অনাকাংখিত বিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল গাফফার ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:২২:৪৬ রাত
গ্রামের নাম আলাইপার অবহিলিত এই গ্রামের মেয়ে সুলতানা , নিজ গ্রামের স্কুলে -এবার ক্লাস এইটে । হঠাৎ এই স্কুলেরই উপর ক্লাসের ছাএ বকাটে রবিন সুলতানার প্রেমে পড়ে , সারাক্ষণ সুলতানা পিছনে পিছনে ঘুরঘুর করতে থাকে পথে ঘাটে এত বেশী উত্যক্ত করা শুরু করে বাধ্য হয়ে সুলতানার বাবা স্কুল কৃতপক্ষে জানান , তার বাবা মেম্বার সমাজে তার অনেক প্রভাব কাংক্ষিত কোন ফল না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে সুলতানার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেদেন । বিকল্প বাসায় দুইজন প্রাইভেট টিচার রেখে সিদ্ধান্ত নেন শুধু পরীক্ষার সময় স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিবে ।
সুলতানাও এমনি চেয়ে ছিল, এই বয়সে প্রেম প্রেম খেলায় সেও মাত্তে চায়নি। তার স্বপ্ন লেখা -পড়া করে সে বাপ-মার মুখে হাসি ফুটাবে । রবিন কয়েক দিনের মাথায় জানতে পারে সুলতানার বাবা তার স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে । অবশেষে রবিন সুলতানাদের বাসার সামনে সারাক্ষণ অপেক্ষায় থাকে , মাঝে মধ্য লোক মারফতে প্রেম নিবেদন লেটার পাঠায় । মাঝে মাঝে সুলতানার নাম ধরেও ডাকাডাকি করে ।
কালাম সাহেবের দুই ছেলে প্রবাসে থাকে বড় মেয়ে তার স্বামীর সাথে সদরে, মাঝে মধ্য আসে তাও আবার এসেও থাকেনা ছেলে -মেয়ের স্কুল খোলা । কালাম সাহেবের দুঃখ সুখের কথা শুনার যেন কেউ নেই , বড় ছেলে দেশে আসবে আসবে বলে আজ ছয় মাস আশার কোন নাম গন্ধ নেই । কালাম সাহেবের কোনও কিছুতেই কম নেই তার পরের কেন ছেলেরা ! আমি মারা গেলেত সবি তোদের , কালাম সাহেব আক্ষেপ করে শেষ বয়সে কি মান-সম্মান নিয়ে কি মরতে পারব।
মেম্বার ছেলে যে ভাব করছে তাতে কালাম সাহেব মান-সন্মান এর ভয় আর মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে সংকিত হয়ে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ।
কিন্তু মেয়ে এখনো বিয়ের নায়েক হয়নি এত ছোট মেয়ে বিয়ে দিলে সমাজ কি বলবে, এ ছাড়া আইনেও বাল্য বিবাহ কঠোর ভাবে নিষেধ , কালাম সাহেব উভয় সঙ্কটে দিক-বেদিক না পেয়ে বড় মেয়ে আর জামাইকে জরুরী তলব করেন ।হটাৎ বাবার জরুরী তলব দেরি না করে দুই জনেই ছুটে আছেন ।
বাবার মুখটা কেন যেন মলিন মলিন লাগছে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে মুখটা কেন জানি ফেঁকাসে ফেঁকাসে মনে হচ্ছে , কারণ কি !মা মারা গেছেন সেই কবে এত বছর পর বাবাকে খুবি চিন্তিত চিন্তিত মনে হচ্ছে , নামাজ শেষ করে সবার উপস্থিতে কালাম সাহেব ,আমি বুড়া মানুষ কখন কি হয় বলাত যায়না ! আমি সুলতানার বিয়েটা দিয়ে চিন্তা মুক্ত হতে চাই , একথা শুনেই বড় মেয়ে আকাশ থেকে পড়ল , রেগে বাবা এই কথা বলার জন্যই কি ডেকেছ ?নিরুপায় কালাম সাহেব হা !
সব শেষে কালাম সাহেব ব্যাখ্যা করেন এই মূহুর্তে সুলতানাকে বিয়ে না দিলে বখাটে রবিন কখন কি ঘটায় ।
নিরচুপ কারো কোন প্রতিক্রিয়া নেই ! কালাম সাহেবের জামাই আসমল হোসেন মুখ খুলেন ওর জন্য পাএ পাব কোথায়? কারণ পরিচিত লোক ছাড়া এই বিয়ে করানোটা বেশ জটিল , কালাম সাহেব দিনে দিনে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন ।
সরকারের এক জন কর্মচারী সোবহান প্রবীণ ,তার সাথে একি অফিসে কাজ করেন ,তার এক মাএ ছেলে জুয়েল এবার অনার্স কমপ্লিট করেছে।
আসমল সাহেব উনার শুশুরে গুনও কীর্তন করেন বয়সের ভারে সব সময় চিন্তায় থাকেন তাই তার একমাএ মেয়ে তার জীব দশায় বিয়ে দিয়ে দায় মুক্তি হতে চান । আসমল হোসেন লোক হিসাবে দ্বীনদার তার কথা কাজে অমিল চোখে পড়েনি , আচ্ছা আমি কালকে জানাব দেখি ভাল কোন ছেলে পাওয়া যায় কিনা !বলে সোবহান সাহেব চলে গেলেন ।
এর মধ্য কালাম সাহেব তার প্রবাসি ছেলেদের সুলতানার ব্যাপারে জানিয়েছেন , সবার ছোট আদরের সবার নয়নের টুকরা যার হাসিতে বিশ্ব হাসে ,বড় ভাই প্রবাস গমনের আগেও মেলা থেকে কত খেলনা কিনে দিয়েছেন , ভাই গুলো বোনের কোন চাওয়াই অপূর্ণ রাখেনি । সেই বোনটিকে নিয়ে ভাইদের ছিল কত শত স্বপ্ন , লেখা পড়া শেষ হলে সুলতানাকে উপযুক্ত দ্বীনদার ছেলে দেখে বিয়ে দিবে ।
না আর দেরি করা যায়না বোনটি কথা ভেবে ১ সপ্তার মধ্য বাড়িতে আসছেন জানি দিলেন বাবাকে । এদিকে সোবহান সাহেব তার ছেলের জন্যই সুলতানাকে প্রএ বঁধু করে নিতে চান বলে সম্মতি দেখালেন । আসমল হোসেনো এমনি চেয়ে ছিলেন । সুলতানাকে এখন না দেখলেই নয় । কালাম সাহেবের জামাই মেয়ের ত্তাব্ধানে সুলতানাকে দেখা তার পর হরেক রকমের খাওয়া -দাওয়া যেহেতু সুলতানাকে দেখে পছন্দ হয়েছে তাই বিয়ের দিনক্ষন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছেলের বাবা সোবহান সাহেব । ছেলে আশার দিনক্ষন ভেবে তারিখ করলেন , জুয়েল সুলতানার হবু জীবন সঙ্গী এক পলক দুজনের দেখা- দেখিটাও হয়ে গেল ।
তেমন কোন চাওয়া -পাওয়া ছাড়াই শরিয়ত মতাবেগ কাবিল কত হবে? এই বিষয়েও উভয়ে একমত হওয়ায় সোবহান সাহেব চলে গেলেন ।
এখন দিন গুনার পালা , দিন যত যায় সুলতানার মনে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েই যাচ্ছে অচেনা অজানা এক পরিবেশ সেকি সব কিছু মানিয়ে নিতে পারবে! তার বান্ধবীরা এসে আনন্দে গীত গান করে গলা ফাটাছে কালাম সাহেব মেয়ের জামাইকে কিছু না দিলেই নয় । বড় জামাইকে যা দিয়েছেন ছোট জামাইকেও তাই দিবেন, সাথে মেহবান্দের আপ্যায়নে যেন কোন কমতি না থাকে । এদিকে সুলতানার বড় ভাইও এসেছেন । জুয়েল তার বন্ধু বান্ধব যাদেরকে বলার ইতি মধ্য বলে দিয়েছে । কাল জুমার নামাজের পর পাএ পক্ষ রওনা দিবেন । সুলতানার গায়ে হলুদ শেষ অপেক্ষা তার স্বপ্ন পুরুষ জুয়েলকে নিয়ে ।
কয়েক সপ্তাহ হল রবিনের আনা-গোনা তেমন চোখে পড়ছে না , যাক বিয়েটা খুব শান্ত শিষ্ট ভাবে হলেই বাঁচি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কালাম সাহেব ।
আজ শুক্র বার নামাজের আগেই সব কাজ ঠিকঠাক । অপেক্ষায় বরযাএীর কখন এসে পৌছবেন । ইতি মধ্য কালাম সাহেবের জামাই আসমল সাহেব ফোন করে আবার শিউর হচ্ছেন বর যাএী কোন সময় রওনা দিচ্ছেন ।
এদিকে জুয়েল -জুয়েলের আব্বা মেয়ের জন্য সব কিনেকাটা শেষ করেছেন নামাজ শেষে দাওয়াতি মেহবান একএিত হলেই রওনা দিবেন। একটা গাড়ির ও ব্যবস্থা করে ফেলেছেন জুয়েল । গাড়িটিকে সাজ গুছ করে তার বন্ধুরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে ।
এদিকে রবিন সুলতানার কোন এক বান্ধবী থেকে সুলতানার একটা ছবি সংগ্রহ করে । পরে সুলতানার ছবি নিয়ে তার এক পরিচিত ফোটোশপে দোকানে যায় রবিন , পরে ছবিটা এডিট করে সুলতানার গলা পর্যন্ত রেখে নিচের অংশে উলঙ্গ মেয়ের ছবি সংযুক্ত করে । এডিটে রবিনের পূরনাঙ্গ ছবি থাকলেও রবিনের ছবি উলঙ্গ ছিল না । সুলতানা রবিনকে সেক্স করতে আকর্ষণ করছেন এমন করে ছবিটি স্থাপন করা হয় ।
বর যাএী রওনা দিয়েছেন আর কিছু ক্ষণের মধ্যই পৌছে যাবেন । বাড়িতে আনন্দের হলী সুলতানার বান্ধবীরা কত রকম ঢং সেজে সুলতানাকে সাজাবে এই নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে । বিয়ে বাড়ি বলে কথা তিক্ত করা ছোট বাচ্চারাও কান্নাকাটি না করে বিয়ের আমেজে মেতেছে ।
বর যাএী হাজির উকু ঝুকি দিয়ে পাএকে দেখছে কেউ কেউ মাসাল্লাহ সুলতানার কপালি ভালা ! সুলতানার সাথে একদম মানাবে বলে এখনি আর্শীবাদ দিতে শুরু করেছেন দুর থেকে আসা সুলতানার খালারা । হালকা শরপত , চা বিস্কিট খেয়ে আপাত্ত পেটকে শান্ত রাখা চেষ্টা করছেন কেউ কেউ , কারণ কাজী আসতে দেরি হচ্ছে । নিয়ম অনুযায়ী বিয়ে পড়ানোর পরে ভোজনের পর্ব ।
এদিকে রবিন ও তার সাঙ্গপাঙ্গ পাএ জুয়েলের বন্ধুদের হাতে সুলতানার সেই এডিট করা ছবি পৌছেদেয় । ছবি দেখার পরে কি আর কথা থাকতে পারে! তার বন্ধুরা জুয়েলের বিয়েতে ইঙ্কুয়ারি করছেন কিনা জিজ্ঞাসা করেন সোবহান সাহেবের কাছে ।
না তেমন প্রয়োজন মনে করিনি তাছাড়া মেয়ের বড় দোলা ভাই আমরা একি অফিসে কাজ করি , কেন কি হয়েছে ?
যাছাই-বাছাই করে বিয়ে না করলে যা হবার তাই হয়েছে , মানে! কি বলছ তোমরা ?
এদিকে জুয়েলের কানেও পৌছে গেছে , কথার মাঝেই জুয়েল হাজির । বাবা চলো
কেন কি হয়েছে ?বাবা এই বিয়ে হবেনা ।
আঙ্কেল মিয়েটির চরিএ নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে । প্রমাণ হিসাবে আমাদের কাছে একটা ছবি আছে ।
কালামের জামাইকে ডাকা হল ? জি বলুন !
আপনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন এটা আপনি না করলেও পারতেন ।
আসলে অতি বিশ্বাসের খেসারত অনেক আজ আবার প্রমাণ পেলাম , এই বিয়ে হবেনা ।
কেন কি হয়েছে এই ভাবে বলছেন কেন ! একটু বুঝিয়ে বলুন ত!
এই কথা বলতেই জুয়েল সেই ছবিটি হাতে ধরিয়ে দিলেন ।
না এ হতে পারেনা প্লীজ একটু শান্ত হন , সুলতানার বড় ভাইও এসে উপস্থিত , শুনুন আমার বোন এমন হতে পারেনা ।
কালাম সাহেব বাড়ির ভিতরে ,বাবা উনারা চলে যাচ্ছেন সুলতানার বিয়ে হবে না ।
কারণ শুনার পর তিনি স্তব্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন । কয়েক মিনিটেই হইচই পড়ে গেলে সারা মহল্লায় । কালাম সাহেব মুখ দেখাবে কি ভাবে , তার কলিজার টুকরা তার মুখে এই ভাবে চুলকানি না না ! এ আমি বিশ্বাস করিনা বলেই পুরা অজ্ঞান ।
হাসপাতালে নেওয়া হল কালাম সাহেবকে ।
এদিকে নানান জনে নানান কথা বলছে সুলতানা কি করবে বুঝতে পাচ্ছেনা । এক বার ভাবছে এর জন্য কে দায়ী ? হা অবশ্যাই আমি ! আমার জন্ম না হলে আজ বাবার এমন হত না । আমার জন্য বাবাকে নানান জনে নানান কথা বলবে , না এ আমি শয়তে পারবো না , আমার ক্ষমা নেই আমাকে সাজা পেতেই হবে ।
সকালে কালাম সাহেবের জ্ঞান ফেরেছে কিছুটা সুস্থ এ সময় তার বড় ছেলের হাতে ফোন বেজে উঠল ।
হ্যালো কে? জবাবে তার চাচাত ভাই সুমন , হা বল কি হয়েছে ! আমাদের সুলতানা আর নেই সে এই দুনিয়াকে চিরবিদায় জানিয়েছে , শুনার পর ফোনটি হাত থেকে পরে যায় । ছেলের মুখে ইন্নালিল্লাহ পড়া শুনে কালাম সাহেব আবার অজ্ঞান হয়ে যান ... ।
ছবি কৃতজ্ঞতা প্রবাসী আব্দুল্লা শাহীন
বিষয়: বিয়ের গল্প
৩০২৮ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ জানাই আব্দুল গাফফার ভাইয়াকে।
ধন্যবাদ ভাইয়া
আপনার এরকম কোনপ্রকার লিংক এবং প্রমানবিহীন মন্তব্যটির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমি।
কারন আপনার এরকম গর্হিত মন্তব্য আরেকজনের হৃদয়কে টুকরো টুকরো দেয়ার জন্য যথেষ্ট ।
ভবিষ্যতে এরকম মন্তব্য অবশ্যি যুক্তি প্রমানের ভিত্তিতে করবেন।
ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ।
আলোর আভা আপু'র ভার্ষনটা যে দিন পড়েছিলাম, সে দিনও আপনার এই ভার্ষন এর ঘটনার কথাটা মাথায় আসছিলো।
লিখেছেন
খুব সুন্দর করে!
অনেক
ধন্যবাদ!
এলাম বুকে বুকে
হাসি মোর চোখে মুখে
নই আর একা
নেই বুকে ব্যথা
চৈএের দুপুরের
ক্লান্তি ক্ষনে পাওয়া
যেন একখণ্ড ছায়া ।
ছবি তোলার ব্যাপারে খুব ধমকি দিয়েছেন ।
আসলে সুন্নতেই কামিয়াবি।
বেশ সুন্দর পোষ্টটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন