বাংলাদেশের তথাকথিত নারী অধিকারপন্থীরা এবার কি বলবে?!
লিখেছেন লিখেছেন পুস্পিতা ৩০ জুলাই, ২০১৩, ০৪:২৪:৫৩ বিকাল
কয়েকবছর আগে আমাদের দেশের মফস্বলের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছাত্রীদের বোরকা/হিজাব পরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৯০% মুসলমানের দেশে ওই নির্দেশ দিয়ে যেন সেই শিক্ষক "যুদ্ধাপরাধ" করে বসেছিল। শুরু হয় কথিত নারীবাদী ও প্রগতিশীলদের চিৎকার! সারাদেশ তোলপাড়। মিছিল, বিবৃতির ঝড়! শেষ পর্যন্ত আমাদের কথিত ধর্মনিরপেক্ষ বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে রুল ইস্যু করে গ্রেফতার পর্যন্ত করিয়ে ছেড়েছিল।
নারীকে হিজাব পরতে বলা?! ভয়ংকর অপরাধ! এই অপরাধীদের "মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করা" এই দেশে স্থান হবে না! সেই থেকে শুরু! এরপর বিভিন্ন স্কুলে প্রকারান্তরে হিজাব নিষিদ্ধই করে দেয় কর্তৃপক্ষ! হিজাব তো দূরে লম্বা হাতা জামা পরাও যেন অপরাধ! এই সেদিন উদয়ন স্কুলের এক শিক্ষিকা (যিনি আবার ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের মন্ত্রীর স্ত্রী) ছাত্রীদের লম্বা হাতা জামা পরার কারণে সকলের সামনে তাদের জামার হাত "ঘ্যাচাং" করে দিয়েছিল! বোরকা তো দূরে লম্বা হাতের জামা পরে আসতে বললেও এই দেশে তোলপাড় শুরু হবে! নারীর শরীর আবার ঢেকে রাখার জিনিস নাকি?! সবসময় নষ্টদের চোখে, হৃদয়ে আনন্দ দেয়ার জন্য সকল নারীকে খোল্লাম খুল্লা হয়ে থাকতে হবে, তবেই না নারী তার শ্রেষ্ঠ অধিকার ফিরে পেয়েছে বলা হবে!
একই ভাবে অশ্লীলতা পরিহারের হেফাজতের আহবানকেও আমাদের দেশের কথিত প্রগতিশীলরা নারীর অগ্রগতির বিরুদ্ধে বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু কি তাই? এদেশের ইসলামপন্থীরা যখন শালিনতা নিয়ে কথা বলে তখনও তাকে নারীর কথিত স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে অভিহিত করা হয়। নারীর শরীর ঢেকে রাখলে তথাকথিত প্রগতিশীলদের অসুবিধা কি তা বুঝা যায় না। একেবারে বুঝা যায় না বললে ভুল হবে। শালীন নারী তাদের অসভ্য লালসা পূরণের হাতিয়ার হবে না, নারীকে পণ্য বানানো যাবে না, এই ভয় ছাড়া নারীর শালীন পোষাকের বিরোধীতা কোন সুস্থ বিবেক করতে পারে বলে মনে হয় না।
স্বাভাবিক ভাবেই পোষাকী শালীনতা সমাজ ও রাষ্ট্র ভেদে ভিন্ন হবে। মুসলিম প্রধান দেশে ইসলামী কালচারকেই ভিত্তি ধরা হবে এবং সে হিসেবে শালীন পোষাকের মানদন্ড নির্ধারিত হবে। ঠিক যেমন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিনি স্কার্ট নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ওয়াকউড চার্চ অব ইংল্যান্ড মিডল স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েদের জন্য স্কার্ট পরা নিষিদ্ধ করে ট্রাউজার পরার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু ওই স্কুল নয়, যুক্তরাজ্যের আরও প্রায় ৬৩টি স্কুল স্কার্ট পরা নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে স্কার্টের ওপর ব্লাউজের মতো পোশাক পরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যতে স্বাভাবিক ভাবে নারীদের ভিতর যে পোষাক প্রচলিত সেই প্রেক্ষিত যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে স্কার্টের পরিবর্তে ট্রাউজার পরতে বলা কি আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে তা হিজাব করতে বলার মতো নয়? তাহলে কি ওই স্কুলগুলো নারী স্বাধীনতা ও অধিকারের বিপক্ষে? আমাদের দেশের কথিত প্রগতিশীলরা এখন কি বলবে?
প্রায় একই ধরনের আহবান (নির্দেশ নয় কিন্তু) আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা জানালে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা হাহাকার করে উঠে কেন? কি তাদের ভয়? কি হারানোর ভয়ে তারা আৎকে উঠে? তারা কি আসলে নারী অধিকারবাদী? মনে হয় না। শালীনতার কথা উঠলে, ইসলামের কথা বললেই যারা হাহাকার করে উঠে তারা কি মানসিক ভাবে সুস্থ? আমাদের দেশের কথিত নারীবাদীরা কি এখন যুক্তরাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নারী অধিকারের বিরোধী বলে একটি বিবৃতি দিবে? না দিলে কেন দিবে না? কেন তারা ইসলামের শালীনতাবোধের বিরোধী? নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য? নাকি নারিকে পণ্য বানানোর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য?
বিষয়: বিবিধ
১০৯৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন