@%%@> অবশেষে বিয়ে <@^^@
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল গাফফার ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৪২:১৫ দুপুর
অবশেষে বিয়ে......।।
আনোয়ার সাহেবের ছোট ছেলে কমল দীর্ঘ দিন প্রবাসে ছিলেন ,অসচ্ছল পরিবারকে সচল করার জন্য প্রবাস জীবনে প্রতি ক্ষেতেই সফল সে । হঠাৎ বিয়ে নামক পোকাটা মাথায় ঢুকে । তাই দেশের যাবার আগে স্বর্ণলংকার কেনাকাটা করে তার এক বন্ধু দেশে যাবার সময় পাঠিয়েদেয় । পরিবারের সবাই বুঝতে পারে এবং খুবি চিন্তায় পড়ে ,বিয়ের পরে যদি আমাদের টাকা পয়সা না দেয়! তাই আর দেশে কেউ তাগা দেয় না । প্রবাসে অবস্থান কালেই কমলের সাথে তার পার্শ্বতির থানার এক ডিগ্রীধারী মেয়ের প্রেমে পড়ে কমল, মেয়েটিকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করে ছবি চায়। মেয়েটি ছবি দিতে অনীহা তাই বাধ্য হয়েই কমলের বাবা-মাকে মেয়েটিকে দেখার জন্য অনুরোধ করলে তার বাবা-মা মেয়েটিকে দেখে আসেন ।
কমল খুবি আগ্রহ নিয়ে বাবা-মার কাছে জানতে চায় , বাবা-মার অনাগ্রহ পছন্দ হয়নি সম্ভব না স্বাব জানিয়েদেন , আচ্ছা ঠিকাছে আমি দেশে আসার আগ পর্যন্ত আপনারা আরো দেখুন , দেশে আসার পরে ফাইনাল ডিসিশন নিব । মাকে জিজ্ঞাসা করতেই ,বাবা তুমি কোন চিন্তা করোনা দেশে মেয়ের অভাব নেই তুমি আসো তার পর ১০ দেখে একটা করবা ।
অবশেষে দেশে যাবার সময় ঘুনিয়ে এলো দিনক্ষণ জানিয়ে দিলো কমল । ছুটি মাএ ৪ মাস তাও আবার এক মাস অফিসিয়াল কারণে এখানেই শেষ, ৩ মাসের ছুটি নিয়ে আকাশ চুম্বি স্বপ্ন নিয়ে দেশে পৌছে কমল । বাড়িতে পৌছার পর কমল খুবি হতাস হন ।কারণ। বাড়ির কাজ এখনো শেষ হয়নি,অগোছালো বাড়ি এমন পরিবেশে বিয়া করাটা উপযুক্ত নয় ,এই নিয়ে কারো আক্ষেপও নেই।সবার কথা বিয়ের বয়স তো আর শেষ হয়ে যায়নি, আর এক চক্কর ঘুরে এসে বিয়ে করো । এগুলো শুনার পর পরিবারের সবার প্রতি তার সন্দেহ আরো প্রকট হয় ।
কমলের শেষ সিদ্ধান্ত বিয়ে করার জন্য আসা বিয়ে না করলে আমি এই মাসের মধ্য চলে যাব । কমলের এমন সিদ্ধান্ত শুনার পর আনোয়ার সাহেব নড়েচড়ে বসেন । সময় মাএ এই মাসের ১৫ দিন কমলের কথার কোন হেরফের হয়না । এখন আনোয়ার সাহেব হাটে-ঘাটে -পথে যাকেই দেখেন তাকেই বলেন আমার ছেলেরে একটা বিয়ে করাই দাও । এই পাড়ার ওই পাড়ার নামীদামী ঘটক সন্ধান করেন । বাবার একটাই কথা বাড়ি থেকে কোথাও যাচ্ছনে ঘটক আসবে তকে দেখতে। কত ঘটক কমলের ছবি নিয়ে এই যে গেছে আর হুদিস নেই ।
কমলের টাকা পয়সার কোন অভাব নেই ব্যাংকে লুকিয়ে একটা একাউন্ট করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রেখে ছিল । দেশে পৌছার পর থেকেই কমল মটক সাইকেল কেনার জন্য অস্থির হয় , আনোয়ার সাহেব চিন্তা করিসনা আজকাল জামানায় বিয়ে-শাদীতে শুশুর মটর সাইকেল দিবে ,কমলের কথা সে যৌতুক নিয়ে বিয়া করবেনা । আনোয়ার সাহেব বুঝান দিনকাল ভাল না এত সোনাদানা দিয়ে বিয়ে করবি খালি-খালি কিছু না নিলে বউ যদি চলে যায় তখন সব যাবে । আনোয়ার সাহেবের কথার কিছুটা যুক্তি আছে কারণ আমাদের এলাকায় এক প্রবাসী ছুটি কম তাই তাড়াহুড়া করে বিয়ে করে, মেয়ে রাজি ছিলনা মেয়ের বাবা-মার ইচ্ছায় বিয়েতে সম্মতি দেয় , বিয়ের ৩ দিন পরে সোনাদানা নিয়ে মেয়েটি ভেগে যায় ।
যাই হোক, আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো না , আর বিয়ে আমি আমার আসে পাশে গ্রামের মধ্য থেকেই করব । একাধিক মেয়ে দেখার পরেও আনোয়ার সাহেবেরই পছন্দ হচ্ছেনা , লক্ষ টাকার যৌতুক পাওয়া যাবে তাতে কি ?তার ছেলের বউ হওয়া চাই শতে এক ! কমলের বড় ভাইকে নিয়ে কয়েকটি মেয়ে দেখেছে কমল পছন্দ হয়েছে , মেয়ে কলেজে ইন্টামেডিয়েত প্রথম বছর । আনোয়ার সাহেবের সম্মতি মেলছেনা তাই হতাশ কমল । অবশেষে কমলের মামার বাড়ি থেকে একজন সমন্ধ নিয়ে আসলো ।
রমজান মাস হওয়ায় একি দিনে একাধিক মেয়ে দেখা হলো , আনোয়ার সাহেবের পছন্দ হচ্ছে তো অন্য কারো পছন্দ হচ্ছেনা ।দিন ঘুনিয়ে আসছে , কমল পার্শ্ববর্তি থানার মেয়েটি লুকিয়ে একদিন দেখতে গেল , মেয়েটি তেমন সুদর্শন না হওয়ায় , মেয়েটিকে কিছু গিফট কিনে নেওয়ার জন্য কিছু টাকা দিয়ে ,হতাশ হয়ে ফিরে আসে ।
বউ দেখা থেমে নেই , তার বড় দুই ভাই একি গ্রামের কমলের তেমন পরিচিত নয় , সাদা-মাটা পরিবারের ক্লাস লাইন পড়ুয়া মেয়েকে পছন্দ করে । সকালে কমল ও তার মা মেয়েটিকে দেখতে যান , মেয়েটি প্রাইভিটে থাকায় আস্তে কিছুটা বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত মেয়েকে দেখে কমলের পছন্দ হয় । কয়েকটা ছবিও তুলে কমল । সাদা-মাটা পরিবারের মেয়ে ,মেয়েকে বিয়ে দেবার মত পুস্তুতিও ছিলনা মেয়ের বাবার । মেয়েও নাবালিকা , কমলের পক্ষ থেকে তার মেয়েকে সাদা-মাটা ভাবেই সাজিয়ে নিয়ে যাবেন । আশ্বাস দিলে রাজী হন ।
ঘটক যেহেতু পরিচিত ,সময় স্বল্পতায় মেয়ের বেপারে আর যাচাই-বাচাই করার প্রয়োজন মনে হয়নি । আজ বুধবার সন্ধ্যায় কনের বাড়ি ইফতার শেষে বাকি সব কাজ সম্পূর্ণ করা হবে , যাদেরকে দাওয়াত দেওয়ার দরকার ঝটপট সময় জানিয়ে দেওয়া হল । বাকি কেনা কাটা , আজ হাটের দিন তার মধ্য আবার বৃষ্টি হচ্ছে!! মুষলধারার থেমে থেমে প্রচন্ড বৃষ্টি , কনের কাপড়-চোপড় কিনা কাটা শেষে সেলাইয়ের কাজ চলছে । বড় ভাই যাবতীয় ক্সমেটিক কিনা প্রায় শেষের পথে , এরই মাঝে ফোন বেজে উঠলো অপরিচিত নাম্বার , রিসিফ করে হ্যালো কে?
আব্দুর রহমান কাকা ? না আমি আব্দুর রহমানের ছোট ভাই কমল , ওহ ! কাকা আমি মামুন বলছি , হুম চিনছি বলো কি বেপার ?
শুনলাম আপনার আজকে বিয়ে ? হা ঠিকই শুনেছ , কেন?
মেয়ের নাম কি সুমা ? আমাদের গ্রামের হাইস্কুলে ক্লাস লাইনে পড়ে ?
হা , সব ঠিক আছে , কেন ও কি হয়েছে !
আপনাদের এই বিয়ে মনে হয় আজ হবেনা । কেন?
সুমি সাথে একটা ছেলের প্রেম ছিল ছেলেটি আমার পরিচিত ,আপনি আমার কাকা লাগেন বিধায় আমাকে জানিয়েছে , সে নাকি কোনও ভাবেই এই বিয়ে হতে দিবেনা , সে আপনার সাথে সামনা সামনি কথা বলতে চায় ।
কমলের যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । আচ্ছা ছেলেটি কোথায় এখন আমাকে জানাও ।
কনের পক্ষ থেকে কমলের সাথে একজন ছিলেন ,উনিও সব শুনে হতবিম্ব হয়ে ফোনে মেয়ের বাবা ভাইদের জানিয়ে দিলেন । এদিকে কনের বাবাও কিনে কাটা সহ দাওয়াতের কাজ সেরে ফেলেছেন । কমল ভাইকে ফোনে সব জানিয়ে দিল । এখন ছেলের মুখাপেক্ষী হওয়া । ফোন করে যে জানিয়ে ছিল তাকে নিয়ে ছেলে গুলোর সামনে হাজির । সাথে সাথেই মেয়ের বাবা , ভাই! কি এক ইলাহি কাণ্ড ! ছেলে গুলো সম্ভবত সবাই কলেজে ইন্টারে পড়ে , কমলের কাছে থাকা মোবাইল দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে রাখে । ছেলের পরিচয় অজানা , কনের বাবা আর ভাই এসে এলোপাথাড়ি কিল ঘুসি , একজন বলছে একে বেধে বাড়ি নিয়ে চল , ছেলে গুলো কমলের কাছে মাফ চাচ্ছে ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে , আমাকে মাফ করেদেন । কমল> আরে ভাই আমি মাফ করার কে? আমি তো বিয়াই করি নাই , আচ্ছা ঠিক আছে , দেখছি । কমলের ভাইও কম যায়না , ভয়ংকর ভয়ংকর হুমকি দিচ্ছে , কনের বাবার একটা কথা শুনে কমলের হযবরল লেগে গেলো , কনের বাবা বলছেন, আজ তোর জন্য আমার মেয়ের বিয়ে না হলে তোর মায়ের ভাত আমি উঠিয়ে ছাড়ব , সাথে অকথ্য ভাষায় গালাগালি , পরে জানা গেলো কনের আপন মামাতো ভাই ।
এত কিছু বাড়ির কেউ জানেনা , সবাই বাড়ি ফিরছে , আসার পথে কিছু পথ কাচা তাই সাবধানোতার শর্তেও পিছন থেকে মটর বাইক সিলিপ খেয়ে দুই জনের অবস্থা কাহিল , আগের বাইক পিছনে খেয়াল করতেই কনের বাবা, ভাই সহ কর্দমাক্ত রাস্তায় পড়ে অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরে , কমল ও তার পরিবার বুঝে উঠতে পাচ্ছেন না কি করা যায় , কনের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই , বরের পরিবারের সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত । এরই ফাকে কমলের বড় ভাই আর ভাবী ঘটনার সত্যতা জানতে কনের সাথে সরাসরি কথা বলে । কনের কারো সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিলনা স্বাব স্বাব জানিয়ে দেয় । ইফতারের বাকি আর মাএ ১ ঘণ্টা , বিয়ে না হলে দাওয়াতী মেহবানদের সামনে অপমানিত হতে হবে ,প্রবাসী কমল সময়ের কাছে বাঁধা দিক কূল না পেয়ে বিয়ে আজকের নির্ধারিত সময়েই করার সিদ্ধান্ত নেয় ।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৫৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রবাসীরা পরিবারের চিন্তা করতে করতে নিজের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করেন অথচ প্রবাসী ব্যক্তির জন্য তার পরিবার বৈরী আচরণ করে থাকে যা প্রবাসীর মনকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।
এই লেখাটি প্রবাসীর অভিভাবকগনের নজরে আসলে ভালো হয়।
যাই হোক অবশেষে বিয়েটি হলো। ধন্যবাদ।
একটুও কৃতজ্ঞতা বোধ থাকতো তাহলে কমলের বিয়ে নামক কালেমাটি পড়তে এত প্রতিবন্ধীকতা আসতো না । প্রবাসীদের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই বদলাতে হবে ।
পরিবারের মানুষগুলোকা দ্বীন/ইসলাম ও নৈতিকতার জ্ঞান দেয়ার বিষয়টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও শেষরক্ষা হবে না- না দুনিয়াতে, আর না আখেরাত!!
প্রবাসীরা এ কথাটি যত শীঘ্র বুঝবেন ও আমলে নিবেন ততই বিপদমুক্তির দিকে আগাবেন!!
সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া, জাযাকাল্লাহ
এখনো তা-ই আছি
দোয়া করি
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
এই রকম বাস্তব ঘটনা গ্রামে খুব বেশী হয়, এ ধরনের গনসচেতনতা মুলক আরো লেখা উপহার দিবেন এটাই প্রত্যাশা। অসংখ্য ধন্যবাদ।
এমন আবালের মত কাজ করার কোন মানে নেই! বিয়ে করবে, ১৫দিন পর চলে যাবে, আর বউ এদিকে যোউবন জ্বালা সহ্য করতে না পেরে.।.।.।। এই সীতার যুগ কি এখন আছে নাকি!
গল্পের শেষটা আরো একটু সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা যেত বলে মনে করি। যাক সবমিলিয়ে ভালই হয়েছে।
এইভাবে কাউকে বিয়ে করতে দেখলে বাধা দেয়ার অনুরোধ রইল। এমন বিচক্ষণহীন সিদ্ধান্ত বা বিয়ে দাম্পত্য জীবনকে দূর্বিষসহ করে তুলতে পারে।
আপনি লেখছেন বিয়ে করবে, ১৫দিন পর চলে যাবে, আর বউ এদিকে যোউবন জ্বালা সহ্য করতে না পেরে.।.।.।। এই সীতার যুগ কি এখন আছে নাকি! গল্পের কোন জায়গায় বলা হয়নাই বিয়ে করার ১৫ দিন পর চলে যাবে বরং বলা হয়েছে ১৫ দিনের আল্টিমেডাম এর মধ্য বিয়ে না হলে কমল চলে যাবে যাতে করে সবাই কমলের গুরুত্ব উপলুব্ধি করতে পারে । এইভাবে কাউকে বিয়ে করতে দেখলে বাধা দেয়ার অনুরোধ রইল। গল্পের মূল বিষয়টির কিন্তু এটা প্রবাসী কমল কিন্তু এখাবে বিয়ে করতে চায়নি তাকে এভাবে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছে। কেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন