যাহাই সেক্যুলার তাহাই কি বিদ'আতি?
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:৪৯:০৫ রাত
আজ বিকেলে বাসা থেকে চেরাগী পাহাড়ের দিকে গিয়েছিলাম একটা কাজে। হঠাৎ আন্দরকিল্লা থেকে একটা মিছিল আসতে দেখলাম। ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার’ এরপর ‘নারায়ে রিসালাত ইয়া রাসুলুল্লাহ’ শ্লোগান শুনেই বুঝে গেলাম নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিদ’আতি গোষ্টির মিছিল।
ঠাই দাঁড়িয়ে গেলাম, দেখি শ্লোগানে আর কি কি বলে। কিন্তু আমার মনোযোগটা শ্লোগানের চেয়ে মিছিলকারী ব্যক্তিদের লেবাস তথা পোশাকের দিকেই বেশী আকৃষ্ট হল। কি সুন্দর দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবী পরিহিত একদল ইসলামিস্ট জনতা! এইসব জনতাকে মিছিল বাদে অন্য কোথাও দেখলে বোঝার সাধ্য নেই এই লোক বিদ’আতি নাকি সহীহ্। আমি এক এক করে প্রায় সবার লেবাসের দিকে চোখ বুলাচ্ছিলাম। এই লেবাসের মধ্যে কি বিদ’আতের কোনো সিম্বল ফুটে উঠছে? অর্থাৎ যে সিম্বলের সাহায্যে মিছিল ছাড়া আমি এদেরকে অন্য কোথাও দেখলে চিনতে পারব যে এই লোক বিদ’আতি? না, আমি এইসব বিদ’আতিদেরকে অন্য ইসলামিস্টদের থেকে আলাদা করে চেনার কোনো সিম্বলই খুঁজে পেলাম না। শুধুমাত্র শ্লোগানের মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছিল এটা কোন্ দলের মিছিল যায়। নইলে শুধু লেবাস দেখে বোঝার সাধ্য নেই।
যাই হোক, লেবাস দেখে যখন বিদ’আতিদেরকে অন্য ইসলামিস্টদের থেকে আলাদা করতে পারছিলাম না, তখন একটা জিনিস কোনোভাবেই আমার দৃষ্টি এড়ালো না। দেখলাম, বিদ’আতিদের এই মিছিল নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে হওয়ার জন্য সামনে এবং পেছনে আমাদের পুলিশ বাহিনী মওজুদ রয়েছে। বিদ’আতিরা কোনোরকম ভয়ভীতি ছাড়া রাজপথে শ্লোগান সহকারে মিছিল করছে, আর অন্যদিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের পুলিশ বাহিনী সেই মিছিলকে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করাচ্ছে, মিছিলে শ্লোগান দিতে কারো যেন গলায় কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য অনেকগুলো মাইকের ব্যবস্থাও দেখলাম। মনে মনে বললাম, গত সাড়ে ৫ বছর কোনো ইসলামী দলকেই এরকম প্রটেকশান দিয়ে মিছিল করতে দিল না, সেখানে বিদ’আতিদেরকে এরকম ফ্যাসিলিটিজ সহ মিছিল করতে দেয়ার অর্থ কী? সেক্যুলার সরকার আর বিদ’আতিরা কি তাহলে মাশতুতো ভাই?
যাই হোক, গতকালকের এই গোষ্টির হরতাল নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। শুধু বলব, আজকের চট্টগ্রামের পত্রিকাগুলো এই হরতাল নিয়ে এতো উচ্ছসিত কেন? দৈনিক কর্ণফুলি বাদে প্রায় সব পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে অভিন্ন প্রথম শিরোনামঃ ‘চট্টগ্রামে অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত’! এইসবে কী বোঝা যায়? নাস্তিকদের ফাঁসীর দাবীতে হেফাজত বা শত শত নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির দুর্দান্ত সব হরতাল করল, কিন্তু পত্রিকাগুলো ওইসব হরতালের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেছে, অথচ বিদ’আতিদের হরতালে এতো সমর্থন? হেফাজত-জামায়াতের হরতাল একটাও কি যৌক্তিক ছিল না? নাকি হেফাজত-জামায়াতের মানবাধিকার থাকতে নাই? শুধু বিদ’আতিদের নেতা হত্যার বিচার চাওয়ার সেরকম অধিকার আছে।
সব শেষে বলব, মাওলানা সালাউদ্দিনের ইমামতিতে জাতীয় ঈদগাহতে জানাযা এবং এরকম পুলিশী প্রটেকশানে হরতাল, মিছিল দ্বারা বোঝা যায়, যাহাই সেক্যুলার তাহাই বিদ’আতি, যাহাই বিদ’আতি তাহাই শাহবাগি, যাহাই শাহবাগি তাহাই কাদিয়ানী, যাহাই কাদিয়ানি তাহাই ঘাদানিক, যাহাই ঘাদানিক তাহাই.....(পৌনঃপুনিক)।
বিঃদ্রঃ বাসায় ঢুকে এরকম একটি বর্বর হত্যাকাণ্ডকে কোনো বিবেকবান সমর্থন করতে পারে না এবং এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে হয় তার প্রতি জোরালো সমর্থন প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তির রয়েছে। কিন্তু সেক্যুলার সরকারের সাথে দহরম-মহরম যাদের থাকবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষেপ হবে ইনশা আল্লাহ্, যতই ইসলামী লেবাস থাকুক।
বিষয়: বিবিধ
১২৬২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন