ওফ্ কি মজা, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষা লাগবে না, ক্ষমতায় যেতে নির্বাচনী পরীক্ষা লাগবে না…!
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:০৪:০৫ বিকাল
১। আমার এক আত্মীয়, ছাত্র হিসেবে ভালই বলতে হয়। গতবারের এইচএসসি পরিক্ষার্থী। ফলাফল সেই জিপিএ-৫। পরীক্ষা চলাকালীন সময় চারিদিকে উত্তর সহ প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুঞ্জন। গুঞ্জন বললে অবশ্য ভুল হবে। ফাঁসের কনফার্ম খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তাই তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। সবাই নাকি প্রশ্ন পাচ্ছে, তুমি পাওনি? আপু, পাবো না কেন এসব তো এখন সবার কাছেই আছে। তাই নাকি? প্রায় সব প্রশ্নই পেয়েছে বলে সে নিজে স্বীকার করেছে। তুমি তো ছাত্র হিসেবে খারাপ না, তারপরও ফাঁস হওয়া প্রশ্ন তোমার প্রয়োজন হলো কেন? আপু এখন তো প্রশ্ন কোথায় ফাঁস হচ্ছে তা কাউকে খুঁজতে হচ্ছে না, ঘুম থেকে উঠার আগেই প্রশ্ন আমার মোবাইলে হাজির। প্রথম প্রথম বিশ্বাস করিনি। কিন্তু যখন দেখেছি হুবহু বা প্রায় সব প্রশ্নই মিলে যাচ্ছে তখন আমি কি করে বসে থাকতে পারি?
আগেই বলেছি ছেলেটি লেখাপড়ায় ভাল। কিন্তু সেও আসলে মুক্ত থাকতে পারেনি। আসলে মুক্ত থাকা সম্ভব কিনা তাও ভাবছি। কারণ পাশেই একজন ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পড়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে যা হুবহু মিলে যাচ্ছে আর অন্যজন হাজার পৃষ্ঠার বই খোঁজাখুঁজি করে পরীক্ষা কিভাবে দিবে?! এবারের পরীক্ষার সময়সূচী নির্ধারণ করাও হয়েছে এক আজব স্টাইলে! প্রতিটি পরীক্ষার পরে ৫/৬দিন থেকে নিয়ে ১০/১৫দিন বন্ধ, বন্ধের সময় তাদের একমাত্র কাজ ফেইসবুক থেকে প্রশ্ন নেয়া, উত্তর না থাকলে সেটি তৈরি করা। আমি যাদের খবর নিয়েছি এর বাইরে পরীক্ষা নিয়ে তাদের টেনশান করতে হয়েছে বলে মনে হয়নি। এমনকি গ্রামেও খবর নিয়েছি। এখন তো মোবাইল ইন্টারনেটের সময়। শহরে ফাঁস হলে গ্রামও তা থেকে বাইরে থাকার কোন সুযোগই নেই!
২। আমার সে রিলেটিভ এখন সমানে পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। এখনও জিজ্ঞেস করিনি কোথায় চাঞ্চ পেয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পায়নি তা জানতে পেরেছি। এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন ও পরে যাদের সাথে কথা বলেছি তারা কেউই বলেনি যে তারা প্রশ্ন পায়নি! শুনছিলাম আর চরম এক হতাশা নেমে আসছিল! রেজাল্টের পর আমি আর কাউকেই জিজ্ঞেস করিনি তার রেজাল্ট কি! এখানে আমি বলছি না যে শিক্ষার্থীরাই খারাপ, না তারা খারাপ নয়, তাদের খারাপ করে তোলা হচ্ছে কোন এক বিশেষ কারণে!
স্কুল কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে ঘনিষ্ট পরিচয় আছে। আত্মীয়দের ভিতরও আছে। জানতে চেয়েছি কেমন খাতা তারা দেখল, কি নির্দেশনা ছিল নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে?! যা বুঝেছি তা হলো মুক্ত হস্তে দান করার মতোই নম্বর দেয়ার নির্দেশনা ছিল! ফেল তো দূরে পারলে সবাইকে জিপিএ-৫ দিতে হয়!
আমাদের দেশের মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা যেন এখন শুধুই রেজাল্টময়। লেখাপড়া, জানা, শিখা, জ্ঞান অর্জন কোন কিছুই যেন এখন আর প্রয়োজন নেই! সারাবছর নাচ, গান, প্রেম, বাজনা, হিন্দী সিরিয়াল, ফেইসবুক ইত্যাদি নিয়ে পড়ে থাকবে আর পরীক্ষার আগের রাত উত্তর সহ প্রশ্ন চলে যাবে শিক্ষার্থীর মোবাইলে! এত সহজ যখন সবকিছু তখন কি প্রয়োজন এত কষ্ট করার?! দেশ কি ডিজিটাল হয়েছে এনালগ পদ্ধতিতে লেখাপড়া ও পরীক্ষা দেয়ার জন্য? ডিজিটাল দেশ, ডিজিটাল লেখাপড়া, ডিজিটাল পাশ, ডিজিটাল জ্ঞান!
৩। লক্ষ জিপিএ-৫ ময় যে রেজাল্ট সেই রেজাল্টধারীরা সামান্য একটু কঠিন পরীক্ষায়ও পার পাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় নাকি ১০ ভাগও পাশ নাম্বার পাচ্ছে না! সারাদেশের লক্ষ জিপিএ-৫ ধারী অথচ ওরা প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় ৯০% এরও বেশি ফেল করছে! এর মাধ্যমেই বুঝা যায় লক্ষ জিপিএ-৫ ও প্রায় শত ভাগ পাশের তাৎপর্য! ওরা লেখাপড়া করে জিপিএ-৫ পাচ্ছে না, পাচ্ছে বাংলাদেশকে মৌলিক ভাবে দূর্বল করে দেয়ার আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। গত ৭/৮ বছরে শিক্ষার মানকে নীচের দিকে নিতে নিতে এমন অবস্থায় বাংলাদেশ পৌঁছেছে এখন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে ভয় পাচ্ছে, সামান্য কঠিন পরীক্ষায়ও তারা পাশ করতে পারছে না। আওয়ামী শিক্ষামন্ত্রীও জানে এত জিপিএ-৫, এত পাশ সবই হচ্ছে সেই প্রশ্নফাঁস এবং মুক্তহস্তে নম্বর বিলির ফল। ফলশ্রুতিতে ৯৫% শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় মিনিমাম নম্বরও পাচ্ছ না। পরীক্ষায় পাশ করছে না তাই এখন পরীক্ষা তুলে দিতে হবে! শিক্ষার মানকে আরো ধ্বংস করার জন্য হাসিনার অবৈধ সরকার এখন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুকুম দিচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া তথাকথিত জিপিএ-৫ ময় এইচএসসি রেজাল্ট দেখে যেন ভর্তি করা হয়! অর্থাৎ পরীক্ষা আর দরকার নেই, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়ে জিপিএ-৫ পাবে, তা দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ইত্যাদিতে ভর্তি হবে এবং সেখানেও আস্তে আস্তে চলবে সেই রেজাল্টময় লেখাপড়া!
৪। এসব যখন ভাবছি তখন হঠাৎ মনে পড়লো আরে আওয়ামী লীগ শুধু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষাকে ভয় পাচ্ছে বা তুলে দিতে চাচ্ছে তা নয়, তারা তো রাজনৈতিক ভাবেও কোন পরীক্ষাতেই আর অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছে না বা ভয় পাচ্ছে। হাসিনা বাংলাদেশকে এমন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতেও জনগণের কাছে পরীক্ষা দিতে হয় না, ভোট লাগে না, ভোটার লাগে না! যেমন গত ৫ জানুয়ারীর তথাকথিত নির্বাচন! ঢাকায় বসে অটো এমপি, অটো প্রধানমন্ত্রী, অটো সংসদ, অটো বিরোধীদল! সবকিছুই হাসিনা ঠিক করে নিচ্ছে আর নির্বাচন কমিশন কলের পুতুলের ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে! আওয়ামী লীগ এখন আর কোন পরীক্ষাতেই অংশ নিতে চায় না কারণ সঠিক ভাবে পরীক্ষা অর্থাৎ ভোটের ব্যবস্থা করলে তারা দেখেছে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার মতো ১০ভাগ ভোটও পাচ্ছে না! তাই এখন ভোট বন্ধ, নির্বাচন বন্ধ, যদি হয়ও পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র হাতে চলে যাওয়ার মতো ভোটের বাক্স ভরে যাবে ভোটের আগের রাতে, আবার কোন কিছু কম হলে পরীক্ষকদের যেমন লিখুক না লিখুক জিপিএ-৫ দেয়ার নির্দেশ আছে ঠিক তেমনি নির্বাচন কমিশন আছে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করতে, ভোট পাক বা না পাক! এমন ডিজিটাল ব্যবস্থা হাসিনা প্রতিষ্ঠিত করেছে এদেশে!
৫। আসলে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বানানোর যে প্রক্রিয়া শেখ মুজিব শুরু করেছিল, বাংলাদেশের জনগণ তা থেকে দেশকে উদ্ধার করে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হাসিনা মনমোহনের সিদ্ধান্তে সেই প্রক্রিয়া আবারও ডিজিটাল স্টাইলে শুরু করেছে। ৭/৮ বছরে যে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছাড়াই শুধু জিপিএ-৫ ময় পরীক্ষায় পাশ করে যাচ্ছে তারা এদেশের ৭/৮টি প্রজন্ম। জ্ঞান অর্জন ছাড়া শুধু জিপিএ-৫ ময় যে শিক্ষার্থীরা বের হচ্ছে ওরাই ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে পৌঁছবে, ওরাই হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী! এবার চিন্তা করুন তো কি পাবে দেশ, কোথায় যাবে দেশ?! মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে আওয়ামী লীগ জাতির ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশ। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস, নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস, প্রশাসনব্যবস্থা ধ্বংস, আইনশংখলা বাহিনী, দেশরক্ষাবাহিনী ধ্বংস, আস্তে আস্তে দেশ নিশ্চিত শেখ মুজিবের স্বপ্নের সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দিকেই কি যাচ্ছে?!
বিষয়: বিবিধ
২৬৭৮ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাসিনা তো সেই ১৯৮১ সালেই বিবিসি র সাথে বলেছিল এই প্রতিশোধের কথা।
তবে লেখার ধার অনেক বেশি হয়ে গেছে।
আবার বুঝি ব্লগ বন্ধ হলো.......
তার এক বন্ধুর আত্মীয় দেশ থেকে ফেসবুকে প্রশ্ন পত্র শেয়ার করে! সেই বন্ধুটি বিশ্বাস করে, সেই প্রশ্নই অনুসরণ করে। বলা বাহুল্য সে প্রশ্ন পত্রই এখানে কমন পড়ে গেছে!
আমার ছেলেটি রাত দিন খেটে যে নম্বর তুলল, আরেক জন ক্লাশেই দুর্বল, অনেক পিছনের ছাত্র প্রশ্ন পত্র ফাসের সুযোগে তার চেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে গেল! দেশের সর্বনাশ করার জন্য এর চেয়ে ভয়ানক অস্ত্র আর কি হতে পারে!?
দেশে যার সাথেই যোগযোগ করি, সবাই বলে এ প্লাস নম্বর, গোল্ডেন ও ভুরি ভুরি!
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রী বললেন, ভর্তি পরীক্ষাও দিতে হবেনা, নম্বর দিয়েই ভর্তি হওয়া যাবে। তাহলে কি দাঁড়াল! অ-মেধাবী ও টাকা ওয়ালারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, মেধাবীরা ঘানি টানবে! এ জাতীয় গাঁজাখোর মানুষ দিয়ে আমাদের দেশ চলছে। তারা ধর্মীয় শিক্ষা তুলে দেবার বেলায় যত খড়গ হস্ত, মানুষ বানাবার বেলায় ততোধিক উদাসীন।
দেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে চরম ভাবে আশাহত হয়েছি। অনেক ধন্যবাদ
আমার এক বন্ধু পরীক্ষককে ২৫০ খাতার মধ্যে মাত্র ২টি এ প্লাস দেয়ায় জবাবদিহি করার পাশাপাশি ৪০টিতে এ প্লাস দিতে হয়েছিল!
আজিবন যেমন সরকারে থাকবেন তেমনই আজিবন সবাই এ+ এ থাকুক!
ভূয়া সনদে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও নাকি পাওয়া গেছে- গতকাল একটা খবর দেখলাম
আর কী চাই!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন