ভিক্ষুকের ভিক্ষা নাকি পরিশ্রম ?
লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর সালেহ মতীন ১৪ জুন, ২০১৫, ০৯:৪৩:৩৭ সকাল
ভিক্ষুকের ভিক্ষা নাকি পরিশ্রম ?
আমরা দরিদ্র/অসহায়/ভিক্ষুকদেরকে দান করে থাকি যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অংশ। এসব সহায়তা ও দান/সাদাকার উপযুক্ত প্রতিদান আল্লাহ আমাদের দিবেন এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়।
গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা মহানগরীর কয়েকজন ভিক্ষুকের সাথে আমার আলাপ হয়। তারা দাবী করছেন ভিক্ষার মতো মনে হলেও, এটাকে তারা ভিক্ষা বলতে রাজী নয়- পরিশ্রম করেই উপার্জন করছে তারা। দিন চলার মতো পয়সা উপার্জন করতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়, ঘাম ঝরাতে হয়, দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। উল্টো আমার কাছেই তাদের কয়েকজনের প্রশ্ন ছিল, একজন সাধারণ শ্রমিক তাদের চাইতে কম সময়ে কম পরিশ্রমে আরো বেশি ইনকাম করে, তাহলে এটাকে ঠিক ভিক্ষা বলা যাবে নাকি পরিশ্রমের উপার্জনই বলতে হবে ?
আমরা জানি যে, ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহের এবং পরিশ্রম সম্মান ও সৌভাগ্যের। এ বিষয়ে হাদীসের মর্মাথ এরূপ, ‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা মেহনত করো সবে। তারা তো মেহনত করেই উপার্জন করছেন, তাহলে সেটাকে ভিক্ষা বলে তাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত করা উচিত কিনা!
আবার আমাদের দান সেখানে গিয়ে যদি পরিশ্রমের উপার্জনে রূপান্তরিত হয় তাহলে গরমিলটা কোথায় ? আমরা একটু বিশ্লেষণ করলে একটা উত্তর বেরিয়েও আসতে পারে। ধরুন, একজন পঙ্গু ভিক্ষুক দিনে ৬০০ টাকা ইনকাম করল। প্রত্যেক দাতা যদি গড়ে তাকে ২ টাকা করে দিয়ে থাকে তাহলে এই টাকা আয় করতে তার ৩০০জন লোকের কাছে হাত পাততে হয়েছে। প্রতি ২ মিনিটে যদি একজন করে তাকে ভিক্ষা দিয়ে থাকে তাহলে ঐ ভিক্ষুকের বিরতিহীন ১০ ঘণ্টা লেগেছে এই ৬০০ টাকা আয় করতে। এ পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের দানের পরিমাণ যদি ১০০ টাকা করে হতো তাহলে ৬/৭ জনের কাছ থেকেই উক্ত পরিমাণ আয় উঠে আসত যেটাতে তার সময় লাগত হয়ত সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা(মিনিটে মিনিটে ২ টাকা করে দানকারী পাওয়া গেলেও ১০০ টাকা করে দানে সমর্থ ও ইচ্ছুক দাতা নাও মিলতে পারে)। এমতাবস্থায় ঐ পঙ্গু ভিক্ষুক বাকী সময়টা বিশ্রামে কাটাতে পারত। তাহলে দেখা গেল, দানের পরিমাণ বড় হওয়ার সাথে অসহায়ের রোজগারের পাশাপাশি তাকে কিছুটা আরামেরও ব্যবস্থা জড়িত।
দান/সাদাকা/যাকাত প্রদানে শরীআহর স্পিরিট হলো বেশি বেশি দান করা যাতে সঙ্গতিহীন/অসহায় ভিক্ষুক কিছুটা আরামের পাশাপাশি স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখতে পারে। পবিত্র মাহে রমাদান একেবারেই সন্নিকটে। আসুন আমরা রমজানে বেশি বেশি করে দানের মহড়া ও শিক্ষায় অংশ নিই।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেখা যায় অনেকে একটি হাত নিয়েও রিক্সা চালাচ্ছে।
অনেক শক্ত সামর্থ লোক ভিক্ক করে যাদেরকে কাজ দিলেও করতে চায়না। কারণ ভিক্কার ইনকাম অনেক সহজ ও বেশী।
অনেক সুস্থ্য মানুষও নকল ভিক্ষুক সেজে প্রতারনা করছে আজকাল।
ভিক্ষা আর বেশ্যাবৃত্তি – এ দুই প্রাচীন পেশা ! সভ্য জগতে দুটোই ঘৃণিত!!
ভিক্ষা কোন জীবিকা নয়- অধিকার তো নয়ই! অসহায় মানুষ সাহায্য না চাইতেই – সাহায্য পাবে অন্যদের কাছ থেকে – হতে পারে তা আত্মীয়, প্রতিবেশী- আর তা না হলে, দেশ বা রাষ্ট্র!
কল্যাণমুখী রাষ্ট্র ‘অসহায় বা বিকলাঙ্গ মানুষের জীবন যাপনের জন্য ভাতা’ বা রাষ্ট্রীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করবে! এজন্য উন্নত দেশ গুলোতে ভিক্ষাবৃত্তি দেখা যায় না, দু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া!
রাসূল (সাঃ) সেই কুঠার প্রদান করার কাহিনী তো সবার জানা! একদিনে তো আইন করে প্রাচীন প্রথা উচ্ছেদ করা যায়না, তাই ভিক্ষুককে স্বাবলম্বী করার জন্য রাসূল (সাঃ) এর সে প্রচেষ্টা ছিল যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ!
দুর্ভাগ্য জনক ভাবে - এখন মুসলিম দেশগুলোতেই এই ‘ভিক্ষা –রোগ’ বেশি, সংক্রামক! সউদি আরব অনেক খারাপ রাষ্ট্রনীতির ধারক হলেও এ বিষয়ে তাদের রাষ্ট্রণীতি কড়া !বাংলাদেশের অবস্থা! সুস্থ মানুষেরই কর্ম সংস্থান নেই- ভিক্ষুকদের নিয়ে মাথা ঘামাবে কে! হাসিনা বেওয়া আর তার অফিসের –ব্যায় - তার অক্ষম পুত্রের ( ক্ষমতা থাকলে তো একটা চাকুরী যোগাড় করতে পারত- মায়ের উপদেষ্টা নামের কলঙ্ক হত না- সেই অর্থে অক্ষম!) খাঁই –তার দলের চাহিদা যোগাতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রই তো ভিক্ষাবৃত্তি করছে দীর্ঘ দিন ! এর প্রতিকার কি ভাবে হবে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন