গল্পের ছলে শিক্ষা! (ফেসবুক থেকে)

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২২ আগস্ট, ২০১৭, ০৫:৫৩:০২ সকাল

গল্পের ছলে শিক্ষা।

না পড়লেই মিস,,,,,,,,,

রবিন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

ে মনোবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন সালমান রুশদি স্যার।

কথা প্রসঙ্গে স্যার প্রশ্ন করলেন। অাচ্ছা বলতো! মানুষের মাথা খারাপ হলে কি হয়?

প্রশ্ন শুনেই ফার্স্ট ব্যঞ্চার হুমায়ুন হাত তুললো। স্যারের ইশারায় দাঁড়িয়ে উত্তর দিতে যাবে, ততক্ষণে ক্লাসের সহজ সরল মেয়ে তাসলিমা বলে দিল-

"স্যার! মানুষের মাথা খারাপ হলে পাগল হয়"।

সালমান স্যার তাসলিমা নাসরিনের উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট থাকলেন।

স্যার এবার একটু রসাত্মক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।

স্টুডেন্টস! তাহলে বলতো! পাগলের মাথা খারাপ হলে কি হয়?

এবার হুমায়ুন অাজাদ হাত না তুলেই তাৎক্ষণিক এ্যান্সার করলো, "পাগলের মাথা খারাপ হলে বামপন্থী হয় স্যার!"

ক্লাসজুড়ে হাসির রোল পড়লেও পরবর্তিতে একটু মিশ্র পতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। সৈয়দ শামছুল হক ও অাহমাদ শরীফ ‌বিষয়টা সমর্থন করলেও ধার্মিক কিছু ছাত্র-ছাত্রী বিষয়টা নিয়ে তুলকালাম করল।

স্যার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অানতে পরের প্রশ্নটি ছুড়ে দিলেন। অনেকটা কৌতুহল বশতঃ প্রশ্ন। অাচ্ছা বলতো তাহলে, বামপন্থীদের মাথা খারাপ হলে কি হয়?

সমস্বরে উত্তর অাসলো, "নাস্তিক হয় স্যার!"

শামছুল হক, হুমায়ুন অাজাদ, তাসলিমা, অাহমদ ছফা ও জাফর ইকবাল বরাবরই ভাল ছাত্র হওয়ার কৃতিত্ব বয়ে চলেছে। তাদের সবার একই উত্তর শুনে স্যারের জানতে ইচ্ছে হলো। 'বামপন্থীদের মাথা খারাপ হলে নাস্তিক হয়' কথাটার মানে কি?

স্যার জিজ্ঞেস করতেই কয়েকজন প্রশ্নটি লুপে নিল। মনে হচ্ছিল, তারা এতক্ষণ এমন একটি প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল।

জাফর বললো। স্যার! একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, মানুষ যেটাকে দিন বলে ওরা সেটাকে বলে রাত, মানুষ যেটাকে সাদা বলে ওরা বলে কালো। মানুষ ভাবে ইসলাম হলো মানবতার পূর্ণাঙ্গ সমাধান অার ওরা ভাবে ধর্ম সকল নষ্টের মূল...।

জাফরের কথা শেষ না হতেই অাহমদ ছফা বলতে শুরু করলো। যেমন ধরুন স্যার! দেশে চলমান সংকট হলো, বন্যা দূর্গতি। দেশের নিরানব্বই দশমিক পঞ্চাশ ভাগ মানুষ ভাবছে, উত্তরাঞ্চলে বন্যায় যে পরিমান ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও জনগণকে সমান অান্তরিকতার সাথে কাজ করা উচিৎ। প্রত্যেককে নিজ সামর্থ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। কিন্তু বামপন্থী ও নাস্তিকগুলা দাবী তুলছে, মুসলমানরা এবার কুরবানি না করে সে টাকা বন্যার্তদের দিয়ে দিক।

পিছন থেকে ফজলু বললো, ন্যায্য দাবী স্যার! এর পেছনে যুক্তি অাছে স্যার।

ফজলুর কথা শুনে ছফা বললো, দেখুন না স্যার! যারা গভীরভাবে ভাবেনা, তারা ওদের সহজ যুক্তির কথাগুলো সহজে গিলছেও।

স্যার বললেন, অামারও তো মনে হচ্ছে তাদের কথায় লজিক আছে।

ছফা'র উত্তর। স্যার! যদি এক বছর কুরবানী না করা হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। অাপনার জ্ঞাতার্থে বলছি স্যার!

"গত বছরের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৭৮ লক্ষ গরু ও খাশী কোরবানী হয়েছিল। বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) ধারণা এবার ৩০ লক্ষ গরু ও ৫৫ লাখ খাশী কুরবানী হবে। গরু প্রতি গড় মূল্য ৩০ হাজার টাকা দাম ধরলে এই ৩০ লক্ষ গরু বাবদ লেনদেন হবে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং ৫৫ লক্ষ খাশি (গড়ে ১৫০০ টাকা দরে) ৮২৫ কোটি টাকা অর্থাৎ পশু কোরবানীতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। দেশের অর্থনীতিতে অাসবে প্রবৃদ্ধি।

এই হিসেবে বাংলাদেশের প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে এ খাতে। ২০ লক্ষ গরু আমদানীর জন্য বাংলাদেশের শুল্ক রাজস্ব (গরু প্রতি ৫০০ টাকা হিসেবে) ১০০ কোটি টাকা অর্জিত হওয়ার কথা। কোরবানীকৃত পশুর সরবরাহ ও কেনাবেচার শুমার ও পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় চাঁদা, টোল, বখশিস, ফড়িয়া, দালাল, হাশিল, পশুর হাট ইজারা, চাদিয়া, বাঁশ খুটির ব্যবসা, পশুর খাবার, পশু কোরবানি ও বানানো এমন কি পশুর সাজগোজ বাবদও এক বিপুল পরিমান অর্থ হাতবদল হয়ে থাকে অর্থাৎ অর্থনীতিতে ফর্মাল ইনফর্মাল ওয়েতে আর্থিক লেনদেন বা মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায়।"

তাছাড়া গত কয়েকদিনের খবরে এসেছে স্যার! বন্যা দূর্গত এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে যারপরনাই সমস্যার সম্মূখীন। সময়ের সাথে সংকট বেড়ে চলেছে। এমতাবস্থায় যদি এবারের পশুর হাটে উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের গরুকে প্রাধান্য দেয়া হয় এবং এর পক্ষে জোর দাবী তোলা হয় তাহলে সেটা হবে মানবতা ও মনুষ্যত্যের জয়। গাধাগুলো এই সহজ অংকটাও বুঝলোনা।

অাহমদ ছফা'র কথা শুনে স্যার এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন। এদিকে ক্লাসের সময় শেষ হতে যাচ্ছে তাই ছফা কে থামতে ইশারা করলেন। ততক্ষণে ছফার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তাসলিমা বলতে শুরু করলো। তাসলিমার কথা অাবার পক্ষ-বিপক্ষের সবাই গোগ্রাসে গেলে।

স্যার! স্বাধে কি অার নাস্তিকদের গাধা বলা হচ্ছে? গত ১৪ অাগস্ট বাংলাদেশে জন্মাষ্টমি পালিত হয়েছে। তখন বন্যা শুরুর দিকে। কই? কোন সুশীল তো বললো না- ১২মাসে ১৩টা পুজো। এবারের জন্মাষ্টমির খরচটা না হয় বন্যা দূর্গতদের জন্য দিয়ে দেয়া হোক? যত গন্ধ শুধু মুসলিমদের কুরবানিতে?

স্যার! গত ১৫অাগস্ট জাতীয় শোক দিবস ছিল। সারা দেশে একযোগে বিভিন্ন রসুম রেওয়াজের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়েছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অাওয়ামীলীগ যদি এবার সারা দেশের প্রত্যেক থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কাঙালী ভোজ না করে সেই টাকা বন্যার্তদের দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতো, তাহলে জাতির জনকের অাত্মাও শান্তি পেত অনেক বেশি। বিরিয়ানীর প্যাকেট নিয়ে মারামারিও হতো না অার বন্যার্তদের জন্য একটা সম্মানজনক ত্রাণও হয়ে যেত।

তাছাড়া এখন বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ম্যাচ চলছে। বাংলাদেশের মাটিতেই তারা খেলছে। প্রত্যেকটা ম্যাচে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। বলুন তো স্যার! কোন স্যাকুলার কি বলেছে? এমন দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ক্রিকেট ম্যাচ বাতিল করা হোক! এর যাবতীয় ব্যয় বানভাসী মানুষের জন্য দেয়া হোক? সব চুলকানি শুধু কুরবানী নিয়ে কেন স্যার?

জাফর এতক্ষণ ভাবছিল, তার কাছেও বেশ কিছু যুক্তি অাছে। বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি। তাসলিমার কথা শেষ হলে সে তার যুক্তি তুলে ধরবে। তা ভেবে সে অাগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকলো।

কিন্তু তাসলিমা নাসরিন থেকে কথার ফ্লোর কেড়ে নিয়ে এমদাদুল হক মিলন বললো। স্যার! এক বছরে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা বাইরে পাচার হয়েছে। ১০ বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকা। অাবার সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা অাছে ৪ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। কই, কোন বুদ্ধিজীবিকে তো বলতে শুনলাম না, সরকারী অামলাদের দূর্নীতির টাকা উদ্ধার করে বন্যার্তদের দিয়ে দেয়া হোক।

অানিসুল হক সামনের ব্যাঞ্চেই ছিল। সে ছোট অাওয়াজেই বললো। খবরে দেখেছিলাম, দেশজুড়ে মূর্তি স্থাপন করতে ইতোমধ্যে ৩০০কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তার মানে সামনে অারও ব্যয় করা হবে। স্যার! মূর্তি তৈরী না করলে কোন ক্ষতি হবেনা, কিন্তু ত্রাণ সহায়তা না পেলে মানুষগুলো মারা যাবে স্যার। বলতে বলতে অানিসুল হকের গলা ভারি হয়ে অাসলো। স্যার খেয়াল করলেন, মেয়েদের একটা অংশ কাঁদছে।

ক্লাসের সময় শেষ। সালমান স্যার এখন উঠবেন। এ সময় অজয় রায় বললো, অামরা হিন্দু। গরু কে মা বলি। কুরবানীর বিরুদ্ধে অামরা বললে সাজে। কিন্তু ধর্মীয় অাচার অনুষ্ঠানকে অামরা শ্রদ্ধা করি। মুসলামানদের গরু 'কুরবানী' কে অামরা যদি 'প্রাণী হত্যা' বলি তাহলে অামাদের 'পাঠাবলি' কে অাপনি কি বলবেন?

স্যার! এসব মূলতঃ ধর্মবিদ্বেষ; মানবতা না।

অজয় রায়ের কথা কে সমর্থন করলো, সুলতানা কামাল। সে বললো, প্রাণী কি শুধু গরু অার পাঠা? শুকর, কচ্ছপ, মাছ ও পাখি সবই প্রাণী। মায়াকান্না শুধু গরু নিয়ে। যত্তোসব!

কামাল হোসেন ক্লাস প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। সে বললো, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানী করবে। অার যে কুরবানী করার মানসিকতা রাখে, সে দান করারও মানসিকতা রাখে। মুসলমানরা কুরবানী করবে না কি করবে, সেটা নিয়ে মাতব্বরি যারা দেখাবে, তাদের বিরুদ্ধে এ্যকশন হবে, চরম এ্যকশন।

সব ছাত্ররা একযোগে কামাল কে সাপোর্ট করলো।

পেছন থেকে সুরঞ্জিত দাঁড়িয়ে স্যার কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো। অাচ্ছা স্যার! যদি মানুষের মাথা খারাপ হলে পাগল হয়, পাগলের মাথা খারাপ হলে বামপন্থী অার বামপন্থীর মাথা খারাপ হলে নাস্তিক হয়। তাহলে নাস্তিকের মাথা খারাপ হলে কী হবে স্যার?

স্যার চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন। কী অার হবে? নাস্তিকদের মাথা খারাপ হলে সমকামী হয়!!!

- নূরুল করীম অাকরাম

copy from খ্যাতিমান লেখকদের লেখা

বিষয়: বিবিধ

১০২০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383832
২২ আগস্ট ২০১৭ সকাল ১০:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : ইসলামবেদ্বেষীতা থেকেই সুশীলেরা এসব কথা বলতেছেন । অক্টোবের তো দূর্গাপুঁজোও আছে । দেখা যাবে সে সময়ে উনাদের পজিশন কি হয় ।
২৫ আগস্ট ২০১৭ রাত ০৮:১৮
316753
চেতনাবিলাস লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
383839
২২ আগস্ট ২০১৭ দুপুর ০১:৪৪
আবু জারীর লিখেছেন : সমকামীদের মাথা খারাপ হলে বাউল হয় আর বাউলদের ঘরে কোন হিন্দু মুসলিম জন্মেনা শুধুই সেকুলার জন্মে।
২৫ আগস্ট ২০১৭ রাত ০৮:১৮
316754
চেতনাবিলাস লিখেছেন : দারুণ বলেছেন জনাব! অনেক ধন্যবাদ!
383853
২৩ আগস্ট ২০১৭ বিকাল ০৪:৪৫
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : জটিল!
২৫ আগস্ট ২০১৭ রাত ০৮:১৯
316755
চেতনাবিলাস লিখেছেন : ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File