সামাজিক অবক্ষয়ে ক্যাসিনোর ভয়াবহতা
লিখেছেন লিখেছেন আবু লাবীব ইউসুফ সরকার ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৯:৩৬:৩৩ রাত
ভূমিকাঃ প্রিয় পাঠক! মানুষ সামাজিক জীব,মহান আল্লাহ মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন,এই সামাজিক জীবন যাপনে মানুষ নানারকম সুবিধা-অসুবিধা ভোগ করে থাকে,আর এই সুবিধা-অসুবিধার ক্ষেত্রেও এই সমাজেরই এক শ্রেণির মানুষের হাত থাকে,ভাল মানুষগুলো সমাজকে ভাল কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করে বিপরিতে মন্দ লোকগুলো সমাজে মন্দ কিছু বিস্তারের চেষ্টা করে।
আজকের এই পরিসরে আমি এই লিখুনিতে তুলে ধরতে চাই আমাদের বাংলা ভার্চুয়াল জগতে সদ্য প্রচারিত ক্যাসিনো নিয়ে।
ক্যাসিনো কি? মনে হয় আমিসহ অনেকের অভিধানেই এটি একটি নতুন শব্দ, যার সাথে আমরা অনেকেই পূর্ব পরিচিত নই।মূলত শব্দটি ইংরেজী যার বাংলা অর্থ হয়ঃ নাচ বা জুয়াঘর। এটি আধুনিক যুগের এলিটদের বিলাশিতার একটি মাধ্যম।
সামাজিক অবক্ষয়ে ক্যাসিনোঃ ক্যাসিনোর মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ বিশেষকরে আয়োজক এবং ব্যবস্থাপকরা গণিতিকহারে লাভবান হচ্ছে,পক্ষান্তরে অধিকাংশ গ্রাহক সব হারিয়ে পথে নেমে যাচ্ছে, এতেকরে সমাজের মানুষের মাঝে সামাজিক বৈসম্যতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং এক পর্যায়ে পুজি হারা লোকগুলো নানান রকম অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে সমাজের শান্তিময় পরিবেশকে বিনষ্ট করছে।
ইসলামের আলোকে ক্যাসিনোঃইসলাম শান্তির ধর্ম,অতএব মানব জীবনের প্রতিটি স্তরেই ইসলাম শান্তির দিক নির্দেশনা দিয়েছে।তাই সমাজ অবক্ষয়ের এই কেন্সারকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে।
মহা গ্রন্থ আল কোরআনের সূরা মায়েদায় এরশাদ হয়েছেঃ
হে মুমিনগণ, যে মদ,জুয়া,প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয় । অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে করে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনো কি নিবৃত্ত হবে ? (সূরা মায়েদা-৯০-৯১)
ক্যাসিনোর জন্য আহ্বান করা একটি কাফফারা যোগ্য অপরাধঃ
সহীহ বুখারী এবং মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ,আবুহুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার সাথীকে এই বলে ডাকবে যে আস আমি তোমার সাথে জুয়া খেলি সেযেন (কাফফারা সরূপ) সাদকা করে। (বুখারী-৪৮৬০ মুসলিম-১৬৪৭)
ক্যাসিনো খেলা শুকরের রক্তে হাত রক্তাক্তকরার অর্ন্তভুক্তঃ
সুলাইমান বিন বুরাইদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি লুডু দিয়ে খেলা-ধুলা করল সেযেন স্বীয় হাতকে শুকরের রক্তে রক্তাক্ত করল (মুসলিম-২২৬০ আবুদাউদ-৪৯৩৯ ইবনে মাযা-৩৭৬৩)
উল্লেখ্য যে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃদাবা এবং লুডু খেলা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত (ইবনে আবি শাইবা)
সাহাবাগণের দৃষ্টিতে ক্যাসিনোঃ
ক) আবদুল্লাহ ইবনে ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) যদি কাউকে জুয়া খেলতে দেখতেন তাহলে তাকে প্রহার করতেন এবং জুয়ার সন্জাম ভেঙ্গে চুড়মার করে দিতেন।(সহীহুল আদাবিল মুফরাদ-৯৬০)
খ) ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) শাসনামলে তিনি মিম্বরে আরোহন করে ঘোষণা করলে যে হে মানব মন্ডলী কারো ঘরে যদি জুয়ার সরন্জাম থাকে সেযেন তা বাহিরে বের করে ভেঙ্গে ফেলে।(বাইহাকী ১০খঃপৃঃ২১৫)
গ) আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ঘর থেকে বের হয়ে কাওকে জুয়া খেলতে দেখলে তাকে সকাল থেকে নিয়ে সন্ধা পর্যন্ত বন্দি করে রাখতেন।(আদাবুল মুফরাদ-১২৬৮)
বাঁচার উপায়ঃ
আল্লাহ ভীরুতা ঃ মানুষের মাঝে যখন আল্লাহ ভীরুতা আসবে তখন সে সর্বপ্রকার অন্যায় এবং অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে।
সময়কে কাজে লাগানোঃ অবসর সময়কে কোন না কোন কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে, কেন না অবসর সময়ে শয়তান মানুষকে বিপথগামী করা চেষ্টা করে,তাই এসময়টাকে কোন না কোন ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হবে।
দায়িত্বশীলদের সজাগ দৃষ্টিঃ যারা সমাজের অভিভাক তারা স্বীয় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।
উপসংহারঃপ্রিয় পাঠক! এই পৃথিবী আমাদের ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা,তাই আমাদের উচিত আমাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা তথা পরকালকে অগ্রাধিকার দেয়া,পাপের পরিণতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সর্বপ্রকার পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করা।
(লিসান্সঃ মদীনা ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়,দায়ীঃ সশস্ত্র বাহিনী ইসলামিক সেন্টার রিয়াদ সৌদী আরব।)
বিষয়: বিবিধ
৮০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন