প্রবাসের দিনরাত পর্ব ০১
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদাত হুসাইন নবীনগর ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৪০:২৬ রাত
বেশ কিছুদিন যাবত এই সময়ে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার মোবাইলে কল আসে । এসময় আমি কখনো বাথরুমে কখনো ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি , তাই ফোনটা রিসিভ করা হয়না ।
অপরিচিত নাম্বার হওয়ায় কখনো ফেরত কল দেইনাই ।
আজ একটু আগেই বাসা থেকে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম । আমাদের মোহাম্মাদ আলী ভাইয়ের কন্ঠে ভেসে আসছে ফজরের মিষ্টি মধূর আযান আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ,,,,,,,,,,,,,,,,,,
রাস্তার দু-পাশে সবুজের সমারোহ আর পিচঢালা পথ । আমার বাসা থেকে পায়ে হেটে মসজিদে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫-৬ মিনিট ।
সেই অচেনা নাম্বার থেকে আবারও ফোনটা বেজে উঠলো সালাম দিয়ে জানতে চাইলাম হ্যালো কে বলছেন?
অপর প্রান্ত থেকে খোব সুন্দরভাবে সালামের জবাব দিয়ে প্রফুল্ল মনে হিন্দী ভাষায় বলতে লাগলেন স্যার আপনার জন্য একটি সু-খবর আছে বলুন আলহামদুল্লিাহ্ ।
আমার সু-খবর জানতে চাইলাম আমি ।
অপর প্রান্ত থেকে জি স্যার আপনার সুখবর আপনী অনেক বড় ভাগ্যবান ।
আচ্ছা বুজলাম আমি বড় ভাগ্যবান তো আপনী কে তাতো বলবেন ?
অপর প্রান্ত থেকে জি স্যার তাইতো বলছি । আমি এসটিছি অফিস খেকে বলছি আপনার কিসমত অনেক ভাল আপনার উপর আপনার মা-বাবার দোয়া আছে ( এসটিছি হল সৌদী আরবের একটি মোবাইল কোম্পানীর নাম ।
আমার সহকর্মী সবাই এখনো ঘুমিয়ে আছেন আমি আপনার সু-খবরটা দেবো বলে এখনো জেগে আছি ।
আচ্ছা বুজলাম সু-খবর কপাল ভাল সেই সুখবরটা কি তাতো বলবেন ? অপর প্রান্ত থেকে জি স্যার আমি এখন সেই কাংখিত সুখবরটাই দিচ্ছি আপনী লটারীতে দুইলক্ষ সৌদী রিয়াল জিতেছেন । যার মূল্য বাংলাদেশী টাকায় প্রয় চল্লিশ লক্ষের উপরে ।
এতবড় সুখবরটা দেওয়ার জন্য তাকে একটা ধন্যবাদ দিলাম প্রশংসা করে একটু কাছেও টেনে নিলাম । বল্লাম আপনী আমার অনেক বড় আপনজন ( যদিও আমি জানি এইটা সে প্রতারনা করতেছে ) আচ্ছা আমি কিভাবে এই টাকা পেলাম , আমাকে এখন কি করতে হবে বিনয়ের সাথে জানতে চাইলাম ?
অপর প্রান্ত থেকে বলতে শুরু করলেন যে আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন । প্রতিবছর এসটিছি কোম্পানী তার গ্রাহকদের মধ্য থেকে কিছু ভাগ্যবান গ্রাহকদের নাম পছন্দ করে ড্র অনুষ্ঠিত হয় সেই ড্রতে যার নাম উঠে সেই দুই লক্ষ রিয়াল নগদ পুরুষ্কার পান ।
এখন আপনাকে পুরুষ্কার নিতে হলে আমার নাম্বারটা একটি কাগজে লিখুন তারপর আপনার মোবাইল বন্ধ করে সীমটা খুলে আপনার মোবাইলটা চালু করে আমাকে ফোন করুন ।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে মসজিদের সামনে চলে এসেছি । আমি তাকে বললাম
স্যার আমার কাছে এত সময় নেই সীম খুলে আপনাকে ফোন দিতে পারবোনা আপনী
এখনই নিয়মটা বলে দিন ।
অপর প্রান্ত থেকে দেখুন এইভাবে বলার নিয়ম নেই আমাদের , আপনাকে খোব ভাল মানুষ মনে হচ্ছে তাই বলছি শুনুন ।
আমরা একটি ব্যাংকের একাউন্ট নাম্বার দেবো এই নাম্বারে দুই হাজর রিয়াল অথবা সমপরিমান মোবাইল রিচার্জ কার্ড নাম্বার পাঠিয়ে আমাকে একটা ফোন দিবেন ।
আমি আপনার দুই লক্ষ রিয়াল নিয়ে আসবো ।
আমি বললাম আপনার দুই লক্ষ রিয়াল নিতে হলে আমাকে দুই হাজার রিয়াল দিতে হবে তাইনা ? ঠিক আছে আপনী আমার পক্ষ থেকে দুই হাজার রিয়াল দিয়ে দু-লক্ষ টাকা উঠিয়ে একলক্ষ আপনী রেখে দিন আর বাকী এক লক্ষ টাকা আমার একাউন্টে পাঠিয়ে দিন ।
অপর প্রান্ত থেকে হিন্দী ভাষার লোকটি বললেন স্যার আমার সাথে ইয়ার্কী করলেন ?
আমি বললাম আরে হারামীর বেটা আমিতো তোর সাথে মজা করে কথা বলছি আর তুইতো শত শত মানুষের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছিস ।
হিন্দী ভাষার মানুষটি ফোনটা রেখে দিল ।
আমিও মসজিদে প্রবেশ করলাম । বুজতে পারলাম হিন্দী প্রতারকের সাথে বক বক করে ফজরের জামাতের সময় হয়ে গেল ।
মুসল্লীদের দুঃখিত বলে দু-রাকাত সুন্নত পড়ে ফজরের জামাতের ইমামতি করলাম ।
**********
পুব আকাশের সূর্য্যি মামা এখনো উদয় হয়নী আমি আর মোহাম্মাদ আলী ভাই হাটছি ফলের বাগানের ভিতর দিয়ে ( মোহাম্মাদ আলী ভাই হলেন একজন ইন্ডিয়ান যিনি আমাকে অত্যান্ত শ্রদ্ধা,স্নেহ-সম্মান করেন )
মসজিদের এক পাশে মানুষ চলাচলের পিচঢালা পথ তিন পাশে খেজুর,আঙুর,আনার , মালটা. আর তিন ফলের বাগান ।
আছে বার মাসী লেবুর বেশ কটি গাছ ।
হাটতে হাটতে মোহাম্মাদ আলী ভাইকে জানালাম নামাজের আগের ফোনের কথাটি ।
তিনি বেশ কিছুক্ষন হাসলেন তারপর বললেন কিছুদিন পর পর তার মোবাইলেও এরকম ফোন আসে ।
তাদের এই লোভনীয় অফারে পরে অনেক সহজ-সরল বোকা-লোভী মানুষেরা নিঃস হচ্ছেন ।
প্রিয় প্রবাসী বন্ধুরা : ভুলেও এই সব লোভনীয় অফারে সাড়া দিবেননা ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন । আমিন
শা হা দা ত হু সা ই ন
ম দী না মু না ও য়া রা হ্ ।
সৌ দী আ র ব ।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু মোবাইল বন্ধ করে আর সিম খুলে কল করে কেমনে???
মন্তব্য করতে লগইন করুন