইদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে মনে করেন অথবা বিভিন্ন ইংগিতে বুঝাতে চাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি... সেই রামু থেকে শুরু করে আজকের অভয়নগর, সাতক্ষীরা কিংবা ঠাকুর গাঁও কোথাও তো এখন পর্যন্ত কোন জামাত শিবিরের কোন কর্মিকে সরাসরি হাতেনাতে কিংবা তথ্য প্রমান সহ ধরা খেতে দেখলাম না। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত যারা এসব ঘটনা ঘটাতে গিয়ে সরাসরি জনতা কিংবা পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছে তাদের সিংহভাগ আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার খুব আশ্চর্য লাগে যে ঐ ভাইগুলিই আবার এ নিয়ে কোন মাথা ঘামায় না। আমি বিশ্বাস করি যারা হিন্দুদের বাড়ীতে হামলা চালায় তারা কখনো প্রকৃত মুসলমান হতে পারেনা। আমাদের ফ্যামিলিকে আমাদের এলাকায় জামাতের ফ্যামিলি হিসেবেই সবাই জানে। আমাদের আচরণ হিন্দুদের সাথে কি রকম তা একটি ছোট্র কাহিনী থেকেই বুঝতে পারবেন আশা রাখি।
২০১১ আমি তখন দেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঢাকায় গ্রামের এক ছেলের বিয়েতে আমার বড় ভাই আমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো দেখতো চিনতে পারিস কিনা। আমি অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। প্রায় দশ বছর দেশের বাইরে থাকি কি করে চিনবো। ভদ্রলোক দেখলাম আমার দিক বড় বড় চোঁক করে তাকিয়ে আছে। অবশেষে উনি নিজেই পরিচয় দিলেন। আমি তোমার মানিকদা। তোমার ভাই আর আমি এক ক্লাসে পড়তাম। মনে আছে তুমি তখন অনেক ছোট। আমার বাবা মাছ ধরতেন। গাবরা ছিলেন। তোমার আব্বার অবদান কোনদিন ভুলতে পারবোনা....আরো অনেক কিছুই বললেন। এখন আমি একজন এডভোকেট সুপ্রীম কোর্ট এ প্রেকটিস করি... আমার তখন এক এক সব কিছু চোঁখের সামনে ভাসতে লাগলো। আমার জন্ম এমন একটি গ্রামে যেখানে ১২০০+ হিন্দু বসবাস করে। আমার বাবা ছোটখাট একজন চাউল ব্যাবসায়ী ছিলেন। সকালে বাজারে গেলে সবার আগে যে দৃশ্যট আমার চোঁখে ধরা পড়তো তা ছিলো কিছু হিন্দু গাবরা (হিন্দু বলতে তখন যারা গরীব শ্রেনী, আর সাউ বলতে ধনী শ্রেনীকে বুঝতাম) লোক আমার বাবার কাস্টমার ছিলো, যাদের একমাত্র ইনকাম ছিলো মাছ ধরা আর পাতিল বানানো। তাদেরকে দেখতাম একটা গামছা পড়ে কাঁপতে কাপঁতে আমার বাবার কাছে চাউল নিতে আসতো। সারারাত মিলে যা মাছ ধরতো তা দিয়ে তাদের সংসার চলতো না। একমাত্র আমার বাবা ই ছিলেন ওদের ভরসা। কারন বাবা ওদের কে বাঁকীতে চাউল দিতেন। মাঝে মাঝে বাবাকে বলতে শুনতাম 'কিরে গৌরাঙ্গ বাকী টাকা কবে দিবি... গৌরাঙ্গ হাসি দিয়ে বলতো...নিয়েন মুনশী সাব নিয়েন। সেই অনেক নেয়াই কখনো হয়নি। যার প্রমান আমরা পরে শুনেছি। আমার মা বলতেন আব্বার পূজি ২৫০০০ টাকা হলে বিক্রি নাকি ২০০০০ টাকা হতো। আর আমার নানীর কোন ছেলে সন্তান না থাকায় প্রায়ই নানি জমি বিক্রি করে বাবাকে টাকা দিতেন। বাবার মৃত্যুর পর নাকি ওরা অনেক কেদেছে। সে যাই হোক এমন ই একটি ফ্যামিলি থেকে মানিক ভাই আজ ঢাকা সুপ্রীম কোর্ট এর একজন আইনজীবি। আমি আমার আবেগ কিছুতেই সামলাতে পারলাম না। জড়িয়ে ধরলাম মানিকদাকে। সেদিন সত্যিই আমার খুব ভালো লেগেছিলো। কেন ভালো লেগেছিলো তা জানিনা তবে এতটুকু জানি এখনো আমরা আমাদের গ্রামে কোন জেয়াফতের(গ্রাম্য ভাষায় কোন বড় ধরনের খানার আয়োজন) আয়োজন করলে হিন্দুদের জন্য আলাদা খাশি কিংবা মুরগীর ব্যাবস্থা করি। আর এই হিন্দুরা ও আমাদের কে অনেক ভালোবাসে সেটা একবার এক ঘটনার পর বুঝতে পেরেছি। গত টার্মে আমার ভাই এলাকার চেয়ারম্যান ছিলো। ভোটের সময় সেই হিন্দু ওয়ার্ড থেকে নাকি আমার ভাইয়ের বিপক্ষ প্রার্থী মাত্র ১১ ভোট পেয়েছিলো। যদিও আমরা এলাকায় কট্রর ইসলামপন্থী ফ্যামিলি হিসেবেই পরিচিত তারপর ও হিন্দুদের সাথে আমাদের এই আচরন সারা জীবনই ছিলো আর ভবিষ্যতে ও থাকবে। আমাদের এলাকার সাবেক এবং বর্তমান চেয়ারম্যানরা আওয়ামী পন্থী। তারা দুজনই যে বাড়ীতে বসবাস করেন সেটি হিন্দুদের যায়গা। কি করে তারা এই বাড়ির মালিক হয়েছেন তা আমি জানিনা। তবে এতটুকু জানি চেয়ারম্যান হবার আগে তারা তাদের পৈতৃক ভিটাতেই ছিলেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন